মনিমালার আক্ষেপ
অর্ঘ্য ঘোষ
কি কুক্ষণেই যে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সেদিন থানায় গিয়েছিল সেই আক্ষেপ আজও যায় নি মনিমালার। সে প্রায় বছর দশেক আগের কথা। ভালোবাসা করেই গ্রামেরই ভ্যান চালক বীরেন ভুঁইমালীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মনিমালার। দুজনেরই ভালোবাসার কোন খামতি ছিল না। বরং একে অন্যকে চোখেই হারাতো। কিন্তু রাতের পর রাত মদ খেয়ে স্বামীর পাড়া মাথায় করাটা আর সহ্য করতে পারছিল না। বিস্তর ওঝা, তাবিজ, কবজ এমন কি বর্ধমানের খোসবাগ থেকে গোপনে মদ ছাড়ানোর ওষুধ আনিয়ে খাওয়েও স্বামীকে বশে আনতে পারেনি মনিমালা। পাড়ারই সুলতা বৌদি বলেছিলেন, থানায় নতুন বড়োবাবু এসেছে। খুউব রাগী। যা গিয়ে সব খুলে বল, দেখ তুলে নিয়ে গিয়ে ঘা কতক দেবে। দেখবি সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
পরামর্শটা মনে ধরলেও স্বামীর ঘা কতক খাওয়াটা মনপুত হয়নি মনিমালার। হাজার হোক ভালোবাসার মানুষ তো। সুলতা বৌদি বুঝিয়েছিলেন, একদিন বই তো নয়। অগ্যতা নিমরাজি হয়ে সেদিন থানায় যায় মনিমালা। সব বৃত্তান্ত শুনে বড়বাবু কনেষ্টবল পাঠিয়ে থানায় উঠিয়ে আনেন বীরেনকে। ঘা কতক দেওয়ার পর গোঁফ মুচড়ে বড়বাবু বলেন, বুঝলি বাড়ি গেলেই এ ব্যাটা ফের মদ খাবে। কিছুতেই বাগে আনা যাবে না। তার চেয়ে তোরা দুজনেই বরং আমার কোয়ার্টারেই থেকে যা। প্রস্তাবটা মনোপুত হয় মনিমালার। তাদের আশ্রয় হয় বড়বাবুর কোয়ার্টারের বাইরের ঘরে। বাড়ির কাজ সহ বড়বাবুর রান্নার দায়িত্ব বর্তায় মনিমালার উপরে। আর বীরেনকে দেওয়া হয় ফুলগাছ পরিচর্চার কাজ। সেদিন মনিমালা ভেবেছিল, যাক এতদিনে একটা হিল্লে হলো।
কিন্তু অচিরেই সেই ভুল ভাঙে মনিমালার। একদিন রাতে মনিমালা দেখে বীরেনকে মদ আনতে টাকা দিচ্ছেন খোদ বড়বাবু। সেই মদ খেয়ে বাইরের ঘরে বেহেড হয়ে পড়ে বীরেন। আর সেই সুযোগে মনিমালাকে নিজের বেডরুমে ডেকে নেন বড়োবাবু। আচমকা তার উপরে জন্তুর মতো ঝাপিয়ে পড়ে বাপের বয়সী লোকটা। কোন প্রতিরোধই করতে পারে না মনিমালা। বাইরের ঘরে তখন মদে গ্রাস করে নিয়েছে বীরেন। স্ত্রীর ইজ্জত হারানোর আর্ত চিৎকার পৌঁছোয় না তার কানে। তারপর থেকে সেই একই রোজ নামচা। বড়বাবু যখনই যেখানে বদলি হন তখন বীরেন-মনিমালাকেও সেখানে যেতে হয়। আপত্তি তুললেই বড়বাবুর হুমকি, এমন কেস দিয়ে তোর স্বামীকে জেলে পাঠিয়ে দেব সারা জীবন পচে মরবে। আর তোকে শিয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবে।
অগত্যা মুখ বুঝে সব মেনে নিতে হয় মনিমালাকে। রাতের পর রাত মদে বেহুঁশ স্বামীকে নিয়ে বরাদ্দ ঘরে ফেরে ক্লান্ত বিধ্বস্ত মনিমালা। একদিন সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায় তার। পেটে তখন তাদের ভালোবাসার সন্তান। এর আগেরটা বড়বাবুর লালসার জন্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই সেদিন বড়বাবু ফের ঝাপিয়ে পড়ার উপক্রম করতেই মনিমালা বলে ওঠে, বাবু দেশের বাড়িতে তো আপনার স্ত্রী রয়েছে। কেউ যদি আপনারই মতো তাকে এইভাবে দিনের পর দিন ভোগ করে? কেমন লাগবে আপনার ? বলা বাহুল্য ওই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। মিলেছিল গালে সপাটে একটি চড়। একটু ব্যাথা লাগলেও মনিমালা বুঝেছিল, চড়টা আসলে বড়বাবু নিজের গালেই মেরেছিলেন। কারণ মাস খানেকের মধ্যে বদলি নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে বড়োবাবু গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। বড়বাবুর গালে এমন একটা চড় কেন আরও আগে মারে নি সেই আক্ষেপ মনিমালা এখন মনে মনে করে।
----------০--------
No comments:
Post a Comment