নিলামে চড়েছে মাস্টারি
অর্ঘ্য ঘোষ
চিৎপুরে এই শিরোনামে কোন যাত্রাপালা লেখা হবে কিনা জানি না। কিন্তু গ্রামগঞ্জে এখন কান পাতলেই ওই ধরণের কথা শোনা যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির নাকি দর উঠেছে ১০/১২ লাখ টাকা। কে যে এই টাকা দিচ্ছে , আর কে নিচ্ছে তা বলা মুশকিল। সর্বত্রই কেমন যেন অবিশ্বাসের বাতাবরণ। স্কুল জীবনের বন্ধুও ছেলের চাকরি কেনার জন্য কোথাই যোগাযোগ করছেন তার সন্ধান দিচ্ছেন না চাকরি প্রার্থী মেয়ের বাপকে। এই পরিস্থিতিতে অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পড়েছেন কিছু যুবক যুবতী এবং তাদের অভিভাবকেরা। যেসব ছেলেমেয়ে শীত উপেক্ষা করে পড়াশোনার পর ভালো রেজাল্ট করেও চাকরির ডাক পায়নি তাদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
যখন চোখের সামনে তারা দেখছে ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসা ছেলেটিও ইণ্টারভিউ দিয়ে এসে কোথাই পোষ্টিং হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছে তখন মানসিক অবসাদ গ্রাস করে নিচ্ছে তাদের। সব থেকে করুণ অবস্থা বাবা মায়েদের। ঘটিবাটি বিক্রি করে কোন রকমে ছেলেকে পড়ানো ওইসব বাবা-মায়েরা যখন দেখছেন তার মেয়ের চেয়ে অনেক খারাপ রেজাল্টের পাশের বাড়ির ছেলেটির জন্য তার বাবা টাকা দিয়ে চাকরি পাকা করে ফেলেছেন তখন অক্ষমতার গ্লানি তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মেধারও অবমুল্যায়ন ঘটছে। যেসব ছেলেমেয়ের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বি,ডি,ও কিম্বা কোন বড়ো অফিসার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তারাও প্রাইমারি চাকরি কিনে কার্যত মোক্ষ লাভ করছে বলে মনে করছে।
তাই নিলামের দর চড়েই চলেছে। অথচ শিক্ষা দফতরের কর্তা থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতারা সংবাদ মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতার বড়াই করে চলেছেন। যদি ধরেই নি, তাদের অন্ধকারে রেখে কিছু দালাল টাকা নিয়ে লাগে তাক না লাগে তুকের খেলা খেলছেন তাহলে প্রশ্ন জাগে কি করছেন স্থানীয় নেতারা? যাদের কাছে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সকলের হাঁড়ির খবর পৌঁচ্ছে যায় , তাদের তো অজানা থাকার কথা নয় কেন জনৈক রামবাবু একইদিনে সপরিবারে ব্যাংক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছেন, কোন প্রয়োজনে শ্যামবাবুরা হঠাৎ জমি বন্ধক রেখে বাজার থেকে চড়া সুদে ধার করলেন, আর কেনই বা যদু মধুরা এক সঙ্গে স্ত্রীর সমস্ত গয়না বিক্রি করলেন।
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই নিলাম রহস্য উদঘাটিত হতে পারে। কিন্তু কে খুঁজবে উত্তর। আসলে কেঁচো খুঁড়তে কেঊটে বেড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে সবার। কারণ ওইসব নেতাদের অনেকেরই তিনবারে মাধমিক পাশ ছেলেমেয়েও যে প্রাইমারীর মোক্ষ লাভ করছে। যাদের উদ্দ্যশ্যে বাদ পড়া ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, আর একবার একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে আমাদের থেকে বেশি নম্বর পেয়ে দেখিয়ে দিক তো দেখি। কেউ অবশ্য ওই চ্যালেঞ্জকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। কিছু মানুষের চামড়া গন্ডারের চাইতেও মোটা হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ্যেই নোবেল জয়ী অধ্যাপককে কেউ বলে দিচ্ছেন কিচ্ছু জানে, সমাজতত্ত্ব বিদ্যার অধ্যাপককে অশিক্ষিত বলছেন অষ্টম শ্রেনী পাশ করা কোন নেতা।
সংবাদ মাধ্যমেরও হাত পা বাঁধা। প্রমাণ কোথাই ? অভিযোগ কোথাই ? তাছাড়া সংবাদ মাধ্যমকে কেইবা তোয়াক্কা করে আজ কাল ? এক সময় সংবাদ মাধ্যমকে তবু একটু ভয় পেত দুর্নীতি গ্রস্থেরা। এখন সে বালাই নেই। বরং অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমকে সমঝে চলতে হয় তাদের। কি চূড়ান্ত অবক্ষয় ! এরপর তো আর কেউ পড়াশোনাই করতে চাইবে না।যাদের বাবার টাকা পয়সা আছে তারা কোন রকমে পাশ করে চাকরি কিনে নেবে। আর বাকিরা জবকার্ড করে বছরে ১০০ দিন কাজের মজুরীর বিনিময়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে আরও কিছু দুর্নীতিবাজকে নিলাম হাঁকা নেতার পর্যায়ে পৌঁচ্ছে দেবে। আমাদের কি কিছুই করার নেই? বাঁকাতে বাঁকাতে মেরুদন্ড আর কতটা ধনুক বাঁকা হলে আমাদের সোঁজা হয়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে হবে ?
---------০--------
No comments:
Post a Comment