অভিনন্দন
তিন সিভিক ভলেন্টিয়ার্সের তৎপড়তায়
‘ব্লু-হোয়েলস’র মারণ খেলার চূড়ান্ত পরিনতির হাত থেকে রক্ষা পেল এক কলেজ ছাত্র। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া কলেজের বি,এ প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের বাড়ি স্থানীয়
ঠাকুরানীপুর গ্রামে ।
দিন সাতেক আগে ওই কলেজ ছাত্রের মোবাইলে অজানা নম্বর থেকে একটি লিঙ্ক আসে। সেটিতে হাত
দিতেই খেলার নিয়ম কানুন ইনস্টল হয়ে যায়। তাতে বলা হয় , খেলাটি ৫০ লেভেলের । খেলাটি তাকে সম্পূর্ণ করতেই
হবে । নাহলে তাদের পরিবারের চরম ক্ষতি হবে । সেই মতো তাকে ১০ টি লেভেল বলে দেওয়া
হয় । তার মধ্যে প্রথম দুটি লেভেলে ভিডিও গেমের মতো সমুদ্রে নীল রঙের তিমি মাছ দিয়ে
অন্য মাছ , বিভিন্ন ধরনের শিকার ধরতে বলা হয় । দ্বিতীয় দুই লেভেলে হাতে ছূঁচ ফুটিয়ে
তার ছবি তুলে পাঠাতে বলা হয় । পঞ্চম লেভেলে ছিল হাত
কেটে তিমি মাছের ট্যাঁটু করে ছবি তুলে পাঠানোর নির্দেশ । দশম স্তরে ছিল মা-বাবা
অথবা যে কাউকে খুনের নির্দেশ। ওই ছাত্র নির্দেশ অনুযায়ী চতুর্থ স্তর পর্যন্ত খেলা
সম্পূর্ণ করে হাতে ট্যাটু আকাঁর চেষ্টা করেছিল ।
সেটাই তাকে বাঁচিয়ে দেয় । তার ডান
হাতে কাটাছেঁড়া দেখে কানাঘুঁসো শুরু হয় । সেই খবরটা পৌঁছোয় স্থানীয় তিন সিভিক
ভলেন্টিয়ার্স মানব মন্ডল, চন্দন মন্ডল এবং লাল্টু ধীবরের কাছে ।খবরটা শোনার পরই তারা ওই ছাত্রের বাড়ি যান । ছাত্রটি সেই সময় মাঠে ছিল । তাদের যাওয়ার খবর পেয়েই মোবাইল থেকে সে খেলা সংক্রান্ত সমস্ত
তথ্য মুছে ফেলে । পরে অবশ্য চেপে ধরতেই সব স্বীকার করে ।
ছাত্রটিকে জেরা করে তারা জানতে পারেন , প্রতিদি্ন রাত্রি ১২ টা নাগাদ অচেনা একটি
নম্বর থেকে ফোন করে একটি পুরুষ কন্ঠ অদ্ভুত সব মিউজিক শোনাত , ভুতের ভি,ডিও দেখাত। তারপর ভোর ৪ টে ২০ মিনিটে
খেলা শুরু হত। খেলা সম্পূর্ণ না করলে কখনো বলত মোবাইল ফেটে
যাবে , কখনও বলত
ব্যাঙ্কের পাশবই সিল হয়ে যাবে ,আবার কখনও বা বলত পরিবারের সবাই খুন হয়ে যাবে ।
কাউকে কিছু জানালেও পরিবারের চরম সর্বনাশ নেমে আসবে বলে হুমকি আসত। সেই জন্যই সে নাকি ভয়ে কাউকে কিছু বলতে
পারে নি ।
এজন্য কয়েকদিন
ধরেই ছাত্রটি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকত । হাতের ওই আঘাতের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলত একজন
চিঁড়ে দিয়েছ । তারপরই এড়িয়ে যেত । সিভিক ভলেন্টিয়ার্সরা মোবাইলটি আটক করার পরই ছাত্রের মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরতে শুরু করেছে । স্বভাবতই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে পরিবারের । আসুন ,ওই তিন সিভিক কর্মীকে অভিনন্দন জানাই ।
---- ০ ----
অভিনন্দন
কল্যাণ ভট্টাচার্য্য
পার্থপ্রদীপ সিংহ
দু'জনেই লাভপুরের ভূমিপুত্র। একজন পার্থপ্রদীপ সিংহ। লাভপুর বিরামমন্দির পল্লির বাসিন্দা। স্থানীয় কালিকাপুরডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অন্যজন কল্যাণ ভট্টাচার্য্য লাভপুরেরই চৌহাট্টা গ্রামের সন্তান তথা সিউড়ির কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। কর্মসূত্রে বর্তমানে সিউড়ির বাসিন্দা হলেও জন্মভূমির প্রতি রয়েছে নাড়ীর টান। পুজো--পার্বনে ছুটে আসেন গ্রামে। শিক্ষা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অবদানের জন্য আজ শিক্ষক দিবসে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উপ রাষ্ট্রপতির হাত থেকে জাতীয় পুরস্কার নিলেন তাঁরা। তাদের জন্য লাভপুর তথা বীরভূম গর্বিত। আসুন তাদের অভিনন্দন জানাই।
-----০-----
মানবতা
( দেবুবাবুর পরিবারের সঙ্গে সফিনা )
( ছেলের সঙ্গে সফিনা )
দাদার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চোখের জলে বাড়ি ফিরলেন বোন। চোখের জলে ভাসলেন দাদাও। পাড়া প্রতিবেশীদেরও শুকনো ছিল না চোখ। দাদা হিন্দু , বোন মসুলিম। কিন্তু কোন ধর্মীয় বিভেদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি কোনদিন। দিব্যি হেসে খেলে পাঁচটা বছর এক ছাদের তলায় কাটিয়ে দিলেন সফিনা।
উত্তর চব্বিশ পরগণার বসিরহাটের চণ্ডীগড়ি গ্রামে বাড়ি সফিনা বিবির। বাড়িতে স্বামী, চার ছেলে, পুত্রবধু নিয়ে তার ভরা সংসার। ১২ বছর আগে স্মৃতিভ্রংশ অবস্থায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সফিনা। বাড়ির লোকেরা বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পান নি। পুলিশে মিসিং ডায়েরি করেও কোন লাভ হয়নি।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে সফিনা একদিন এসে পৌঁছোন বীরভূমের কীর্ণাহারে। অন্যান্য জায়গার মতোই এখানেও কেউ কিছু খুচরো পয়সা, কেউ বা চিঁড়ে-মুড়ি দিয়ে দায় সারেন। কিন্তু তা পাড়েন নি কীর্ণাহারেরই পূর্বপট্টির বাসিন্দা দেবু দাস এবং তার স্ত্রী অপর্ণাদেবী। বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ের বাঁধানো ঘাটে সফিনাকে পড়ে থাকতে দেখে অপর্ণাদেবী প্রথম প্রথম দু'বেলা খাবার পৌঁছে দিতেন। সফিনাকে ওইভাবে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে দেখে একদিন ডেকে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দেন দেবুবাবু।
তখন নিজের নামটুকুই কেবল বলতে পারতেন সফিনা। তা থেকেই দেবুবাবুরা বুঝতে পারেন সফিনা আসলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কিন্তু তাতে কোন সমস্যাই হয়নি। টিউশানি করে কোন রকমে সংসার চলে। তারপরেও আর একটা উদ্বৃত্ত মুখের খাবার যোগানোর কথা দু'বার ভাবতে হয় নি। দিব্যি বাড়ির লোক হয়ে উঠছিলেন সফিনা। দেবুবাবুকে দাদা , অপর্ণাদেবীকে দিদি , তাদের ছেলেকে ভাই বলে ডাকতেন। আর পাড়ার লোকের কাছে হয়ে উঠেছিলেন সর্বজনীন মাসি।
মাস তিনেক আগে আস্তে আস্তে তার স্মৃতি ফিরতে শুরু করে। একে একে তার পুরো ঠিকানা , পরিবারের কথা মনে পড়ে যায়। সেই অনুযায়ী ছবি এবং বিবরণ সহ ইন্টারনেটে বসিরহাট থানার সঙ্গে যোগ করেন দেবুবাবুর ছেলে শংখচূড়। বসিরহাট থানা মারফত খবর পেয়ে ৫ সেপ্টেম্বর তার দুই ছেলে আর দুই ভাই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেবুবাবুর বাড়িতে হাজির হন।
প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেসে যান সফিনা। বিদায় বেলায় দেবুবাবুদের হাত ধরেও বিয়োগ ব্যাথায় কেঁদে ভাসান তিনি। দেবুবাবুর পরিবার, পাড়ার লোকেরাও নিজেদের ধরে রাখতে পারেন নি। সবার চোখেমুখে তখন যেন নাড়ীর বাঁধন ছেঁড়ার যন্ত্রণাকাতর অভিব্যক্তি।
বিয়োগ ব্যাথার ওই ব্যক্তিই আরও একবার বুঝিয়ে দেয়, সম্প্রদায় কিম্বা জাতপাতের ধর্ম নয়। মানবতাই আসল ধর্ম। আসুন , আমরা সেই মানবতার পুজো করি।
-----০------
অন্যরকম
( সাহার্য্য তুলে দিচ্ছে কচিকাঁচারা )
চাঁদা তুলে ফুল - মিষ্টি কিম্বা উপহার নয়। শিক্ষকদেরই পরামর্শে এবারই এক অন্যরকম শিক্ষক দিবস পালিত হল বীরভূমের নানুরের নওয়ানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।এতদিন জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ওই স্কুলটিতেও ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে শিক্ষকদের কিছু উপহার, ফুল আর মিষ্টি মুখ করিয়ে শিক্ষক দিবস পালন করেছে।
এবার শিক্ষক দিবসের কিছুদিন আগে এক লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হতদরিদ্র দিনমজুর স্কুলে কিছু সাহার্য্যের আর্জি নিয়ে আসেন। ডাক্তার তাকে নিয়মিত বর্ধমানে চিকিৎসা করাতে যেতে বলেছেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতোও সামর্থ্য নেই তার। সব শুনে ওই স্কুলের দুই শিক্ষক মহ: আয়ুব এবং সুনীল মুর্ম তাকে বলেন, আমাদের দু'জনের সাহার্য্য তো প্রয়োজনের তুলনায় যৎসামান্য হবে। আপনি বরং শিক্ষক দিবসের দিনে আসুন , দেখি কি করা যায়।
ছাত্রছাত্রীদের সামনে প্রস্তাবটা রাখেন শিক্ষকরা। ঠিক হয়, এবারে আর শিক্ষক দিবসে কোন আড়ম্বর হবে না। চাঁদার টাকা তুলে দেওয়া হবে ওই ক্যান্সার আক্রান্তের হাতে। সেইমতো ৫ সেপ্টেম্বর একটি নতুন কাপড় সহ পাঁচ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেয় ছাত্রছাত্রীরা। টাকার অংকটা হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু মানসিকতটা কোন অংশেই কম নয়। কচিকাঁচাদের মধ্যে শিক্ষকরা যে ভাবনার জন্ম দিয়ে গেলেন একদিন তার সুফল পাবেই এই সমাজ।
সাহার্য্য পেয়ে পড়ুয়াদের সংগে ওই দিনমজুরও শিক্ষক মশাইদের প্রনাম করে বললেন , মাস্টারমশাই খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আপনারাই আমাকে আশার আলো দেখালেন।শিক্ষক মশাইরা বললেন, শিক্ষক দিবসে এর থেকে ভালো উপহার আর কি হতে পারে ?
সত্যিই তো , এর থেকে ভালো উপহার কিছু হতে পারে না।
-----০----
সমাজ সেবার ডাক
বিজয়া সম্মেলন উপলক্ষ্যে সমাজ সেবার ডাক দেওয়া হল হোয়ার্টস গ্রুপ খোলাহাওয়ার পক্ষ থেকে। বছর খানেক আগে ওই গ্রুপটি তৈরি হয়। ওই গ্রুপে রাজ্য তো বটেই বিভিন্ন দেশে ১৮৭ জন সদস্য ছড়িয়ে আছে। এদিন সাঁইথিয়া হাইস্কুলে বিজয়া সম্মেলন উপলক্ষ্যে মিলিত হন তাদের অধিকাংশই । তাতে যোগ দেন দক্ষিণেশ্বরের সুনন্দা রায়, ময়ূরেশ্বরের সোমা দে প্রমুখ।
তারা জানান, ছেলে-মেয়ের বিয়ে, জন্মদিন, অন্নপ্রাশন, সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ বাঁচিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী জমা করা হবে গ্রুপের কোষাধ্যক্ষের কাছে।সেই টাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে। সমাজ সেবার নির্দশন অবশ্য ওই গ্রুপের প্রথম নয়। গ্রুপের অন্যতম পরিচালক প্রসেঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা জানান, এবারই বিশ্বভারতী ছাত্রী পপি দত্ত, নানুরের খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রীকে সাহার্য্য করা হয়েছে।
শুধু আর্থিক সাহার্য্যই নয়, প্রয়োজনে যাতে সব ব্যাপারেই মানুষের পাশে গ্রুপ দাঁড়াতে পারে তার জন্য গ্রুপে ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল, মানবাধিকার কর্মী, ব্লাড ব্যাংকের কর্মী সহ বিভিন্ন পেশার সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
তারা জানান, ছেলে-মেয়ের বিয়ে, জন্মদিন, অন্নপ্রাশন, সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ বাঁচিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী জমা করা হবে গ্রুপের কোষাধ্যক্ষের কাছে।সেই টাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে। সমাজ সেবার নির্দশন অবশ্য ওই গ্রুপের প্রথম নয়। গ্রুপের অন্যতম পরিচালক প্রসেঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা জানান, এবারই বিশ্বভারতী ছাত্রী পপি দত্ত, নানুরের খুজুটিপাড়া চণ্ডীদাস স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রীকে সাহার্য্য করা হয়েছে।
শুধু আর্থিক সাহার্য্যই নয়, প্রয়োজনে যাতে সব ব্যাপারেই মানুষের পাশে গ্রুপ দাঁড়াতে পারে তার জন্য গ্রুপে ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল, মানবাধিকার কর্মী, ব্লাড ব্যাংকের কর্মী সহ বিভিন্ন পেশার সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
----০----
No comments:
Post a Comment