লুপ্তপ্রায় খেলা
( ছবি - লোকপাড়া সবুজকলি বিদ্যাপীঠ )
' মোরগ লড়াই '
বহু জায়গায় সত্যিকারের মোরগ নিয়ে লড়াইয়ের খেলা চালু রয়েছে । ওই খেলায় দর্শকদের বিনোদনের জন্য প্রশিক্ষিত দুটি মোরগকে লড়িয়ে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও তাদের পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় ব্লেড।সেই ব্লেডের আঘাতে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে ওঠে মোরগ দুটি। হামেশায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। আর তা দেখে দর্শকদের একাংশ পৈশাচিক উল্লাসে মেতে ওঠেন। হিংসাত্বক এই খেলাটি অনেক জায়গায় নিধিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু একই নামে চালু রয়েছে আরও একটি খেলা।এই খেলাটি অবশ্য নির্ভেজাল আনন্দের খেলা। চর্চার অভাবে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
' মোরগ লড়াই'য়ের খেলাটি মূলত প্রাইমারি স্কুলস্তরের ছেলেমেয়েদের খেলতে দেখা যায়। ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে বৃত্তাকারে ঘোরার মতো উপযুক্ত পরিসর যুক্ত জায়গা।
নিয়ম হলো , খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের নিজের হাত দিয়ে নিজের একটি পা তুলে ধরে থাকতে হয়।তারপর এক পায়ে লাফাতে লাফাতে কুনুইয়ের ধাক্কায় অন্য খেলোয়াড়দের ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়।ওই ধাক্কায় যে খেলোয়াড় পড়ে যায় সে ' মরা ' হয়ে খেলার সুযোগ হারায়। ওইভাবে সমস্ত খেলোয়াড়কে ফেলে দিয়ে যে শেষ পর্যন্ত টিকে যায় সে ওই পর্বের খেলায় বিজয়ী বলে স্বীকৃত হয়। কোথাও কোথাও ওই খেলোয়াড় নির্ধারিত সংখ্যক পয়েন্ট পায়। নির্ধারিত পর্বের খেলা শেষে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারীই বিজয়ী হিসাবে মান্যতা লাভ করে।
---- ০ ----
' বাঘ ছাগল '
( ছবি -- কল্যাণ আচার্য )
বাঘ-ছাগলও মূলত প্রাইমারি স্কুলস্তরের খেলা । ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। এই খেলায় পাতা ফুটিয়ে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করা হয় । অন্যান্য অধিকাংশ খেলায় ' মোর ' হওয়াটা অপচ্ছন্দের হলেও এক্ষেত্রে মোর হওয়াটা গর্বের ব্যাপার বলে ধরা হয় । কারণ এই খেলায় ' মোরধারী' বাঘ হিসাবে পরিচিত। বাকিরা ছাগল। বাঘের আহার্য্য বস্তু। তাই সবার মধ্যেই বাঘ হওয়ার প্রবণতা থাকে।
খেলার জন্য প্রথমে ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে ঘোরাফেরা করতে পারে সেইরকম পরিসর যুক্ত একটি বৃত্তাকার ঘর আঁকা হয়। খেলার পরিভাষায় ঘরটি ছাগলের ঘর বা খোঁয়াড় হিসাবে পরিচিত।ছাগল হিসাবে পরিচিত খেলোয়াড়রা সেই ঘরের ভিতরে অবস্থান করে।বাঘ থাকে বৃত্তের বাইরে।নিয়ম হল , বাঘ ওই বৃত্তের বাইরে ঘুরে ঘুরে কেঁদে কেঁদে বলবে -- অ্যাঙ্গা -- অ্যাঙ্গা।
সেই কান্না শুনে ভিতর থেকে ছাগলেরা জিজ্ঞাসা করবে - কান্দো কেন - কান্দো কেন ?
-- হারিয়েছে গরু , তোমরা কি খোঁজ জানো ?
-- রং কি ? সাদা না কালো ?
-- না - না কালো না , ধলো।
-- শিং কেমন ধারা ?
-- চিচিঙ্গের পারা।
-- সেই গরু তো নেই এই গোয়ালে।
-- এই তো সেই গরু , নেই কে বলে ?
বলেই বৃত্তের বাইরে থেকে একটি ছাগলকে টেনে বের করার চেষ্টা করবে।তখন বাকি ছাগলরাও সেই ছাগলটি টেনে ধরে আটকে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই প্রতিরোধ উপেক্ষা করে বাঘ যদি ছাগলটিকে বৃত্তের বাইরে বের করতে পারে তাহলে তাকে ' মরা ' হয়ে বাঘের খাদ্যবস্তু হয়ে বাইরে বসে থাকতে হয়।ওইভাবে একে একে সমস্ত ছাগলকে খোঁয়াড় থেকে বের করে নিজের খাদ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারলেই বাঘ জয়ী হিসাবে পরিগনিত হয়। সেক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত যে খেলোয়াড় খোঁয়াড়ে টিকে থাকতে পারে সে'ই পরবর্তী দানে বাঘ হওয়ার সুযোগ লাভ করে।কোথাও কোথাও আবার নতুন করে বাঘ নির্বাচনেরও নিয়ম প্রচলিত আছে। অন্যদিকে খোঁয়াড় থেকে ছাগল বের করার সময় অন্যান্য ছাগলের টানে বাঘ যদি খোঁয়াড়ে ঢুকে যায় তখন সে আর বাঘ থাকে না , তাকে তখন ছাগলে পরিণত হতে হয়। সেক্ষেত্রে সে যে ছাগলটিকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছিল সেই খেলোয়ারটি বাঘ হওয়ার সুযোগ লাভ করে। চর্চার অভাবে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
---০---
' ইঁদুর -বিড়াল '
ইঁদুর - বিড়ল খেলাটিও মূলত প্রাইমারি স্কুলস্তরের ছেলেমেয়েদের খেলা।৮/১০ জন ছেলেমেয়ে একত্রে অথবা আলাদা আলাদা ভাবে খেলা চলে। খেলার প্রথমে গণনা বা অন্য কোন পদ্ধতিতে একজনকে ইঁদুর আর একজনকে বিড়াল নির্বাচন করা হয়। তারপর বাকি খেলোয়াড়রা পরস্পর হাত ধরাধরি করে বৃত্তাকারে দাঁড়ায়।খেলার ভাষায় বৃত্তাকার ঘরটি ইঁদুরের ঘর বা গর্ত হিসাবে পরিচিত।তাই ইঁদুর থাকে বৃত্তের ভিতরে আর বিড়াল বৃত্তের বাইরে।নিয়ম হলো , বিড়ালকে হাতের ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকে ইঁদুর ধরতে হয়।কিন্তু যেই সে ভিতরে ঢোকে ইঁদুর তখন বাইরে বেরিয়ে গিয়ে অঙ্গভঙ্গি সহ নানারকম টিকাটিপ্পনী কেটে বিড়ালকে উত্যক্ত করে তোলে।বাকি খেলোয়াড়ও ইঁদুরের সঙ্গে গলা মেলায়।
বিড়াল তখন তিতিবিরক্ত হয়ে বাইরে গিয়ে ইঁদুরকে ধরার চেষ্টা করে।কিন্তু তার পক্ষে বাইরে বেরোনোটা ততটা সহজ হয় না।কারণ ইঁদুর তার সুবিধা মতো যেকোন ফাঁক দিয়ে বৃত্তের ভিতর বাইরে যাওয়া আসা করতে পারলেও বিড়ালের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই।ইঁদুর যখন যে ফাঁক দিয়ে যাওয়া আসা করে তাকেও সেই ফাঁক দিয়েই যাওয়া আসা করতে হয়। আর সেই ফাঁক দিয়ে যাওয়া আসাও সহজ হয় না।কারণ ইঁদুরকে বাঁচাতে অন্যান্য খেলোয়াড়রা হাত নামিয়ে বাইরে যেতে বাধা সৃষ্টি করে। তাস্বত্ত্বেও ওই বাধা পেরিয়ে বিড়াল যখন বাইরে যায় ইঁদুর তখন ভিতরে ঢুকে যায়। তাকে বৃত্তের ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য সহযোগিতা করা হয়।ভিতরে ঢুকে ইঁঁদুর একই ভাবে বিড়ালকে উত্যক্ত করতে থাকে। কিন্তু বিড়াল যখন ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে তখনও তাকে
একই ভাবে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে বিড়াল যখন ইদুঁরকে ধরতে সক্ষম হয় তখন খেলার পরিসমাপ্তি ঘটে।তখন নতুন করে ইঁদুর আর বিড়াল নির্বাচন করে পরবর্তী পর্বের খেলা শুরু হয়।চর্চার অভাবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে থেকে এই খেলাটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
No comments:
Post a Comment