লুপ্তপ্রায় খেলা
( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )
' রং -- রং '
খেলার মাঝেও যে বহু শিক্ষনীয় বিষয় অন্তর্নিহিত থাকে তার প্রমাণ মেলে ' রং - রং ' খেলায়। খেলার ছলে কচিকাঁচাদের বিভিন্ন রং চেনানোর অন্যতম আর্কষণীয় মাধ্যম হল এই খেলা।তাই বোধহয় খেলাটির নাম ' রং - রং।' এক সময় ছেলেমেয়েদের এই খেলায় উৎসাহিত করতে দেখা যেত অভিভাবকদের। সেদিনের সেই ছেলেয়েয়েরা আজ অনেকেই বাবা-মা হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সন্তানদের ওই খেলায় উৎসাহ দিতে দেখা যায় না তাদের । তাই চর্চার অভাবে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
১০/১৫ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিম্বা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। প্রথমে নিজেদের পচ্ছন্দ অনুসারে প্রচলিত কোন পদ্ধতির মাধ্যেম একজন খেলোয়াড়ের 'মোর ' নির্ধারণ করা হয়। খেলার মাঠে ১৫/২০ ফুট দুরত্বের ব্যবধানে দুটি সরলরেখা টানা হয়।একটি সরলরেখায় অবস্থান করে ' মোরধারী ' খেলোয়াড়। অন্যটিতে থাকে বাকি খেলোয়াড়রা। নিজেদের সরলরেখায় দাঁড়িয়ে ওইসব খেলোয়াড়রা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে 'মোরধারীকে' প্রশ্ন করে --'রং - রং কি রং ? ' মোরধারী ' তখন নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি রংয়ের নাম বলে। সাধারণত দুঃপ্রাপ্য অর্থাৎ খেলার স্থানে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না এমন রংয়ের নামই বলা হয়ে থাকে।
কারণ খেলার নিয়ম হলো ' মোরধারী ' রংয়ের নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য খেলোয়াড়দের সেই রংয়ের কোন কাগজ , কাপড়ের টুকরো , ফুল , পাতা , কাঁচের টুকরো সংগ্রহ করে নিজেদের ঘরে ফিরতে হয়। নিজেদের পোশাকের রংও বিবেচিত হয়। কিন্তু কোন খেলোয়াড় নির্ধারিত রং যোগাড় করতে না পারলে তার সমূহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে। নির্ধারিত রং সংগ্রহের আগে ' মোরধারী ' যদি কোন খেলোয়াড়কে তাড়া করে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে সেই খেলোয়াড়ের ' মোর ' হয়। আর ' মোরধারী ' খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে।
কিন্তু সবাই যদি ছোঁওয়া পড়ার আগেই নির্ধারিত রং সংগ্রহ করে ফেলে মোরধারীকে তা দেখিয়ে দিতে পারে তাহলে ফের ' মোর ' খাটতে হয় ' মোরধারীকে। ' কোথাও কোথাও আবার 'মোরধারী ' পচ্ছন্দ সই রংয়ের নাম বলার পর দুই সরলরেখার মধ্যবর্তী স্থানে গিয়ে দাঁড়ায়। আর অন্যান্য খেলোয়াড়দের নির্ধারিত রংয়ের সামগ্রী সংগ্রহ করে 'মোরধারীর' ঘরে পৌঁছোতে হয়। তারপর নিজেদের ঘরে ফিরতে হয় সবাইকে।কিন্তু শেষ খেলোয়াড় 'মোরধারীর' ঘরে পৌঁছোনোর আগে যদি কোন খেলোয়াড় নিজেদের ঘরে ফেরে তাহলে তার ' মোর ' হয়ে যায়। অন্যদিকে ওই সময় কালের মধ্যে নির্ধারিত রং দেখাতে না পারলে মোরধারী ছুঁয়ে দিলেও ' মোর ' অনিবার্য।
কিছু কিছু জায়গায় এই খেলায় আরও একরকম নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। ওই নিয়মানুযায়ী , মোরধারী নির্বাচিত হওয়ার পর বাকি খেলোয়াড়রা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী একই রংয়ের সামগ্রী নিজেদের হাতের মুঠোয় সংগ্রহ করে রাখে।
তারপর 'মোরধারীকে' প্রশ্ন করে --' রং - রং কি রং ? মোরধারী আন্দাজে অনুযায়ী কোন একটি রংয়ের নাম বলে।তখন খেলোয়াড়দের হাতের মুঠো খুলে দেখিয়ে দিতে হয় সংগৃহিত সামগ্রীর রং।'মোরধারীর' আন্দাজ সঠিক হলে সমস্ত খেলোয়াড়কে নিজেদের ঘর ছেড়ে 'মোরধারীর' ঘর স্পর্শ করে নিরাপদে নিজেদের ঘরে ফিরতে হয়। তার মধ্যে ' মোরধারী' যদি ছুটে কাউকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে তাহলে সেই খেলোয়াড়ের ' মোর ' হয়। কিন্তু 'মোরধারীর ' রঙের আন্দাজ যদি ভুল হয় বা অন্য খেলোয়াড়রা যদি তার ছোঁওয়া এড়িয়ে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারে তাহলে তার 'মোর' দশা ঘোচে না।
No comments:
Post a Comment