লুপ্তপ্রায় খেলা
' গেম পয়েন্টিং '
' কিৎ - কিৎ' খেলার সঙ্গে অনেকখানিই মিল রয়েছে ' গেম পয়েন্টিং ' খেলার । এই খেলাও মূলত মেয়েদেরই খেলা । তবে কোথাও কোথাও ছেলেদেরও খেলতে দেখা যায়। ' কিৎ - কিৎ' খেলার মতোই পরিসর যুক্ত স্থান হলেই ওই খেলা চলে। এই খেলাতেও ব্যবহৃত হয় ' খোলামকুচি ' বা পোড়ামাটির টালি দিয়ে তৈরি গোলাকার গুটি। এক্ষেত্রেও খেলার জন্য মাটি অথবা মেঝেতে দাগ দিয়ে একটি বিশেষ ধরণের ছক কেটে নিতে হয়। ' পয়েন্ট ' সংগ্রহই এই খেলার মূল উদ্দেশ্য বলেই সম্ভবত খেলাটির নাম ' গেম পয়েন্টিং।' খেলাটি অনেক জায়গায় বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের খেলতে দেখা যায়। কিন্তু সেই চর্চা ক্রমেই কমে আসছে। তাই অচিরেই এই খেলাটিও হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ন্যুনতম দু'জন খেলোয়াড় নিয়ে এককভাবে ওই খেলা চলে।কে আগে দান নেবে তা গণনা বা টসের মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হয়।' কিৎ-কিৎ' খেলার মতো ' গেম পয়েন্টিং ' খেলাতেও ছক কেটে নিতে হয়।তবে এই খেলার ছক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। এ ক্ষেত্রে ৪/৫ ফুট দৈঘ্যের একটি বর্গাকার ঘর আঁকা হয়। কোন বরাবর দুটি সরলরেখা টেনে ঘরটিকে ত্রিভুজাকার ৪ টি ঘরে বিভক্ত করা হয়।পাশাপাশি দুটি ঘরের জন্য ৫০ ও ৬০ এবং বাকি দুটি ঘরের জন্য বরাদ্দ থাকে ৮০ ও ১০০ পয়েন্ট।
নিয়ম হলো , টসজয়ী খেলোয়াড়কে ৮০ পয়েন্ট ঘরের সামনে উল্টো মুখ করে দাঁড়িয়ে গুটিটি মাথার উপর দিয়ে বিশেষ নিশানা করে ছুড়তে হয়। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন।কারণ গুটিটি ছকের বাইরে অথচ ১০০ পয়েন্ট ঘরের কাছাকাছি পড়াটা জরুরী ।কিন্তু গুটি যদি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘরের মধ্যে পড়ে তাহলে দানচালকারীকে ' মরা ' হয়ে পয়েন্ট সংগ্রহের সুযোগ হারাতে হয়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য খেলোয়াড়রা দান নেওয়ার সুযোগ লাভ করে।'মরা ' খেলোয়াড় নতুন ভাবে খেলা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আর দান পায় না।
অন্যথায় ঠিকঠাক অর্থাৎ ছকের বাইরে গুটি ফেলতে পারলে , দানচালকারীকে প্রথমে দু'পা জোড়া করে লাফিয়ে ৮০ পয়েন্টের ঘরে ঢুকতে হয়।তারপর লাফ দিয়ে এক পা ৫০ এবং অন্য পা ৬০ পয়েন্টের ঘরে রাখতে হয়।ওই অবস্থা থেকেই ফের লাফ দিয়ে দু ' পা এক করে ১০০ পয়েন্টের ঘরে দাঁড়াতে হয়। তারপর এক পা তুলে সর্বাধিক তিন লাফের মধ্যে ওই ঘর থেকে খেলার শুরুতে ছুড়ে রাখা গুটির কাছে পৌঁঁছোতে হয়। এজন্যই গুটি ছোড়ার সময় ১০০ পয়েণ্টের ঘরের কাছাকাছির মধ্যে গুটি ফেলার লক্ষ্য থাকে। কারণ এক পায়ে তিন লাফের মধ্যে ওই গুটির কাছে পৌঁছোতে না পারলে তাকে ' মরা ' হতে হয়।
কিন্তু সফল ভাবে গুটির কাছে পৌঁছোতে পারলে ' কিৎ-কিৎ' খেলার মতো এক পা তুলে অন্য পায়ের সাহায্যে দানচালকারী গুটিটিকে তিন বারের ধাক্কায় যে ঘরে ঢোকাতে পারে সেই ঘরের জন্য নির্ধারিত সংখ্যক পয়েন্ট লাভ করে। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে লাফালাফির সময় যদি দাগে পা পড়ে যায় কিম্বা গুটি ঘরে পৌঁছানোর পরিবর্তে দাগে আটকে যায় তাহলে দানচালকারী ' মরা ' ঘোষিত হয়। খেলা শেষে সব থেকে বেশি পয়েন্ট সংগ্রহকারীই বিজয়ী ঘোষিত হয়।
-----০----
' রাম- লক্ষ্মণ '
এই খেলাটিতেও রয়েছে ' কিৎ-কিৎ' এবং ' গেম পয়েন্টিং' খেলার ছায়া। একক ভাবে নুন্যতম ২ জন অথবা ৪/৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে জোড়ায় জোড়ায় খেলাটি চলে। কে বা কোন দল আগে দান নেবে তা স্থির হয় গণনা পদ্ধতি বা টসের মাধ্যমে। ' রাম - লক্ষণ ' খেলার জন্যও প্রয়োজন হয় একই ধরণের ' খোলামকুচি ' কিম্বা পোড়ামাটির টালি ভাঙা দিয়ে তৈরি গোলাকার গুটি। তবে এক্ষেত্রে খেলার জন্য ছকের পরিবর্তে মাটিতে একটি গোলাকার ঘর তৈরি করা হয়।ঘরটি 'দানে'র ঘর হিসাবে পরিচিত।
নিয়ম হলো , টসজয়ী খেলোয়াড়কে দানের ঘরে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকে মুখ করে গুটিটি মাথার উপর দিয়ে সন্তর্পনে ছুড়ে দিতে হয়। গুটি যাতে বেশি দুরে চলে না যায় সে বিষয়ে সব সময় সজাগ থাকতে হয়। কারণ ' দান ' ঘর থেকে দানচালকারীকে ' কিৎ-কিৎ' য়ের মতোই এক পা তুলে ' রাম - লক্ষ্মণ - সীতা -ভরত' ডাক সহ চার লাফে গুটির কাছে পৌঁছোতে হয়।আবার একই ভাবে চার বার পায়ের ঠেলা দিয়ে গুটিকে দান ঘরে ফিরিয়ে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে দানচালকারী প্রতিবার সফলভাবে ঘরে পৌঁছানোর জন্য এক ' পয়েন্ট ' করে সংগ্রহের পাশাপাশি 'মরা' না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে দান নেওয়ার সুযোগ লাভ করে।
কিন্তু চার লাফে গুটির কাছে পৌঁছাতে না পারলে ' মরা' হয়ে ' দান ' নেওয়ার সুযোগ হারাতে হয় তাকে । একই ভাবে চারবার ঠেলা দিয়ে গুটিকে ফেরত আনতে না পারলেও একই দশা হয়।ঠেলা দেওয়ার সময় গুটিতে পা পড়ে গেলে কিম্বা গুটি ঘরে পৌঁছোনের পরিবর্তে দাগে আটকে গেলে বা নিজের পা দাগে পড়লেও ' মরা ' হতে হয়।তখন সঙ্গী খেলোয়াড় দান নেয়।সেক্ষেত্রে ' মৃত সহ খেলোয়াড়ের ' সংগৃহিত ' পয়েন্ট ' তার অর্জিত ' পয়েন্টে' র সঙ্গে যোগ করা হয়।খেলা শেষে যে খেলোয়াড় বা দল বেশি পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারে সে'ই জয়ী ঘোষিত হয়। চর্চার অভাবে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
No comments:
Post a Comment