Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

গোটাসিদ্ধের কথা

  গোটা সিদ্ধের কথা 
                                 
    
                            অর্ঘ্য ঘোষ 

       

শীতের সকালে রৌদে পিঠ লাগিয়ে গোল হয়ে বসে কলাই সিদ্ধ দিয়ে মুড়ি মেখে খাওয়ার আমেজটা এবারে আর ঠিক যেন পেলেন না লাভপুরের আবাডাঙ্গার ৭০ বছরের অভিলাষ বাগদি , নানুরের চারকলগ্রামের ৬৫ বছরের কল্যাণী মেটেরা বাটিতে কলাই কই ? সবই যে কলাইয়ের নির্যাস কলাই থাকবে কি করে ? গতবছরের তুলনায় কলাই-বেগুনের দাম যে বেশ চড়া । তাই অনেকেই কলাই বেগুনের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে নির্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতির সামাল দিতে হয়েছে । কল্যাণী মেটেদেরও তাই কলাই সিদ্ধর পরিবর্তে কলাইয়ের  নির্যাস খেয়েই কার্যত দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে।

          প্রসঙ্গত সরস্বতী পুজোর পর দিন শীতলাষষ্ঠী বা সিজেনো ষষ্ঠী উৎসব পালিত হয় । এজন্য সরস্বতী পুজোর দিন সন্ধ্যার আগেই এদিনের জন্য রান্নাবান্না করে ঠাকুরঘরে সিল পেতে দিতে হয়। কারণ এদিন গুগলি , বাঁশপাতা , কাঁটাগুল্ম সহ বিচিত্র সব  উপাচারে হলুদ মাখা কাপড়ে মুড়ে সিলের পুজো দেওয়া হয়মূলত মহিলারা নিজেরাই পাঁচালি মতো মন্ত্র পড়ে ওই পুজো করেনকোথাও আবার পুরোহিত দিয়েও পুজোর রীতি আছে এদিন উনুনও জ্বলেনা অধিকাংশ গৃহস্থের হেঁসেলে । তাই আগের দিন বিকালের মধ্যেই করে নেওয়া হয় সিজানো বা কলাই সিদ্ধওমূলত ছোলা , মটর , বরবটি , মুগ আর কাঁচা কলাইয়ের পাশাপাশি দিতে হয় নুন্যতম ৫ টি করে বেগুন , কুল , গাছ সহ রসুন প্রভৃতিশীতলাষষ্ঠীর পুজো দেওয়ার পর মায়েরা সন্তানদের ফোঁটা দেন । তারপরই শুরু হয়ে যায় সিজানো উৎসব । দিনভর ভাত মুড়ির সঙ্গে তো বটেই , শুধু শুধুও চলে কলাইসিদ্ধ খাওয়া। বছরের পর বছর চলে আসছে এই রীতি ।


               ময়ূরেশ্বরের বীরচন্দ্রপুরের ৭৭ বছরের সুদেব মন্ডল , মল্লারপুরের ৬৫ বছরের হারাধন রায়রা জানান , ছোট থেকেই আমরা এইদিন রোদে গোল হয়ে বসতাম । মা- কাকীমারা আলাদা আলাদা বাটিতে বেড়ে দিতেন কলাই সিদ্ধ , জুস বা নির্যাস ( সিদ্ধ কলাইয়ের ঝোল) আর গোটা গোটা বেগুন । কলাই আর ঝুসের বাটির উপর ভাসত ঝাঁঝালো সরসের তেল সঙ্গে থাকত পেয়াজ। কলাই সিদ্ধ মেখে আমেজ করে মুড়ি ভাত খেতাম । তারপর চুমুক দিয়ে ‘ঝুঁস’ খেতাম । কিন্তু এবারে কলাই তো বাটির তলায় পড়ে রয়েছ । জুস খেয়েই মন ভরাতে হল ।


      কেন এমন হলো ? বিভিন্ন গ্রামবাসী এবং দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে , কলাই এবং বেগুনের মুল্য বৃদ্ধিই অন্যতম কারণ । বিভিন্ন বাজার যাচাই করে জানা গিয়েছে , গত বছর এই সময় কেজি প্রতি মটর , বরবটি , ছোলা , মুগ এবং কাঁচা কলাইয়ের দাম ছিল যথাক্রমে ৫৫ , ৪০, ৪৫ , ৬০ এবং ৬০ টাকা । এবারে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৭০, ৫০ , ৬০ , ৭০ , এবং ৭০ টাকা । বেড়েছে বেগুনের দামও । গতবছর যেখানে কেজি প্রতি বেগুনের দাম ছিল ৩০ টাকা । এবারে তা ৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে ।


     স্বভাবতই মার খেয়েছে গোটা সিদ্ধের বাজারও । কীর্ণাহারের বাসুদেব দত্ত , স্বপন সাহা , তরুণ পাল , ময়ূরেশ্বরের ভুবন পালরা জানান , গতবছরের তুলনায় এবার সিজানোতে কলাই বিক্রি অনেকটাই মার খেয়েছে । দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই কম পরিমানে কিনেছেন ।লাভপুরের দাঁড়কার সাদেশ্বরী ধীবর , নানুরের মোহনপুরের সন্তোষী মেটেরা জানান , কি করব আমাদের অভাবের সংসার । সব মিলিয়ে ৪/৫ কেজি করে কলাই লাগে । দাম বেড়ে যাওয়ায় এবারে কেজি দেড়েক করে কম কিনেছি । 'জুস’এর পরিমাণ বাড়িয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়েছে ।          

                        

           ----০----

No comments:

Post a Comment