Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

গল্পগুচ্ছ - ৩

 

                মঞ্জুর জিজ্ঞাসা 


 
               

                             অর্ঘ্য ঘোষ

খাটালে গরুর জাবানা দিতে দিতে ছোটবেলার কথা মনে পড়তেই হাত থেমে যায় মঞ্জুর। তাদের একটা রাংগী গাই ছিল। ভাই আর সে এমনি করেই খাবার দিত। কিন্তু সে ছিল ভালোবেসে করা। আর আজ তাকে চাপের মাথায় করতে হয় সব কাজ। রোজ ৩০ টি গোরু মোষের গোবর পরি খাটালে গরুর জাবানা দিতে দিতেই ছোট বেলার কথা মনে পড়তেই হাত থেমে যায় মঞ্জুর।


                    তাদের একটা রাংগী গাই ছিল। ভাই আর সে এমনি করেই খাবার দিত। কিন্তু সে ছিল ভালোবেসে করা। আর আজ তাকে চাপের মাথায় করতে হয় সব কাজ।রোজ ৩০ টি গোরু মোষের গোবর পরিস্কার, গা ধোয়ানো, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে দুধ দুইবার সময় বাছুর ধরে থাকা। মাঝে মাঝে অত ধকল শরীর নিতে পারে না।কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না।গোয়াল পরিস্কার, গা ধোয়ানো, খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে দুধ দুইবার সময় বাছুর ধরে থাকা।


                     মাঝে মাঝে অত ধকল শরীর নিতে পারে না। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না। পান থেকে চুন খসলেই তো খিস্তির বন্যা, চুলের মুঠি ধরে লাথি। সব আজ গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। নিমেষে মঞ্জু চলে যায় বীরভুমের নিজেদের ছোট্ট গ্রামটিতে। বাবা-মা ভাইকে নিয়ে ছিল তাদের চারজনের সংসার। বাবুদের বাড়িতে বাবা মাহিন্দারি করত, মা ঝিগিরি। দুপুরে কাজের শেষে বাবুদের বাড়ি থেকে আনা খাবার তিনজনে ভাগ করে ভরপেট জল খেতে নিত। বাগানে বাগানে তালের সময় তাল, জামের সময় জাম, আমের সময় আম কুড়িয়ে খেয়ে পেত ভরাত দুই ভাই বোন। অভাবের সংসার কিন্তু ভালোই ছিল দিনগুলি। সন্ধ্যায় বাবা বাড়ি ফিরে পা ছড়িয়ে বসে কাঞ্চনমালা , ঝিনুকমালার গল্প বলত। মা বাবার হাজা ধরা আংগুলের ফাঁকে তেল গরম করে লাগিয়ে দিত।


                                    গল্পে গল্পে তারা ভুলেই যেত বাড়িতে খাবার নেই। খিদে পেটেই ঘুমিয়ে যেত সবাই। পাশের বাড়ির মিতার সংগে গঙ্গাজল পাতিয়েছিল সে। সময় পেলেই ডুব সাঁতার কাটত, কিত কিত খেলত। মিতার বাড়ি থেকে আনা তেঁতুল মেখে খেত। হঠাৎ একদিন মিতার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। মিতার বাবার ছিল মহাজনী কারবার। খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় তার। সেই থেকেই চাপে পড়ে যায় মঞ্জুর বাবা। পাড়া প্রতিবেশীরা দুবেলা বাবাকে বলতে থাকে পিঠোপিঠি মিতার বিয়ে হয়ে গেল। এবার তোরটাকে পার কর মদনা। নাহলে কি হয় যায় কে বলতে পারে! অগত্যা বাবাকে তোড়জোড় শুরু করতে হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লোকে বলত মদনার মেয়ে যে ঘরে যাবে সে ঘর আলো করবে। কিন্তু ঘরে তোলার পাত্র আর জোটে না। যারা আসে ঘর দোরের অবস্থা দেখে পাততাড়ি গোটায়।


                                         গ্রামেরই একটি ছেলে আড়ে আড়ে চাইত, সেও সেই ওই পর্যন্তই। পড়শিদের চাপে মদন তিতিবিরক্ত হয়ে পাশের গ্রামের পরেশকাকুর সংগে আলোচনা করে একেবারে বিয়ে চূড়ান্ত করেই এল। পরের দিন কলেশ্বরের মন্দিরে বিয়ে। বাবুদের দেওয়া একটা রঙ চটা বেনারসি পড়ে বাবামায়ের সংগে মন্দিরে হাজির হয় সে। কিন্তু বিয়ের আসরে কাকে দেখছে সে। টাক মাথার হুমদো লোকটা যে তার বাপের চেয়েও বড়ো। কান্নায় মুখ বুজে গিয়েছিল। তারই মাঝে বিয়ে হয়ে যায় তার। রাতের ট্রেনেই ফিরতে হবে। বিদায় দেবার সময় বাবা শুধু হাত দুটো জড়িয়ে বলেছিল, কেন রে মা এত রূপ নিয়ে আমার ঘরে জন্মেছিস। সোনার প্রতিমা ভাসান দিতে হলো রে মা। পরে মঞ্জু শুনেছিল, পরেশকাকা বিনা পয়সায় বিয়ের ব্যবস্থা করার কথা বলে পাত্র পক্ষের কাছে মোটা টাকা নিয়েছিল।

                               সেই থেকেই ২০ বছর সাহরানপুরের খাটালই তার ঠিকানা। লোকটার বাড়িতে স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে সংসার রয়েছে। মেয়েটা তারই বয়সী। খাটালে দিনমান খাটনি, রাতে হুমদো লোকটার বিকৃত লালসা চরিতার্থ করতে হয়। কখনও বন্ধুদের হাতে তাকে ছেড়ে দেয় লোকটা। সব মনে পড়ে যায় মঞ্জুর। বাবা - মা কি আর বেঁচে আছে ? ভাইয়ের নিশ্চয় বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর সেই ছেলেটা?  সেও নিশ্চয় বিয়ে থা করে সুখী হয়েছে , ভুলে গিয়েছে তার কথা। ভাবতেই ভাবতেই হাত থেমে যায়। আর চিল চিৎকার করে ওঠে হুমদো লোকটা--হারামজাদী মাগী দেশোয়ালি ভাতারের কথা ঘুচিয়ে দেব। শালি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তোকে কিনে এনেছি, এখনও উসুল হয়নি। লহমায় বীরভুমের গ্রাম থেকে সাহরানপুরের খাটালে ফেরে মঞ্জু। মনে মনে ভাবে ২৫ বছরে তার গায়ে গতরে খাটার মুল্য কি ১৫ হাজার টাকাও নয়  ?

                                              -----০-----


           ভানুবালার সংসার


 সেই কবে স্বামীকে হারিয়েছেন ভানুবালা। তারপর ঝিগিরি করে দুই ছেলেকে মানুষকরেছেন। স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে তাদের এখন ভরা সংসার। সেখানে ঠাই হয়নিভানুবালার।তার ঠিকানা এখন কাটোয়া স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম।


                সারাদিনমান মহাজন পট্টিতে ঘুরে ঘুরে বেচে থাকার রসদ সংগ্রহ করে সে। ভিক্ষা সে করেনা। মহাজন পট্টিতে যেসব ট্রাক মাল খালাস করতে আসে তা থেকেই সে সংগ্রহ করে নেয়তার বেচে থাকার রসদ। চড়াই পাখির মতো খুঁটে খুঁটে কুড়িয়ে নেয় মাল খালাস হয়ে যাওয়াকোন ট্রাকে পড়ে থাকা চাল, তো কোথাই ডাল। কখনও কখনও তা থেকে আড়তদারকে ভাগও লাগে। 


                  তারপর ভানুবালা যায় সবজি বাজারে। সেখানে আস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়া আধ পচা আলু, পটল, টমেটো কুড়িয়ে ঝুলিতে পোড়ে। শেষে পৌঁচ্ছোয় চামার পট্টিতে। সেখান থেকেকুড়িয়ে নেয় হাওয়াই চপ্পলের ছেঁড়া ফিতে। তারপর রাস্তার কলে জল খেয়ে ধুকতে ধুকতেস্টেশনে ফেরে ভানুবালা। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল।



                         স্টেশনেই তার ঘরগেরস্থালি। বাথরুমের সামনে তিনটে ভাঙা ইটের সাজানো উনুন। উনুনের পাশেই উপুড় করে রাখা কালি পড়া মাটির হাড়ি। ভানুবালা প্রথমে স্টেশনের রেলিং,এ মেলা শতছিন্নশাড়িটাকে নিয়ে স্নান করে আসে। তারপর ট্যাপকল থেকে হাড়িতে জল নিয়ে উনুনের উপরচাপায়।  একে একে বের করে সংগৃহিত রসদ।


                                     প্রথমেই চটির ফিতে জ্বালিয়ে উনুন ধরায়।হাঁড়িতে এক সংগে ফেলে দেয় চাল, ডাল, পচা অংশ বাদ দিয়ে সবজিও।  জল ফুটতেইসুঘ্রান ছড়ায়। খিদেটা চাগাড় দিয়ে ওঠে ভানুবালার। চোখ দুটোও কেমন যেন লোভাতুরহয়ে ওঠে। দিনান্তে এই একবারই তো খাওয়া জোটে তার। আচমকা বৃষ্টি নামে। ভানুবালাছুটে গিয়ে আশ্রয় নেয় লাগোয়া শেডে। ততক্ষণে বৃষ্টিতে উনুন নিভেছে।


                                  উপছে পড়েছে হাঁড়িও। শেডে আসার পথে সেদিকে নজর পড়ে একটি কুকুরের। কুকুরটি কোনদিকে ভ্রুক্ষেপনা করে সোজা হাড়িতে মুখ ডুবিয়ে দেয়। বৃষ্টির পরোয়া না করে ভানুবালাও ছুটে যায়হাঁড়ির দিকে। প্রাণপণ চেষ্টা করে কুকুরটাকে সরিয়ে দিতে। কিন্তু কুকুরওনাছোড়বান্দা। অগত্যা কুকুরের সংগেই হাড়ি থেকে খাবার তুলে খেতে থাকে ভানুবালা।


                                   ------0------


              ইজ্জতের দাম 



শ্রাবণের শেষ। আকাশে এক ফোটাও বৃষ্টি নেই। পুকুর গড়েতে বৌ-ঝিদের শরীরই ডোবেনা। সেচের জল অভাবে অনাবাদী হয়ে পড়ে আছে বিঘের পর বিঘে জমি। গ্রামের অন্যরাকোন রকমে চালিয়ে নিলেও আর পারে না ময়না।  বৃদ্ধা শ্বশুর-শাশুড়ি আর দুইছেলেমেয়ে সহ বাড়িতে ৬টা পেট। এতদিন স্বামী -স্ত্রী দিনমজুরী করে কোন রকমেতাদের পেট ভরিয়েছে। কিন্তু এবার মাঠে চাষই হয়নি, মজুর খাটাবে কে? ছোট  জমিরমালিকরাই পরিচয় গোপন করে দুরের গাঁয়ের ইটভাটায় মজুর খাটছে। ময়না আর তার স্বামী যতন সেখানে গিয়েও সুবিধা করতে পারে নি। সেখানেও আর লোক নেবে না।

                     কিন্তু পেট তো আর বাগ মানে না। নিজেরা কোন রকমে পেটে গামছা বেধে পড়ে থাকলেও বাড়িতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ছেলেমেয়ে দুটোর ক্ষুধাতুর মুখের দিকে আর চাইতে পারে না ময়না। অগত্যা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কলকাতায় কাজে যাওয়াই ঠিক করে। গ্রামের মদনকাকাকলকাতায় একটা বাড়িতে কাজ করে। সে একটা ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিল, কোন রকমে হাওড়া স্টেশনে নেমে একটা ফোন করে দিস। আমি কোন একটা হিল্লে করে দেব। সেই মতো মেয়েরপায়ের বাঁক জোড়া বিক্রি করে বর্ধমান স্টেশনে ট্রেনে চেপে বসে ময়না-যতন। হাওড়া স্টেশন থেকে তাদের একটা বাড়িতে নিয়ে যায় মদনকাকা। 

                        মধ্যবয়স্ক গৃহকর্তা অবনীবাবু বাড়িতেই থাকেন। স্ত্রী অরুনিমা একটি স্কুলে পড়ান। দুই ছেলে বাইরের দেশে। ওই বাড়িতেই বহাল হয় ময়নারা। ময়না পরিচারিকা আর যতন কেয়ারটেকার। খাওয়া-পড়া সহ দুজনের মাসিক তিন হাজার টাকা বেতন। দুজনের ঠাই হয় গ্যারেজের পাশের ঘরে।সারাদিন বাড়ির ভিতরে কাজ করে ময়না। সবই ঠিক ছিল, কেবল ময়নাকে অস্বস্তিতে রেখেছিল অবনীবাবুর নজর।গিন্নিমা বেরিয়ে গেলেই নানা ছুতোয় তাকে ঘরে ডেকে যেন গোগ্রাসে গিলতেন মধ্যবয়স্ক লোকটা।ভদ্রলোকদের নিয়ে এই এক সমস্যা ।এরা বাইরে ভদ্রলোক কিন্তু ভিতরটা ছোটলোকেরও অধম। সুন্দরী স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও ছোঁকছোকানি যায় না।

                   তারপর সেই দিনটা এল। দুপুর বেলায় খাওয়ার জল দিতে ডাকলেন অবনীবাবু। জল নিয়ে ঘরে যেতেই গ্লাসটা টেবিলে রেখে তার শরীরের উপরে হামলে পড়লেন তিনি। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেই সরোষে অবনীবাবু বলে ওঠেন, সতীপনা ঘুচিয়ে দেব। চুরির দায়ে তোর স্বামীকে জেলে পাঠিয়ে দেব। তুই বাড়িও ফিরতে পারবি না। সোনাগাছিতে নাম লেখাতে হবে। মহূর্তে ময়নার মনে পড়ে যায় বাড়িতে ফেলে আসা দুই ছেলেমেয়ে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির ক্ষুধাতুর মুখ গুলো। অগত্যা দাতে দাঁত চেপে দিনের পর দিন অবনীবাবুর লালসা চরিতার্থ করতে হয় তাকে। কিন্তু বেশীদিন আর ওই বাড়ির ভাত হয় না তাদের। 

                         একদিন রেনিডে উপলক্ষ্যে হঠাৎ বাড়ি ফিরে আপত্তিকর অবস্থায় তাদের দেখে ফেলেন গিন্নিমা। সটান চুলের মুঠি ধরে চড় কষিয়ে দেন ময়নারগালে। ময়না যত পায়ে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করে, তার কোন দোষ নেই। কর্তাবাবুই জোর করে ওসব করেছেন। ততই অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন গিন্নিমা। বলেন, এইজন্যেই বলে ছোটলোকদের বাড়িতে ঢুকতে দিও না। আমারই ভুল হয়েছে। খুব শিক্ষা হয়েছে। এই মুহুর্তে বিদেয় হও।এখনো মাস পূর্ণ হয়নি, তবু কাজের সংগে বুড়োটাকে সুখ দিয়েছে বলে পুরো মাসের মাইনেই দিলাম। বলে তিনটি হাজার টাকার নোট ময়নার হাতে ধরিয়ে দেন গিন্নিমা।

                     কাপড়ের পুটলিটা বগলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ময়না-যতন। হঠাৎ তার গা'টা কেমন ঘিনঘিন করে ওঠে। দলা পাকানো নোট তিনটে থুতু দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়রাস্তার পাশে। একটা ছাগল সেটা চিবিয়ে খেয়ে নেয়। ময়না একবারও ভাবে না ছেলেমেয়ে, শ্বশুর শাশুড়ি, কিম্বা বাড়ি ফেরার কথা। সে কেবল ভাবতেই থাকে তারা ছোটলোক হলে অবনীবাবুরা আসলে কি? ভেবে কোন কুলকিনারা পায় না ময়না।


      

                                           -------০------

  

                                        অন্তরালে


লাভপুর হাসপাতালের সামনে সেদিন খপ করে হাত চেপে ধরলেন মধ্যবয়স্ক লোকটি। বলে উঠলেন, সেই যে দাদা দাগিয়ে দিয়ে গেলেন আর তো কোন খবর নিলেন না ?  এক লহমায় ফিরে এল বছর সাতেক আগের এক শীতের দুপুর।


                   লোকটি হাসপাতালের ভিতরে চুক্তির একপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির স্বল্প বেতনের কর্মী ছিলেন। স্থানীয় এক গৃহবধু তারবিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই সংবাদ মাধ্যম ছেঁকে ধরেতাকে। লোকটি সেদিন সংবাদ মাধ্যমের কাছে আকুল আর্তি জানিয়ে বলেছিল, দেখুন আমাকেফাঁসানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমান না হওয়া পর্যন্ত  খবর করবেন না প্লিজ। বাড়িতেআমার স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা রয়েছেন, ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়ে। সব শেষ হয়ে যাবে সংবাদ মাধ্যম সেদিন তার কথা কানেই তোলে নি। যাচাই করে দেখার প্রয়োজনই মনে করেনি। তাদের হাতে তখন অভিযোগকারিনীর এফ,আই, আর কপি। সংবাদ প্রকাশের অন্যতম ছাড়পত্র।


                         পরদিন সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে বড় বড় হেডলাইনে বেরিয়েছিল সেই খবর। পাঠকখেয়েওছিল খুব। লাভপুরেই সেদিন অতিরিক্ত ৫০০ কপি বেশি কাগজ বিক্রি হয়েছিল।লোকটি হাত ধরে নাড়াতেই ফিরে আসে সেই শীতের সকাল। গণপ্রহারে রক্তাক্ত লোকটিকেপুলিশ কোমরে দড়ি বেধে হাজার লোকের মাঝে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর সমস্তযন্ত্রনা, অপমান, লজ্জা ছাপিয়ে তার চোখে উপছে পড়ছে সংবাদ মাধ্যমের কাছে খবর না করার আর্তি। পরে খবর পেয়েছিলাম , বছর চারেক মামলা চলার পর বেকসুর খালাস পেয়েছিল লোকটি।

                                     তদন্ত রিপোর্টে পুলিশ জানিয়েছিল , লোকটির ভালো ব্যবহারের জন্যহাসপাতালের ভিতরের ল্যাবে ভীড় উপছে পড়ছিল। মাছি তাড়াতে হচ্ছিল বাইরেরল্যাবগুলিকে। তারাই লোকটিকে সরানোর জন্য একজন মহিলা ফিট করে মিথ্যা অভিযোগকরিয়েছিল। তারপরই বাড়িতে ফিরেছিল লোকটি। কিন্তু সত্যিই কি ফিরতে পেরেছিল ?বাড়িটি কি আদৌ আর বাড়ি ছিল ? 



                               লোকলজ্জায় আত্মহত্যা করেছিল তার স্ত্রী। একইকারণে স্কুল- কলেজ ছেড়ে দিতে হয়েছিল ছেলে মেয়েকে?  অর্ধাহার বিনা চিকিৎসায়মৃত্যু হয় বাবার। জেলে বসে এতসব জানতেও পারিনি সে। তাই জেল থেকে ফিরলেও বাড়িফিরে পায় নি তাকে। সকাল বেলায় হাজির হয় হাসপাতাল চত্বরে। ছেলেমেয়েরা রাতেরবেলা জোড় করে ধরে নিয়ে যায়। চটকা ভেংগে যায়। লোকটি বলে ওঠে , দাদা দাগিয়ে তোদিয়ে গেলেন, দাগ মোছার তো কো ব্যবস্থা করলেন না। নাড়িয়ে দেয় ওই প্রশ্ন। 


                                        সত্যিই তো , আমরা অভিযোগ পেলেই খবর করে দিই, অভিযুক্ত নির্দোষ প্রমানিত হলে তার খবররাখি না।কারণ ওই খবর পাঠক তেমন খায় না। কিন্তু আমরা একবার মনে রাখি না একজনঅপরাধী হলেও তার পরিবারের লোকেরা অপরাধী নাও হতে পারে। কিন্তু আইন আদালতে দোষপ্রমাণ হওয়ার আগেই খবর করে সামাজিক শাস্তি তাদের আমরা দিয়েই দি। ভাবনার মাঝেইশুনতে পাই লোকটা তখনো বলে চলেছে, দাদা আমার দাগ মোছার ব্যবস্থাটা আপনারা করলেননা। লোক জমতে শুরু করে। পাশের দোকান থেকে এক কাপ চা কিনে লোকটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে  গুটিগুটি পায়ে সরে আসি। মনে মনে ভাবি একটি লোকের সামাজিক সম্মানের দাম কি এক কাপ চা  ???

                                            

                                                       সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment