লুপ্তপ্রায় খেলা
' বকমারা শিকারী '
' কানামাছি ' খেলার সঙ্গে বেশ খানিকটা মিল রয়েছে এই খেলার। কানামাছির মতোই ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে খেলা চলে। এই খেলার জন্য খুব বড়ো জায়গার প্রয়োজন হয় না। ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে বৃত্তাকারে ঘোরার মতো জায়গা হলেই চলে। অন্যান্য খেলার মতোই এই খেলাতেও নিজেদের পছন্দ সই কোন একটি পদ্ধতিতে প্রথমে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করে নেওয়া হয়। এই খেলার পরিভাষায় 'মোরধারী' 'শিকারী' এবং বাকি খেলোয়াড়রা 'বক' হিসাবে পরিচিত।
কানামাছির মতোই এক্ষেত্রেও ' মোরধারী' অর্থাৎ ' শিকারীর' চোখ গামছা অথবা কাপড়ের টুকরো দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয়।'শিকারী' সেই কাপড় বা গামছার ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছে কি না তা পরখ করে নেওয়ার জন্য তার সামনে আঙুল নাচিয়ে সংখ্যা বলতে বলা হয়। দেখতে
পেলেও কোন শিকারীই যে তা স্বীকার করবে না তা জেনেও ব্যবহারিক জীবনের অনেক কিছুর মতোই নিয়ম রক্ষার্থে ওইভাবে জিজ্ঞাসা করার নিয়ম চালু রয়েছে। কখনও কখনও শিকারীর মুখের সামনে হাত না নেড়েই জানতে চাওয়া হয় - ক'টি আঙুল ? শিকারী আন্দাজে ভুল -ভাল সংখ্যা বললে ধরেই নেওয়া হয় সে সত্যি সত্যিই দেখতে পাচ্ছে না।
চোখ বাঁধার পর ' শিকারীর ' হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তীরের মতো একটি কাঠি। ওই কাঠির একমুখে লাগানো থাকে নরম এঁটেল মাটির ছোট্ট একটি ডাব। সেটি তির হিসাবে চিহ্নিত। বাস্তবেও শিকারীরা ওইভাবে লাঠির ডাগায় একধরণের আঁঠা লাগিয়ে পাখি শিকার করে থাকে।
সেইমতো শিকারীকে মাঝে রেখে বাকি খেলোয়াড় অর্থাৎ বকেরা বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে।নিয়ম হলো , শিকারীকে আন্দাজে ওই তির ছুড়ে একটি করে বক লক্ষ্যভেদ করতে হবে অর্থাৎ মাটির অগ্রভাগ বকেদের গায়ে লাগাতে হবে।অনেক সময় ওই লাঠি শরীর স্পর্শ করা স্বত্ত্বেও তা অস্বীকার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু লাঠির অগ্রভাগের মাটি জামা বা শরীরের কোন অংশে লেগে গেলে দাগের সৃষ্টি হয়। তখন তার মিথ্যাচার ধরা পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে শাস্তি হিসাবে ওই খেলোয়াড়কে খেলা থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। অন্যথায় লাঠি শরীর স্পর্শের কথা স্বীকার করে নিলে সেই খেলোয়াড়কে সেই 'গেমের ' জন্য মরা হয়ে বাইরে বসে থাকতে হয়।
সেক্ষেত্রে প্রতিটি সফল লক্ষ্যভেদের জন্য শিকারী দশ পয়েন্ট করে পায়। কিন্তু তার নিশানা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই প্রতিবার অর্জিত পয়েন্ট থেকে ৫ পয়েন্ট করে বাদ চলে যায়। সেই হিসাবে তির ছুড়তে হয় খুব সজাগ হয়ে।ওইভাবে একে একে সমস্ত বক শিকার সম্পূর্ণ হলে শিকারী বকেদের দলে ঢোকার সুযোগ পায় অর্থাৎ তার ' মোর ' দশা ঘোচে। সেক্ষেত্রে তার প্রথম শিকার করা 'বক'টিকে ' শিকারীর ' ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে খেলা শুরু করতে হয়। কোথাও কোথাও অবশ্য ফের নতুন করে পরবর্তী গেমের জন্য একই ভাবে ' শিকারী ' নির্বাচনের নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। খেলা শেষে সংগৃহিত পয়েট অনুযায়ী সর্বশ্রেষ্ঠ শিকারী বা বিজয়ী নির্ধারিত হয়। একসময় ওই খেলা খেলতে গিয়ে ছেলেমেয়েরা জামাপ্যাণ্টে কাদামাটির দাগ লাগিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে বকুনি খায় নি এমন ঘটনা কমই ঘটেছে।তবু পরদিনই সেই খেলাতেই মেতে উঠেছে তারা। আজ চর্চার অভাবে সেই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
No comments:
Post a Comment