( ছবি - সৌজন্যে লোকপাড়া সবুজকলি বিদ্যাপীঠ )
' গোল্লাছুট '
' গোল্লাছুট '
' ঘানি ঘোরা ' খেলার সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে ' গোল্লাছুট ' খেলার। তাই অনেকে মনে করেন দু"টি খেলাই এক।কিন্তু দুটি খেলার নিয়ম কানুনে কিছুটা পার্থক্যও রয়েছে। রয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতিও।একই এলাকায় ছেলেমেয়ের আলাদা-আলাদা ভাবে দু'টি খেলাই খেলতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু চর্চার অভাবে ' ঘানি ঘোরা ' তথা অন্যান্য খেলার মতোই ' গোল্লাছুট ' খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিম্বা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলার চল রয়েছে। খেলার জন্য প্রয়োজন খেলায় অংশগ্রহণকারী ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি করার জন্য উপযুক্ত স্থান।' গোলাছুট ' দুটি দলের খেলা।তাই সবসময় জোড় সংখ্যক খেলোয়াড়ই কাম্য।অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথমে নিজেদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে দুটি দলের জন্য সমান সক্ষমতা যুক্ত দু'জন দলপতি নির্বাচন করা হয়। তারপর মূলত ' নাম পাতাপাতি ' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি দল গঠন করে নেওয়া হয়। কোন দল আগে দান নেবে তা ঠিক করে নেওয়া হয় টসের মাধ্যমে।
খেলার জন্য প্রথমে একটি মসৃণ গোলাকার লাঠি বা দন্ডকে মাঠের মাঝে শক্ত করে পোঁতা হয়। ফুটবল খেলার মাঠের গোলাকার ' গোল পোস্ট 'কেও দণ্ড হিসাবে ব্যবহার করা চলে।দণ্ডটিকে ঘিরে একটি ' বৃত্তকার' ঘর টানা হয়। ওই বৃত্তাকার ঘরের পরিমাপ একটু বড়ো সড়ো হওয়া প্রয়োজন।কারণ ওই ঘরের ভিতরেই দলপতির হাত ধরে সেই দলের বাকি খেলয়াড়দের মানব বন্ধনের মতো পরস্পরের হাত ধরে পাকে পাকে ঘুরেতে হয়। দলপতি একটি হাত দিয়ে দন্ডটি ধরে থাকে। ওইভাবে ঘোরার সময় বৃত্তাকার ঘরের দাগে পা পড়ে গেলেই বিপদ।সেই অবস্থায় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা ছুটে গিয়ে ছুঁয়ে দিলেই সেই খেলোয়াড়কে ' মরা ' হয়ে খেলা থেকে বেড়িয়ে যেতে হয়।গোলকার ঘরটি ' গোল্লা ' হিসাবে পরিচিত। ওই ঘর থেকে ১০০/১২০ ফুট দুরে আরও একটি ছোট দন্ড পোঁতা কিম্বা একটি গাছ নির্বাচন করা হয়।সেটিকে বলা হয় 'বুড়ির ঘর'।সমস্ত খেলোয়াড়কে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে ঘুরতেই একে একে ছুটে গিয়ে বুড়ির ঘরে পৌঁছাতে হয়। ' গোল্লা ' থেকে ছুটে যেতে হয় বলেই খেলাটির নাম ' গোল্লাছুট ' হয়েছে বলে মনে করা হয়ে থাকে।
নিয়ম হলো , বৃত্তের ভিতরে পাকে পাকে ঘুরতে ঘুরতেই একে একে হাত ছাড়িয়ে সুযোগ বুঝে ছুটে গিয়ে বুড়ির ঘরে পৌঁছোনোর লক্ষ্য থাকে দানচালকারীদের। আর তাদেরকে ছোঁওয়ার জন্য বৃত্তের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাহারায় থাকে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা। একে একে হাত ছাড়িয়ে দলপতি সহ দানচালকারী দলের সমস্ত খেলোয়াড় বিপক্ষের ছোঁওয়া বাঁচিয়ে বুড়ির ঘরে পৌঁছে যেতে পারলে একটি 'দান' শেষ হয় অর্থাৎ ' চিক ' খেয়ে যায় বিপক্ষ। তখন তারা দান নেওয়ার সুযোগ পায়।কোথাও কোথাও ' চিক ' খেলে দান মেলে না।সেক্ষেত্রে দলপতি সহ দানচালকারী দলের সমস্ত খেলোয়াড়কে ' মারতে' পারলে তবেই বিপক্ষের দান পাওয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। 'গোল্লা' ছেড়ে ছুটে বুড়ির ঘরে পৌঁছানোর আগে কোন খেলোয়াড়কে বিপক্ষ দলের কেউ ছুঁয়ে দিলেই সে ' মরা ' হয়ে যায়। আবার ঘুরতে ঘুরতে কেউ বৃত্তের বাইরে চলে গেলেও সে স্বাভাবিক ভাবেই ' মরা ' হিসাবে বিবেচিত হয়।
অন্যদিকে বৃত্তের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তাদের ছোঁওয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকা বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে দানচালকারী দলের কোন খেলোয়াড় যদি মানব বন্ধন অটুট রেখে ছুঁয়ে দিতে পারে তাহলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়টি ' মরা ' হিসাবে বিবেচিত হয়। ওইভাবে বিপক্ষ দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ের ' মরা'র জন্য দানচালকারী দলের একজন করে খেলোয়াড় প্রাণ ফিরে পেয়ে খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে। পাশাপাশি ওইভাবে বিপক্ষ দলের ' মৃত ' খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ছোঁওয়া বাঁচিয়ে তাদের বুড়ির ঘরে পৌঁছানো অনেক সহজ হয়ে যায়।অর্থাৎ সহজেই বিপক্ষকে ঘায়েল করে চিক দেওয়া সহজ হয়।
No comments:
Post a Comment