Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

পাইকারি

              

                           





              পাইকারি 


                অর্ঘ্য ঘোষ
  

                ( অনুগল্প ) 



সাত সকালেই বটতলায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। সুনীল দাসের তৃতীয় পক্ষের বউটাও নাকি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।  কানাঘুষোয় শোনা যাচ্ছে আত্মহত্যা নয় , শ্বাসরোধ করে মেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বৌ'টাকে! কারণ এর আগে সে দক্ষতার পরিচয় সুনীল আর তার পরিবার দিয়েছে।  প্রতিবারই সালিশি সভা বসিয়ে পার পেয়ে গিয়েছে সুনীল। সালিশিসভার লোকেদের তাই 
খাতিরদারিও কম করে না সে।

       
                                 এবারই বা তার অন্যথা হবে  কেন ? বাঁশের খাটের উপর সাদা কাপড়ে ঢাকা রয়েছে সুনীলের স্ত্রীর মৃতদেহ।মায়ের শব ছুঁয়ে বসে রয়েছে বছর তিনেকের মেয়ে রানু। বটতলার দুইদিকে বসে রয়েছে দুইপক্ষ। সুনীলের শ্বশুরবাড়ি আর নিজের বাড়ির লোকজন। মাঝে  মাতবর গোছের সালিশীসভার কিছু লোক। ওইসব মাতবররাই সুনীলের শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বোঝান , দেখুন যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। থানা পুলিশ করে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। উকিল--পুলিশেই সব খেয়ে নেবে। মেয়েটা আছে। ওর মুখের দিকে চেয়ে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে বরং মীমাংসা করে নিন।প্রথমদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কড়া মনোভাব নেন। চড়া গলায় বলেন , না - না ওসব মীমাংসা-টিমাংসা বুঝি না। আমরা শাস্তি চাই।



              তারপর নিজেদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ গুজগুজ - ফুসফুস করে  বলে ওঠেন , ৮ বছর আগে ১লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছি। টাকাটা এতদিনে ডবল হয়ে যেত। সেই হিসাবে আমাদের দু'লাখ দিতে হবে। সুনীলরাও কম যায় না দরদামে। তারা বলে , এই আট বছর খাওয়াতে পড়াতে আমাদের কম খরচ হয় নি। এক লাখ টাকার বেশি এক পয়সাও দেব না। 
---- আমাদের মেয়েকে বুঝি বসে বসে রাজভোগ খাওয়ানো হয়েছে ? ঝিয়ের মতো খাটিয়ে সেই এঁটোকাঁটা।
--- হ্যা তোমরা বুঝি দেখতে এসেছিলে ?
 --- বেশ অত কথায় কাজ কি ? তাহলে আইনেই যা হওয়ার হবে।
বলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা  মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম করতেই তা ছিনিয়ে নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসে সুনীলরা। আর ছোট্ট মেয়েটি মায়ের মৃতদেহের সঙ্গে একবার এদিক আর একবার ওদিক করে। আর মাঝে মধ্যে মায়ের মুখের ঢাকা সরিয়ে বলে ওঠে , মা ও মা ওঠ না। আর কতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবি ? চা-মুড়ি দিবি না ? আমার খুব খিদে পেয়েছে মা। সাড়া না পেয়ে একসময় মায়ের মুখে আলতো হাতের চাপড় মারতে থাকে সে। 


                                   তার কথা কারো কানে যায় না। সবাই তখন মৃতদেহটাকে সামনে রেখে গরু ছাগলের মতো পাইকারিতে ব্যস্ত। দীর্ঘ টানা পোড়ানের পর সন্ধ্যার মুখে দেড় লাখ টাকায় রফা হয়। কিন্তু গোল বাঁধে রানুকে নিয়ে । তাকে খাড়া করে মীমাংসা হলেও কোনপক্ষই তার দায় নিতে রাজী হয় না। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সাফ জানিয়ে দেয় , মেয়ে তোমাদের। তার দায়িত্ব আমরা নেব না। সুনীলরাও জানিয়ে দেয় , মেয়ের দায় তারাও নিতে পারবে না। 
শ্বশুরবাড়ির লোকেরা জানে , মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া মানে বড়ো টাকার গাড্ডায় পড়া। আর সুনীল হিসাব কষে , ঘরে মেয়ে থাকলে চতুর্থ পক্ষ ঘরে আনার সময় মোটা দাঁও মারা যাবে না। টাকার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় রক্ত -নাড়ীর টান। মেয়েটির বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তই হয় না। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে টাকা গুনে নিতে। আর সুনীলরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে আধ পোড়া দেহটা পুড়িয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে। রানু তখনও একবার করে মায়ের মুখের কাপড় খুলছে আর একবার করে ঢাকা দিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে মায়ের মুখটা নাড়িয়ে সমানে বলে চলেছে , ও মা বাড়ি যাবি না চল। কখন খেতে দিবি মা  ? বেচারা অবোধ শিশু জানে না মায়ের মতো তার বাড়িও হারিয়ে গিয়েছে। তবু সে বলেই 
চলে - ও মা বাড়ি চ না। 


     ( ৩১ /১০/২০১৮ ) 


      -----০----

No comments:

Post a Comment