Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ৩৪



  

   
 ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা  ) 


               লুপ্তপ্রায় খেলা 

               
          (  ছবি - সোমনাথ মুস্তাফি )   


                 ' নারকেল কাড়াকাড়ি ' 



শৈশবে ' লুকোচুরি ' কিম্বা কানামাছি খেলেন নি এমন মানুষ কমই আছেন । কিন্তু ' নারকেল কাড়াকাড়ি ' খেলা ? এই খেলায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মিলবে হাতে গোনা।কারণ মূলত তথাকথিত ' নিম্নবর্গীয়'দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ওই খেলা। তরুণ কিম্বা যুবকেরাই সাধারণত ওই খেলায় অংশগ্রহণ করতেন। ওই খেলায় সমসাময়িক কালের সমাজচিত্রের কিছুটা আভাষ মেলে। সেইসময় নারকেল আজকের মতো সহজলভ্য ছিল না।সাধারণত পুরনো জমিদারবাড়ি , কিম্বা মুষ্টিমেয় কিছু অবস্থাপন্ন ব্যক্তির বাগানেই নারকেল গাছের দেখা মিলত।তাই নারকেল ছিল গরীব মানুষের কাছে রীতিমতো মহার্ঘ্য তথা চরম আর্কষণের বস্তু। নারকেলের প্রতি সাধারণ মানুষের সেই আর্কষণকে কাজে লাগিয়ে জমিদার বা ধনী ব্যক্তিরা বিনোদনের জন্য ওই খেলার প্রচলন করেছিলেন বলে অনুমান করা হয়ে থাকে।কারণ খেলায় বিজয়ীরা পেতেন নারকেল। উপরি হিসাবে মিলত টাকাও। 




                                       বছর ৩০/৩৫ আগেও বাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম গঞ্জে দোল -দুর্গোৎসব বা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে মন্দির চত্বরে ওই খেলার আয়োজন করা হত।ওই খেলা দেখতে দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর দূরদূরান্তের মানুষজন হাজির হতেন মন্দির চত্বরে। খেলা শেষ হতে বেলা গড়িয়ে যেত। পড়ন্ত জমিদার বাড়ির সেই বোলবোলা আর নেই। নেই নারকেলের প্রতি সেই অমোঘ আর্কষণও। এখন ধনীর পাশাপাশি গরীবের বাড়িতেও ১/২ টি নারকেল গাছের দেখা মেলে।মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও আগের তুলনায় বেড়েছে।টাকা দিলেই এখন গ্রামের মুদিখানা কিম্বা সব্জি দোকানে নারকেল মিলে যায়। সেইজন্য ওই খেলায় অংশগ্রহণের প্রবণতাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। কোথাও কোথাও ওই খেলা টিকে থাকলেও তা প্রথা মাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।নির্ভেজাল আনন্দটা হারিয়ে গিয়েছে।



                                               কেমন ছিল সেই খেলা ? ওই খেলা মূলত ছেলেদের খেলা ।  ১৫/১৬ জন তরুণ কিম্বা যুবক খেলায় অংশ নিতে পারে।  খেলার জন্য বরাদ্দ থাকে ১৫/২০ টি নারকেল।প্রথমে একটি নারকেল ফেলে দেওয়া হয় মন্দির চত্বরে।প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন নারকেলটি কুড়িয়ে নিয়ে বুকের মাঝে বা বগলের ফাঁকে চেপে ধরে।তারপর বাকি প্রতিযোগিরা তার বগল বা হাতের ফাঁক দিয়ে নারকেলটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।ওই ভাবে একে অপরকে ঠেলতে ঠেলতে চলে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা।কিন্তু ছিনিয়ে নেওয়া সহজ ব্যাপার নয়। খুব দ্রুত যাতে কেউ নারকেল ছিনিয়ে নিতে না পারে অর্থাৎ স্বল্প সময়ের মধ্যে যাতে খেলার পরিসমাপ্তি না ঘটে,  তার জন্য খেলার আগেই অধিকাংশ জায়গায় নারকেলের ছোবড়ার উপরে গ্রীজ বা মোবিল জাতীয় পিচ্ছিল পদার্থ মাখিয়ে দেওয়া হয় । এর ফলে ছিনিয়ে নিতে গিয়েও নেওয়া হয় না।বেশিরভাগ সময় হাত ফসকে পড়ে যায় নারকেল।ফলে খেলা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। 


                                               তার উপরে খেলা চলাকালীন প্রতিযোগীদের উপরে দুর থেকে ছূড়ে দেওয়া হয় বালতি বালতি জল। গরমে প্রতিযোগীরা যাতে কাবু হয়ে না পড়ে সেই কারণেই ওইভাবে জল ঢালা হয় বলে অনেকের ধারণা।আবার সহজে যাতে কেউ নারকেল ছিনিয়ে নিতে না পারে সেইজন্যই ওই ভাবে জল ঢালা হল বলেও অনেকে মনে করেন। তবে ওইভাবে জল ঢালার ফলে ছিনিয়ে নিয়েও নারকেল যে বার বার হাত ফসকে পড়ে যায় তা বলাই বাহুল্য। ফলে ওই কারণেও খেলা দীর্ঘায়ত হয়। কিন্তু সমস্ত উপেক্ষা করে যে প্রতিযোগী নারকেল দুহাতে তুলে ধরতে পারে সে'ই সেটি লাভ করে।ফের নতুন নারকেলে নতুন করে খেলা শুরু হয়।        
                                            

  
                                         কখনও কখনও খেলাকে আরও আর্কষণীয় তথা প্রতিযোগিতাময় করে তোলার জন্য নারকেলের ছোবড়ার মধ্য ' সিকি - আধুলি কিম্বা ১/২ টাকার কয়েন ঠুঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।সেক্ষেত্রে নারকেলের সঙ্গে ওইসব টাকা-পয়সাও মেলে।তাই ওইসব নারকেল কাড়ার জন্য কার্যত জান লড়িয়ে দেয় প্রতিযোগীরা।আজ প্রতিযোগীর অভাবে ওই খেলাটিই হারিয়ে যেতে বসেছে। বড়রা আর ওই খেলায় অংশ নেয় না বললেই চলে।তাই আজ কচিকাঁচাদের নিয়ে কোনরকমে প্রথা রক্ষা করে চলেছে ওই খেলা। রকমারি বিনোদনের ভীড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে খেলার সেই আর্কষণ।    

  

 ( চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                                                                 
                                                            
                                            

No comments:

Post a Comment