Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

রিয়ার কথা

            হার না মানা হার

                                     
 

                         অর্ঘ্য ঘোষ 

               



একটা হাত গিয়েছে তো কি হয়েছে ? আর একটা তো আছে । একটা হাত দিয়েই আমি আবার নতুন করে সব শুরু করব। এমন কথা বোধ হয় রিয়ার পক্ষেই বলা সম্ভব । কারণ লড়তে লড়তেই ওদের বেঁচেবর্তে থাকা । লড়াই করেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা । তাই একটা হাত হারিয়েও হার মানতে রাজী নয় হতদরিদ্র পরিবারের একরত্তি মেয়েটি । লড়াই করেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে ।


    মুর্শিদাবাদের কান্দী রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী রিয়া দাস ২১ ডিসেম্বর স্কুলে রেজাল্ট আনতে যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় সাইকেল থেকে পড়ে যায় । ইঁট ভর্তি ট্রাকটি তার ডান হাতের উপর দিয়ে চলে যায়। তারপর আর কিছু মনে নেই রিয়ার । যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে কান্দী মহকুমা হাসপাতালে । সেখান থেকে তাকে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা । নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় হাতটি কেটে বাদ দিতে হবে । সব মিলিয়ে খরচ পড়বে তিন লক্ষ টাকা । তারপরই যেন আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের মাথায়। কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা । একে মেয়ের হাত কাটা যাবে শুনেই রাতের ঘুম উবে যায় তাদের । তার উপরে ডাক্তার বলে দিয়েছেন দ্রুত হাত কেটে বাদ দিতে হবে । নাহলে পচন ছড়িয়ে পড়বে শরীরের অন্যত্র । কিন্তু সেই হাতটা কেটে বাদ দেওয়ার মতোও আর্থিক সামর্থ্যও তাদের নেই । 

  
            স্থানীয় মাধুনিয়া গ্রামে রিয়াদের অভাবের সংসার । বাবা হরিময় দাস তিন বছরের চুক্তিতে ঠিকা শ্রমিকের কাজ নিয়ে আরবে রয়েছেন । তারই পাঠানো টাকায় ভাই সমর এবং রিয়ার পড়াশোনা সহ কষ্টেসৃষ্টে সংসার চালান মা সুমিত্রাদেবী । মেয়ের দুর্ঘটনার খবর পেয়েও চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়ায় বাড়ি ফিরতেও পারেন নি বাবা । ফোনেই তিনি চড়া সুদে এলাকায় দেড় লক্ষ টাকা ধারের ব্যবস্থা করেন । কিন্তু বাকি দেড় লক্ষ টাকার জন্য অপারেশনের নিয়ে সংশয় দেখা দেয় । 



            ফেসবুকে সেই সংবাদ পাওয়ার পরই আরও অনেকের মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ উপহার ’। তারা প্রথম দফায় রিয়ার বাড়িতে গিয়ে চার হাজার টাকা পৌঁচ্ছে দিয়েছেন । শীঘ্রই আরও ৬ হাজার টাকা পৌঁচ্ছে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন সংস্থার সদস্যরা। সকলের সহযোগিতায় রিয়ার অপারেশন হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে ।


            রিয়ার মা জানিয়েছেন , ধার দেনা করে অপারেশনটা হয়েছে । কিন্তু এখনও ওষুধপত্র সহ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে ।কিন্তু আমরা কপর্দক শুন্য হয়ে পড়েছি । জানি না কি করে কি হবে । রিয়ার মামা অচিন্ত্য দাস জানান , চেষ্টা করেও ওর ডান হাতটা বাঁচাতে পারলাম না । কি করেই বা ও লেখাপড়া করবে , আর কি করেই বা অন্য কাজ করবে সেটা ভেবেই দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে । একটা হাত হারিয়ে রিয়া অবশ্য মনোবল হারায় নি । এদিন সে জানায় , এবার থেকে আমি সব বাঁহাতে করার অভ্যাস করব । তবু লেখাপড়া ছাড়ব না । আমার তো নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই । 


     স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই কর্মকর্তা সঞ্জয় রায় এবং স্বাধীন মণ্ডল জানান , ওই ছাত্রীর মনোবল অটুট রাখতে আমরা পরবর্তীকালেও সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে থাকব । 


                        ----০----                   

1 comment:

  1. Thanks a lot Arghya da for supporting us(UPOHAR) to help the sister, Riya.

    ReplyDelete