Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

পুজোর কথা


                            পুজো দেখুন বীরভুমে 



      

                            (সাঁইথিয়া মেঘদুত ক্লাব)



                          






প্রথা ভেঙ্গে এই প্রথম সাবেকীয়ানার গণ্ডী ছাড়িয়ে থিম পুজোয় সামিল হতে চলেছে সাঁইথিয়ার মেঘদুত ক্লাব । স্বভাবতই উত্তেজনা আর উৎসাহের আঁচে ফুটছেন কর্মকর্তারা ।

                                         
                               

  পথ চলা শুরু হয়েছিল সেই ৫৩ বছর আগে । মেঘদুত ক্লাবের অবস্থান স্থানীয় নন্দিকেশ্বরী তলার কাছেই । সে সময় ওই সতীপীঠের কাছাকাছি কোন দুর্গাপুজো ছিল না ।= পুজোর ক’টা দিন  শহরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ওই পীঠ প্রাঙ্গন কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে থাকত । তাই ক্লাবকর্তার ওই এলাকায় দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন । ওই পুজোর বৈশিষ্ট্যই ছিল সাবেকীআনা। সাঁইথিয়া শহরের নামী ক্লাবগুলির মধ্যে মেঘদুত অন্যতম । অন্যান্য পুজো কমিটি অনেক আগেই থিম পুজোয় একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার লড়াইয়ে মেতে উঠেছেন । কিন্তু মেঘদুত এতদিন সাবেকীয়ানাই আঁকড়ে ছিল । এবারই প্রথম তারা পা রাখল থিম পুজোর জগতে ।

                                        প্রথম বারেই বাজি মাত করতে তারা থিম করেছে নব দূর্গা। সপরিবারে মহিষাসুরমর্দ্দিনী তো থাকছেই , থাকছে কালরাত্রি , কাত্যায়ণী , কন্দমাতা , শৈলপুত্রী সহ দেবীর ৯ টি রূপের ৯ টি অতিরিক্ত মুর্তি । স্বভাবতই মণ্ডপ জুড়ে এখন থেকেই বইছে খুশীর হাওয়া । 

                                      পুজো কমিটির সভাপতি অরুণ সারদা , সহ সম্পাদক গোপীনাথ চক্রবর্তী জানান ,সতীপীঠের অঙ্গীভূত এলাকা বলে আমরা এতদিন থিমের জোয়ার গা ভাসাতে চাইনি , সাবেকীয়ানাকেই গুরুত্ব দিয়েছি । কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা মেনে আমাদেরও সময়ের তালে পা মেলাতে হলো ।                  



                                                                   

                                           ---০---

           

                                  ( সাঁইথিয়া অগ্নিফৌজ )   


                             
    

পূরাকালে দশ হাতে দশ প্রহরণ ধারণ করে স্বর্গ রাজ্য সামলে ছিলেন দেবী দূর্গা । আর একালে ঘরে ঘরে দূর্গারা দুহাতে সামলাচ্ছেন দশদিক। ওইসব দূর্গাদেরই ১০ দিক সামালানোর বিষয়কে থিম করে সাড়া ফেলে দিয়েছে সাঁইথিয়ার অগ্নিফৌজ ক্লাব । থিমের পোশাকি নাম ‘ আমার মা দুর্গা মা ’।


                            



       নিত্য নতুন থিম ভাবনা ওই ক্লাবের এই প্রথম নয় । বরং বলা যেতে পারে মফস্বল এলাকায় যখন থিমের দূর্গাপুজোই সেই অর্থে চালু হয়নি তখন থিমের সরস্বতী গড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ক্লাব কর্তারা । প্রচলিত রয়েছে , একসময় সাঁইথিয়া রেলমাঠ এলাকায় কোন দুর্গাপুজো ছিল না । জমকালো পুজো বলতে ছিল একমাত্র অগ্নিফৌজের সরস্বতী পুজো । বছর পঁয়ত্রিশ আগে আনন্দবাজার কাগজের প্রথম পাতা কিম্বা ১০০ টাকার নোটে থিমের সরস্বতী গড়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল ওই ক্লাব । তারপর থেকেই স্থানীয় জনমানসে সরস্বতীর পাশাপাশি দূর্গা পুজো প্রচলনের দাবি ওঠে । সেই দাবি মেনেই ৩৩ বছর আগে চালু হয় দূর্গাপুজো ।
                                 
                   শুরু থেকেই নিজস্ব ভাবনায় পুজোয় থিমের আয়োজন করেছেন কর্মকর্তারা । এবারের থিমে একজন মহিলা অন্তস্বত্ত্বা হওয়ার পর থেকে সন্তানের জন্ম , লালন-পালন , বাড়ির কাজ , অফিস , নিজের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সহ আরও নানা দিক কিভাবে সামলান তা তুলে ধরা হয়েছে । শুধু তাই নয় , একটি পাখি কিভাবে মায়ের দায়িত্ব পালন করে , গাছ কি করে চারাগাছকে বাঁচিয়ে রাখে তাও তুলে ধরা হয়েছে ওই থিমে । স্বভাবতই দম ফেলার ফুরসত নেই ক্লাব কর্তাদের ।  টানা ২ মাস ধরে বাঁশ , বেত , প্ল্যাস্টার অফ প্যারিস , থার্মোকল প্রভৃতি সামগ্রী দিয়ে বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র  আশুতোষ ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে ওই থিম ভাবানার বাস্তবায়নের কাজ করে চলেছেন ২০ জন শিল্পী । ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা সুমনশঙ্কর বর্ধন , জয়ন্ত সিংহ , রাজীব দত্তরা জানান , একজন মা’ই আসলে দূর্গা । তিনিই আজকের সমাজের দশ দিক সামলে দিচ্ছেন । সেই রূপকে তুলে ধরতেই আমাদের এই থিম ভাবনা ।  

                                          ----০----     

                                         ঢাকিদের কথা







 কাঠের জায়গা নিয়েছে লোহার পাতের খোল । চামড়ার বদলে ফাইবারের চাদর । কার্যত খোলনলচে বদলে যাওয়ায় ঢাকের প্রচলিত বোলটাই হারিয়ে গিয়েভারের সঙ্গে কমেছে বাজনার ধার , ঢাকিদের তাই মন ভার
ছে। তাই ঢাক বাজিয়ে সেই সুখ আর পাচ্ছেন না ঢাকিরা। বিশেষত দুর্গোপুজোয় । কারণ দুর্গা পুজোতেই দোলা আনা , আরতি থেকে বিসোর্জনে ঢাকের কাঠিতে ফুটে ওঠে ভিন্ন মাত্রার বোল । তবুও পরিস্থিতির চাপে এখন দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটাতে হচ্ছে তাদের ।

         ঢাকিদের সঙ্গে কথা বলেই জানা গিয়েছে , বছর কয়েক আগেও কাঠের গুড়ির খোলের উপর চামড়া দিয়ে তৈরি হত ঢাক।কাঠ এবং চামড়ার গুণমানের উপর নির্ভর করত সেইসব ঢাকের দাম। আম বা নিম কাঠের একটি খোলের দামই পড়ে যেত ৬/৭ হাজার টাকা । ২০০০/২৫০০ টাকা চামড়ার দাম। দল , কাঁধি, মোকপাতি , কোঁড়ল সহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে একটি কাঠের ঢাকের বর্তমানে খরচ পড়ে ১০/১২ হাজার টাকা । ওই ঢাকের গড় ওজন ২৫/৩০ কেজি ।

    অন্যদিকে পাতের খোলের বর্তমান মূল্য ২৫০০/৩০০০ টাকা। ফাইবারের চাদরের দাম পড়ে ২৫০/৩০০ টাকা । সব মিলিয়ে একটি পাতের ঢাকের গড়ে দাম পড়ে ৬৫০০/৭০০০ টাকা । স্বাভাবিক ভাবেই ঢাকিরা এখন কাঠের বদলে পাতের খোলের ঢাক ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছেন ।  

          ঢাকের ওজন কমেছে । কমেছে দামও । কিন্তু ঢাক বাজিয়ে মন আর ভরছে না ঢাকিদের । বিশেষত প্রবীণ ঢাকিরা হাল আমলের ঢাকে আর খুঁজে পাচ্ছেন পরিচিত সেই বোল । 

          নানুরের কুমিড়ার ৩৮ বছরের বরুন দাস , সাঁইথিয়ার হরিসড়ার ৩০ বছরের দয়াময় দাসরা জানান , ১২০০০ টাকা দিয়ে ঢাক কিনতে হলে আমাদের তো মনসা বিক্রির অবস্থা হয়ে যাবে । সারা বছর বড় বায়না বলতে তো পুজো । কলকাতায় টানা পুজো বাজিয়ে মেলে ৪০০০/৪৫০০ হাজার টাকা । বছরের অন্য সময় ঢাক বাজিয়ে মেলে সাকুল্যে হাজার দুয়েক টাকা । একবার চামড়া ফাঁসলেই হাজার তিনেক টাকার ধাক্কা । তার উপরে বাইরে বাজাতে যাওয়ার সময় শুধু নিয়ে যাওয়া আসার ঝক্কিই নয় , টানা বাজানোর সময় ভারী ঢাক নিয়ে কাঁধে ব্যাথা ধরে যায় । বোলের কিছুটা তারতম্য ঘটে ঠিকই কিন্তু তা নিয়ে কে আর মাথা ঘামায় ? পুজো কর্তারা তো কাঠের ঢাকের জন্য বাড়তি টাকা দেবেন না । 
     
            বর্তমান প্রজন্মের ঢাকিরা যাই বলুন না কেন প্রবীনেরা কিন্তু পাতের খোলের ঢাকে সেই বোল খুঁজে পাচ্ছেন না । দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাক বাজাচ্ছেন সাঁইথিয়ার হরিসড়া গ্রামের ৬২ বছরের ষষ্ঠীধর বায়েন , ৫৮ বছরের সনৎ বায়েন ,  নানুরের কুমিড়া গ্রামের ৬০ বছরের নাগর দাসরা।

            তারা জানান , কাঠের খোলের ঢাকের বোলই আলাদা, কেমন যেন গুরু গম্ভীর । আরতি , বলি থেকে শুরু করে ভাসানের বাজানার তারতম্যটুকু অনায়াসেই ধরা যায় । আর এখনকার পাতের খোলের ঢাকের বাজনা শুনে পুজো কর্তারা বলেন , কি হে ঢাকি তোমার সবেতেই যে দেখছি কেমন খাপছাড়া বোল উঠেছে । আমরা তো আর বলতে পারি না , বাবু গো হাল আমলের ঢাকের ভারের সঙ্গে কমে গিয়েছে বাজনা ধারও । খাজনা যেমন বাজনা তো তেমনই হবে।

                                            ----০----    

      

                                              (  কুণ্ডলা  জমিদার বাড়ি )

      পুজো মানেই ঘরদোর ঝাড়পোঁছের ব্যস্ততা । আর ঘরদোর ঝাড়পোঁছ মানেই পরিবারের মহিলাদের হাঁকডাক , কাজের লোক ‘মনির মায়ের' সঙ্গে তর্কাতর্কি । কিন্তু কুন্ডলা জমিদার বাড়ির বড় তরফের পুরুষদের ঝাড়পোঁছের ব্যস্ততা বেড়ে যায় । তবে অবশ্য সব পুরুষদেরই নয় , পুরুষানুক্রমে একজনকেই গোটা পরিবারের জন্য ওই কাজটি করতে হয় । তা’বলে তিনি কিন্তু কোন দাসখত লিখে দেন নি । বরং বলা যেতে পারে শৌখিন মজদুরি করে চলেছেন বছরের পর বছর ।আসলে ঘর নয় , তাকে ঝাড়পোঁছ করতে হয় বন্দুক । জমিদার বাড়ির পুজোর অন্যতম অঙ্গই হচ্ছে ওই বন্দুক ।


                         প্রচলিত রয়েছে ,  প্রায় তিন শতাধিক বছর আগে বর্ধমান জেলার সিতহাটী গুড়পাড়া থেকে প্রভুরাম মুখোপাধ্যায় নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ময়ূরেশ্বরের কুণ্ডলা গ্রামে তেজারতি কারবার করে প্রভুত বিত্তশালী হন । তিনিই ওই গ্রামে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন । সেই পুজোই কুণ্ডলার জমিদারবাড়ির পুজো হিসাবে পরিচিত । পরবর্তীকালে অবশ্য আরও দু’তরফ পুজো প্রচলন করেন । কিন্তু বড়ো তরফের পুজোই আদি এবং প্রাচীন বলে পরিবারের দাবি । বৈষ্ণব মতে পুজো হলেও এককালে ওই পুজোর রমরমাই ছিল আলাদা। সাতদলের বাজনা সহ দোলা আনা আর বিসোর্জনের শোভাযাত্রার কথা এলাকার লোকের মুখে মুখে ফিরত । সেই সময় নিরাপত্তা এবং জমিদারবাড়ির আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হত বন্দুক । সেই বন্দুক দেগেই অষ্টমীর সন্ধিপুজোর সূচনা হত।



                        




    জমিদারি গিয়েছে , গিয়েছে সেই বোলবোলা । পলেস্তারা আর খিলান ছেড়ে ছেড়ে পড়ছে । শ্যাওলা ধরা দেওয়ালের সোঁদা গন্ধে জমিদার বাড়ির সর্বাঙ্গে কেমন যেন দৈন্যতার ছাপ । পুজো কার্যত মাতৃদায় হয়ে দাঁড়িয়েছে । চাঁদা আর যৎসামান্য দেবোত্তর জমির আয়ে সেই দায় পালন করে চলেছেন বর্তমান প্রজন্ম । তবু সেদিনের সেই আভিজাত্যের প্রতীক ধরে রেখেছে জমিদারবাড়ি । আজও ওই পরিবারে বন্দুক দেগেই সন্ধিপূজোর সূচনা হয় ।

   পুরুষানুক্রমে বন্দুক দাগার কাজটি করে চলেছেন ৪৫ বছরের গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায় । তিনি জানান , এখন তো বন্ধুক কোন কাজেই লাগে না । তবু প্রথা রক্ষার্থে রাখতে হয়েছে । প্রতিবছর নবীকরণ করা থেকে শুরু করে কলকাতায় গুলি কিনে আনতে হয়। তারপর পুজো এলেই সারাবছর পড়ে থাকা বন্দুক ঝাড়পোঁছের  পর কয়েকটা গুলি করে ঝালিয়ে নিতে হয় । বলা তো যায় না, যদি ‘মিস’ হয় তাহলে ঘোর অমঙ্গল ।


                          
                                     হারানো দিনের সেইসব স্মৃতি আজও চোখের সামনে ভাসে ৮০ বছরের বিভুদান মুখোপাধ্যায় , সমীর মুখোপাধ্যায় , ৭০ বছরের কমলা মুখোপাধ্যায় , হিঙ্গুল মুখোপাধ্যায়দের । তারা জানান , এখন একটাই বন্দুক , তাই গুলি না হওয়া পর্যন্ত খুব দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় । কিন্তু একদিন জমিদারবাড়িতে ১০/১২ টা বন্দুক ছিল । কর্তারা সব ধোপদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে গোল হয়ে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়াতেন । বাচ্চারা তো ভিড় জমাতই , মহিলারাও মন্ডপ থেকে দেখতেন সেই বন্দুক দাগা । তারপর কার কর্তা কেমন পারদর্শী তা নিয়ে পুজো ক’দিন চলত হাসি-ঠাট্টা , খুনসুটি , একে অন্যের পিছনে লাগা । অকৃতকার্য হলে ছাড় পেতেন না কর্তারাও । একান্তে গৃহিনীর মুখ ঝামটা খেতে হত তাদেরও ।

     পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সুব্রত মুখোপাধ্যায় , পলাশ মুখোপাধ্যায়রা জানান , পুজো বর্তমানে আমাদের কাছে মাতৃদায়ের সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে । অন্যের সাহার্য্য নিয়েও মাতৃদায় উদ্ধার করতে হয় । আমাদেরও আজ জমিদারবাড়ির পুজোয় নিজেদের পাশাপাশি অন্যের কাছেও চাঁদা নিতে হয় । 

                                              ---০--- 


           পদ্মাবতীদের কথা   



     

         

             অর্ঘ্য ঘোষ 

মা আসেন । অন্য রকম আলোতে ভরে যায় বাঙালির ঘর । কিন্তু মা এলেই সন্তানকে ছেড়ে দিতে হয় পদ্মাবতীদের । তাই একদিকে যখন অধিকাংশ বাঙালী পুজোর অপেক্ষায় দিন গোনেন অন্যদিকে তখন পুজোর দিন যতই এগিয়ে আসে ততই মন খারাপ হয়ে যায় পদ্মাবতী দাস,সুখী বায়েনদের । কারণ মা ঘরে ঢোকার আগেই তাদের পুজোর ক'টা দিনের জন্য সন্তানকে ছেড়ে থাকতে হয় । তাই একাকী মন খারাপে পুজো কাটে তদের।




      এ মন খারাপ শুধুমাত্র একজন পদ্মাবতী কিম্বা সুখীদেরই নয় , অধিকাংশ ঢাকি পরিবারের গৃহবধুদেরই একই ভাবে পুজো কাটে। তাদের স্বামীরা প্রায় প্রতি বছরই বাড়ি ছেড়ে কলকাতা , দিল্লি সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঢাক বাজাতে যান । আর সঙ্গে কাঁসি বাজানোর জন্য নিয়ে যান ছোট্ট ছেলেটাকেও ।

     প্রজন্মের পর প্রজন্ম অধিকাংশ ঢাকি পরিবারের বধুদের এভাবেই পুজো কাটাতে হয় । সদ্য বিবাহিতাকেও স্বামীকে ছেড়ে একাই পুজো কাটাতে হয় । আজ যারা বাবা কাকা , তারাও ছোটবেলায় তাদের বাবা কাকাদের সঙ্গে কাঁসি বাজাতে যেতেন।এখন ছেলেদের নিয়ে যান।

           পুজোর সময় ছেলেদের নিয়ে যেতে খারাপ লাগে । কিন্তু কিছু করারও নেই । অধিকাংশ পুজো কমিটিই কাঁসি বাজানোর জন্য আলাদা করে কোন পয়সা দেয় না । অনেকটা ঢাকের সঙ্গে কাঁসি ফাও দস্তুর হয়ে গিয়েছে । বয়স্ক কাউকে নিয়ে গেলে ঢাক বাজানোর পারিশ্রমিক থেকেই আধাআধি ভাগ দিতে হয় । টানা পাঁচদিন ঢাক বাজিয়ে  যে পারিশ্রমিক  মেলে তাতে আর একজনকে ভাগ দিতে হলে পড়তায় পোষায় না ।



    কেমন লাগে খুদে কাঁসি বাজিয়েরা ? প্রথম দিকে নতুন জায়গায় পুজো দেখতে পাবো ভেবে খুব আনন্দ হয় তাদের । কিন্তু যখন ভোরে বাবা কাঁসি বাজনোর জন্য ডেকে তোলে তখন খুব কষ্ট হয় । সব থেকে কষ্ট হয় তারই বয়সী ছেলেমেয়েদের বাজি ফাটাতে , নতুন জামাপ্যান্ট পড়ে আনন্দ করতে দেখে । আর ওইসব দেখতে গিয়েই কাঁসির তাল কেটে গেলেই বাবার বকুনি খায় । তখন খুব কান্না পায় । মা , ভাই বোনের কথা মনে পড়ে ।


        আর মায়েরা ? বছর পর মা আসেন আনন্দ হওয়ারই কথা । কিন্তু তারাও তো মা । পুজোতে ভালো কিছু হলে মুখে তুলতে পারেন না । অন্যের ছেলেমেয়েকে পুজোয় আনন্দ করতে দেখলে নিজের ছেলের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে যায় । অন্য মায়েরা যখন ষষ্ঠীতে মঙ্গল কামনায় সন্তানের কপালে ফোঁটা দেয় তখন তারা দরজার চৌকাঠে ফোঁটা দিয়ে কবে পুজো শেষে ছেলেরা ফিরবে সেই প্রতীক্ষায় দিন গোনেন ।  

                                                ----০----   


    



                                             ( দক্ষিণগ্রাম রায়বাড়ি ) 



 জমিদারি গিয়েছে । রয়ে গিয়েছে চারশো বছরের প্রাচীন প্রথা । সেই প্রথা অনুসারেই ১৫ দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণগ্রাম বাবুপাড়ার রায় বাড়ির পুজো ।

            প্রায় চারশো বছর আগে স্থানীয় জমিদার আশারাম রায় ওই পুজোর প্রচলন করেন। কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে বোধন এনে পুজো শুরুর নিয়ম চালু করেন তিনি । নবমীতে মোষ বলি, দশমীতে গরু ছোটানোর প্রতিযোগিতাও চালু হয় । জমিদারি গিয়েছে দীর্ঘদিন আগে ।

      তাই পুজোয় জমিদারি আমলের সেই রমরমা আর নেই । কিন্তু আজও ৪০০ বছরের প্রথা মেনেই ১৫ দিন আগে বোধন এনে পুজো শুরু হয়ে যায় । বজায় রয়েছে মোষ বলি এবং গরু ছোটানোর প্রতিযোগিতাও । আর রয়েছে পূজো উপলক্ষ্যে ঘরে ফেরার প্রথাও । কর্মসূত্রে যে যেখানেই থাকুন না কেন ,পুজোর ক'টা দিন ফিরতেই হয় গ্রামে।পরিবার ভাঙতে ভাঙতে বহু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।অনেকেই বাইরে থাকেন ।অধিকাংশেরই সঙ্গে সারা বছর দেখা হয় না । পুজোয় সবাই একত্রিত হন । পরিবারটা যেন আবার একান্নবর্তী  হয়ে ওঠে ।
  

         জমিদারি আমলের সেই বোলবোলা আর নেই ঠিকই । কিন্তু আজও যেন প্রবীণদের চোখে ভাসে সেইসব দিনের ছবি । সে সময় পুজো তো বটেই , দশমীতে  গরু ছোটানোর খেলা দেখতে হাজির হতেন দুরদুরান্তের মানুষজন । সাত দল বাজনা সহ গ্রামের সমস্ত গরু নিয়ে দীঘির পাড়ে ছেড়ে দেওয়া হত । তারপর একসঙ্গে বেজে উঠত সব বাজনা ।আর তাতেই দিগবিদিক শূন্য হয়ে গরু ছুটত বাড়ির দিকে। যার গরু আগে বাড়ি ঢুকত সেই প্রথম হিসাবে পুরস্কৃত হত । আজ আর সেই সাত দলের বাজনা নেই , নেই পুরস্কারও । কিন্তু প্রথাটা আজও রয়ে গিয়েছে । 

                                           ----০----

              


                                          ( হটিনগর মোড় সর্বজনীন ) 

         
শুনতে চান ভাদু , বাউল কিম্বা পটের গান ? শহুরের কোলাহল মুখর পরিবেশ ছাড়িয়ে দু'দণ্ড হারিয়ে যেতে চান শান্ত মনোরম কোন গ্রামে ? তাহলে পুজোয় চলে আসুন ময়ূরেশ্বরের হটিনগর মোড় সর্বজনীন পুজো মন্ডপে । অবলুপ্ত প্রায় ওইসব লোকশিল্পকেই এবারের পুজোয় থিম করেছে ওই দুর্গোৎসব কমিটি ।
    ৩০ তম বর্ষে পা রাখল ওই পুজো ।গত বছর স্বর্গদ্বার – নরকদ্বারের পাশাপাশি নির্মল বাংলা অভিযান , বাল্য বিবাহ এবং পণপ্রথা রোধের মতো সচেতনামূলক থিম করে সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লকের সেরা হিসাবে প্রশাসনের স্বীকৃতি পেয়েছিল ওই পুজো কমিটি । এবারে তাদের থিম অবলুপ্ত প্রায় লোকশিল্প ।

    পুজো মণ্ডপ হিসাবে একটা বড়ো এলাকা জুড়ে তৈরি করা হচ্ছে আস্ত একটি গ্রাম । সেই গ্রামের একটি বাড়িতে হবে দেবী আরাধনা । ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অন্য বাড়িগুলির কোনটির দাওয়ায় দেখা মিলবে বাউল , ভাদু , রাইবেশে , পট সহ বিভিন্ন লোকশিল্পীর। ছোট ছোট বক্সে শোনা যাবে ওইসব লোক গানও । 

        সহকারীদের নিয়ে  আষাঢ় মাস থেকে মুর্তি সহ ওইসব থিম গড়ছেন নদীয়ার তেহট্টের দিবানন্দ হাজরা । তিনি জানিয়েছেন , একটি প্রাচীন গ্রামে যা-যা দেখা যেত তা দেখা যাবে এই মণ্ডপে । একতারা বাজিয়ে বাউল কিম্বা পটচিত্র দেখিয়ে পটুয়ার ভিক্ষা করা থেকে শুরু করে দেখা মিলবে রাইবেশে , বহুরুপী কিম্বা ভাদু কোলে ভাদুশিল্পীদেরও ।
      

     পুজো কমিটির সভাপতি গৌতম রক্ষিত এবং সম্পাদক তুফান মণ্ডল জানান , বর্তমান প্রজন্মের সামনে অবলুপ্তপ্রায় লোকশিল্পগুলিকে তুলে ধরতেই এই থিম পরিকল্পনা ।                       



                                                                  ------০-----           

          


                                             ( সেকপুর ব্যানার্জী পরিবার )   


      বন্যায় ভেসে গিয়েছিল ঘর গৃহস্থালি । ভোগ রান্নার সুযোগটুকু পর্যন্ত ছিল না । থাকার মধ্যে জমিদার বাড়িতে ছিল পান্তাভাত । কলাই-পোস্ত বাঁটা সহযোগে সেই পান্তাভাতই ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়েছিল মায়ের পায়ে। সে কোন কালের কথা।কিন্তু আজও গ্রামের জমিদার বাড়ির পোস্ত-কলাই বাঁটা সহ পান্তা ভাতের ভোগ দেওয়ার প্রথা চালু আছে ময়ূরেশ্বরের সেকপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় । আর সেই ভোগ খাওয়ার পর পুজো শেষে চারদিনের নিরামিষ ব্রত ভাঙেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

                      প্রচলিত রয়েছে , একসময় নাকি ওই গ্রামে রাখালচন্দ্র  চট্টোপাধ্যায়ের জমিদারি ছিল । চট্টোপাধ্যায়রা ছিলেন বৈষ্ণব।তাদের নিজে হাতে মূর্তি পুজোর চল ছিল না । কিন্তু সেসময় তারা ছাড়া  গ্রামে অন্য কোন ব্রাহ্মণ পরিবারেরও বাস ছিল না । তাই গ্রাম দেবতা সহ বিভিন্ন পুজো প্রচলনের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্রাহ্মণদের জায়গা জমি দিয়ে নিয়ে আসেন । তাদের একজন ছিলেন নদীয়ার মাটিয়ারির বিষ্ণুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ।

           সেবারে বন্যায় ভাসছে গ্রাম ।অষ্টমীর সকালে বন্যায় একটি কাঠামো ভেসে আসে বিষ্ণুবাবুর দোরগোঁড়ায় । তিনি সেই কাঠামো তুলে খবর দেন জমিদারবাবুকে । সেসময় গ্রামে কোন দূর্গাপুজো ছিল না । তাই জমিদারবাবু ওই কাঠামোতেই পুজো প্রচলনের নির্দেশ দেন। সেইমতো নিজের বাড়িতেই নবমীর দিন কাঠামো পুজো শুরু করেন । পুজো তো চালু হল । কিন্তু ভোগের কি হবে ? জমিদারবাবু বললেন , আমরা তো মায়েরই সন্তান । আমরা যদি পান্তা খেয়ে থাকতে পারি তাহলে মা’ও তাই খাবেন । জমিদারবাড়ি থেকেই আসে কলাই , পোস্ত বাঁটা সহ পান্তাভাত । ভোগ হিসাবে তা'ই মাকে দেওয়া হয় । সেই প্রথা আজও চলছে । আজও ওই ভোগের প্রসাদ খাওয়ার পরই চারিদিনের নিরামিষ খাওয়ার ব্রত ভাঙেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা ।

    কর্মসূত্রে আজ উভয় পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন । কিন্তু সেদিনের সেই পুজো দুই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আজও যোগসূত্র রক্ষা করে চলেছে । যে যেখানেই থাকুন না কেন , পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামে ফেরা চাই’ই চাই । পুজো চারদিন দুই পরিবার একাত্ম হয়ে যায় ।

                                               ----০----       

                

           



                                                  (  দ্যাওতা পুকুরের সেই ঘাট )    

                                                                (  নানুর  ) 


দিন গিয়েছে। ফুরিয়েছে প্রয়োজনও। তবু নানুরের পুজো ঘিরে রয়ে গিয়েছে অদ্ভুত এক প্রথা। প্রচলিত রয়েছে , একসময় নানুর এলাকায় কিরগিজ খাঁ নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি তার অনুগামীদের নিয়ে পুজো পন্ড করার জন্য ভরা ঘট ছুঁয়ে দিতেন। তার ফলে পণ্ড হয়ে যেত  এলাকার সমস্ত পুজো।  এর ফলে  এলাকার  বাসিন্দাদের  পুজোর ক'টা  দিন  কাটাতে  হত  মনমরা  হয়ে  । 

                   বছরের পর বছর ওই ভাবে পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা পড়েন তদানীন্তন পুজো কমিটির  কর্তারা। তারা মাথা খাটিয়ে একটা বুদ্ধি বের করেন। ওই রাজা এবং তার অনুগামীদের কাছে শুয়োর ছিল অস্পৃশ্য। ঠিক হয় ,ওই অস্ত্র কাজে লাগিয়েই প্রতিহত করা হবে রাজার দুর্বুদ্ধি। সেই মতো সপ্তমীর সকালে ঘট ভরার পর পুকুর পাড়েই একটি শুয়োর বলিদান করা হয়। তারপর সেই শুয়োর মাথার উপর ঘোরাতে ঘোরাতে শুরু হয় ঘট ভরার শোভা যাত্রা।চক্রাকারে শুয়োরের রক্ত ছড়িয়ে পড়তে থাকে রাস্তায়।আর সেই রক্ত শরীরে লেগে যাওয়ার আশংকায় রাজা এবং তার অনুগামীরা দুরে সরে যান। সেই সুযোগে ঘট নিয়ে মণ্ডপে ফেরেন পুজোর কর্মকর্তারা।

            আজ আর রাজা নেই। নেই রাজরোষও। বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহ নানুরের পুজোগুলিকে  ঘিরে রেখেছে। কিন্তু সেদিনের সেই প্রথা আজও রয়ে গিয়েছে। আজও গ্রামের হাজরা পরিবার পালাক্রমে বলির জন্য শুয়োর দেন। আর স্থানীয় দ্যাওতা পুকুরের পাড়ে সেই শুয়োর বলির পর একসঙ্গে ঘট ভরে মণ্ডপে ফেরে এলাকার পুজো কমিটিগুলি। আজ আর অবশ্য রক্ত ছড়াতে আগের মতো বলি করা শুয়োর মাথার উপর তুলে পাকে পাকে ঘোরানো হয় না  কিন্তু  প্রথা মেনে শুয়োর বলি দিয়েই ঘট ভরা হয়।আর সেই ঘট ভরা দেখতে পুকুর পাড়ে নামে মানুষের ঢল।

                                             -------০------

           
                                                      ( সাঁইথিয়া অগ্রণী সমাজ )




বাংলাদেশের বর্ষবরণ উৎসবের স্বাদ পেতে চান ?  তাহলে পুজোয় আসুন সাঁইথিয়ার অগ্রণী সমাজের পুজো মন্ডপে । সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়তে ওপারের শিল্পভাবনায় মন্ডপ সাজাচ্ছে তারা । এবারে ৪৯ বছরে পা রাখল ওই পুজো ।
     অগ্রণী সমাজ আদতে একসময় ফুটবল খেলার ক্লাব ছিল । ১৯৪৪ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত , শিশির দত্ত , শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় , গোপেশ্বর রায়চৌধুরী ,মিঠু রুজ , কালিদাস মিত্র , সাধু দত্ত সহ বেশ কিছু ক্রীড়ামোদী মানুষজন।
    সেই সময় সংশ্লিষ্ট নজরুল সরণিতে কোন দুর্গাপুজো ছিল না । পাড়ার মহিলাদের পুজো দেখতে যেতে হত অন্যপাড়ায় । খেলা এবং সমাজসেবার সুবাদে অগ্রণী সমাজের সে সময় বেশ নাম ডাক । একদিন নীহারবাবুর স্ত্রী প্রয়াত স্মৃতিকণা দেবী স্বামীর কাছে পাড়ায় পুজো প্রচলনের আবদার করেন । স্ত্রীর দাবি মেনে ১৯৬৭ সালে অগ্রণী সমাজে দূর্গা পুজোর প্রচলন করেন নীহারবাবু ।

     সেই হিসাবে এবারই পূজোর সুবর্ণজয়ন্তী । কিন্তু মাঝে একবার ১৯৭৮ সালে বন্যা জনিত কারণে পুজো বন্ধ থাকায় আগামী বছর ৫০ বছরে পা রাখবে অগ্রণী সমাজের পুজো ।

     শুরু থেকেই ঘিরে নিত্য নতুন ভাবনা অগ্রণী সমাজের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য । সেদিনের উদ্যোক্তারা আজ প্রায় সকলেই প্রয়াত । কিন্তু পুজো ঘিরে নতুনত্বের ধারাটা আজও রয়ে গিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বর্ষবরণ উৎসবের শিল্প ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জায় ।
              উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন , ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের যশোরে চারুপীঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নববর্ষ উপলক্ষ্যে পাপেট , বাঘ সহ বিভিন্ন জীব জন্তুর বিচিত্র মুখোশ , বিরাটাকার পুতুল , পুরোন বাদ্যযন্ত্র সহ নানা শিল্পকর্ম নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেই শোভাযাত্রা সারা বাংলাদেশে আলোড়ন ফেলে দেয় । পরবর্তীকালে ঢাকার চারুকলা সহ বিভিন্ন জায়গায় ওই ধরণের শোভাযাত্রা প্রচলিত হয় । ওইসব শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত সামগ্রীর আদলেই এবারে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জা ।   
     
   স্বভাবতই পুজো ঘিরে এখন সাজো সাজো রব। সম্পাদক সব্যসাচী দত্ত জানান , সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়তেই এদেশের দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ষবরণের শিল্প ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । তাই দুর্গা পুজো ঘিরে এদেশের মানুষজন উপরি হিসাবে ওদেশের বর্ষবরণেরও স্বাদ পাবেন।              
     ---- ০----            
      


            পুজো দেখুন বীরভূমে 





    ( সাঁইথিয়া জয়তু সুভাষ গোষ্ঠী )



আঞ্চলিকতার সীমানা ছাড়িয়ে এবার আন্তর্জাতিকতার ছোঁওয়া মিলবে সাঁইথিয়ার নেতাজীপল্লী জয়তু সুভাষ গোষ্ঠীর মণ্ডপে।এবারে তাদের থিম ৫১ পীঠের সমাবেশে ৫২ হাতের দেবী প্রতিমা ।


     প্রচলিত রয়েছে , পুরাণ মতে দক্ষরাজের যজ্ঞসভায় পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু বরণ করেন সতী তথা দেবী দূর্গা । শিব সেই সংবাদ পেয়ে দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করে পত্নীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ‘ দে সতী-দে সতী ’ রবে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন । সৃষ্টি রসাতলে যায় দেখে বিষ্ণু সুদর্শণ চক্র দিয়ে দেবীর দেহ খণ্ড-বিখন্ড করেন । ৫১ টি স্থানে দেবীর সেই দেহাংশ পড়ে। পরবর্তীকালে ওইসব জায়গায় গড়ে ওঠে এক একটি সতীপীঠ । ভারত তো বটেই আরও কিছু দেশে রয়েছে ওই রকমই সতীপীঠ । বীরভূমেই রয়েছে পাঁচটি পীঠ ।
    পাকিস্থানের হিংগুলা তথা হিংলাজে পড়েছিল দেবীর মহা ব্রম্ভ্ররন্ধ্র। তাই সেখানে গড়ে ওঠে দেবীপীঠ কোট্টরী ।বাংলাদেশের যশোরে পড়েছিল উপঃ পাণিপদ্ম । সেখানে গড়ে ওঠে যশোরেশ্বরী। পীঠস্থান রয়েছে শ্রীলঙ্কা , নেপাল সহ আরও কিছু দেশে । এবারে সমস্ত পীঠস্থানের দেখা মিলবে সাঁইথিয়ার ওই পুজো মণ্ডপে ।
   
     পাশাপাশি রয়েছে ৫২ হাত বিশিষ্ট দূর্গা প্রতিমা । ৫১ পীঠের ভাবনা থেকেই দেবী দশভূজার অতিরিক্ত হাত নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয় । কিন্তু ৫১ হাত মানান সই নয় , তার উপরে কোথাও কোথাও মতান্তরে ৫২ পীঠেরও উল্লেখ রয়েছে বলে দেবীর ৫২ টি হাত নির্মাণ করা হয়েছে।
     
   পুজো কমিটির সম্পাদক দেবাশিষ সাহা জানান , এতদিন আমরা দেশের শিল্পভাবনায় মণ্ডপ সাজিয়েছি । এবারে সেই সীমানা ছাড়িয়ে বাইরের দেশকেও সামিল করছি মণ্ডপ সজ্জায় ।
                                                  
              ----0----

No comments:

Post a Comment