শহিদের মা
অর্ঘ্য ঘোষ
( ২ )
মুহুর্তের মধ্যে খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। সদর পার্টি অফিসে যাওয়ার পথে মোটরবাইক আটকে সায়িন কাজীকে নাকি গণমঞ্চের লোকেরা শাবলডাঙ্গার মোড়ে খুন করে সেচখালের পাড়ে ফেলে দিয়েছে। সুরথ মাঝিকে তুলে নিয়ে গিয়েছে মাঝমাঠে। শাবলডাঙ্গা গ্রাম গণমঞ্চের দখলে। গ্রামের নেতা জাহিরুল সেখের দাপটে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়। ওই গ্রামে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল সায়িন। সেই অক্রোশ মেটাতেই জাহিরুলের লোকারাই ওই কাজ করেছে বলে গ্রামের লোকেরা বলাবলি করছে। সুরথ মাঝিকে উদ্ধার করার জন্য শাবলডাঙ্গা গ্রামের আশেপাশে জড়ো হতে শুরু করেছে অরুণোদয় পার্টির লোকেরা। খবরটা পৌঁছোয় সাংবাদিক দেবদত্ত দাসের কানেও।ফটোগ্রাফার সৌমেনকে অধিকারীকে নিয়ে সেও পৌঁছোয় ঘটনাস্থলে। শাবলডাঙ্গা গ্রাম তখন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। রয়েছে কমব্যাট ফোর্স , ব্যাফ। নামানো হয়েছে সি,আর,পি,এফও। তারা পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই ময়নাতদন্তের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সায়িন কাজীর লাশ। পাকা সড়ক এবং সেচখালের পাড়ে তখনও পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। কয়েকটা কুকুর চেটে চেটে খাচ্ছে সেই রক্ত। সৌমেন সেই ছবি তোলার পর দেবদত্তকে জিজ্ঞেস করে , ' কি করবে দাদা , এই অবস্থায় গ্রামের ভিতরে যাবে নাকি ? '
গ্রামের ভিতর থেকে তখন ভেসে আসছে মুহুর্মুহু গোলাগুলি শব্দ। মাঠের আলে ঝোলা হাতে নিরীহ - নিরীহ মুখ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিছু যুবক। তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন মুন্সীপাড়া থেকে মুদিখানার বাজার করে ফিরছে। কিন্তু ওইসব ঝোলাতে যে বোমা রয়েছে দেবদত্ত তা ভালো করেই জানে। বাসস্ট্যান্ড থেকে দেখা যাচ্ছে গ্রাম ঢোকার রাস্তায় পড়ে রয়েছে বেশ কিছু না ফাটা বোমা। এই অবস্থায় গ্রামে ঢোকা মানেই যে প্রাণটা যম দরজার কাছে পৌঁছে দেওয়া তা দেবদত্তও জানে। কিন্তু সেসব আমল দিলে তো তাদের চলে না। আমল সে এতদিন কোথাও দেয়ও নি। তাই সোমেনকে বলে , ' যেতে তো হবেই। চলো এগোয়। '
প্রাণ হাতে নিয়েই গ্রামে ঢোকে তারা। আর গ্রামে ঢুকেই দেবদত্তর মনে হয় যেন চক্রবুহে ঢুকে পড়েছে।সুরথ মাঝিকে উদ্ধার করার জন্য তখন বৃত্তাকারে বোমা ফাটাতে ফাটাতে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে অরুনোদয় পার্টির লোকেরা। জাহিরুলের লোকজনও তাদের প্রতিহত করতে সমানে গোলাগুলি চালাচ্ছে। গুলি চালাচ্ছে পুলিশও। অবিরাম গোলাগুলিতে গ্রাম লাগোয়া মাঠ ধোঁওয়ায় ধোঁওয়াকার।মনে হচ্ছে শরতের পেঁজা তুলোর আকাশটা যেন ছেড়ে ছেড়ে পড়ছে। আর তারই মাঝে দাঁড়িয়ে দেবদত্তদের অবস্থা তখন থরহরি কম্পমান। অন্যান্য সাংবাদিকরা কেউ গ্রামে ঢুকতে পারে নি। তাদের সঙ্গেই কেবল ' আজকের কথা ' পত্রিকার ফটোগ্রাফার সুকল্যাণ রায় এসেছে। সেই সময় শোনা যায় সুরথ মাঝির সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। বন্দুক চালাতে চালাতে পুলিশ সেই সন্ধানে ছোটে। পুলিশের পিছনে পিছনে তারাও ছোটে।গ্রাম ছেড়ে মাঝ মাঠে পৌঁচ্ছেই হাড়হিম হয়ে যায় দেবদত্তর। একটি হাত মাটির উপরে নড়তে দেখে ' থ ' হয়ে যায় সে। পুলিশ দ্রুত মাটি সরিয়ে উদ্ধার করে ক্ষতবিক্ষত অর্ধমৃত সুরথ মাঝিকে। দেবদত্ত ভেবে পায় না ক্ষমতা দখলের জন্য মানুষ এত নিষ্ঠুরও হতে পারে ! জীবন্ত মানুষকে কবর দিয়ে দিতে পারে ? এতো সেই নবাব কিম্বা রাজরাজড়াদের আমলেই হত বলে শোনা যায়। তারা কি তাহলে সেই আমলেই পড়ে রয়েছে ? তাই হয়তো রয়েছে , নাহলে এমন হবে কেন ? আচমকা গ্রাম থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে গোলাগুলি।
গ্রামের বাইরেও তখন সমানে গোলাগুলি চলছে। পুলিশও গুলি চালাতে চালাতে সুরথকে উদ্ধার করে নিয়ে চলে যায়। আর তারপরই বিপাকে পড়ে যায় দেবদত্তরা। কারণ ততক্ষণে গ্রাম দখল আর দখল প্রতিহত করার জন্য দু'পক্ষের গোলাগুলির লড়াই তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সেটা লক্ষ্য করেই সৌমেন বলে , ' দাদা আর গ্রামে থাকাটা নিরাপদ হবে না। সবার কাছেই আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। আমাদের তো সেই ক্যামেরা আর পেন-নোটবুক। পৈত্রিক প্রাণটা গেলেও বাড়ির লোকেরা খোঁজ পাবে না। কে কোথায় পু্ঁতে রেখে দেবে তার ঠিক নেই। '
আশঙ্কাটা উড়িয়ে দিতে পারে না দেবদত্ত। এই এলাকায় 'লাশ - গায়েব ' বলে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে। গ্রাম দখলের লড়াই কিম্বা বোমা বাঁধতে গিয়ে প্রায়ই দু'পক্ষের কেউ না হতাহত হয়। পুলিশ সব সময় তাদের সন্ধান পায় না। আইনী ঝামেলা এড়ানোর জন্য দলের লোকেরা আহতদের বাইরে চালান করে দেয়। আর নিহতদের পরিত্যক্ত বাড়ির মেঝে কিম্বা নদীর চরে গর্ত করে পু্ঁতে দেয়। দলের নেতারা এসে মৃতের বাড়ির লোকেদের বলে দিয়ে যায় , ' খাওয়াপড়া যা লাগে আমরা দেখব। মুখে টুঁ শব্দটি করবি না। তাহলে তোদেরও পুঁতে দেব। '
সেই ভয়ে নিহতদের পারলৌকিক কাজ দুরের কথা , আত্মীয় পরিজনরা কাঁদতে পর্যন্ত পারে না। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ জেনেও বছরের পর বছর এয়োতীর চিহ্ন ধারণ করে যেতে হয় বহু স্ত্রীকে। বাড়িতে গরু-ছাগল মরলে কিম্বা পড়শির কারও মৃত্যু হলে তাদের বাড়িতে গিয়ে কেঁদে প্রিয়জন হারানোর শোক প্রকাশের সুযোগ পায় তারা। সবাই ভাবে , ' আহা কি বৌটা কি নরম মনের দেখো , পরের ছাগল মরাতে কেমন কেঁদে ভাসাচ্ছে। অথচ ওরই কপালে কত কষ্ট। আজ কত দিন হয়ে গেল স্বামীটার খোঁজ নেই। আসলে ওইসব মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে কেঁদে বুকটা হালকা করে নেয় স্বজন হারানো মানুষজন। আবার বিপক্ষদলের লোকেরা ' লাশ গায়েব ' করে দিলে তো প্রিয়জনের মৃত্যুর খবরটা অজানাই থেকে যায়। বছরের পর বছর কেটে যায় প্রিয়জনের প্রতীক্ষায়। দেবদত্তর সামনেই তো কতবার বালির চর কিম্বা পরিত্যক্ত বাড়ির মেঝে খুঁড়ে বোমা, বন্ধুক, মাসকেট, গুলির মতো উদ্ধার হয়েছে কত নরকঙ্কাল। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও সেইসব নরকঙ্কাল কার তা চিহ্নিত হয় নি। হয়তো তাদের ফেরার প্রতীক্ষায় আজও বাড়ির লোকেরা পথ চেয়ে রয়েছেন।
সৌমেনের তাড়ায় টনক নড়ে দেবদত্তর , ' কই দাদা যা করবে তাড়াতাড়ি কর। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এরপর আর গ্রাম থেকে বেরনোই যাবে না। '
' হ্যা - হ্যা চল ' বলে মোটর বাইক চাপে দেবদত্ত। কিন্তু গ্রামের শেষ প্রান্তে জাহিরুলের বাড়ির কাছে পৌঁছোতেই পথ আটকায় একদল লোক। তাদের মধ্যে থেকে এগিয়ে আসে জাহিরুল। রীতিমতো শাসানির সুরে বলে , ' এই শালা সাংবাদিকগুলোও কম নয়। ওদের কাগজগুলো সমানে আমাদের পিছনে লেগে রয়েছে। শালারা অরুণোদয় পার্টির কথায় খবর করে। আমাদের কোন খবর ছাপে না। '
জাহিরুলের কথা শুনে তার দলের লোকেরা রে-রে করে তেড়ে আসে। মনে মনে প্রমাদ গোনে দেবদত্ত। বিনীত ভাবে বলে , ' দাদা বৃথাই আমাদের উপরে রাগ করছেন। আমরা তো কাগজ চালায় না। আমরা কাগজের কর্মী মাত্র। তাই কাগজের পলিসির কথা বলতে পারব না। আমরা যেমন খবর পায় সেই রকম লিখে পাঠায়। আপনারাও বলুন আপনাদের খবরও লিখে পাঠাব।'
সেই কথা শুনে দু'জন লোক এগিয়ে এসে তার দু'হাতে ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে , 'আয় শালা দেখবি আয় '।
তারপর তারা জাহিরুলের বাড়ির দরজার সামনে তাদের নিয়ে গিয়ে দাঁড় করায়।সেখানে গিয়ে দেবদত্ত দেখতে পায় পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ এক যুবকের মৃতদেহ। লোকগুলো একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলে , 'অরুনোদয় পার্টির লোকেরা জাহিরুল ভাইয়ের ছেলে লালুকে গুলি করে খুন করেছে। কাল যেন কাগজে বড়ো বড়ো করে ছাপা হয়। নাহলে তোদেরই আমরা খবর করে দেব। '
দেবদত্ত প্রত্যুত্তর দেওয়ার আগেই আর একজন বলে ওঠে , 'শুধু কি লালুই নাকি, মাঠে আমাদের আরও কতজন মরে পড়ে আছে তার ঠিক আছে ? শালাদের ধরে নিয়ে চল। সব ছবি তোলা করাবো।'
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই ঘিরে ধরে তাদের দুইজনকে। দেবদত্ত সমুহ বিপদের আঁচ পায়। মাঠে তখনও সমানে ঘন ঘন গর্জে উঠছে বোমা - বন্দুক। এই অবস্থায় মাঠে যাওয়া মানেই বেঘোরে প্রাণ দিতে যাওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যারা ডেকে নিয়ে যাচ্ছে তারাই রাগ মেটাতে মেরে ' লাশ গায়েব ' করে দেবে কিনা তার ঠিক নেই। তাই সে ইশারায় সৌমেনকে মোটর বাইক স্টার্ট করতে বলে। তারপর লোকগুলোকে বলে, ' চলুন দেখি '।
তার কথা শুনে ভীড় এগিয়ে যেতেই সে দ্রুত গিয়ে বাইকে উঠে বসে। সৌমেন তীব্র গতিতে বাসস্ট্যান্ড মোড়ের দিকে বাইক ছুটিয়ে দেয়। বাইকে আসতে আসতে দেবদত্ত দেখতে পায় জমির আলের উপরে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে আরও দু'জনের রক্তাক্ত মৃতদেহ। গ্রাম ছাড়িয়ে এসে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে তাদের।জাহিরুলের আচরণের কথা ভেবে হতবাক হয়ে যায় দেবদত্ত। সে ভেবে পায় না যার বাড়ির দাওয়ায় পড়ে রয়েছে ছেলের রক্তাক্ত মৃতদেহ সে কিভাবে সংবাদ মাধ্যমের উপরে আক্রোশ প্রবণ হয়ে ওঠে। কিভাবেই বাছেলের শোক ভুলে এত হিংস্র হয়ে উঠতে পারে ? ধারাবাহিক ভাবে রক্তপাত দেখতে দেখতে বোধহয় প্রিয়জনের রক্তাক্ত মৃতদেহও ওদের সেভাবে নাড়া দেয় না। কিন্তু ওদের মৃত্যুটা হল কি ভাবে ? অরুণোদয় পার্টির লোকেরা যেখানে ছিল সেখান থেকে তো গুলি করা সম্ভব নয়। তবে কি সেমসাইড কেস হয়ে গেল ? বেমক্কা দলের লোকেদের গুলিতেই বেঘোরে চলে গেল দুটি প্রাণ ?
শাবলডাঙ্গা মোড়ে পৌঁছোতেই অবশ্য মৃত্যু রহস্যটা পরিস্কার হয়ে যায় তার কাছে। সেখানে তখন সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশের গাড়ি। একটা গাড়ির আড়ালে একজন পুলিশকর্মী থলে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আর অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা পেটের ভিতর থেকে বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির বন্দুক বের করে সেই থলেতে ভরে দিচ্ছেন। পুলিশ কর্মীদের আচরণ কেমন সন্দেহজনক মনে হয় দেবদত্তর। চকিতে পুলিশ কর্মীদের কোমরের দিকে চোখ চলে যায় তার। আরে সবার কোমরেই তো রিভলভার গোঁজা আছে। তাহলে বন্দুকগুলো এল কোথা থেকে ? পুলিশ কি গ্রাম থেকে উদ্ধার করল নাকি ? কৌতুহলী হয়ে সে এগিয়ে যায় থলেধারী পুলিশ কর্মীর দিকে। সেখানে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন এস,ডি,পি'ও সুপ্রতিম ঘোষ। সুপ্রতিমবাবু তার বিশেষ পরিচিত। তাকে দেখে প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করার পর বলেন , ' আরে আসুন আসুন দাসবাবু। কি ভয়ংকর পরিস্থিতি বলুন তো ? এ শালারা নিজেরা মরবে। জানি না এদের টক্করে আমাদের প্রাণটাও কোনদিন বেঘোরে যাবে কিনা ? '
দেবদত্তর তখন ওইসব কথা শোনার মুড নেই। সে অবাক হয়ে থলে ভর্তি অস্ত্রগুলো দেখছিল। এতগুলো আর্মস ছিল একটা গ্রামে ? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্নটা সে করেই ফেলে , ' এতগুলো আর্মস উদ্ধার হল একদিনে ? '
' আপনাদের দেখছি শকুনির দৃষ্টি মশাই। ঠিক চোখ পড়ে গেল। উদ্ধার হয়েছে বলাটাই ঠিক ছিল। কিন্তু তাহলে তো কাল কাগজে বড়ো বড়ো করে ছেপে দেবেন। আর সেই আর্মস দেখাতে আমাদের দম ছুটি হয়ে যাবে। '
'কেন উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দেখাতে সমস্যা কোথায় ? এতো আপনাদের ক্রেডিটের ব্যাপার। '
' ধুর মশাই , আর্মস উদ্ধার করেছি নাকি যে দেখাব ? '
' তবে ওইসব বন্দুক ? '
' সে এক হিসাবে উদ্ধার করাই বলতে পারেন। তবে আজ নয়। '
' তাহলে ? '
' বিভিন্ন সময় আমরা যেসব আর্মস উদ্ধার করি তারমধ্যে ভাল ভাল আর্মসগুলো আত্মরক্ষার জন্য সরিয়ে রাখি। অকেজোগুলো উদ্ধার হয়েছে বলে দেখায়। এগুলো সেই সরিয়ে রাখা আর্মস। '
' আপনাদের আত্মরক্ষার জন্য তো নিজস্ব আর্মস রয়েছে , তাস্বত্ত্বেও বেআইনী আর্মস রাখতে হবে কেন ? '
' আরে মশাই আমাদের আর্মসে তো আইনী টুপি পড়ানো আছে। গুলি চালানোর ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি দেখলেন তো। আইনী বিধিনিষেধ মানতে গেলে পৈত্রিক প্রাণটা নিয়ে ফিরতে পারতাম ? তাই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য আমাদের ওইসব আর্মস সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। ওই আর্মসে দু/চারটে লাশ পড়ে গেলেও কেউ আমাদের টিকিটি ছুতে পারবে না। ঠিক বিপক্ষ দলের ঘাড়ে দায় চেপে যাবে।'
এস,ডি,পি'র কথা শুনে হাঁ হয়ে যায় দেবদত্ত। সেটা লক্ষ্য করে সুপ্রতিমবাবু বলেন , 'দাসবাবু সেই সিনেমাটার কথা মনে আছে তো ? "আপনি কিন্তু কিছুই দেখেন নি , আর আমিও আপনাকে কিছুই বলি নি" । বোঝেনই তো আমাদের কাজের কত ঝক্কি। আপনাদের মতো খচখচ করে লিখে দিলাম আর হয়ে গেল, তা তো নয়। চলি , পরে আবার কথা হবে। '
দেবদত্তর চোখের সামনে একের পর এক সার দিয়ে চলে যায় পুলিশের গাড়ি। তার আর বলা হয় না , ' হ্যা ভালোই বলেছেন আমাদের খচখচ করে লিখে দিলেই হল। যুদ্ধক্ষেত্রে আপনাদের কিম্বা যুযুধান দুপক্ষের মতো আমাদের আত্মরক্ষার জন্য হাতে আইনী - বেআইনী কোনরকম আর্মস থাকে না। হয় পেন- নোটবুক কিম্বা ক্যামেরা নিয়ে ইষ্টনাম জপ করতে হয়। সব কথা তো সবসময় বলা হয়ে ওঠে না। ফেরার পথে তার চোখে পড়ে দাবানলের মতো আগুন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। দাউ দাউ করে জ্বলছে বেনেপাড়া , মুন্সীপাড়া, সেখপাড়া , মীরপুর প্রভৃতি জনপদ। লম্বা লাঠির মাথায় মশাল জ্বালিয়ে নিয়ে উন্মাদের মতো ছুটে বেড়াছে কিছু মানুষ। তাদের উন্মত্ত উল্লাসে সচকিত হয়ে উঠছে চরাচর। গণমঞ্চ পার্টি - অরুণোদয় পার্টি যে যার বাড়িতে পারছে নির্বিচারে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে বাতাস।
No comments:
Post a Comment