Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ৩৯



  


   
 ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা  )



লুপ্তপ্রায় খেলা



                    ( ছবি - সোমনাথ মুস্তাফি )

 ' চাপ সে ঘোড়া '





একসময় গ্রাম বাংলার পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম ছিল ঘোড়া।বড়োদের দেখাদেখি কচিকাঁচাদেরও যে ঘোড়সওয়ার হওয়ার ইচ্ছা জাগত তা বলাইবাহুল্য।প্রচলিত এই খেলাটি সম্ভবত সেই ইঙ্গিতই বহন করে।খেলাটির নাম ' চাপ সে ঘোড়া।' খেলাটি মুলত একটু বেশি বয়েসের ছেলেদের খেলা।মেয়েদের মধ্যেও আলাদা ভাবে ওই খেলার চল রয়েছে।চর্চার অভাবে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। খেলাটি দু'দলের খেলা। এজন্য সমান সক্ষমতা বিশিষ্ট জোড় সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে ওই খেলা চলে।প্রথমে দুটি দলের জন্য দু'জন দলপতি নির্বাচন করা হয়।একইভাবে কে আগে দল গঠনের জন্য খেলোয়াড় পছন্দের সুযোগ পাবে তা ঠিক করে নেওয়া হয় টসের মাধ্যমে।তারপর দল গঠনের জন্য বাকি খেলোয়াড়রা জোড়ায় জোড়ায় গলা ধরাধরি করে চলে যায় গোপন স্থানে।সেখানে তারা নিজেদের ছদ্মনাম নির্বাচন করে।
ছদ্মনাম নির্বাচনের নিয়ম হল , প্রতি জোড়া খেলোয়াড়ের নাম একই হয়। অর্থাৎ একসঙ্গে নাম নির্বাচন করতে যাওয়া একজন খেলোয়াড়ের ছদ্মনাম রাম হলে অপরজনের নামও একই হয়। এ কই ভাবে দ্বিতীয় জোড়ার একজনের নাম মধু হলে অপরজনের নামও হয় মধু। এরপর তারা গলা ধরাধরি করে এসে দাঁড়ায়  দুই দলপতির সামনে।টসজয়ী দলপতি তাদের নাম না জেনেই  তার পছন্দ মতো একজনকে নিজের দলের জন্য বেছে নেয়।পরের বার অবশ্য বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় বিপক্ষ দলের দলপতি।ওইভাবে গঠিত হয় দুটি দল।






                               


                                         দলগঠনের পর দলপতিরা নিজ নিজ দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে ২০/২৫ ফুট দুরত্বের ব্যবধানে বাড়ি , কিম্বা কোন কিছুর আড়ালে আশ্রয় নেয়।সেই স্থানটি খেলার পরিভাষায় আস্তানা হিসাবে পরিচিত।  সেখানে দলপতি বাদে বাকি খেলোয়াড়রা নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দলপতিরা অবশ্য আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে কে আগে হাঁক পাড়বে তা টস করে ঠিক করে নেয়।

হাঁক পাড়ার অর্থ হোল , দুই দলের  দলপতি আলাদা আলাদা ভাবে গিয়ে  দাঁড়াবে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিজ নিজ বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সামনে।তারপর বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের সামনে দাঁড়িয়ে টসজয়ী  দলপতি তার দলের খেলোয়াড়দের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিপক্ষ দলের দলপতির উদ্দেশ্যে ' হাবুরে তোর জুটি কে ? ' বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। যাকে বলা হয় হাঁক পাড়া।ওই হাঁক শুনে বিপক্ষদলের দলপতি টসজয়ী দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথমে যে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে তার কাছে থেকে নির্বাচিত নাম জেনে নিয়ে চিৎকার করে তা জানিয়ে দেবে।সেই নাম শোনার পর টসজয়ী দলের দলপতি তার সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রথম খেলোয়াড় নাম জেনে নেবে।যদি দেখা যায় টসজয়ী দলের লাইনের দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড় আর বিপক্ষ দলের লাইনে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়ের নাম এক অর্থাৎ তারা খেলার শুরুতে একই সঙ্গে জুটি বেঁধে গিয়ে নাম নির্বাচন করেছিল তাহলে টসজয়ী দলের দলপতি তার নিজের দলের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে ' চাপ সে ঘোড়া ' বলে ডাক দেয়।সেই ডাক পাওয়ার পরই টসজয়ী দলের খেলোয়াড়রা হৈ - হৈ করে  বিপক্ষ দলের আস্তানায় ছুটে আসে।






                                  তারপর একই নামধারী খেলোয়াড়দের গলা ধরে পিঠে লাফিয়ে চেপে বসে। আর বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের টসজয়ী দলের ওইসব খেলোয়াড়দের পিঠে নিয়ে তাদের আস্তানায় পৌঁচ্ছে দিয়ে আসতে হয়।এরপর দু'দলের আস্তানা পরিবর্তন করে একই প্রক্রিয়ায় খেলা চলে।কিন্তু যদি দেখা যায় হাঁক পাড়ার সময় লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে থাকা দুই দলের খেলোয়াড়দের নামের মিল নেই অর্থাৎ নাম নির্বাচনের সময় তারা জুটি ছিল না তাহলে ওই নিয়ম খাটে না।
সেক্ষেত্রে টসজয়ী দলের  দলপতির প্রশ্নের জবাবে বিপক্ষদলের দলপতি টসজয়ী দলের প্রথমে থাকা যে খেলয়াড়ের নাম বলে বিপক্ষ দলের লাইনে সেই নামের খেলোয়াড় কোন অবস্থানে আছে তা দেখে নিয়ে জানিয়ে দেয় টসজয়ী দলের দলপতি। সেইমতো  নিজেদের লাইনের সেই স্থানে গিয়ে দাঁড়ায় টসজয়ী দলের খেলোয়াড়টি।তারপর ডাক পাড়া সুযোগ পায় বিপক্ষ দলের দলপতি।একই প্রক্রিয়ায়  ঘোড়া চাপাচাপি কিম্বা একই নামধারী খেলোয়াড়দের লাইনের সমান অবস্থানে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া চলে ।যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটি লাইনে ক্রমান্বয়ে একই নামধারী খেলোয়াড়দের দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ না হয় ততক্ষণ ওইভাবে ডাক পাড়া হয়। শেষে যে দলের দলপতির ডাকে খেলার ক্রম সম্পূর্ণ হয় সেই দলপতিকে তার আস্তানায় একইভাবে পিঠে করে পৌঁছে দিয়ে আসতে হয় তার আস্তানায়।                              



         ( চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                                                                 
                                                                                       
                                   
                  

No comments:

Post a Comment