ছাতা
অর্ঘ্য ঘোষ
ছাতাটা আজ আর নেই।
ছাতাটা ছিল তাই গ্রীষ্ম বুঝি নি।
ছাতাটা নিজে পুড়েছে,
আমাদের দিয়েছে ছায়া সুশীতল।
ছাতাটা ছিল তাই বর্ষা বুঝি নি।
ছাতাটা নিজে ভিজেছে,
আমাদের ভিজতে দেয়নি কখনও
ছাতাটা ছিল তাই শীত বুঝি নি।
ছাতাটা নিজে কেপেছে থর থর।
আমাদের মাথায় পড়তে দেয়নি এক ফোটাও হিম।
ছাতাটা ছিল বলেই আমরা
শরতের মেঘ হয়ে কাশের বনে লুকোচুরি খেলেছি।
ছাতাটা ছিল বলেই
হেমন্তের সুঘ্রান মেখে রোদেলা আকাশে উড়েছি।
ছাতাটা ছিল বলেই
আমরা বসন্তে বাতাসে উড়িয়েছি ভালোবাসার আবীর।
সেই ছাতাটাই আজ আর নেই।
চোখের সামনে আজ নিজেই পুড়ে গেল ছাতাটা।
ছাতাটা বুঝতেই দেয় নি
রোদে জলে সে নিজে ক্ষয়েছে কবে।
আজ বুঝি ছাতাটা কতবড়ো ছায়া হয়ে ছিল মাথার উপর।
ছাতাটা আমাদের বাবা।
-----০-----
ছেলেবেলা
মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে ফিরে পেতে সেই ছেলেবেলা।
পুকুরে ডুব সাঁতার, গাছে ঝুপ ঝাল্লুর খেলা।
এখন কোথাই সেই পুকুর, কোথাই বটের ঝুড়ি।
পুকুর ঢেকেছে কংক্রীটে, মানুষ নিয়েছ গাছ লোপাটের ঠিকাদারি।
মনের ঘরে উঁকি মারে খেলাঘরের সেই বালিকাবধু ।
তারই জন্য সুখ স্বপনে মন খারাপ শুধু শুধু।
মনে পড়ে সরস্বতী পুজোয় প্রথম শাড়ি পড়া সেই কিশোরীর কথা।
যার ভোগ ভাজা হাত আর চিবুকে ছিল ঘামের নকশি কাথা।
মনে পড়ে প্রথম প্রেমের চিঠি হাতে হাতে ঘুরেছিল কতদিন।
গলির মোড়ে সে চিঠির জবাব দিতে কিশোরীরও অবস্থা কঠিন।
এখন তীর বেঁধা হৃদয়ে সহজেই ভরে যায় ইনবক্স , ফেসবুক।
প্রেম নয়, তা থেকেই কেউ কেউ খুঁজে নেয় নষ্ট সুখ।
মনে হয় এ প্রজন্ম তোঁ অনেক পেল , পাবে কি সেই সব দিন ?
আলিবাবা চল্লিশ চোর কিম্বা স্বপ্নের আলাদীন।
------০------
বেড়া
বর্হ্বি জগত থেকে আলাদা থাকবে বলে লোকটা
নিজের চারপাশে বেঁধে নিয়েছিল মজবুত বেড়া।
তবু বেড়া ভেঙ্গে ভিতরে হামলে পড়েছিল জগত।
অগত্যা লোকটিকে আবার বেঁধে নিতে হয়েছিল দ্বিতীয় বেড়া।
তাতেও রোখা যায়নি অনুপ্রবেশ।
কিন্তু একরোখা লোকটির বেড়া বাঁধার রোখ চেপে গিয়েছিল।
একের পর এক বেড়া বাঁধতে বাঁধতে আর জায়গা ছিল না বেড়া বাঁধার।
লোকটি নিজেই একদিন বেড়াবন্দী হয়ে পড়েছিল।
আর তারই বাঁধা সারি সারি বেড়ার মাঝে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসেছিল জগত।
তারপর একদিন জগতের চাপে সব বেড়া ভেঙ্গে একাকার হয়ে যায় সবকিছু।
লোকটাও বর্হ্বি জগতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়।
লোকটা উপলব্ধি করে বেড়া দিয়ে মানুষ আটকানো যায় না
-------------০-----------
প্রার্থনা
পশ্চিম মুখে দাঁড়িয়ে আল্লার কসম খাই নি কেউ।
মা কালীর বেদীতে হাত রেখে
দিব্যিও কাটে নি কেউ ।
তবু কেউ কেউ বাড়িয়ে দেয় হাত,
খাতের কিনার থেকে জীবন ফেরায়।
হার মানায় মৃত্যুকে সাক্ষাৎ।
দুয়ার এটে ঘুমায় পাড়া,
খোলা রাখে হাত গোনা।
নিজের আখের গোছাই সবাই
ক,জন হয় আনমনা ?
তারই মাঝে কেউ তো আছে ,
দিগ্বিদিক ভুলে
শ্মশান ছোটে বেওয়ারিশ লাশ
ঘাড়ে তুলে।
ওদের ঘরে জ্বলে না উনুন,
পেট জ্বলে যায় ধুধু।
তবু ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায় শুধু।
সবাই জানি, বিস্তৃত ময়দান
তবু ছুটে বৃথা হই হয়রান।
ওরাই শুধু দাঁড়িয়ে পথের বাঁকে
অন্যরকম ছবি আঁকে।
আমরা না হয় স্বার্থের যাঁতাকলে
খাই হাজারো ঘুর্ণিপাক।
শুধু প্রার্থনা করি, দু'একটা
বনের মোষ তাড়ানো জন্মাক।
No comments:
Post a Comment