এইতো সমাজ
( ধারাবাহিক নাটক )
( মানুষ কেন বিপথে যায় , কি করেই বা ঘুরে দাঁড়ায় , সেই কাহিনীই এই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে।স্কুল জীবনে লেখা সেই নাটকই ধারাবাহিক ভবে তুলে ধরা হল আপনাদের দরবারে । নজর রাখুন ।সঙ্গে থাকুন।ধন্যবাদ )
অর্ঘ্য ঘোষ
নাট্য চরিত্র
১। শর্মাজী - এক দুঃস্থ চা ওয়ালা
২। মলয়- ঐ পুত্র
৩। মিলি- ঐ কন্যা
৪। জামাইবাবু - ঐ জামাতা
৫। পালমশাই - স্থানীয় সুদখোর।
৬। প্রনব - ঐ পুত্র।
৭। চন্দন - স্থানীয় গুন্ডা
৮। আয়ুব- স্থানীয় কারখানার মজুর
৯। রুদ্রমশাই - গ্রামের হেডমাস্টার
১০। কৃষ্ণা - ঐ ভাইঝি
১১। বিচারক
১২। প্রথম উকিল
১৩। দ্বিতীয় উকিল -
১৪। রামসিং
১৫। বড়োবাবু -
১৬। বয়-
: উপস্থাপনা :
( পাজামা পাঞ্জাবি পরিহিত নাট্যকার ও প্যান্ট, শার্ট, চশমা মলয়ের কথপোকথন )
নাট্যকার- আছা আপনার বাল্য জীবন কেমন ভাবে কাটে ?
মলয় -দেখুন আজ আমি একজন জেলা শাসক, কিন্তু একদিন আমরা ছিলাম খুব গরিব, আমার বাবা ছিলেন একজন চা-ওয়ালা। বলতে গেলে অপরের সাহার্য্যেই প্রতিপালিত হয়েছি।
নাট্যকার- আছা, আপনার এই যে এতবড় হওয়াটাকে আপনি কার অবদান বলে মনে করেন ?
মলয় -কৃষ্ণা অর্থাৎ আমার স্ত্রীর অবদানই উল্লেখযোগ্য।
নাট্যকার - আপনার সমন্ধে যে অপবাদগুলো প্রচলিত সেগুলি কি সত্যি ?
মলয় - কেন, আপনার বিশ্বাস হয়না বুঝি, একজন জেলা শাসক কি করে তার জামাইবাবুকে খুন করতে পারে , কি করে চুরি করতে পারে , কিন্তু মিঃ দাস সেদিন তো আমি জেলাশাসক ছিলাম না, ছিলাম চা - ওয়ালার ছেলে।
নাট্যকার - তাহলে আপনি জেলও খেটেছেন বলছেন যখন,তখন জেলের মধ্যে আপনার পড়াশুনা চলতো কেমন করে ?
মলয় - আপনি তো সাহিত্যিক মানুষ,রঙ ফলিয়ে অনেক কিছু সৃষ্টি করতে পারেন, আমার জীবনটাকে নিয়েও একটা নাটক লিখতে পারেন। জানেন মিঃ দাস , সবার জীবনটাই একটা নাটক, আমার জীবনের ড্রপসিন উঠতে না উঠতেই পড়ে গিয়েছিল, আর স্টেজের আলো একবার জলেই নিভে গিয়েছিল।
নাট্যকার-সত্যি বড়ো বিচিত্র আপনার জীবন।
মলয় -জানেন মিঃ দাস ,নাটকের চেয়েও মানুষের জীবনে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটে,যেখানে বিস্ময়ের অতল তলে ডুবে যায় মানুষ, যা ভাবার নয় তাই ভাবিয়ে তোলে, যা ঘটার নয়,সহজেই তা ঘটে যায়, মানুষের বুদ্ধি, বিবেক, মন নিস্তব্ধ হয়ে যায়,আমারও জীবনটা তাই মিঃ দাস। আমার জীবনটাকে নিয়ে যদি লিখতে পারেন ; তাহলে বেশ ভাল একটা নাটক তৈরি হয়ে যাবে।
নাট্যকার - আছা আপনার জীবনটাকে নিয়ে যদি নাটক লিখি আপনার আপত্তি নেই তো?
মলয় - না, না আপত্তি থাকবে কেন ? সত্য ঘটনাকে নাটক লিখবেন এইতো ভাল, তবে আমার বিশেষ অনুরোধ নাটকটার নাম রাখবেন "এইতো সমাজ "।
নাট্যকার - তাই হবে, নাটকটার নাম হবে "এইতো সমাজ "।
( পর্দা নেমে আসে )
= মিউজিক =
আজকের নাটক
"এইতো সমাজ "
রচনা- অর্ঘ্য ঘোষ
( মিউজিক )
শিল্পী পরিচয়
( মিউজিক )
প্রথম দৃশ্য
স্থান - শর্মাজীর চায়ের দোকান। সেখানে তক্তার উপরে বিস্কুট চানাচুর, কেটলি, কাপ,ডিস, ইত্যাদি রয়েছে।শমা'জী তক্তার এক কোনে বসে চিন্তা মগ্ন। এমতাবস্থায় পর্দা উন্মচিত হলো।
শর্মাজী - তাইতো মেয়েটার বিয়ের দিন ঠিক করেছি , দিনও প্রায় চলে এসেছে , অথচ হাতে একটা কানা কড়িও নেই, কী-ই বা করি ? ওদিকে মলয়টা পাশ করেছে ওর কলেজের অ্যাডমিশন ফীটাও দিতে না পারলে ওর আর পড়া হবেনা , হায় ভগবান আমার মলয় আর পড়তে পাবেনা , পাবেনা কলেজ যেতে।
( ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত পালমশাই আসিয়া ভক্তা পোষের উপর বসেন )
পালমশাই - কই হে শর্মা এক কাপ চা দাও তো।
শর্মাজী - দি, একটু বসুন চায়ের জল চাপিয়েছি।
পালমশাই - তা শর্মা শুনলাম তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে, এত টাকা কোথায় পাচ্ছো ?
শর্মাজী - কোথায় আর পাব বলুন, বাবা তো অনেক জমি জায়গা রেখে যান নি,আর ব্যাংকের পাসবই ও নেই,অথচ মেয়েটা আছে ঘারের উপর, বিয়ে তো দিতেই হবে, আপনাদের ভরসাতেই তো ওর বিয়ের ঠিক করেছি। আপনি কিছু সাহায্য করুন পালবাবু, নইলে আমার মেয়ের বিয়ে আর হবেনা।
পালমশাই - এই দেখ শর্মা তুমি আমার মতো লোককেই চেয়ে বসলে , আমার কী আছে ?
শর্মাজী - আপনাদের অনেক অনেক আছে পালবাবু, দরিদ্র শর্মাকে কিছু দিলে কমে যাবে না , ভগবান আপনাদের আবার তার দ্বিগুন ফিরিয়ে দেবেন।
পালমশাই - তা এক কাজ কর না,তোমার ছেলেটা তো এবার ম্যাট্রিক পাশ করল, ওকে আমার খাতা দেখার কাজে লাগিয়ে দাও না , আমি না হই আগাম দেব কিছু।
শর্মাজী - না পালবাবু ও করতে পারব না।অনেক দুঃখ কষ্ট করে ওকে পড়িয়েছি, ওকে বড় করে তুলব এটাই আমার স্বপ্ন , ও অনেক অনেক বড় হবে।
পালমশাই - তা ভালো বড়ো করো ওকে, আর কন্যাদায় বড়ো দায়, তুমি যখন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ , তখন তো তুমি বেঁচে যাছ হে , লাগিয়ে দাও মেয়ের বিয়ে।
শর্মাজী - পালবাবু , আপনি কিছু সাহার্য্য করবেন না ?
পালমশাই - সাহায্য কি করে করি বলো , সাহায্য আমি পেলেই নি। কই হে চা হলো ?
শর্মাজী - হয়েছে এই যে নিন।
( বলে কেটলী থেকে পালমশাইকে চা দেয় )
পালমশাই - আসছি শর্মা, ( চা খেয়ে চলে যেতে উদ্যত হয় )
শর্মাজী - আজ্ঞে আপনার চায়ের দামটা , তাছাড়া আপনার অনেক টাকা বাকি আছে ওগুলো আজ দিয়ে দিন , আমি দরিদ্র দুস্থ চাওয়ালা,অল্প পুজির উপর নির্ভর করে সংসার চালয় ।
পালমশাই - শার্মাজী তুমি দেখছি এখনও ব্যবসা করতে শিখলেনা , আমার কাছে পড়ে থাকলে তোমার টাকা ডুবে যাবে মনে করছ ?
শার্মাজী -ডোবা না ডোবার প্রশ্ন নয় পালবাবু, আমি বলেছিলাম আমার দরকার, আপনাদের মতো চারিদিকে টাকা খাটাবার মতো আমার টাকা আমাদের নেই পালবাবু।
পালবাবু - কী আমাকে টাকার জন্য কথা শোনাচ্ছ ? দেখি , তুমি কেমন করে চায়ের দোকান করে খাও।
শার্মাজী - দোহাই পালবাবাবু, আপনি বৃথা রাগ করছেন, আপনাদের সঙ্গে বিরোধ করে আমারা বাঁচতে পারি ? আমি বলছিলাম যে টাকাটা আমার দরকার।
( দরজার অপর পাশে দাড়িয়ে আয়ুব শুনতে থাকে )
পালবাবু - সেটা ভদ্রভাবে বলবে তো , জানো আমার মতো লোককে তোমার বিনা পয়সায় ডেকে চা খাওয়ানো উচিত।
শার্মাজী - কী করবো বলুন পালবাবু , পেটের দায়ে দোকানটা করেছি। সামর্থ্য থাকলে শুধু আপনাকে কেন, আপনার মতো আর পাঁচ জনকে ডেকে ডেকে চা খাওয়াতাম , নিশ্চয়ই খাওয়াতাম।
পালমশাই - ঠিক আছে পরে দিয়ে দেব।
( বলে একদিকে পালমশাই এর প্রস্থান অপর দিকে আয়ুবের প্রবেশ। পরনে ময়লা ধুতি ছেড়া গেঞ্জি )
শার্মাজী - আয় , আয়ুব আয়।
আয়ুব - শার্মাজী তু কেনে উকে টাকা চাইতে গেলি ? শালো কেপনের হাড্ডি ।
শার্মাজী -জানিস আয়ুর এরাই হচ্ছে কিনা সমাজের মাথা , এরাই কিনা গরিবের মা-বাপ,আর এরাই বলে "জীবে প্রেম করে যেইজন সেবিছে ইশ্বর " আর সেই ওরাই ইশ্বর সেবার নামে বাড়িতে অভুক্ত ভিখারী এলে বলেন , যা বেটা এখন
জপ করছি দেখছিস না। সাহার্য্য করা তো দুরের কথা , পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টে রাগ দেখায়। আর নিজেদের বেলায় গরীবের ঘাড় ভেঙে সুদ আসলটা আদায় করে নিতে ছাড়ে না।
আয়ুব - আমি উত সুব বুঝিনে, তু কেনে পালবাবুকে চাইতে গেলি আমাদিকে চাইতে পারলি নে, মনে করলি আমরা দিতে লারব লয়,কারখানায় কাম করি বুঝেই কি ছুটলোক হয়ে গেলছি, আর যদি ছুটলোকই হঁয়ে যাই তাে মুনটা তো আমাদের ছুটলোক হঁয়ে যায় নিরে। মনে রাখিস শার্মাজী আমরা পালবাবু লয় , পালবাবুর মুতন পয়সা আমাদের নাই , কিন্তু জেনে রাখিস আমাদের ছুটলুকের মুন আছে , দিল আছে , এই লে--
( বলে কোঁচর খুলে শর্মাজীকে টাকা দেয় আয়ুব )
শর্মাজী -পুরো হপ্তার মাইনেটাই তো দিয়ে দিলি , তোর চলবে কি করে ?
আয়ুব - শর্মাজী, আমারা তু ছুটলুক , দুঃখু আমাদের পেছু ছাড়ে না ,আর সেই দুঃখুকে ভুলতেই আমরা মদ গিলি ,মাতাল হই, আর পয়সাগুলোন আমাদের তার পিছুতেই ফুটে যায় , লইলে আমরাও ওই পালবাবুর মুতন দালান করতে পারতাম বুঝলি। এ হপ্তা না হয় মদ খাব না সয়ে লোব দুঃখুকে।
( প্রস্থান )
শর্মাজী -না বুকের বল হারালে চলবে না। পালবাবু আমাকে নিরাশ করলেও আয়ুব আমাকে হতাশ করেনি , না চাইতেই একজন সামান্য মজুর হয়েও পুরো হপ্তার মাইনেটা তুলে দিয়েছে আমার হাতে , এর চেয়ে বেশি আশা আমি করি না।
( কপালে ছন্দনের ফোঁটা,গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবী আর ধুতি পরে রুদ্রমশাই এর প্রবেশ , মাথায় ছাতা )
শর্মাজী -মাস্টারমশাই , মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করেছি।কিন্তু একটা পয়সাও জোগাড় করতে পারি নাই।সকলে কিছু কিছু সাহায্য করেছে আপনি যদি কিছু......।
রুদ্রমশাই - অ্যাই সুখেন তুমি জানো না ? আমিও তো আমার ছোট মেয়ে চামেলির বিয়ের দিন ঠিক করেছি , মেলা টাকার ব্যাপার। তাই তোমাকে কি করে সাহার্য্য করি বলো তো , তাছাড়া এবার ছোট মেয়ে বলে বিয়ে বেশ জাকজমক করেই দেব ভাবছি।মাইক,ব্যান্ড, লাইট, সানাই, অনেক কিছুই ঠিক করেছি। প্রচুর খরচ , তাই তোমাকে কিছু দিতে পারলাম না বলে কিছু মনে কোর না কেমন।
শর্মাজী - আপনাদের অনেক আছে, কিছু দিলে কমে যেত না। ভগবান আপনাদের আরো অনেক দিতেন।
রুদ্রমশাই - সুখেন তুমি বুঝতে পারছো না , মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি , এখন টাকা কোথায় পাবো বলো ? নইলে তোমাকে ঠিক কিছু দিতাম, তোমার ছেলে মলয়ের তো মাইনেটা ফ্রী করে দিয়েছি , কি দিই নি।আমি তাহলে এখন আসি।
( প্রস্থান )
শর্মাজী - হায়রে বিধি, ওদের ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কত ধুমধাম করবে । আর আমি আমার একমাত্র মেয়ের বিয়েতে ধুমধাম করা তো দুরের কথা তার বিয়ে কি করে দেব ভেবে পাচ্ছি না।না না আমার এই পৃথিবীতে বাপ হয়ে বেঁচে থাকাই উচিত নয়,আমি যে অক্ষম , হ্যাঁ আমি তো অক্ষম। আর ওই ওরা গরীবকে সাহায্য করা তো দুরের কথা গরীবকে শুষতে পেলে ছাড়েনা, এরাই দিনের পর দিন, ইটের উপর ইট লাগিয়ে পাশ বই এর পর পাশবই করে ফুলছে , শুধু কলাগাছের মত ফুলছে ! না ভগবান নেই।
( চেকের পাজামা একরঙ্গা জামা পড়ে চন্দনের প্রবেশ )
চন্দন - ঠিক বলেছেন জ্যাঠামশাই , ঠিক বলেছেন, ভগবান নেই।
শর্মাজী -কিছু বলছ বাবা ?
চন্দন - জ্যাঠামশাই মলয়ের মুখে শুনলাম মিলির বিয়ের নাকি দিন ঠিক হয়েছে।
শর্মাজী -হ্যাঁ বাবা , কিন্তু বিয়ে তো আর হবে বলে মনে হচ্ছে না।
চন্দন -কেন হবেনা , আমরা তো রয়েছি হেড মাস্টার, পালবাবু এরা যদি মেয়ের বিয়ে দিতে পারে , তবে জানবেন আমরা গরীব হলেও আমাদের বোনের বিয়ে দিতে পারি ওদের সাহার্য্য ছাড়াই।
শর্মাজী - চন্দন তুই কি বলছিস ?
চন্দন - যদি কিছু মনে না করেন তাহলে দুঃস্থ বোনের বিয়েতে এই বদমাইশ গুন্ডাটার এই সামান্য নিবেদনটুকু গ্রহণ করুন।
( পকেট থেকে শর্মাজীকে টাকা দেয় )
শর্মাজী - চন্দন।
চন্দন - জ্যাঠামশাই মিলিকে এটা দিয়ে বলবেন যে তার এক অধম দাদার উপহার।
শর্মাজী - না বাবা না , তোমরা অধম নও, তোমরা অতি উত্তম সমাজের বিচারে তোমরা অধম হলেও আমার মনের মানদন্ডের বিচারে তোমরা অতি উত্তম।
চন্দন - না জ্যাঠামশাই না , আপনি ভুল বললেন।আমরা উত্তম হবো কেমন করে ? আমরা যে গুন্ডা , গুন্ডামি করি, আমরা চোর , চুরি করি তাই আমরা অধমই রইব চিরকাল।আর উত্তম হবে তারাই যারা শোষন করে গরীবের বুকটা ঝাঁঝরা করে দেয়, সহায় সম্বলহীন কে দেয় দমিয়ে , যারা গরীবের বুকে চাকু চালিয়ে সাজে গরীবের নেতা। সাজে সমাজসেবী ।যাদের মুখে মধু আর অন্তর গেখরো সাপের বিষে পরিপূর্ন তারাই হবে উত্তম জ্যাঠামশাই তারাই উত্তম।
( প্রস্থান )
শর্মাজী - দেশে যদি শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, যদি কেউ গরীবের দুঃখের চির অবসান করতে পারে তো তা এরাই পারবে। এরাই তো মানুষ , এদেরই রয়েছে মানবিকতা ,যে মানবিকতা আজ তার কর্মের প্রতিফলনে প্রতিফলিত। হে ভগবান তোমার কাছে আর কিছু চাই না , বঙ্গমাতার প্রতিটি ঘরে জন্ম গ্রহন করুক চন্দন আয়ুবদের মতো মানুষ, ওদের মতো মানবিকতা। তুমি অন্ধকারের মধ্যে এদেরকে পাঠাও আলোর শিখা করে।আর আমাদের মতো দুঃখীদের পাঠাও আরও দুঃখী করে ,আরও দুঃখ দিয়ে আরও যন্ত্রনা দিয়ে, আরও সহাশক্তি দিয়ে।
( ছেঁড়া পাজামা, ময়লা সেলাই করা জামা পড়ে মলয়ের প্রবেশ )
মলয় - বাপুজী তোমার বিক্রি হলো, চলো এবার বাড়ি চলো।
শর্মাজী - হ্যাঁরে আষার হয়েছে , তোর ছেলে পড়ানো হয়ে গেল , ওদেরকে আগাম চেয়েছিলি কিছু ?
মলয় - হ্যাঁ বাপুজী, চেয়েছিলাম তো, কিন্তু ওরা তেমন কানেই নিলনা কথাটা ,এমন কি বাকী পড়া মাইনের টাকাও দিতে চাইল না।
শর্মাজী - দেবে না রে , কেউ ওরা দেবে না। আর যারা দেবার তারা না চাইতেই দেবে , যাদের নাই তারাই দেবে , আর যাদের দেবার মতো অনেক আছে তাদের কাছে মাথা ঠুঁকলেও উপদেশ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না রে।
মলয় - তুমি হেড মাস্টার মশাই , পালবাবুদের চেয়েছিলে ?
শর্মাজী - চেয়েছিলাম রে , কিন্তু একজন উপদেশ দিয়ে গেলেন আর একজনের কাছে চা খাওয়ার পাওনা টাকা চাইতেই তিনি তো দেখে নেবেন শাসিয়ে গেলেন।আর চন্দন , আয়ুব ওদের না চাইতেই ওরা দিয়ে গেল ওদের আন্তরিকতার দান।
মলয় - সত্যি ওরা দেবতা , ওদের মানুষ বললে ঠিক বলা হয় না। দুটো পা , দুটো হাতের চেয়েও এদের অন্য একটা জিনিস আছে , যা হলো সত্যিকারের মানবতা। ওদের মানুষ্যত্ব মহান মহিমায় দেবত্বে উন্নীত হয়েছে। গরীবের তো ভগবানও নেই। ওরাই আমাদের কাছে ভগবান।
( পর্দা নেমে আসে )
No comments:
Post a Comment