Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ২১


                                                             


   
     ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা )

  
              লুপ্তপ্রায় খেলা 

                      

                 ( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি  )



                       ' মাংস চুরি '


ছেলেমেয়েদের প্রিয় খেলাগুলির মধ্যে  আরও একটি খেলা ছিল  ' মাংস চুরি।'  সব বয়সের ছেলেমেয়েকেই ওই খেলায় মেতে থাকতে  দেখা যেত। চর্চার অভাবে ওই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন একটু খোলা মেলা জায়গা।বিভিন্ন জায়গায় ওই খেলায় বিভিন্ন নিয়ম চালু রয়েছে।তবে মূলত ' মোর ' খাটা  এবং ' পয়েণ্ট ' সংগ্রহ নিয়ম  দুটিই বেশি প্রচলিত। ' মোর ' খাটার নিয়মে  মোরধারী ' বনাম একদল খেলোয়াড়ের মধ্যে খেলা চলে। পয়েণ্ট সংগ্রহের নিয়মে খেলাটি চলে দুটি দলের মধ্যে।


                                      ' মোর ' খাটার খেলায় সাধারণত বিজোড় সংখ্যক নুন্যতম  ৯/১৫ জন  খেলোয়াড় নিয়ে খেলা চলে। কারণ ওই খেলার নিয়মানুসারে প্রথমে মাঠে চক-খড়ি বা কাঠির দাগ দিয়ে একটি আয়তকার ঘর টানা হয়। খেলোয়াড়ের সংখ্যা অনুযায়ী আয়তকার ঘরটিকে সমান মাপের বর্গাকার ঘরে বিভক্ত করা হয়। মধ্যস্থলে যে ঘরটি পড়ে সেটির মাঝে একটি বৃত্ত আঁকা হয়। খেলার পরিভাষায় বৃত্তটি থালা হিসাবে পরিচিত। ' মোরধারী ' বাদ দিয়ে বাকি ঘরগুলি এক - একজন খেলোয়াড়ের জন্য বরাদ্দ থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই আয়তকার ঘরের মধ্যে বর্গাকারে বিভক্ত ঘরগুলির  মধ্যেকার থালার ঘরটি বাদ দিলে জোড় সংখ্যক ঘর পড়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ওইসব ঘরের জন্য একজন করে খেলোয়াড় সহ ' মোরধারীকে ' ধরা হলে খেলোয়াড়ের সংখ্যা দাঁড়ায় বিজোড়। তবে খেলোয়াড়ের অভাব ঘটলে কিছু ঘর ফাঁকা ফেলে রেখেও খেলা চলে। অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে পছন্দসই পদ্ধতি অনুসারে একজনের ' মোর ' নির্ধারন করে নেওয়া হয়। 


                                                খেলা শুরুর আগে প্রতীকি মাংস হিসাবে থালায় রাখা হয় কিছু ইট কিম্বা পাথরের টুকরো। নিয়ম হলো , ' মোরধারীকে ' আয়তকার ঘরের শিরা -উপশিরা অর্থাৎ বর্গাকার ঘরের বিভক্ত রেখাগুলিতে ঘোরাঘুরি করে মাংস পাহারা দিতে হবে। আর বাকি খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ ঘর থেকে ওই মাংস ' মোরধারীর ' ছোঁওয়া এড়িয়ে হাত বা পায়ের সাহায্যে অন্যান্য খেলয়ারদের দিকে ছুড়ে দেবে। অন্যান্য খেলোয়াড়রা সেই মাংস লুফে কিম্বা কুড়িয়ে নিতে পারলেই তা তাদের হয়ে যায়। সবসময় নিজের ঘরে অথবা ঘরের সীমানার দাগে একটি পা থাকা আবশ্যক। ওই নিয়ম ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসাবে সেই 'দানের' জন্য ' মরা ' হয়ে বাইরে বসে থাকতে হয়। কোথাও কোথাও ' মোর ' হয়ে যাওয়ার নিয়মও রয়েছে।


অন্যদিকে ছুড়ে দেওয়া মাংস  মাটিতে পড়ে গেলে  ' মোরধারীও  ' তা কুড়িয়ে ফের তার থালায় রেখে দেওয়ার সুযোগ লাভ করে। মাংস চুরি , মাটি থেকে কুড়িয়ে নেওয়া বা লুফে নেওয়ার সময় ' মোরধারী ' শিরা-উপশিরায় ছুটে গিয়ে যদি সেই খোলোয়াড়কে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলেই তার ' মোর ' হয়ে যায় আর তার স্থলে খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে ' মোরধারী।' 


                             অনেক জায়গায় আবার ছোঁওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ের নিয়মও প্রচলিত রয়েছে। ওইসব ক্ষেত্রে পায়ের হাঁটুর নিচে থেকে পায়ের আঙুল এবং হাতের কনুই থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত ছোঁওয়া লাগলে তা ' মোর ' বলে পরিগনিত হয় না , তার বাইরে ছুঁতে হয়। অন্যদিকে থালার সমস্ত মাংস ওইভাবে চুরি করে নিয়ে খেলোয়াড়রা যদি একটা ঘরে জড়ো হয়ে চুরি করে আনা মাংস 'মোরধারীর' ছোঁওয়া  বাঁচিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে পারে তাহলেই ' মোরধারী ' চিক খেয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তার ' মোর ' দশা ঘোচে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে সফলভাবে কাউকে ছুঁতে না পারে ততক্ষণ তাকে ওইভাবে মাংস পাহারা দিতে হয়। খেলা শেষে চিকের সংখ্যা অনুযায়ী বিজয়ী নির্ধারিত হয়।     

       
                                       
                                        দলগত ভাবেও ' মাংস চুরির ' খেলা প্রচলিত রয়েছে। ওই খেলার নিয়ম অনুযায়ী সমান সংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে দুটি দল গঠিত হয়। দুই দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একজনকে দলপতি নির্বাচন করে নেয়। কোন দল আগে দান নেবে তা স্থির করে নেওয়া হয় টসের মাধ্যমে।প্রতিটি দলের জন্য একটা নির্ধারিত সময় বরাদ্দ থাকে। এক্ষেত্রে মাঠে একটি বড়ো বৃত্ত আঁকা হয়। সেই বৃত্তের কেন্দ্রস্থলে দলপতি সহ একটি দলে যতজন খেলোয়াড় থাকে তত সংখ্যক ইট কিম্বা পাথরের টুকরো প্রতীকি মাংস হিসাবে রাখা হয়। ' টস ' জয়ী  দলের দলপতি সেই মাংস পাহারার দায়িত্বে থাকে। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা বৃত্তের বাইরে চক্রাকারে ছড়িয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নিয়ম হলো বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের পুরোপুরি বৃত্তের ভিতরে প্রবেশাধিকার নেই। বৃত্তের দাগে এক পা রেখে অন্য পা'টি বৃত্তের ভিতরে রাখতে পারে। ওইভাবে বিপক্ষের খেলোয়াড়রা মোরধারীর ছোঁওয়া এড়িয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যতগুলি মাংস চুরি করতে পারে তারা ততগুলি পয়েণ্ট লাভ করে।



                          যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই সমস্ত মাংস চুরি করে নেওয়া সম্ভব হয় তাহলে চুরি করা মাংস ফের থালায় রেখে পুর্বোক্ত দলই দান নেওয়ার সুযোগ লাভ করে। কোথাও আবার নির্ধারিত কিছু বোনাস পয়েন্ট দিয়ে পুর্বোক্ত দলের ' দান ' শেষ হয়।তখন দ্বিতীয় দলটি দান নেওয়ার সুযোগ পায়। অন্যথায় মাংস চুরির সময় যদি টসজয়ী দলের দলপতি বিপক্ষের কাউকে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে তার দল প্রতি জন বা প্রতি বার ছোঁওয়ার জন্য এক পয়েন্ট করে পায়।আবার বৃত্তের দাগ ছেড়ে পুরোপুরি ভিতরে ঢুকলেও নিয়মভঙ্গের জরিমানা হিসাবে প্রতিপক্ষ এক পয়েণ্ট লাভ করে।অথবা সেই ' দানের ' জন্য 'মরা ' হয়ে নিয়ম লঙ্ঘনকারী খেলোয়ারটিকে খেলা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়।সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পর ' দান ' নেওয়ার সুযোগ পায় বিপক্ক দল। প্রতি ' দানে ' দলগুলি ইচ্ছানুযায়ী দলপতি বদল করতে পারে। খেলা শেষে যে দল বেশি পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারে সেই দল বিজয়ী বলে স্বীকৃতি লাভ করে।                              
                                                     

 (  চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                               

No comments:

Post a Comment