লুপ্তপ্রায় খেলা
( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )
মিউজিক্যাল চেয়ার
ও
বালিশ পাস
মিউজিক বাজুক বা না'ই বাজুক , খেলার নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মিউজিক। খেলাটির নাম মিউজিক্যাল চেয়ার। সাধারণত স্কুল , ক্লাব বা যে সব জায়গায় বেশ কিছু চেয়ার রয়েছে সেখানেই খেলাটির প্রচলন বেশি। কারণ ওই খেলার জন্য প্রয়োজন কয়েকটি চেয়ার এবং বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের বৃত্তাকার ঘোরার মতো উপযুক্ত জায়গা।
ছেলেমেয়েদের ওই খেলা এখন বড়ো একটা খেলতে দেখা যায় না। মূলত কচিকাঁচাদের স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়ার সৌজন্যে টিকে রয়েছে খেলাটি। স্কুলের বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অভিভাবিকাদের জন্য বরাদ্দ দু/চারটি খেলার মধ্যে ' মিউজিক্যাল চেয়ার ' অন্যতম।কোথাও কোথাও খেলাটি ' সিটিং চেয়ার ' নামেও পরিচিত।
মিউজিক্যাল চেয়ার মূলত মেয়েদের খেলা।তবে ছেলেমেয়ে একত্রেও খেলার চল রয়েছে। একক কৃতিত্বের খেলা মিউজিক্যাল চেয়ার।খেলোয়াড়ের কোন নিদ্দিষ্ট সংখ্যা নেই। কিন্তু যতজন অংশ নেবে তার চেয়ে ১ টি কম সংখ্যক চেয়ার প্রয়োজন। প্রয়োজন একটি ' মিউজিক সিস্টেম।' আর বৃত্তাকারে ঘোরার মতো উপযুক্ত জায়গা। প্রথমে চেয়ারগুলিকে বৃত্তাকারে সাজিয়ে নেওয়া হয়। তারপর ' মিউজিক সিস্টেম ' চালু করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।নিয়ম হলো , মিউজিক চালু করার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়দের চেয়ারের পিছনে পিছনে বৃত্তাকারে ছুটতে হয়।
কিন্তু সম্পূর্ণ মনোযোগ রাখতে হয় ' মিউজিক সিস্টেমের ' প্রতি। কারণ আচমকা ' মিউজিক ' বন্ধ হয়ে গেলে প্রতিযোগীদের একটি করে চেয়ার দখল করে নিতে হয়। অর্থাৎ তার আগে বা পিছনের কোন প্রতিযোগীকে টেক্কা দিয়ে যেকোন একটি চেয়ারে বসে পড়তে হয়। প্রতিযোগীর তুলনায় যেহেতু একটি চেয়ার কম থাকে তাই কোন একজন খেলোয়াড়ের বসার সুযোগ ঘটে না। দাঁড়িয়ে থাকা সেই খেলোয়াড়টিকে খেলা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়।
পরের পর্বে একটি চেয়ার সরিয়ে নিয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ করা হয়।তাই এক্ষেত্রেও প্রতিযোগীর তুলনায় চেয়ার সংখ্যা একটি কমে যায়।ফের ' মিউজিক সিস্টেম ' চালু করার সঙ্গে সঙ্গে বৃত্তাকারে ঘোরা শুরু করে প্রতিযোগীরা। 'মিউজিক' বন্ধ হলেই আবার চলে দখলের প্রতিযোগিতা। এবারেও চেয়ার দখল করতে না পেরে একজন খেলোয়াড়কে খেলা ছেড়ে বেড়িয়ে হয়। ওইভাবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় শেষ চেয়ারটি দু'জন প্রতিযোগীর মধ্যে যে দখল করতে পারে সেই বিজয়ী হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।তবে কোথাও কোথাও আবার ' মিউজিক সিস্টেমের ' অভাব পূরণ করতে পরিচালক নির্বাচনেরও নিয়ম চালু আছে। সেক্ষেত্রে পাতা ফোটানো বা প্রচলিত কোন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে একজন ক্রীড়া পরিচালক নির্বাচন করা হয়। ওই ক্রীড়া পরিচালকই ' মিউজিক সিস্টেমের ' পরিবর্তে খালি গলায় গান কিম্বা ' স্টার্ট এবং স্টপ ' বলে খেলা পরিচালনা করে। বেশ কিছু প্রবীণ মানুষ ক্রীড়া পরিচালকদের গান শুনেই ' মিউজিক্যাল চেয়ার ' খেলেছেন বলে জানিয়েছেন।তাদের দাবি , সেসময় ' মিউজিক সিস্টেম ' এত সহজলভ্য ছিল না। তাহলে প্রাচীন ওই খেলাটির নাম ' মিউজিক্যাল চেয়ার ' হল কেন ? এ প্রশ্নের অবশ্য ব্যাখ্যা মেলে নি।
' মিউজিক্যাল চেয়ারের ' মতোই আরও একটি খেলায় ' মিউজিক ' ব্যবহারের চল রয়েছে। খেলাটির নাম ' বালিশ পাস ' বা ' পিলো পাসিং'। এক্ষেত্রেও ইচ্ছানুযায়ী খেলোয়াড় নিয়ে ছেলেমেয়ে একত্রে খেলা চলে। তবে এই খেলায় চেয়ারের পরিবর্তে প্রয়োজন ছোট্ট একটি মাত্র বালিশ। আর দখলের পরিবর্তে এই খেলায় ত্যাগই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। যেকোন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথমে একজনকে দলপতি নির্বাচন করা হয়। প্রথমে সেই দলপতির হাতেই থাকে বালিশ।
দলপতি সহ বাকি খেলোয়াড়দের মাঠের মাঝে বৃত্তাকারে বসে খেলতে হয় ওই খেলা। ' মিউজিক সিস্টেম' চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলপতি হাতের বালিশটি দ্রুত তার বাঁ পাশের খেলোয়াড়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।সে দেয় তার পরের জনের ঘাড়ে। চক্রাকারে ওই ভাবে আবর্তন চলতে থাকে। তারই মাঝে ' মিউজিক ' থেমে যাওয়ার পরও যার হাতে বালিশ থেকে যায় তাকে বেড়িয়ে যেতে হয় খেলা ছেড়ে। ওইভাবে বেড়িয়ে যেতে যেতে শেষ পর্যন্ত যে খেলোয়াড় টিকে যায় সে বিজয়ী ঘোষিত হয়।চর্চার অভাবে এই খেলাটি আজ হারিয়ে গিয়েছে বললেই চলে।
No comments:
Post a Comment