Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা - ১৫


                                                             


   
     ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা )
        

                 লুপ্তপ্রায় খেলা 

                                   

                       (   ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি  )


                                       

                  ' বৌ আনা আনি ' 


  '  -- ইসকা বিসকা কিসকা ডাক ?
     
     --  হাম পিক পিক আমার ডাক।
   
     -- কে নিবিরে লতা আর কে নিবিরে পাতা ? 

     --  আয়রে আমার পাতা। ' 


কোন অভিধানিক অর্থ থাক বা নাই থাক , অন্যান্য খেলায় প্রচলিত ছড়ার পাশাপাশি প্রশ্নোত্তরের মতো এই ছড়াটিও একসময় ছেলেমেয়েদের খুব আউরাতে শোনা যেত। সেই ছড়া আজ আর শোনা যায় না বললেই চলে। আসলে যে খেলার সুবাদে ওই ছড়া প্রচলিত ছিল সেই খেলাটিই হারিয়ে যেতে বসেছে। খেলাটির নাম ' বৌ আনা আনি।' কোথাও কোথাও ভিন্ন নামেও খেলাটির পরিচিতি রয়েছে।রয়েছে খেলার নিয়মের ভিন্নতাও। 


            খেলার জন্য প্রয়োজন বেশ কিছুটা পরিসর যুক্ত জায়গা। খেলাটি মূলত মেয়েদের। তবে ছেলেরাও ওই খেলায় মেয়েদের সঙ্গ নিতে পারে। ৮/১০ জন বা ততোধিক জোড় সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে খেলাটি চলে।কারণ ওই খেলায় সম সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে দুটি পক্ষ বা দল গঠন করতে হয়।তার মধ্যে একটি দল বরপক্ষ হলে অন্য দলটি কনেপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত হয়। অন্যান্য খেলার মতোই এই খেলাতেও বিভিন্ন জায়গায় দল গঠনের জন্য বিভিন্ন রকম নিয়ম প্রচলিত রয়েছে।তবে অধিকাংশ জায়গায় এই খেলায় ' নাম পাতাপাতি ' বা ' ডাকাডাকি ' পদ্ধতির মাধ্যমেই দল গঠন অধিকতর বেশি প্রচলিত। 


                                     ওই পদ্ধতিতে দল বা পক্ষ গঠনের নিয়মটিও বেশ মজাদার। ওই পদ্ধতিতে ঐক্যমতের ভিত্তিতে দুটি দল বা পক্ষের জন্য সমান উচ্চতা এবং আকৃতির দু'জন দলপতি মনোনয়ন করা হয়। দলপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি ঐক্যমতে পৌঁছোনো সম্ভব না হয় অর্থাৎ দুইয়ের অধিক খেলোয়াড় দলপতি পদের দাবিদার হয় তাহলে লটারির মাধ্যমে বিষয়টির  নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। লটারির জন্য সাধারণত যতজন খেলোয়াড় থাকে নুন্যতম  তত সংখ্যক বা ততোধিক চারকোনা কাগজের টূকরো নেওয়া হয় । তার মধ্যে দু'টি কাগজে গোপনে দলপতি লিখে  মুড়ে উপরের দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দলপতি পদের দাবিদাররা ওইসব টুকরোর মধ্যে একটি করে কুড়িয়ে নেয়। যে দু'জনের ভাগ্যে দলপতি লেখা কাগজ পড়ে তারাই দলপতি হিসাবে মান্যতা লাভ করে। 


                                 দলপতি নির্বাচনের পর শুরু হয় দল গঠনের প্রক্রিয়া। কোন দলপতি আগে নাম ডাকার সুযোগ পাবে তা  টসের মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হয়। দলপতির মতোই সম আকৃতি এবং উচ্চতার দুজন করে খেলোয়াড় গলা ধরে গোপনস্থানে চলে যায়। সেখানে কানে কানে ' লতা - পাতা , শিল-নোড়া , তালা-চাবি ,  ঘটি-বাটি সহ বিভিন্ন রকম মর্জিমাফিক নাম ধারণ করে গলা ধরেই দলপতিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর একসঙ্গে তারা প্রশ্ন করার মতো জিজ্ঞেস করে -- ' ইসকা - বিসকা - কিসকা ডাক ? জবাবে  ' টস 'জয়ী দলপতি বলে -- হাম পিক পিক আমার ডাক। খেলোয়াড় দু'জন তাদের নির্ধারণ করে আসা নাম অনুযায়ী বলে -- কে নিবিরে ঘটি আর কে নিবিরে বাটি ? বা রাম - লক্ষণ , রাজা - রানী প্রভৃতি। ' টসজয়ী ' দলপতি তার পচ্ছন্দ অনুযায়ী ডেকে নেয় -- আয়রে আমার লতা অথবা ঘটি , বাটি , শিল , নোড়া প্রভৃতি। তখন তার ডাক অনুযায়ী সেই নামধারী খেলোয়াড় তার দলভুক্ত বলে বিবেচিত হয়। অন্যজন প্রতিপক্ষ দলপতির দলভুক্ত হয়। ওইভাবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয় দুটি দল। 


                                           দল গঠনের পর ফের টসের মাধ্যমে কোন দল বরপক্ষ হবে অর্থাৎ আগে দান নেবে তা নির্ধারিত হয়। প্রথমেই খেলার জন্য মাটিতে দাগ কেটে চৌকো আকারের একটি ঘর তৈরি করা হয়। খেলার পরিভাষায় ঘরটিকে বাপের বাড়ি বলা হয়। ওই ঘর থেকে ৩০/৩৫ দুরে একটি সরলরেখা টানা হয়। সেটিকে বলা হয় শ্বশুর বাড়ির চৌকাঠ।বাপের বাড়ির ঘরে বৌ হিসাবে রাখা হয় একটি পুতুল অথবা ইট - পাথর।বরপক্ষের খেলোয়াড়রা সরলরেখা অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আর বাপেরবাড়ির চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কনেপক্ষের খেলোয়াড়রা। নিয়ম হলো , বরপক্ষের একজন করে খেলোয়াড় শ্বশুরবড়ির ঘর থেকে এক দমে বা নিঃশ্বাসে ' চান - চু ' বা ওই জাতীয় কোন ডাক ধরে বৌকে বাপের বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে ।' চান -চু ' ডাকের জন্য খেলাটি কোথাও কোথাও ' চান - চু '  নামেও পরিচিত।



                                  বৌ তুলে আনার সময় কনেপক্ষের খেলোয়াড়রা বরপক্ষের খোলোয়াড়টির ছোঁওয়া বাঁচিয়ে তাকে নিরাপদ দুরত্ব থেকে সন্তর্পনে লক্ষ্য রাখে।বৌ নিয়ে ফেরার সময় বরপক্ষের খেলোয়াড় দম হারিয়ে ফেললেই বিপত্তি।সেই সময় কনেপক্ষের কেউ ছুঁয়ে দিলেই ' মরা ' হতে হয় তাকে।কিন্তু তাকে ছোঁওয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকা কনেপক্ষের কোন খেলোয়াড়কে যদি বৌ নিয়ে ফেরার সময় যদি নিঃশ্বাস না ছেড়ে ডাকধারী ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে কনেপক্ষের সেই খেলোয়াড়ের ' মোর ' অনিবার্য। অন্যান্য খেলার মতোই এই খেলাতেও পারস্পরিকভাবে এক পক্ষের একজন করে 'মরা'র জন্য অন্যপক্ষের একজন করে প্রাণ ফিরে পেয়ে খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে। তবে ওইভাবে ডাকধারী যদি বৌ নিয়ে নির্বিঘ্নে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারে তাহলে কনে পক্ষের খেলোয়াড়রা ' চিক ' খেয়ে যায়।একই ভাবে বরপক্ষের সমস্ত খেলোয়াড় দান নেওয়ার পর কনেপক্ষের খেলোয়াড়রা দান নেওয়ার সুযোগ লাভ করে। খেলা শেষে চিকের সংখ্যা অনুযায়ী বিজয়ী দল বা পক্ষ নির্বাচিত হয়।                                                          


(  চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    





                      --------০--------
                                                                                 
               

No comments:

Post a Comment