Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা ৩৮




  


   
 ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা  )

              লুপ্তপ্রায় খেলা 

                    

                                    
   
                  ( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )


                   ' নুন তাড়াতাড়ি ' 


                                                            
                                                  
                       ( ছক - আর্য ঘোষ )           



কচিকাঁচাদের গলায়  ' ফুল -ও ' - ' ফুল -ও ' চিৎকারে একসময় মুখরিত হয়ে উঠত গ্রামগঞ্জের অলিগলি।সেই চিৎকারটাই এখন হারিয়ে গিয়েছে। কারণ যে খেলার সুবাদে ছেলেমেয়েরা ওই ধরণের চিৎকার করত সেই খেলাটিই হারিয়ে যাওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অধিকাংশই খেলাটির নামই জানে না।খেলাটি র নাম ' নুন তাড়াতাড়ি।' কোথাও কোথাও খেলাটি ' নুনদাঁড়ি ' , ' দাড়িয়াবান্দা ' কিম্বা ' গাদি খেলা ' নামেও পরিচিত।তবে খেলার নিয়মকানুন অধিকাংশ জায়গায় প্রায় একই রকম।


                                                
             একসময় ছেলেমেয়েদের প্রিয় খেলাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ' নুন তাড়াতাড়ি।'  দৌড়াদৌড়ির ব্যাপার রয়েছে বলে এই খেলা অপেক্ষাকৃত একটু বেশি বয়সের অর্থাৎ হাইস্কুল স্তরের ছেলামেয়েদের উপযুক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। খেলার জন্য প্রয়োজন স্বল্প পরিসর যুক্ত পরিষ্কার মাঠ।যানবাহনহীন ফাঁকা রাস্তাতেও খেলার চল রয়েছে। ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে খেলা চলে।কমপক্ষে ৪ জন বা ততোধিক খেলোয়াড় নিয়ে দুটি দলে খেলা হয়।খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনুযায়ী মাটিতে দাগ টেনে ৮/১০ টি বর্গাকার ঘর বিশিষ্ট একটি বড় আয়তকার ঘর তৈরি করা হয়।ঘরগুলির পরিসর এতটাই বড় হতে হয় যাতে ওইসব ঘরের ভিতরে অবস্থানকারী খেলোয়াড়দের  কোন বিভেদ রেখায় দাঁড়িয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা ছুঁতে না পারে। ঘরগুলির পাশাপাশি দু'টির একটিকে ' নুনঘর ' অন্যটিকে ' ফুল ঘর ' বা ' গাদি ঘর ' বলে। তিনটি বিভেদরেখা ' শিরা ' এবং লম্বা বিভেদ রেখাটি  'তির '  হিসাবে পরিচিত। 


                            পচ্ছন্দ সই পদ্ধতি অনুযায়ী দুটি দল গঠনের পর কারা আগে দান নেবে তা টসের মাধ্যমে স্থির করে নেওয়া হয়। টসজয়ী দলের খেলোয়াড়রা প্রথমে সবাই 'ফুল ' ঘরে অবস্থান করে।একের পর এক ঘর পেরিয়ে ' নুনঘর ' থেকে নুন অর্থাৎ একমুঠো ধুলো নিয়ে ফিরে আসাই থাকে তাদের একমাত্র লক্ষ্য।অন্যদিকে প্রতিরোধ গড়ে তাদের 'নুনঘরে' পৌঁচ্ছোতে না দেওয়ার লক্ষ্য থাকে বিপক্ষদলের। প্রতিরোধ গড়ে তোলার অর্থ হলো , প্রতিটি শিরায় এবং তিরে একজন করে দাঁড়িয়ে দুইদিকে হাত বাড়িয়ে নুনঘরে যেতে বাধা সৃষ্টি করা। ওইসময় নুনঘরে পৌঁছোনোর জন্য ঘর পার হতে গিয়ে যদি শিরা এবং তিরে প্রহরারত খেলোয়াড়রা দানচালকারী দলের কোন একজন খেলোয়াড়কে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলেই গোটা দল ' মরা ' হয়ে দান নেওয়ার সুযোগ হারায়। অন্যথায় বিপক্ষের প্রতিরোধ ভেঙে অর্থাৎ ছোঁওয়া বাঁচিয়ে কেউ যদি নুন সংগ্রহ করে নির্বিঘ্নে ' ফুলঘরে ' ঘরে ফিরে আসতে পারে তাহলেই তার দলের খেলোয়াড়রা ' ফুল - ও ' বলে চিৎকার করে ওঠে। এক্ষেত্রে বিপক্ষদল দানচালকারীদের কাছে ১ চিক খেয়ে যায়।যতক্ষণ পর্যন্ত দানচালকারীদের কেউ মরা না হয় , ততক্ষণ পর্যন্ত দান নেওয়ার সুযোগ পায় না বিপক্ষদল।সেক্ষেত্রে তারা চিকের পর চিক খেয়ে যায়। কোথাও কোথাও আবার একবার সফলভাবে নুন নিয়ে ফুলঘরে ফিরতে পারলেই দানচালকারীদের একটি  বর্গাকার ঘর কেনা হয়ে যায়। ওইভাবে একে একে সমস্ত ঘর কেনা হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পায়।


                                                         
                                           তবে বিপক্ষের প্রতিরোধ  প্রতিহত করার সময় দানচালকারী দলের খেলোয়াড়দের বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়। কারণ ঘর পারাপারের সময় একটি পা যদি আয়তকার ঘরের চতুর্সীমার বাইরে চলে যায় তাহলে ঘরে থাকা পা'টিকে মাটি ছাড়া বা তোলা চলে না।চতুর্সীমার বাইরে একটি পা থাকাকালীণ ভিতরের পা তুললেই সে এককভাবে ' মরা ' হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দানচালকারী দলের খেলোয়াড় কমে যাওয়ায় বিপক্ষ দলের প্রতিরোধ বৃদ্ধির সুযোগ ঘটে।কিন্তু ঘরের পা না তুলে বিপক্ষের ছোঁওয়া বাঁচিয়ে বাইরের পা'টি ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে নিতে পারলেই সেই খেলোয়াড় আবার নুন সংগ্রহের অধিকার লাভ করে।খেলা শেষে যে দল বেশি ঘর দখল করতে বা চিক দিতে পারে সেই দল জয়ী ঘোষিত হয়।                       

         ( চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                                                                 
                                                                                       
                                   
                  

No comments:

Post a Comment