লুপ্তপ্রায় খেলা -- ১০
( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )
কানামাছি
কানামাছি
' কানামাছি ভোঁ - ভোঁ , যাকে পাবি তাকে ছোঁ '। প্রচলিত এই ছড়াটি এখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায় নি।কান পাতলে আজও ছড়াটি অনেক জায়গায় ছেলেমেয়েদের আউরাতে শোনা যায়।কিন্তু স্বরটি যেন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।আসলে ছোট - বড়ো অনেকেই ছড়াটি আউরালেও বর্তমান প্রজন্মের বহু ছেলেমেয়েই জানে না তার আসল উৎপত্তিস্থল কোথাই ? যে খেলাটির সৌজন্যে ছড়াটি এত বহুল প্রচারিত সেই খেলাটিই এখনকার ছেলেমেয়েদের বড়ো একটা খেলতে দেখা যায় না।খেলাটির নাম ' কানামাছি।' চর্চার অভাবে ওই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
অথচ একসময় ছেলেমেয়েদের প্রিয় খেলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ' কানামাছি '। বিশেষত বৃষ্টি-বাদলার দিনে ঘরবন্দী ছেলেমেয়েদের কাছে 'কানামাছিই' প্রিয় খেলা হয়ে উঠত। কারণ ঘরের ভিতরেই খেলাটির সুযোগ রয়েছে।১০/১৫ জন ছেলেমেয়ে একত্রে বা আলাদা - আলাদা ভাবে খেলাটি চলে।
অন্যান্য খেলার মতোই এই খেলাতেও পাতা ফোটানো কিম্বা ' উবু-দশ-কুড়ি -তিরিশ-চল্লিশ -পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর-আশি-নব্বই -শ ' গণনা পদ্ধতিতে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করা হয়।
নিয়ম হলো , ' মোর ' নির্ধারনের পর গামছা বা রুমাল দিয়ে ' মোরধারীর ' চোখ বেঁধে দেয় বাকি খেলোয়াড়রা। এমন ভাবে বেঁধে দেওয়া হয় যাতে ' মোরধারী ' যেন কিছুই দেখতে না পায় । চোখ বেঁধে দেওয়ার পর একজন খেলোয়াড় ' মোরধারীর ' হাত ধরে ' কানামাছি ভোঁ ভোঁ , যাকে পাবি তাকে ছোঁ ' বলে কয়েক পাক বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে ছেড়ে দেয়। তারপর বাকি সব খেলোয়াড় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আর সুর করে ওই ছড়া আউড়ে চলে। তখন ' মোরধারীকে ' দু'হাত বাড়িয়ে আন্দাজে ওইসব খেলোয়াড়দের ছোঁওয়ার জন্য এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে হয়।
ওইভাবে আন্দাজে খেলোয়াড়দের ছুঁতে গিয়ে ' মোরধারী ' মাঝে -মধ্যে খানা খন্দে পড়ে যায় । তখন তাকে উদ্দেশ্য করে দুর থেকে অন্যান্য খেলোয়াড়রা নানা রকম টিকাটিপ্পনী কেটে উত্যক্ত করে তোলে।
আর তাতেই ' মোরধারী ' মেজাজ হারিয়ে তাদের ছোঁওয়ার জন্য দিগবিদিগ শুন্য হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে।তাতে ফের খানা-খন্দে পড়ে কিম্বা কোন কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে অপদস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় খেলোয়াড়রা তার কানের কাছে গিয়ে শিশ কেটে কিম্বা বিভিন্ন পশু পাখির ডাক ডেকে দিয়ে নিরাপদ দুরত্বে সরে যায়। আর হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁতে গিয়ে বেমালুম বোকা বনে যায় মোরধারী। তখন আবার তাকে হাসির খোরাক হতে হয়।
তবে সমস্ত কিছু অগ্রাহ্য করে ' মোরধারী ' যদি কাউকে ছুঁতে পারে তাহলে তার ' মোর ' দশা ঘোঁচে।তখন একই প্রক্রিয়ায় ' মোর ' খাটতে হয় ছোঁওয়া পড়া খেলোয়াড়টিকে। এই খেলাটির প্রচলন কমলেও পুরোপুরি হারিয়ে যায় নি। অনেক জায়গায় ছেলেমেয়েদের আজও খেলতে দেখা যায় ' কানমাছি ' খেলা।বাবা-মায়েরাও বৃষ্টি - বাদলার ছেলেমেয়েদের ভুলিয়ে রাখার জন্য ঘরের মধ্যেই মেতে ওঠেন ওই খেলায়।
No comments:
Post a Comment