Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

ঘরের স্বপ্ন



                        ঘরের স্বপ্ন


                                                         


                                         
                             অর্ঘ্য ঘোষ


সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। উঠি উঠি করেও এখনও বহরমপুর মেন্টাল হোমের বাঁধানো রোয়াকটাতে বসে রয়েছে কেকা আর প্রদীপ। কেকা এখানে কাজ করে।ওর কাজ মানসিক রোগাক্রান্তদের সঙ্গ দিয়ে তাদের সুস্থ আর স্বাভাবিক করে তোলা।কেকারা এসেছিল ছিল বাংলাদেশ থেকে।বাংলা ব্যবছেদের পর ছিন্নমূল হয়ে যারা এপারে এসেছিলেন কেকার দাদু ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।ওপারে নাকি কেকাদের গোলাভরা ধান , গোয়ালভরা গরু আর  পুকুর ভরা মাছ ছিল।কেকা অবশ্য ওসব বিশ্বাস করে না। ওপার থেকে আসা  লোকেরা সবাই একই কথা বলেন।তাছাড়া আদ্যিকালে ঘি খেয়ে আজ হাত শুঁকে শুধু শুধু কষ্ট বাড়ানো ছাড়া কি'ই বা লাভ  ?


           প্রায় কপর্দক শুন্য অবস্থায় কেকার দাদু শহর ছাড়িয়ে ভাটপাড়া রিফিউজি কলোনীতে বাসা বাঁধেন।টিনের ছাউনি দেওয়া খলপা বেড়ার ছোট্টবাড়িটা কেকাদের। ওই বাড়িতেই কেকার জন্ম।তাদের আর্থিক অবস্থা মোটেই সুবিধার ছিল না।তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরই চাকরির খোঁজে বেরোতে হয় কেকাকে। সুশ্রী চেহারা আর সাবলীল কথাবার্তার জন্য পেয়ে যায় হোমের চাকরিটা। সেই থেকে সে এখানেই আছে।


                    এই ধরণের কাজ করতে কেকার বেশ ভালোই লাগে। কখনো কারও বউ , কারও প্রেমিকা আবার কারও বা মায়ের অভিনয় করে তাদের সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলার মধ্যে একটা অন্য ধরণের আনন্দ আছে। সেটা মনে প্রাণে অনুভব করে কেকা।তারপর তারা যখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তখন কেকার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। যেন নিজের কোন প্রিয়জন চিরকালের জন্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মনে হয় একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।কেউ কেউ ফিরে যাওয়ার সময় কেকাকে পুরস্কৃত করে যেতে যায়। কেকা তাদের কাছে থেকে কোন পুরস্কার নেয় না। একটা খাতায় তারিখ দিয়ে অটোগ্রাফ নিয়ে রেখে দেয়। অবসর সময়ে খুলে দেখে সেই অটোগ্রাফের খাতা।আর তার স্মৃতি পটে ভেসে ওঠে কত মানুষের কথা। কেউ কেউ বাড়ি ফিরে গিয়ে হোমের ঠিকানায় প্রথম প্রথম চিঠি পাঠায়।তারপর আস্তে আস্তে একদিন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। অবসর সময় কেকা ওইসব চিঠিও পড়ে। তাতেই ভুলে থাকে সে।


                    প্রতিবছর হোমে নতুন নতুন মানুষ আসেন।আর তাদের সাথে শুরু হয় কেকার নতুন অভিনয়। প্রদীপ এসেছিল বীরভূমের একটি শহর ঘেঁষা গ্রাম থেকে। ওর জীবনের ইতিহাসটা বেশ করুণ। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হলে কি হবে , প্রদীপ ছিল পড়াশোনায় খুব ভালো।সেই দেখে প্রেমে মজেছিল এক ধনীর দুলালী। তারপর সিনেমা- থিয়েটারে যা হয় প্রদীপের ক্ষেত্রেও ঘটে সেই রকমই ঘটনা।আরও ভালো ছেলের গলায় মালা দিয়ে ড্যাং ড্যাং করে শ্বশুরঘর চলে যায় সেই ধনীর দুলালী। তারপর থেকেই মাথার গোলমাল শুরু হয় প্রদীপের। প্রদীপকে সুস্থ করে তোলার ভার পড়ে কেকার উপর।তার হারিয়ে যাওয়া সেই প্রেমিকা সেজে অভিনয় করতে হয় তাকে।


                             ক্রমে দিন যায়। গতানুগতিকায় কেটে যায় সময়।সময়ের ক্ষমতা অসীম।সে সব কিছুকে ভুলিয়ে দেয়।প্রদীপকেও ভুলিয়ে দেয় প্রত্যাক্ষানের জ্বালা। আস্তে আস্তে সুস্থ -স্বাভাবিক হতে শুরু করে প্রদীপ। তাকে নিয়ে এখন বাইরে বেড়াতে যায় কেকা। এটাও তাদের কাজের মধ্যেই পড়ে।সব পরিবেশেই খাপ খাইয়ে তোলার জন্য তাদের ওইসব করতে হয়। প্রদীপকে নিয়ে মাঝে মধ্যেই কাটিগঙ্গা বিলে যায় কেকা। বিলের জলে পা ডুবিয়ে পাশাপাশি বসে।নানা রকম কথাবার্তা বলে তারা। একদিন কথা বলতে বলতেই প্রদীপ হ্যঠাৎ কেকাকে জিজ্ঞেস করে -- আচ্ছা আপনি আমার জন্য এত সব কিছু করেন কেন বলুন তো ?
---- এটাই তো আমাদের কাজ , বলতে পারেন কর্তব্যও।
---- শুধুই কর্তব্য ?
---- তা ছাড়া আর কি ? কত লোক তাদের ভাঙা মন নিয়ে আসে আমদের কাছে।আমরা তাদের সুস্থ স্বাভাবিক করে তুলি।তারা আবার নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে ঘরে ফিরে যায়।
---- আপনাদের ঘর বাঁধার সাধ জাগে না ?


                      চট করে কোন উত্তর দিতে পারে না কেকা। অব্যক্ত যন্ত্রণা যেন মোচড় দিয়ে ওঠে তার বুকের ভিতর।দীর্ঘনিশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে সেই যন্ত্রণা।সত্যি দিনের পর দিন অভিনয় করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছে।মেয়েদের সহজাত চাহিদার মতো তারও ইচ্ছে হয়  ছোট্ট একটা ঘর , একটা নিজের মানুষ , একটা সংসার। প্রদীপের কাছে সে তার মনের ভাব চেপে রাখতে পারে না। তাই বলে , ঘর বাঁধার সাধ কার না জাগে বলুন ? যাদের ঘর নেই , খোলা আকাশের নীচে থাকে, ঘরণী পেলে তারাও ঘর বাঁধে।আমরাও তো মানুষ।সেই সাধ থাকটা কি স্বাভাবিক নয় ?
---- তাহলে বাঁধেন না কেন ঘর ?
----  সেই আবার হাসালেন , কতজনের কাছে কথাটা শুনে কতবার যে হেসেছি তার কোন ঠিক নেই।
---- কেন কথাটা কি এতই হাস্যকর  ?
---- দেখুন আমরা সাহচর্য্য দিয়ে বহু মানুষকে সুস্থ করে নতুন করে ঘর বাঁধায় সাহার্য্য করি।কিন্তু আমাদের নিয়ে কে'ই বা ঘর বাঁধতে চায় বলুন।অনেকেই আমাদের নিচু নজরে দেখেন।কতজন তো এল তাদের ভাঙা মন নিয়ে , সঙ্গ দিয়ে তাদের সুস্থ করে তুললাম। কই কারও তো আমাদের মতো মেয়েদের নিয়ে ঘর বাঁধার কথা মনে হয় নি।অন্যের ঘর বাঁধতে বাঁধতেই এই হোমের বহু মেয়ের নিজের ঘর বাঁধার বয়েসটাই পেরিয়ে গিয়েছে।বাদ দিন আমাদের কথা। সন্ধ্যা হয়ে এল , এবার ফিরতে হবে।
         

                      আচমকা কেকার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে প্রদীপ।আকুতি ভরা গলায় বলে , বাঁধবেন আমার সঙ্গে ঘর ? নিরালা সবুজে ঘেরা ছোট্ট ঘর , এমনি তারা ভরা রাতে মুখোমুখি বসে অনর্গল কথা বলে যাব।
কিছু বলতে পারে না কেকা।প্রদীপের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়েও নিতে পারে না।আবেশ ভরা এক ঘোর লাগা দৃষ্টিতে সে প্রদীপের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।প্রদীপও তার মুখের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ফের বলে ওঠে , জানেন এ রকম একটি ঘরের স্বপ্ন আমার অনেক দিনের।আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম । কিন্তু ডাক্তার - ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি নি বলে সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
---- থাক না ওসব কথা। যে অতীত মন খারাপ করে দেয় তার কথা নাই বা মনে রাখলেন।
---- ঠিক বলেছেন , আমি আর ওইসব কথা ভেবে বর্তমানের মাধুর্যটাকে নষ্ট করতে চাই না।


                            বেশ কিছুক্ষণ কেউই কোন কথা বলতে পারে না।কাটিগঙ্গা বিলের মাথার উপর তখন বিদায়ী সুর্য্যের অস্তরাগ রঙিন আভায় দুরের দিগন্তটাকে রাঙিয়ে তুলেছে।অদুরে সতীঘাটার বটগাছটার মাথা থেকে ভেসে আসছে নীড়ে ফেরা পাখিদের পাখা ঝাপটানোর শব্দ।সতীদাহ প্রথার জ্বলন্ত স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে ওই প্রাচীন বটগাছ। ওখানেই নাকি একদিন ধ্বনিত হয়েছে অসহায় অকাল বিধবার করুণ আর্তনাদ।কথাটা ভাবতেই গা'টা কেমন যেন শিউরে ওঠে কেকার।প্রদীপের হাত ধরে সে বলে -- অন্ধকার ঘন হয়ে আসছে। চলুন এবার ফেরা যাক। না হলে এরপর কিন্তু খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যাবে।
---- আর একটু বসুন না প্লিজ।জানেন , আপনার সাহচর্য্য আমার খুব ভালো লাগে।মনে হয় সব সময় আপনাকে ধরে রাখি।আমি কোনদিন আপনাকে ভুলতে পারব না। বলুন আপনি আমাকে কোনদিন ভুলে যাবেন না তো ?


                                প্রদীপের কথা শুনে মৃদু হাসে কেকা । এসব কথায় আগে ও খুব লজ্জা পেত।লজ্জায় লাল হয়ে যেত ওর চোখমুখ।কিন্তু এখন আর ওসব নেই। অনেকেই তো যে কয়েকটা দিন হোমে থেকেছে , অবচেতন মনে তারা ওকে ভালবেসেছে। সুস্থ হয়ে ওঠার পর আর তাদের সেই ভালোবাসার কথা মনেই থাকে নি।একদিন পরিবারের লোকেদের সঙ্গে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। কিন্তু প্রদীপ যেন একটু অন্য প্রকৃতির। তাই বোধহয় সে নিজেও কিছুটা অনুরক্ত হয়ে পড়েছে।ছেলেটার বুকের আঘাতটার কথা ভাবলেই কেমন যেন মায়া হয় তার। ওইসব কথা ভাবতে ভাবতেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে কেকা। একসময়  প্রদীপ তার বুকে মাথাটা এলিয়ে দেয়।তার বুকে কোন পুরুষের মাথা রাখা  অবশ্য  প্রথম নয়।অবচেতন মনে হারানো জনের কথা ভেবে অনেকেই তার বুকে মাথা রেখেছে।সেও যন্ত্রের মতোই তাদের বুকে ঠাঁই দিয়েছে।তার নিজের কোন অনুভূতিই হয় নি। তাই তার কোন ছুঁৎমার্গও নেই। কিন্তু প্রদীপের স্পর্শে  তার শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়।আগল ভেঙে যায় তার। প্রদীপের মাথাটা বুকে চেপে মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে কেকা। তার সাড়া পেয়ে প্রদীপ চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয় তাকে।বেশ কিছুক্ষণ দুজনের কথা হারিয়ে যায়।তীব্র আশ্লেষে ডুবে যায় তারা।কাছের শীতলা মন্দিরে বেজে আরতির ঘণ্টা ধ্বনি।সম্বিৎ ফেরে দুজনের। 


                               
                     ততক্ষণে পাটে বসেছে সূর্য্য।ডিঙ্গি নৌকায় জেলেরা ভিজে জাল নিয়ে ফিরছে।দুরে একটা শিয়াল একটানা ডেকেই চলেছে।প্রদীপের হাত ধরে হোমের দিকে ফেরে কেকা। একটা ভালো লাগার আবেশ জড়িয়ে রাখে দু'জনকে।ক্রমশ বাঁধাধরা সম্পর্কটা ওরা অতিক্রম করে যায়। দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে দিন দিন।একই সাথে দ্রুত সুস্থতা ফিরতে থাকে প্রদীপের।বাবু-দেবী আর আপনি-আজ্ঞের সীমা অতিক্রম করে আর পাঁচটা প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই হয়ে উঠে ওরা।হোমের কেউই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামান না।কারণ নৈকট্যের অভিনয়ও কেকাদের কাজের অঙ্গ।এখন তাই কাটিগঙ্গা , গঙ্গার ধারের পাশাপাশি লালদীঘির পার্কেও গিয়ে বসে দুজনে।সেদিন বসেছিল নির্জন গঙ্গাতীরে। আরও সব ছড়িয়ে বসে রয়েছে জোড়ায় জোড়ায়।কেকা প্রদীপের হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়। তারপর বলে , দেখ , আজ প্রয়োজনের তাগিদে এখানে কতজন বসে আছে। প্রয়োজন মিটে গেলে একদিন সবাই কে কোথাই চলে যাবে। এই  গঙ্গাতীরের কথা সেদিন হয়তো কারোর মনেই থাকবে না।
---- আজ হঠাৎ তুমি একথা বলছো কেন কেকা ?
---- বলছি কারণ তোমার মতো আরও অনেকের সঙ্গে আমাকে এখানে বসতে হয়েছে।তারা সবাই ঘরে ফিরে গিয়েছে।ভুলে গিয়েছে এই জায়গাটার কথা , ভুলে গিয়েছে আমার সানিধ্যের কথা। কেবল আমিই ভুলতে পারি নি সেসব কথা।একদিন তুমিও তাদের মতো ঘরে ফিরে ঘর বাঁধবে।ভুলে যাবে আজকের এই নদীতীর , এই মুহুর্তটার কথা।এটাই নিয়ম।
---- না কেকা , তোমাকে আমি কোনদিনই ভুলতে পারব না। তোমার কাছে যা পেয়েছি তা ভোলার সাধ্য আমার নেই।
----ওটা হোল একটা কথার কথা।সবাই একই কথা বলে , মনে কেউ রাখে না।আর আমার কাছে যা পেয়েছো তার জন্য তো আমি টাকা পেয়েছি।
----না , না ও কথা বোল না প্লিজ , টাকা দিয়ে সব কিছু মেলে না।প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার কোন মূল্যই হয় না।তাই ঘর যদি বাঁধতেই হয় তোমাকে নিয়েই বাঁধব।

   
                                    আবেগে গলা বুজে আসে প্রদীপের।অন্ধকারের সঙ্গে ঘন হয়ে আসে দু 'জনে।প্রদীপ তার ঠোঁটে একের পর এঁকে চলে চুম্বনের আলপনা।আবেশ বিহ্বল পড়ে কেকাও।প্রদীপকে ঘিরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে কেকাও। ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে হাঁফিয়ে উঠেছে সে।এবার সে সত্যিকারের ভালোবাসা চায় , সত্যি করে ভালবাসতে চায়।তাই সে বলে , দেখ প্রদীপ তোমাকে মিথ্যা বলব না , এতদিন তোমার মতো অনেকের সঙ্গে আমাকে ভালোবাসার অভিনয় করতে হয়েছে , কারও প্রতি ভালবাসা জন্মায় নি।কিন্তু তোমাকে আমি সত্যিই ভালো বেসে ফেলেছি।

       
               তারপর তাদের মধ্যে দুরত্ব আরও কমে আসে।প্রদীপের আলিঙ্গনে কেকার শরীরের প্রতিটি লোমকুপে মুক্তোদানার মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে।কোথাই যেন হারিয়ে যায় দুজনে।দ্রুত সময় কেটে যায়।একদল বক ফিরে যায় যায় নীড়ে।তাদের পাখায় গোধুলির আলো মাখামাখি হয়ে যায়।কারাখানার ছুটির সাইরেন বেজে ওঠে।দুরে জ্বলে ওঠে স্ট্রিট লাইট।কাছের কোন বাড়ি থেকে ভেসে আসে মেয়েলি গলায় গানের সান্ধ্য রেওয়াজ।মেন্টালে ফেরার সময় হয়ে যায়।কিন্তু কারোর যেন ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় না।মনে হয় এই কেটে যাক অনন্তকাল।কিন্তু ততক্ষণে অন্যরা মেন্টালের পথ ধরেছে।অগত্যা তাদেরও ফিরতে হয়।


                         এইভাবে মেন্টালের দিন কাটে , রাত্রি হয়। রাত্রি শেষ আসে গতানুগতিক ভোর।কেটে যায় বেশ কয়েকটা মাস।প্রদীপ-কেকা দুজনেই ঘর বাঁধার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে।প্রদীপ কেকাকে কথা দিয়েছে হোম থেকে ছাড়া পে্লেই সে কেকাকে বিয়ে করে ঘর বাঁধবে।সেই আশাতেই দিন গোনে কেকা। কয়েকটা মাসেই প্রদীপ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।ছুটি হওয়ার দিন গাড়ি নিয়ে ওকে নিতে আসে ওর বাবা-মা।প্রদীপকে সঙ্গ দিয়ে সুস্থ করে তোলার বখশিস হিসাবে প্রদীপের মা তার হাতে একটা একশো টাকার নোট তুলে দিতে আসেন তার হাতে।সে কান্না লুকোতে ছুটে যায় তার রেষ্ট রুমে। 


                কিছুক্ষণ পরেই তার কাছে বিদায় নিতে আসে প্রদীপ।তার হাত ধরে সে বলে -- আজ আমি আসছি কেকা। শীঘ্রই আমি আবার আসব।তারপর তোমাকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘর বাঁধব।তুমি যেন আমাকে ভুলে যেও না লক্ষীটি।
---- না , না জীবনে আমি আর তোমাকে ভুলতে পারব না।তুমি যতদিন না আসো ততদিন আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকব।
            তারপর কেকা নিজে থেকেই এগিয়ে দেয় তার ঠোঁট।নির্জন রেষ্ট রুমে প্রদীপ এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়।নিস্পেশিত হতে হতে কেকার মনে হয় সুখের এই মুহূর্তটা যদি আর শেষ না হত।কিন্তু তখনই অফিসঘর থেকে প্রদীপের নাম ধরে ডেকে ওঠেন তার বাবা। আলিঙ্গন শিথিল করে তার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে ওঠে প্রদীপ।ক্রমশ হোম ছাড়িয়ে মেন রোডের দিকে এগিয়ে যায় গাড়িটা।আস্তে আস্তে ছোট ছোট হতে একসময় মিলিয়ে যায়।আর এক নিঃসীম শুন্যতা ঘিরে ধরে কেকাকে। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে গেট থেকে রেষ্টরুমে ফিরে যায় সে।
  

                                           শুরু হয় প্রদীপের ফেরার জন্য তার প্রতীক্ষা।কিন্তু প্রদীপ আর ফেরে না।তাই আবার নুতন লোকের সঙ্গে শুরু হয় তার নতুন প্রেমের অভিনয়।সত্যিকারের জীবন গড়া আর হয় না কেকার।ঘর বাঁধার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যায়।কেকারা সবার ঘর বেঁধে দেয়।কিন্তু কেকাদের হাত ধরে কেউ ঘরে তোলে না।           

           -----০----                                               

           



                                            

No comments:

Post a Comment