ভুলো লাগার মাঠ পেরিয়ে
অর্ঘ্য ঘোষ
পাকাদেখার সময়ই দিনক্ষণ নির্ধারণ নিয়ে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন বিলাসিনীদেবী। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ধুমধাম করে দিতে কোন মা-বাবাই না চায় ? শেষ শ্রাবণে দিন ঠিক হলে সব আয়োজন যে বৃষ্টি বাদলায় মাঠে মারা যেতে পারে সেই আশংকা ষোলআনাই রয়েছে। কিন্তু পাত্রীপক্ষের পীড়াপীড়িতে শেষপর্যন্ত নিমরাজী হতে হয়। পাত্রীর দাদুর নাকি এখন তখন অবস্থা হয়ে আছে। খারাপ কিছু হয়ে গেলে এক বছরের জন্য বিয়ে আটকে যাবে। কথা চালাচালির পর বিয়ে আটকে থাকলে নানা উটকো ঝঞ্জাটেরও আশংকা রয়েছে। অনেক সময় এমনও হয়েছে পাকাদেখার পর ঝুলে থাকা বিয়ে আর ছাদনাতলা পর্যন্ত পৌঁচ্ছোয় নি। সেই কথা ভেবেই নিমরাজি হতে হয় তাঁকে। তাঁর সম্মতি পাওয়ার পর শ্রাবণ মাসেই বিয়ে চূড়ান্ত হয়ে যায়।
প্রশান্ত রায় আর বিলাসিনীদেবীর একমাত্র ছেলে ভাষ্কর। রামনগর গ্রামে আর দশটি অবস্থাপন্ন পরিবারের অন্যতম তাদের পরিবার। বি,এ পাশ করার পর বেশ কিছুদিন চাকরির চেষ্টা করে হতাশ হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়েছে ভাষ্কর। তারপর থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে যাত্রা , সিনেমা দেখে বেড়ায়। ক্লাবঘরে বসে তাস পেটায়। বারমুখী ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে ঘরমুখী করতে বিলাসিনীদেবীই তলায় তলায় মেয়ের খোঁজ শুরু করেছিলেন। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়া সমন্ধটা আনেন। পাত্রী অষ্টমী যথেষ্ট সুন্দরী। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের বিনোদিয়া গ্রামে বাড়ি। সে'ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পারিবারিক অবস্থা অতটা স্বচ্ছল নাহলেও অষ্টমীর বাবা বিজয় সরকার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। দেখাশোনার পর উভয়পক্ষের পচ্ছন্দ - অপচ্ছন্দের ব্যাপারটি মিটে যাওয়ায় বিয়েটা আর ঝুলিয়ে রাখতে চাননি বিজয়বাবু।
বিলাসিনীর আশংকাটিই সত্যি হয়। বিয়ের দিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মুখ ভার বিলাসিনীদেবীরও। আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখেননি তিনি। প্রতিবেশীদের টেক্কা দিতে নহবতখানা বসিয়েছেন। আলো দিয়ে বাড়ি সাজিয়েছেন। ভুঁড়িভোজেরও এলাহি আয়োজন। সেসব এখন মাঠে মারা যেতে বসেছে। মনে মনে বেহাইমশাইয়ের মরণাপন্ন বাবাকেই দোষারোপ করে মনের খেদ মেটান। প্রশান্তবাবুর অবশ্য সেসব দিকে মনোনিবেশ করার অবকাশ নেই। এই ঘনঘটায় কি করে বর আর বরযাত্রী বিয়ে বাড়ি পৌঁচ্ছোবে সেটা নিয়েই যত দুশ্চিন্তা তাঁর। দুশ্চিন্তার কথাও বটে। রামনগর থেকে বিনোদিয়া প্রায় কুড়ি কিলোমিটারের পথ। যাতায়াতের মাধ্যম বলতে রয়েছে পালকি আর খান দশেক গরুরগাড়ি। বর আর নিতবর যাবে পালকিতে। বরযাত্রীদের নিয়ে গরুরগাড়িতে বরকর্তা। যেতে হবে মেঠো রাস্তা দিয়ে , আলপগাড় ভেঙে। মাঝে জামনার বিল। বিল পেরিয়ে ভুলোলাগার মাঠ। দিনের আলো থাকতে থাকতে সে মাঠ পেরোতে না পারলে আর রক্ষা নেই। ভুলোয় ধরলে কি যে হবে তা আগে থেকে আন্দাজ করা মুশকিল ৷ সারারাত ভুল পথে ঘুরিয়ে মারা বিচিত্র কিছু নয়। ইউনিয়ন বোর্ডের রাস্তা একটা আছে বটে কিন্তু তা এতটাই ঘুরপথ , বর আর বরযাত্রী বিয়েবাড়ি পৌঁচ্ছোতেই লগ্ন বয়ে যাবে। সেইজন্য মাঠের রাস্তা দিয়েই যাওয়া ঠিক হয়েছে।
দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরেই পালকি বাহকদের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের গরুরগাড়ি বলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশীরাও যথারীতি টপ্পর বেঁধে , গরুকে স্নান করিয়ে শিঙে তেলটেল মাখিয়ে বিকালেই গাড়োয়ানকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। বেহারারাও পালকি নিয়ে এসে হাজির হয়েছেন। বৃষ্টি তখনও টিপটিপিয়ে চলেছে। তারই মধ্যে বিলাসিনীদেবী স্ত্রী আচার সেরে ছেলের চিবুকে হাত ছুঁয়ে চুমু খেয়ে পালকিতে বসিয়ে দিয়ে আসেন। শঙ্খ আর উলুধ্বনির মধ্যে দিয়ে প্রশান্তবাবুর বড় সমন্ধী ধ্রুবপদর নেতৃত্বে শুরু হয় বরানুগমন। মহিলারা হাত জোড় করে " দূর্গা - দূর্গা " বলে কপালে ঠেকান।
বৃষ্টিজনিত কারণে সেদিন বেহারাদের গলায় গান নেই। দুলকি চালের পরিবর্তে তাঁদের গতি কিছুটা দ্রুত লয়ে। পালকির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যাঁচোরকোচোর শব্দ তুলে সার দিয়ে এগোচ্ছে গরুরগাড়ির কনভয়। গাড়ি থেকে গলা উঁচিয়ে ধ্রুবপদ পালকি বেহারাদের তাড়া লাগান , ' একটু জোরসে পা চালিয়ে চল না বাবা। দিনের আলোয় ভুলোলাগার মাঠটা পেরোতে পারলে বাঁচি।'
বেহারাদের সর্দার উত্তর দেন , ' পা চালিয়ে চলবো কি করে কর্তাবাবু ? জলে কাদায় পা চালিয়ে চলার যো আছে ? পা মাটিতে আঁটছে না যে। বেশি তাড়াহুড়ো করতে গেলে শেষে পা হড়কে পালকি নিয়ে আছাড় খেতে হবে যে '।
তাঁর কথা শুনে সবার বুক দুরুদুরু করতে থাকে। ভুলোর খপ্পড়ে পড়লে কপালে যে অশেষ দুর্ভোগ আছে সেই সম্পর্কে কারও দ্বিমত নেই। সেই আশংকায় প্রবীণেরা রামনাম করতে শুরু করেন।
কথায় আছে যেখানে ভূতের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। জামনার বিল পার হতেই দিনের আলো মরে আসে। সেই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া দিতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই চলার গতি আরও মন্থন হয়ে আসে। সঙ্গে একটা হ্যাচাক লাইট আনা হয়েছে। গরুরগাড়ির নিচেও একটা করে লঠন ঝোলানো রয়েছে । প্রথমে হ্যাচাক জ্বালিয়ে নেওয়া হয়। সেটা মাথায় নিয়ে পালকির আগে আগে হেঁটে চলেন বেহারাদের সর্দার সুজন মেটে। খোলামাঠে হ্যাচাকের আলো অদ্ভুত একটা আলো আধারির সৃষ্টি করে। আলো আঁধারিতেই এগিয়ে চলে বরযাত্রীর কনভয়। বেশিদূর অবশ্য এগোনো হয়না। ভুলোলাগার মাঠে পৌঁচ্ছানোর মুখেই হোঁচট খেয়ে পড়ে যান সুজন। হ্যাচাকের মেন্টাল যায় ভেঙে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যায় চারদিক। অগত্যা গরুরগাড়ির লন্ঠনগুলি জ্বালিয়ে নিয়ে শুরু হয় ফের পথ ভাঙা। ঝড়ো হাওয়ায় লন্ঠনের মিটমিটে আলো মাঝেমধ্যে নিভু নিভু হয়ে আসে। অন্ধকারটা তখন যেন চেপে ধরে। ফাঁকা মাঠ পেয়ে উল্টোপাল্টা হাওয়াও যেন নানারকম কেরামতি শুরু করে।
তারমধ্যেই ভুলোলাগার মাঠে গিয়ে পড়ে বরযাত্রীর কনভয়। বরযাত্রীরা মনে মনে ইষ্টনাম জপ করতে শুরু করে। মাঠটা পার হওয়ার প্রতীক্ষায় থাকে। মাঠ যেন আর শেষ হয়না। কিলোমিটার পাঁচেকের পথ ভুলোলাগার মাঠ। সেই হিসাবে মাঠ পেরোতে পৌনে এক ঘন্টা সময় লাগার কথা। দেড়ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাঠ শেষ হয়না। 'এইভাবে চললে বিয়েবাড়ি পৌঁচ্ছোতে তো লগ্ন বয়ে যাবে রে ', ধ্রুপপদবাবু উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সুজন সর্দার সাড়া দেন , ' তাই তো কর্তা কোন কিছু মালুম হচ্ছে না। দিকদিশা সব হারিয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে। তেনাদের খপ্পরে পড়ে গেলাম কিনা কে জানে !'
ততক্ষণে সবাই বুঝে যায় ভুলোয় ধরেছে তাঁদের। সেইজন্য ভুল পথে ঘুরে ঘুরে হয়রান হতে হচ্ছে। সাহস করে কেউ আর কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। ভুলোর হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সবাই ইষ্টনাম জপ করতে থাকেন। তাঁদের জপমন্ত্রের জন্যই কিনা কে জানে , কাকতালীয় ভাবে আরও আধঘন্টা খানেক ঘোরাঘুরির পরে আলোর দেখা মেলে। সেই আলো অনুসরণ করে বিয়েবাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় বরযাত্রীর কনভয়। আশ্চর্যজনক ভাবে তখনই বৃষ্টি ধরে আসে। পালকি - গাড়ি থামতেই মহিলারা স্ত্রীআচারের পর বর এবং নিতবরকে বরণ করে ভিতরে নিয়ে যান। কন্যাকর্তারা বরযাত্রীদের সম্ভাষণ জানিয়ে বিয়ের মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে বসান৷ বিজয়বাবু হাত জোড় করে ধ্রপপদবাবুকে সম্ভাষণ জানিয়ে বলেন , ' সকাল থেকে যা শুরু হয়েছে। আপনাদের দেরি দেখি খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। পথে কোন অসুবিধা হয়নি তো ? '
' অসুবিধা বলতে ভুলোয় পাওয়া মাঠটা পেরোতেই অনেক সময় লেগে গেল। নাহলে তো আরও অনেক আগে পৌঁছে যেতাম '।
' বুঝেছি, আপনাদের নির্ঘাত ভুলোয় ধরেছিল। তেনারাই আপনাদের অযথা ঘুরিয়ে হয়রান করে ছেড়েছে '।
ভুলোর চক্করে পড়ে বরযাত্রীরা এতক্ষণ খিদে তৃষ্ণা সব ভুলে ছিল। বিয়েবাড়িতে সরবত আর চা পেটে পড়তেই তাদের খিদেটা চাগিয়ে ওঠে। খিদের দোষ দেওয়াও যায় না। সেই কোন দুপুরে খেয়ে বেরিয়েছে সব। সেইজন্য বরযাত্রীরা উসখুস করতে শুরু করে। বিষয়টি আন্দাজ করেই ধ্রবপদবাবু কন্যাকর্তাদের ডেকে বলেন , ' দেখুন আপনাদের যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আর টিফিনের ঝামেলা না করে বিয়ে বসানোর পাশাপাশি একবারে বরযাত্রীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। ভোর ভোর বেরোতে হবে আবার। খাওয়া দাওয়ার পাটটা চুকে থাকলেই ভালো হয় '।
বিজয়বাবু শশব্যস্ত হয়ে পড়েন , ' বিলক্ষণ , বিলক্ষণ। কিচ্ছু অসুবিধা নেই। সব রেডি হয়ে আছে। আমি সেই ব্যবস্থাই করছি '।
কর্মকর্তাদের ডেকে সেই মতো ব্যবস্থা করতে বলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে বরযাত্রীদের প্যাণ্ডেলে খাওয়াতে বসানো হয়।পাত্রীকেও মন্ডপে এনে সাতপাক ঘোরানো , শুভদৃষ্টির পর বসিয়ে দেওয়া হয় বিয়ের পিঁড়িতে ৷ চলতে থাকে মন্ত্রপাঠ। সেইসময় বেশ কয়েকটি হ্যাচাক লাইট হাতে পালকি নিয়ে একদল লোককে কলরব করতে করতে বিয়েবাড়ি অভিমুখে ছুটে আসতে দেখা যায়। তাদের কলরব কানে আসতেই কন্যাকর্তারা কেমন যেন হকচকিয়ে যান। তাঁরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকেন।
আচমকা লোডশোডিংয়ের মতো বিয়েবাড়ির সব আলো নিভে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা বিয়েবাড়ি। ততক্ষণে পালকি আর হ্যাচাক নিয়ে লোকগুলো পৌঁছে যায়। সেই আলোয় একটু ধাতস্থ হয়ে বরযাত্রীরা হকচকিয়ে যান। কোথায় খাওয়ার পাণ্ডেল , কোথায় বিয়ের মণ্ডপ ? দেখা যায় একটা ভগ্নস্তূপের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। ভোজবাজির মতো আস্ত বিয়েবাড়িটাই লোপাট হয়ে গিয়েছে। সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিজয়বাবু। তাঁকে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান। ধ্রুবপদবাবু সাহস করে জিজ্ঞেস করেন , 'কি ব্যাপার বলুন দেখি মশাই ? এই দেখলাম ধুতি পড়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। এখন দেখছি প্যান্টশার্ট পড়ে আছেন ? বিয়েবাড়িটাই বা গেল কোথায় ? '
বিজয়বাবু আমতা আমতা করেন , ' আপনি ভুল দেখেছেন বেহাইমশাই। বিয়েবাড়ি এখানে কোথায় পাবেন ? বিয়েবাড়ি তো আরও কিলোমিটার খানেক দূরে। আপনাদের দেরি দেখে এগিয়ে নিতে এলাম '।
' কি বলছেন ! আমি ভুল দেখছি ? তাহলে এতগুলো লোকের খাওয়ার এলাহি আয়োজন ? '
' সব ভূতুড়ে কাণ্ড ! '
' ভূতুড়ে কাণ্ড মানে ? দাঁড়ান , দাঁড়ান আপনারাই ভুত নন তো ? নিজেদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে ঘাড় মটকাবেন না তার ঠিক কি আছে ? '
' বিশ্বাস করুন আমি যেটা বলছি সেটাই সত্যি। আজ যে ভগ্নস্তুপের সামনে আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন সেটা দীর্ঘদিন আগে এক দরিদ্র বাহ্মণের বাড়ি ছিল। সেই ব্রাহ্মণ সাধ্যের বাইরে গিয়ে মোটা টাকা পণ দিয়ে এক বড়লোকের ছেলের সঙ্গে একমাত্র মেয়ের বিয়ের ঠিক করেছিলেন। কিন্তু পণের টাকা পুরোপুরি মেটাতে না পারায় পাত্রের বাবা বিয়ের আসর থেকে ছেলেকে তুলে নিয়ে চলে যান। ব্রাহ্মণ তার হাতে পায়ে ধরেও আটকাতে পারেন নি৷ এমনকি সেদিন বিয়েবাড়ি উপস্থিত লোকেদের কাকুতিমিনতি করেও মন গলাতে পারেন নি। কেউই তাঁর মেয়ের লগ্নরক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল বিয়েবাড়িতে। পরদিন সকালে মেয়ের সঙ্গে মা বাবাকেও ঘরের কড়িকাঠ থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখা যায়। সেই থেকে ভূত হয়ে এখানেই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। গভীর রাতে মেয়েটির কান্না শোনা যায়। কেউ কেউ নাকি হেঁটে বেড়াতেও দেখেছে। মেয়ের লগ্নরক্ষার জন্য সেই ব্রাহ্মণ আজও তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে কোন বিয়ে গেলে ওইভাবে আটকে রেখে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই করতে গিয়ে কত মেয়ে যে লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার ঠিক নেই '।
এতক্ষণ সবাই সিনেমার গল্পের মতো রুদ্ধশ্বাসে বিজয়বাবুর কথা শুনছিলেন। বরবাবাজী ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। বিজয়বাবু থামতেই সে আর বিষ্ময় চেপে রাখতে পারে না , ' কিন্তু আমি যে আপনাকে বিয়ে দিতে দেখলাম। শুভদৃষ্টিতেও অষ্টমীকে -- '।
বিজয়বাবু তার কথা কেড়ে নেন , ' ঠিকই দেখছ তুমি। সবই ভূতুড়ে কাণ্ড। এখন ব্রাহ্মণের কিছু চেলাচামুণ্ডা জুটেছে। তাদের নেটওয়ার্ক খুব শক্তিশালী। কাছেপিঠে কোন মেয়ের বিয়ের ঠিক হলে সব তথ্যভাণ্ডার সংগ্রহ করে নিয়ে আসে তারা। তারপর মেয়ে , মেয়ের বাবার রূপধারণ কিম্বা বিয়েবাড়ির আয়োজন করাটা তাদের অসাধ্য কি ? চলো চলো , পরে সব বলা যাবে। এরপর দেরি হলে সত্যি সত্যি লগ্ন বয়ে যাবে '।
' দাঁড়ান মশাই। আপনিও আসলে মেয়ের বাপ তো ? ভুলো , ভূতের পর আবার অন্য কোন চক্করে গিয়ে পড়বো না তো ? আগে একটা চিমটি কেটে পরখ করে নিই '।
বিজয়বাবুর হাতে সত্যি সত্যি চিমটি কেটে বসেন ধ্রুবপদ। বিজয়বাবু " উঃ " করে ওঠেন। বরযাত্রীরা সব হো - হো করে হেসে ফেলেন। তারপর গাড়িতে গিয়ে উঠে বসেন তাঁরা। খিদেয় তখন তাঁদের পেটে যেন ছুঁচোয় ডন বৈঠক শুরু করে দিয়েছে।
---০---
No comments:
Post a Comment