Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ১২



                                                              


   
     ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা )
                  

                     লুপ্তপ্রায় খেলা 

                                                    


                  ( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )                                                             
                  
                             রুমাল চোর 



ছেলেমেয়েদের প্রিয় খেলাগুলির মধ্যে এখনও কোন রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে যে কয়েকটি খেলা তার মধ্যে অন্যতম হল রুমাল চোর। চর্চা অনেক কমে গেলেও ওই খেলা এখনও ছেলেমেয়েদের খেলেতে দেখা যায়। বিশেষত বনভোজন , পুজোমণ্ডপ কিম্বা কোথাও বেড়াতে গিয়ে সময় কাটানোর জন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়েদেরও ওই খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়। আসলে ওই খেলায় খুব বড়  জায়গা কিম্বা উপকরণ প্রয়োজন হয় না। একটি রুমাল বা কাপড়ের টুকরো আর ৮/৯ জন বৃত্তাকারে বসার মতো একটা জায়গা হলেই ওই খেলা চলে।তাই বোধহয় যে কোন পরিবেশে খেলা চলে বলেই খেলাটি আজও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সম্ভব হয়েছে।   হারাতে হারাতেও আজও টিকে রয়েছে ওই খেলা।রুমাল অর্থাৎ বমাল সহ একজন খেলোয়ারকে        খেলার মাধ্যমে চোর প্রতিপন্ন করাই ওই খেলার মূল লক্ষ্য। তাই বোধহয় খেলাটির নাম ' রুমাল চোর।'  চোর ধরার পর মারধোর দেওয়ার রীতিও প্রচলিত আছে রুমাল চোর খেলায়। তবে নৃশংস গণপ্রহার নয়, শুধুমাত্র গৃহস্বামী অর্থাৎ 'মোরধারীর' হাতের কিল হজম করতে হয় চোরকে।             


                        ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিম্বা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে । পাতা ফোটানো কিম্বা উবু-দশ গণনার মাধ্যমে প্রথমে একজনের মোর নির্ধারণ করা হয়।' মোর ' নির্ধারণের পর ' মোরধারীর ' হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি রুমাল কিম্বা কাপড়ের টুকরো। বাকি খেলয়াড়রা মাঠের মধ্যে বৃত্তাকারে বসে। সেখান থেকে ১০/১২ ফুট দুরে একটি সরলরেখা টানা হয়। খেলার ভাষায় সেটিকে 'মোরের ' ঘর বলে । মোরধারী'কে রুমাল হাতে সেই  ঘরে  দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।নিয়ম হলো , বৃত্তাকারে বসে থাকা খেলোয়াড়রা ' রেডি '  বলার পর 'মোরধারী'কে  রুমাল হাতে ওইসব খেলোয়াড়দের ঘিরে চক্রাকারে ঘুরতে হয়। 


                 
                               চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতেই খুব সন্তর্পণে রুমাল বা কাপড়ের টুকরোটি কোন একজন খেলোয়াড়ের পিছনে চুপটি করে নামিয়ে দিতে হয়। এইসময় বৃত্তাকারে বসে থাকা খেলোয়াড়দের খুব সজাগ থাকতে হয় অর্থাৎ তার পিছনে রুমাল রাখা হয়েছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হয় । অন্যথায় তার কপালে জোটে মহা দুর্ভোগ।কারণ রুমাল রাখার বিষয়টি টের না পেয়ে যদি ওই খেলোয়াড় বসেই থাকে তাহলে সে কার্যত বমাল সহ চোরের দায়ে ধরা পড়ার সামিল হয়। তখন এক পাক ঘুরে এসে 'মোরধারী ' তার পিঠে চোরের মতোই গুম গুম করে কিল মারার সুযোগ পায়। তখন তড়িঘড়ি সে নিজের জায়গা ছেড়ে রুমাল হাতে ' মোরের ' ঘরে পালানোর পথ পায় না।কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত না সে  রুমাল নিয়ে ছুটে পালাতে পারে ততক্ষণ তার পিঠে কিল পড়তেই থাকে। ওই খেলোয়াড় উঠে যাওয়ার পর তার জায়গায় বসার সুযোগ লাভ করে ' মোরধারী।' আর যে চোরের দায়ে ধরা পড়েছে অর্থাৎ যার পিছনে রুমাল ফেলা হয়েছিল তাকেই ' মোর ' খাটতে হয়। 




                                                তবে কোন খেলোয়াড় যদি তাকে চোর সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা অর্থাৎ তার পিছনে রুমালের অস্তিত্ব টের পেয়ে আগেই রুমাল নিয়ে উঠে ' মোরের ' ঘরে পৌঁচ্ছে যেতে পারে তাহলে তাকে 'মোর ' খাটতে হলেও কিল হজম করতে হয় না। কিল বা ' মোর ' এড়াতে কোথাও কোথাও হাত দিয়ে দেখার নিয়ম চালু থাকলেও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার নিয়ম নেই। সেক্ষেত্রে ' মোরধারী ' খেলোয়াড়দের পিছন তাদের হাতের নাগাল আওতার বাইরে রুমাল রাখে । আবার খোলোয়াদের বোকা বানানোর জন্য ' মোরধারী ' একজনের পিছনে নিঁচু হয়ে ঝুঁকে রুমাল রাখার অভিনয় করে। সেক্ষেত্রে ওই খেলোয়াড় বোকা বনে গেলে তার ফল ভুগতে তাকে। কারণ কোথাও কোথাও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার মতোই হাত দিয়ে ভুল আন্দাজ করাও নিষিদ্ধ।সেক্ষেত্রে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার মতো ভুল আন্দাজে হাত বাড়ানোর অপরাধেও ' মোর ' মানতে হয় তাকে।তাই নিশ্চিত না হয়ে পিছনে হাত বাড়ানোও চলে না।সেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  বোকা বনে যাওয়ার মতোই পিছনে রুমাল থাকলেও টের পায় না বহু খেলোয়াড়।সেই হিসাবে দুদিকেই লাভবান হয় 'মোরধারী ' খেলোয়াড়।                            


        (  চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    





                      --------০--------
                                     
                            

No comments:

Post a Comment