স্যালুট
( পার্থ প্রদীপ সিংহ )
গত বছর পেয়েছেন শিক্ষারত্ন। এবারে জাতীয় পুরস্কার পেতে চলেছেন লাভপুর কালিকাপুরডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক পার্থপ্রদীপ সিংহ। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির বিজ্ঞানভবনে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি। লাভপুরেরই বিরামমন্দির পল্লীর বাসিন্দা পার্থবাবু ২০০৯ সালে ওই স্কুলে যোগ দেন। সে সময় আদিবাসি অধ্যুসিত স্কুলটি ছিল পড়ুয়াদের গড়হাজিরা, লেখাপড়ার মান এবং পরিকাঠামোর নিরিখে একেবারে পিছনের সারিতে।
পার্থবাবু উপলব্ধি করেন, স্কুলকে শুধুমাত্র লেখাপড়ার জায়গা হিসাবে আটকে রাখলে হবে না, পড়ুয়াদের স্কুলে টানতে আর্কষণ বাড়াতে হবে স্কুলের।সামিল করতে হবে এলাকার মানুষজনকেও।স্কুলটা যে তাদেরই , সেই বোধ গড়ে তুলতে হবে । সহকর্মীদের নিয়ে শুরু হয় পথ চলা। একে একে শ্রম এবং অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়ান অনেকেই। একসময় গ্রামে সরস্বতী পুজো হত ৪ টি। পার্থবাবুই ওইসব পুজো কমিটিকে একত্রিত করে স্কুলে সবাইকে নিয়ে একটাই পুজোর ব্যবস্থা করেন। তাতে সবার সংগৃহিত অর্থে ধুমধাম বাড়ে। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অর্থে বিন্দু বিন্দু করে শুরু হয় স্কুলের উন্নয়ন। ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে টেনে আনতে খেলার জায়গা, খেলনা, মুখোশ, আর্ট গ্যালারি, নাটক, প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। গড়া হয় মানুষের ক্রম বিবর্তনের বিভিন্ন স্ট্যাচু মডেল। সাজানো স্কুলবাড়ি, ফুলবাগান, মিডডে মিল খাওয়ানোর জায়গা, পড়ুয়াদের উচ্চতা অনুযায়ী একাধিক হাত ধোওয়ার বেসিন , বেসিনের ব্যবহৃত জল ফুলবাগানের সেচের কাজে লাগানোর নিখুঁত পরিকল্পনা।
প্রথমদিকে পড়ুয়ারা স্কুলে না এলে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে আনতে হত। এখন একদিন স্কুলে না এলে পড়ুয়াদেরই মন কেমন করে। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের সংগে নাচ, গান, নাটকে অংশ নেন অভিভাবকেরাও। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় কার্যত স্কুলের খোলনলচেই বদলে দিয়েছন পার্থবাবু। পিছিয়ে থাকা সেদিনের সেই স্কুলটিরই নাম এখন চলে এসেছে সামনের সারিতে। তাই গতবছর রাজ্য সরকার তাকে শিক্ষারত্ন দিয়েছেন। পুরস্কার বাবদ পাওয়া ২৫ হাজার টাকা লাগিয়েছেন স্কুলের উন্নয়নে। সেই টাকায় বইয়ের পাতায় পড়া সৌরমন্ডল সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা গড়ে তুলতে স্কুলের ছাদে ইলেক্ট্রনিক্স প্যানেল বসিয়ে করা হয়েছে রাতের আকাশ চেনানোর ব্যবস্থা।
জাতীয় পুরস্কার বাবদ পাবেন ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েও তিনি মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের স্ট্যাচুগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এত কিছু করার পরেও বড়ো কিছু করেছেন বলে মনে করেন না। বিনয়ের সংগে বলেন, স্কুলের জন্যই স্বীকৃতি পেয়েছি। তাই পুরস্কারের টাকাটা স্কুলের কাজেই লাগাতে চাই। স্কীকৃতিটাই আমার কাছে অমুল্য। পার্থবাবুর মতো শিক্ষকরাই বোধহয় এমনটা বলতে পারেন। তাদের মতো শিক্ষক আছেন বলেই আমাদের নতজানু হতে হয়। আসুন নতজানু হয়ে বলি, আপনাকে কুর্নিশ।
পার্থবাবু উপলব্ধি করেন, স্কুলকে শুধুমাত্র লেখাপড়ার জায়গা হিসাবে আটকে রাখলে হবে না, পড়ুয়াদের স্কুলে টানতে আর্কষণ বাড়াতে হবে স্কুলের।সামিল করতে হবে এলাকার মানুষজনকেও।স্কুলটা যে তাদেরই , সেই বোধ গড়ে তুলতে হবে । সহকর্মীদের নিয়ে শুরু হয় পথ চলা। একে একে শ্রম এবং অর্থ দিয়ে পাশে দাঁড়ান অনেকেই। একসময় গ্রামে সরস্বতী পুজো হত ৪ টি। পার্থবাবুই ওইসব পুজো কমিটিকে একত্রিত করে স্কুলে সবাইকে নিয়ে একটাই পুজোর ব্যবস্থা করেন। তাতে সবার সংগৃহিত অর্থে ধুমধাম বাড়ে। পাশাপাশি উদ্বৃত্ত অর্থে বিন্দু বিন্দু করে শুরু হয় স্কুলের উন্নয়ন। ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে টেনে আনতে খেলার জায়গা, খেলনা, মুখোশ, আর্ট গ্যালারি, নাটক, প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। গড়া হয় মানুষের ক্রম বিবর্তনের বিভিন্ন স্ট্যাচু মডেল। সাজানো স্কুলবাড়ি, ফুলবাগান, মিডডে মিল খাওয়ানোর জায়গা, পড়ুয়াদের উচ্চতা অনুযায়ী একাধিক হাত ধোওয়ার বেসিন , বেসিনের ব্যবহৃত জল ফুলবাগানের সেচের কাজে লাগানোর নিখুঁত পরিকল্পনা।
প্রথমদিকে পড়ুয়ারা স্কুলে না এলে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে আনতে হত। এখন একদিন স্কুলে না এলে পড়ুয়াদেরই মন কেমন করে। শুধু পড়ুয়ারাই নয়, স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের সংগে নাচ, গান, নাটকে অংশ নেন অভিভাবকেরাও। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় কার্যত স্কুলের খোলনলচেই বদলে দিয়েছন পার্থবাবু। পিছিয়ে থাকা সেদিনের সেই স্কুলটিরই নাম এখন চলে এসেছে সামনের সারিতে। তাই গতবছর রাজ্য সরকার তাকে শিক্ষারত্ন দিয়েছেন। পুরস্কার বাবদ পাওয়া ২৫ হাজার টাকা লাগিয়েছেন স্কুলের উন্নয়নে। সেই টাকায় বইয়ের পাতায় পড়া সৌরমন্ডল সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা গড়ে তুলতে স্কুলের ছাদে ইলেক্ট্রনিক্স প্যানেল বসিয়ে করা হয়েছে রাতের আকাশ চেনানোর ব্যবস্থা।
জাতীয় পুরস্কার বাবদ পাবেন ৫০ হাজার টাকা। সেই টাকা দিয়েও তিনি মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের স্ট্যাচুগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এত কিছু করার পরেও বড়ো কিছু করেছেন বলে মনে করেন না। বিনয়ের সংগে বলেন, স্কুলের জন্যই স্বীকৃতি পেয়েছি। তাই পুরস্কারের টাকাটা স্কুলের কাজেই লাগাতে চাই। স্কীকৃতিটাই আমার কাছে অমুল্য। পার্থবাবুর মতো শিক্ষকরাই বোধহয় এমনটা বলতে পারেন। তাদের মতো শিক্ষক আছেন বলেই আমাদের নতজানু হতে হয়। আসুন নতজানু হয়ে বলি, আপনাকে কুর্নিশ।
-----০----
স্যালুট
( কল্যাণ ভট্টাচার্য )
রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেতে চলেছেন লাভপুরেরই আর এক ভূমিপুত্র কল্যাণ ভট্টাচার্য। লাভপুরের কালিপুরডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রদীপ সিংহের মতোই ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে কল্যাণবাবুও পুরস্কার নেবেন। লাভপুরের চৌহাট্টা গ্রাম জন্মভূমি হলেও বাবার কর্মসূত্রে কল্যাণবাবুরা অবশ্য ছোট থেকেই সিউড়ির বাসিন্দা। বাবা বিশ্বনাথবাবু ছিলেন কৃষি দফতরের কর্মী। তার নামে চৌহাট্টা তো বটেই জেলার বহু জায়গায় বহু মানুষকে আজও কপালে দুহাত ঠেকাতে দেখা যায়।
কারণ তারই সৌজন্যে বিভিন্ন সরকারি দফতরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন তারা।বর্তমানে সিউড়ি রবীন্দ্রপল্লীতে স্ত্রী আলপনা দেবী, ছোট মেয়ে অভীপ্সাকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার তার। বড় মেয়ে অন্বেষার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সিউড়ির বাসিন্দা হলেও জন্মভূমির প্রতি তার নাড়ীর টান আজও অটুট। পুজো-পার্বনে ছুটে আসেন গ্রামে। কর্মজীবনের শুরুটাও হয়েছিল গ্রামে।১৯৮২ সালে তিনি জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন চৌহাট্টা হাইস্কুলে।
২০০০ সালে সিউড়ির কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল এন্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র পান। সেই সময় ওই স্কুলে চরম ডামাডোল অবস্থা। নানা অব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ শিরোনামে স্কুলের নাম। স্কুল তখন গ্রামবাসীদের একাংশের কাছে প্রাতঃকৃত্য আর অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে উঠেছে। নানান প্রতিকূলতায় পরিকাঠামো থেকে পঠনপাঠনের মানও হতাশাব্যঞ্জক। ওই কারণে দু-দুবার শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শিক্ষা দফতরের চিঠি পর্যন্ত পৌচেচ্ছে স্কুলে। স্কুলের ওই দুরবস্থার কারণে অনেকেই স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়ে যোগ দেন নি। আবার যোগ দিয়েও অনেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। দোটানায় পড়েন কল্যাণবাবুও। যোগ দেবেন কিনা ভাবতে ভাবতেই পেরিয়ে যায় যোগ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ ৩০ দিনের মধ্যে ২৯ দিন।
শেষের দিন তার কাছে এসে পৌঁছোন সাপ্তাহিক নয়াপ্রজন্ম পত্রিকার সম্পাদক কাঞ্চন সরকার এবং কল্যাণ বাবুর শিক্ষক দেবপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। তারাই তাকে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, কাজটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। তারপরই চ্যালেঞ্জটা নেন তিনি। কাজে যোগ দিয়েই অনুভব করেন শুধু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দিয়ে সব কিছু হবে না। প্রশাসনের সংগে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে গ্রামবাসীদের। তাদের বোঝাতে হবে স্কুলের পরিবেশ ফেরাতে কেন প্রশাসনকে আসতে হবে ? তাদেরই রক্ষা করতে হবে নিজেদের গড়া স্কুল। সেইভাবেই শুরু হয় পথচলা। জেলা প্রশাসন ,সংশ্লিষ্ট সিউড়ি নং পঞ্চায়েত সমিতি, কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ , ক্লাব সবাইকে সামিলের চেষ্টা শুরু হয়। প্রথমেই প্রাতঃকৃত্যের জায়গায় লাগানো হয় বিভিন্ন গাছ। তাপ বিদ্যুতের ছাই দিয়ে একটি গর্ত বুজিয়ে কেঁচো তথা জৈবসার তৈরির পাশাপাশি করা হয় সবজি বাগান। স্থানীয় কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে ওই বাগান দেখভালের জন্য তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৩০ জন মহিলাকে নিয়োগ করে। মিড ডে মিল রান্নার জন্যও ৮ টি স্বনির্ভর দল নিযুক্ত হয়।
স্কুলের পুকুরে চুক্তিতে মাছ চাষের জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের উপরেই বর্তায় রাতে স্কুল দেখভালের দায়িত্ব। এইভাবে কর্ম সংস্থানের পাশাপাশি জনসংযোগের মাধ্যমে স্কুলে স্থানীয়দের অংশ গ্রহণ বাড়তে থাকে। একই ভাবে মাসরুম চাষ , ১০০ টি বিরল প্রজাতির গাছ সম্বলিত ভেষজ বাগানও তৈরি হয়। ওই জাতীয় বাগান
জেলা তো বটেই, রাজ্যেও কমই আছে। স্বাধীনতা দিবস, ২৬ শে জানুযারীর মতো অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্ভেজাল খাবার পায় আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে দুটো পয়সা উপার্জন করতে পারে তার জন্য তৈরি করা হয় ভিটামিন নাড়ু নামে এক বিশেষ ধরণের নাড়ু। বসানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। স্কুলের প্রয়োজন মিটিয়ে ওই প্রকল্পের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সরকারি গ্রীডে জমা করারও ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিলের টাকা বাঁচিয়ে উন্নয়নের কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।
পঠনপাঠনেও এগিয়ে থাকা বহু স্কুলের সমপর্যায়ে পৌঁচ্ছে গিয়েছে সেদিনের পিছিয়ে পড়া সেই স্কুলটি। সাংকৃতিক চর্চাতেও পিছিয়ে নেই স্কুল। যুব সংসদ, ভাদু গানে স্কুলের পড়ুয়ারাই এখন জেলায় সামনের সারিতে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কল্যাণবাবু নিজে একজন সাহিত্য মনস্ক মানুষ। সিউড়ির বিদ্যাসাগর
কলেজের শিক্ষক রামকৃষ্ণ মন্ডল, চৌহাট্টা হাইস্কুলের শিক্ষক বাদল ঘোষ এবং কল্যাণবাবু ২৬ বছর আগে অবকাশ নামে একটি সাহিত্য প্রকাশ করেন। বাদলবাবু প্রয়াত হওয়ার পর সেটি এখনও রামকৃষ্ণবাবুর সংগে যৌথ সম্পাদনায় নিয়মত প্রকাশিত হচ্ছে। সেই পত্রিকাতে তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরাও আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়। তাই সেদিনের চ্যালেঞ্জটা আজ পুরোপুরি জিতে নিয়েছেন কল্যাণবাবু। স্কুলের উন্নয়ণে প্রশাসনের পাশাপাশি নিসংকোচে সাহার্য্যের আর্জি জানিয়েছেন সবার কাছ।
আর বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু ভরার মতোই আজ বাস্তবিক অর্থেই পাঁচ ফুলে ভরে উঠেছে তার স্কুলের সাজি ।তারই স্বীকৃতি জাতীয় পুরস্কার। ঠিক করেছেন পুরস্কার পাওয়া টাকাটা লাগাবেন স্কুলেরই উন্নয়নে। এত কিছু করার পরেও প্রচার বিমুখ মানুষটি বিনয়ের সংগে বলেছেন, প্লিজ দেখবেন আমার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে যেন পুর্বসূরিদের সংগে তুলনামূলক বিচারের কোন প্রসঙ্গ যেন চলে না আসে। সবাই আমার মতোই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন যা হওয়ার তা তো তখনই হবে। হয়তো সেই সময়টা আমি যোগ দেওয়ার পরেই এসেছে।এমন কথা ক'জন বলতে পারেন? আসুন স্যালুট জানাই তাকে।
------০-----
কারণ তারই সৌজন্যে বিভিন্ন সরকারি দফতরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন তারা।বর্তমানে সিউড়ি রবীন্দ্রপল্লীতে স্ত্রী আলপনা দেবী, ছোট মেয়ে অভীপ্সাকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার তার। বড় মেয়ে অন্বেষার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সিউড়ির বাসিন্দা হলেও জন্মভূমির প্রতি তার নাড়ীর টান আজও অটুট। পুজো-পার্বনে ছুটে আসেন গ্রামে। কর্মজীবনের শুরুটাও হয়েছিল গ্রামে।১৯৮২ সালে তিনি জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন চৌহাট্টা হাইস্কুলে।
২০০০ সালে সিউড়ির কড়িধ্যা যদুরায় মেমোরিয়াল এন্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগপত্র পান। সেই সময় ওই স্কুলে চরম ডামাডোল অবস্থা। নানা অব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ শিরোনামে স্কুলের নাম। স্কুল তখন গ্রামবাসীদের একাংশের কাছে প্রাতঃকৃত্য আর অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে উঠেছে। নানান প্রতিকূলতায় পরিকাঠামো থেকে পঠনপাঠনের মানও হতাশাব্যঞ্জক। ওই কারণে দু-দুবার শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে শিক্ষা দফতরের চিঠি পর্যন্ত পৌচেচ্ছে স্কুলে। স্কুলের ওই দুরবস্থার কারণে অনেকেই স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়ে যোগ দেন নি। আবার যোগ দিয়েও অনেকে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। দোটানায় পড়েন কল্যাণবাবুও। যোগ দেবেন কিনা ভাবতে ভাবতেই পেরিয়ে যায় যোগ দেওয়ার জন্য বরাদ্দ ৩০ দিনের মধ্যে ২৯ দিন।
শেষের দিন তার কাছে এসে পৌঁছোন সাপ্তাহিক নয়াপ্রজন্ম পত্রিকার সম্পাদক কাঞ্চন সরকার এবং কল্যাণ বাবুর শিক্ষক দেবপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। তারাই তাকে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, কাজটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। তারপরই চ্যালেঞ্জটা নেন তিনি। কাজে যোগ দিয়েই অনুভব করেন শুধু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দিয়ে সব কিছু হবে না। প্রশাসনের সংগে মেলবন্ধন ঘটাতে হবে গ্রামবাসীদের। তাদের বোঝাতে হবে স্কুলের পরিবেশ ফেরাতে কেন প্রশাসনকে আসতে হবে ? তাদেরই রক্ষা করতে হবে নিজেদের গড়া স্কুল। সেইভাবেই শুরু হয় পথচলা। জেলা প্রশাসন ,সংশ্লিষ্ট সিউড়ি নং পঞ্চায়েত সমিতি, কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের পাশাপাশি গ্রামের মানুষ , ক্লাব সবাইকে সামিলের চেষ্টা শুরু হয়। প্রথমেই প্রাতঃকৃত্যের জায়গায় লাগানো হয় বিভিন্ন গাছ। তাপ বিদ্যুতের ছাই দিয়ে একটি গর্ত বুজিয়ে কেঁচো তথা জৈবসার তৈরির পাশাপাশি করা হয় সবজি বাগান। স্থানীয় কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে ওই বাগান দেখভালের জন্য তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৩০ জন মহিলাকে নিয়োগ করে। মিড ডে মিল রান্নার জন্যও ৮ টি স্বনির্ভর দল নিযুক্ত হয়।
স্কুলের পুকুরে চুক্তিতে মাছ চাষের জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের উপরেই বর্তায় রাতে স্কুল দেখভালের দায়িত্ব। এইভাবে কর্ম সংস্থানের পাশাপাশি জনসংযোগের মাধ্যমে স্কুলে স্থানীয়দের অংশ গ্রহণ বাড়তে থাকে। একই ভাবে মাসরুম চাষ , ১০০ টি বিরল প্রজাতির গাছ সম্বলিত ভেষজ বাগানও তৈরি হয়। ওই জাতীয় বাগান
জেলা তো বটেই, রাজ্যেও কমই আছে। স্বাধীনতা দিবস, ২৬ শে জানুযারীর মতো অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্ভেজাল খাবার পায় আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে দুটো পয়সা উপার্জন করতে পারে তার জন্য তৈরি করা হয় ভিটামিন নাড়ু নামে এক বিশেষ ধরণের নাড়ু। বসানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। স্কুলের প্রয়োজন মিটিয়ে ওই প্রকল্পের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ সরকারি গ্রীডে জমা করারও ব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিলের টাকা বাঁচিয়ে উন্নয়নের কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে।
পঠনপাঠনেও এগিয়ে থাকা বহু স্কুলের সমপর্যায়ে পৌঁচ্ছে গিয়েছে সেদিনের পিছিয়ে পড়া সেই স্কুলটি। সাংকৃতিক চর্চাতেও পিছিয়ে নেই স্কুল। যুব সংসদ, ভাদু গানে স্কুলের পড়ুয়ারাই এখন জেলায় সামনের সারিতে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কল্যাণবাবু নিজে একজন সাহিত্য মনস্ক মানুষ। সিউড়ির বিদ্যাসাগর
কলেজের শিক্ষক রামকৃষ্ণ মন্ডল, চৌহাট্টা হাইস্কুলের শিক্ষক বাদল ঘোষ এবং কল্যাণবাবু ২৬ বছর আগে অবকাশ নামে একটি সাহিত্য প্রকাশ করেন। বাদলবাবু প্রয়াত হওয়ার পর সেটি এখনও রামকৃষ্ণবাবুর সংগে যৌথ সম্পাদনায় নিয়মত প্রকাশিত হচ্ছে। সেই পত্রিকাতে তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরাও আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়। তাই সেদিনের চ্যালেঞ্জটা আজ পুরোপুরি জিতে নিয়েছেন কল্যাণবাবু। স্কুলের উন্নয়ণে প্রশাসনের পাশাপাশি নিসংকোচে সাহার্য্যের আর্জি জানিয়েছেন সবার কাছ।
আর বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু ভরার মতোই আজ বাস্তবিক অর্থেই পাঁচ ফুলে ভরে উঠেছে তার স্কুলের সাজি ।তারই স্বীকৃতি জাতীয় পুরস্কার। ঠিক করেছেন পুরস্কার পাওয়া টাকাটা লাগাবেন স্কুলেরই উন্নয়নে। এত কিছু করার পরেও প্রচার বিমুখ মানুষটি বিনয়ের সংগে বলেছেন, প্লিজ দেখবেন আমার সম্পর্কে লিখতে গিয়ে যেন পুর্বসূরিদের সংগে তুলনামূলক বিচারের কোন প্রসঙ্গ যেন চলে না আসে। সবাই আমার মতোই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন যা হওয়ার তা তো তখনই হবে। হয়তো সেই সময়টা আমি যোগ দেওয়ার পরেই এসেছে।এমন কথা ক'জন বলতে পারেন? আসুন স্যালুট জানাই তাকে।
------০-----
শিক্ষারত্ন সাঁইথিয়ার শিক্ষক
বীরভূমের সাঁইথিয়ার অমুয়া-বাঘডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইছে এখন খুশীর হাওয়া।স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার মন্ডল শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেয়েছেন । শিক্ষক দিবসে তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ময়ূরেশ্বরের পারচন্দ্রহাট গ্রামে বাড়ি আশিসবাবুর।কর্মসূত্রে থাকেন সাঁইথিয়ায় ।১৯৯৫ সালে ওই স্কুলেই প্রথম সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন ।পরবর্তী কালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন ।
সে সময় তিনটি মাত্র শ্রেণী কক্ষে একত্রে বসিয়ে ক্লাস হত । ছিল না আলো ,শৌচাগার, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা । এখন আলাদা আলাদা শ্রেণী কক্ষ , মাথার উপর পাখা , ৫ টি শৌচাগার , নিজস্ব সাবমার্শিবল পাম্পে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি সাহার্য্যের পাশাপাশি স্কুলের উন্নয়ণে কখনও ভাঁটা মালিকদের কাছে ইট, কখনও ঘাট মালিকদের কাছে বালি ভিক্ষা করে করেছেন আশিসবাবু । শিক্ষা ক্ষেত্রেও মানোন্নয়ন ঘটেছে । তাই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে , বেড়েছে উপস্থিতির হারও । আগে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ২২৩ , উপস্থিতির হার ছিল ৭০ শতাংশ । বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩১৮ এবং ৮৫ শতাংশ ।
অভিভাবকদের মধ্যে এখন ছেলেমেয়েকে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর প্রবনতা বাড়ছে । কিন্তু শহর ঘেঁষা হওয়া স্বত্ত্বেও ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উত্তরোতর বেড়েই চলেছে। তাই খুশী সব মহল ।
-----০-----
বীরভূমের সাঁইথিয়ার অমুয়া-বাঘডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বইছে এখন খুশীর হাওয়া।স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার মন্ডল শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেয়েছেন । শিক্ষক দিবসে তার হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ময়ূরেশ্বরের পারচন্দ্রহাট গ্রামে বাড়ি আশিসবাবুর।কর্মসূত্রে থাকেন সাঁইথিয়ায় ।১৯৯৫ সালে ওই স্কুলেই প্রথম সহকারি শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন ।পরবর্তী কালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন ।
সে সময় তিনটি মাত্র শ্রেণী কক্ষে একত্রে বসিয়ে ক্লাস হত । ছিল না আলো ,শৌচাগার, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা । এখন আলাদা আলাদা শ্রেণী কক্ষ , মাথার উপর পাখা , ৫ টি শৌচাগার , নিজস্ব সাবমার্শিবল পাম্পে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি সাহার্য্যের পাশাপাশি স্কুলের উন্নয়ণে কখনও ভাঁটা মালিকদের কাছে ইট, কখনও ঘাট মালিকদের কাছে বালি ভিক্ষা করে করেছেন আশিসবাবু । শিক্ষা ক্ষেত্রেও মানোন্নয়ন ঘটেছে । তাই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে , বেড়েছে উপস্থিতির হারও । আগে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ২২৩ , উপস্থিতির হার ছিল ৭০ শতাংশ । বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩১৮ এবং ৮৫ শতাংশ ।
অভিভাবকদের মধ্যে এখন ছেলেমেয়েকে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর প্রবনতা বাড়ছে । কিন্তু শহর ঘেঁষা হওয়া স্বত্ত্বেও ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উত্তরোতর বেড়েই চলেছে। তাই খুশী সব মহল ।
ওনার কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ওনার স্কুলের সার্বিক উন্নয়ন হোক এই কামনা করি।
ReplyDelete