আসুন হাত বাড়াই
অর্ঘ্য ঘোষ
বছর সাতেক আগে ধরা পড়েছিল বাবার ক্যানসার। তার চিকিৎসা করাতে করাতেই কার্যত বিকিয়ে গিয়েছে ঘটিবাটি। ফের একই রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে একমাত্র সন্তানেরও। তাই রাতের ঘুম হারিয়ে গিয়েছে বাবা-মায়ের। ঘুম নেই আত্মীয় পরিজনের চোখেও। কি করে তার চিকিৎসা করাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না তারা।
মুর্শিদাবাদ জেলার বড়োঞা থানা এলাকার সাহেবনগর গ্রামে দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার তরুণকান্তি ঘোষের।
কাঠা দশেক জমি আর দিনমজুরী করে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলে যাচ্ছিল তার ৪ সদস্যের অভাবের সংসার। কিন্তু বছর সাতেক আগে সেই সংসার বিপর্যস্থ হয়ে পড়ে। তরুণবাবুর পায়ুদ্বারের কাছে ক্যানসার ধরা পড়ে। ব্যাঙ্গালোরে তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে কার্যত সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন তরুণবাবু।
তিনি এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই তার ভরণপোষণ চলে মূলত বীরভূমের লাভপুরের ভোগপুরের বাসিন্দা শ্বশুর কালীচরণ ঘোষের সহযোগিতায়।
কিন্তু ফের দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে তার পরিবারে। সম্প্রতি তরুণবাবুর একমাত্র ছেলে মুর্শিদাবাদের আন্দুলিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র সুরজিৎ ঘোষেরও ব্যাঙ্গালরের সেই হাসপাতালেই পায়ূদ্বারের কাছেই ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়ে দিয়েছেন অস্ত্রোপচার সহ কেমোর খরচ দু লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। তারপর থেকেই ঘুম হারিয়ে গিয়েছে গোটা পরিবারের।
কারণ সমস্ত বিক্রিবাটা করে তারা সাকুল্যে ৮০ হাজার টাকা যোগাড় করেছেন। বাকি টাকার জন্য সকাল সন্ধ্যে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। কিন্তু কোথাও কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। সরকারি বা বেসরকারি স্তরে যেখানে যেখানে সাহার্য্য মেলে সেখানে পৌঁছোনোর ক্ষমতা এবং সময় কোনটাই নেই তাদের। কারণ চিকিৎসকেরা বলেছেন যতদ্রুত সম্ভব অস্ত্রোপচার করা জরুরী। নাহলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাবে। তাই পরিবারের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে বললেই চলে।
এদিকে ছেলেকে নিয়ে টাকার প্রতীক্ষায় ব্যাঙ্গালোরে দিন গুনছেন তরুণবাবু সহ চারজন। তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য জলের মতো টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। না পারছেন ফিরে আসতে , না পারছেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। অক্ষমতার জ্বালা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সুরজিৎ- এর মা ফেন্সীদেবীকে। তিনি জানান , আমাদের মতো পরিবারে সামান্য জ্বরজ্বালা হলেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠে। ক্যানসারের চিকিৎসা করাব কি করে ? তাই একমাত্র সন্তানের চিকিৎসার জন্য দিনরাত শুধু ঠাকুরকে ডেকেই চলেছি। ঠাকুরের কাছে কি মায়ের আকুতি পৌঁছোবে না ? ফেন্সীদেবীর বাবা কালীচরণবাবু জানান ---আমারও সেই সামর্থ্য নেই , যতটুকু ছিল তা জামাইয়ের চিকিৎসার সময় ব্যয় হয়ে গিয়েছে।
তাই মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।
No comments:
Post a Comment