কবিতাগুচ্ছ
সাদা ভাতের স্বপ্ন
অর্ঘ্য ঘোষ
এখন হয়েছে অনেক রাত।
গুমটির সব আলো কখন নিভে গ্যাছে কে জানে ?
হরিপদ বাউড়ির ক্লান্ত বৌ'টাও হয়তো এতক্ষণে
দুদিনের এলিয়ে পড়া পান্তা খেয়ে এলিয়ে পড়েছে।
এখন শুধু নির্জন শহরের রাস্তায় জাগরণ ক্লিষ্ট
কুকুরের চোখে ম্লান হয়ে আসে ঘোলাটে জ্যোৎস্না।
গাছের পাতায় হিম হয়ে ঝরে রাত।
আর তুমি শৌখিন মজদুরির ঠিকা নিয়ে
একের পর এক সাজিয়ে চলেছো সিঁড়ি।
সে সিঁড়ির শেষ ধাপে যেন কাঞ্চনমালার দেশ।
শব্দের সিঁড়ি থেকে উঁকি মারে চেনা কোন তরুণীর মুখ।
তার পাশে কলমী দামের ফাঁকে প্রতিকৃতি দেখে চাঁদ ,
সেখানে পড়ে আছে হরিপদর বৌয়ের পায়ের ছাপ।
তুমি কেমন করে জানবে বলো
হরিপদদের জগতে এখন কত রাত?
হরিপদর বৌ'য়ের ঘুম জড়ানো চোখে স্বপ্নের ঘোর ,
শুধু এক মুঠো সাদা ভাতের স্বপ্ন।
----০----
শাবলে শান দেওয়ার কথা
পড়ন্ত বিকালের অবসন্ন রোদ মেখে
শরীর গরম করে নিয়েছিল ছেলেটি।
ওর চোখে তখন জ্বলছিল দাবানল।
ঐশ্চর্য্যের প্রাচীরে ডিনামাইট ভাঙবে বলে
ছেলেটি বিজ্ঞান শেখে সময় নষ্ট করে।
ও জানে না নোনা ধরা প্রাচীর ভাঙতে
ডিনামাইট লাগে না , শাবলই যথেষ্ট।
শুধু শুধু চলে গেল কিছু অমুল্য সময়।
ছেলেটিকে কেউ বলে নি
শাবলে শান দেওয়ার কথা।
----০----
রঙচটা পোস্টার
একের পর এক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে
প্রাগৈতিহাসিক ক্লান্তিতে চেতনা
ঝিমিয়ে পড়েছে কে জানে কখন ?
চড়াইয়ের চঞ্চু হতে কারা যেন
ছিনিয়ে নিয়েছে যাবতীয় সুখ।
এখন তুমি বরং শ্রমিকের নোনা ঘামে স্নান করে
বুঝে নাও ঘামের স্বাদ।
হে আমার পথিকৃৎ , এবার কোনদিকে যাব ?
বেভুল পথে আর কতকাল হাঁটা যায় ,
পথনামা ঝাপসা হয়ে আসে।
নির্জন দেওয়ালে পুরনো পোস্টার করুণা কুড়োয়।
কবেই চটে গ্যাছে রঙ তার
শ্রমিকের নোনা ঘাম লেগে।
----০----
রাত্রি এবং তারপর
মুনিয়া , তুই আর ওদের রাতের মেহেফিলে যাস না।
তুই তো তো জানিস না মুখ আর মুখোশের পার্থক্য।
তার চেয়ে তুই বরং ও পাড়ার বিশুর কাছে যাস
বিশুই তোকে বুঝিয়ে দেবে কি করে ছিঁড়ে ফেলতে হয় মুখোশ।
তোর অমলিন হাসিটুকু তুই হারিয়ে যেতে দিস নে।
তার চেয়ে একটা স্বপ্ন দেখ
বিশুকে জিজ্ঞেস করে দেখিস বিনে পয়সায় স্বপ্ন দেখার কত সুখ।
রাত্রি এবং তারপর পাতা ফরাস ,
ও ফরাসে তুই বসতে যাস নে।
তার চেয়ে তুই বিশুর সঙ্গে শিবতলায় গাজনের মেলায় যাস।
No comments:
Post a Comment