Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

লুপ্তপ্রায় খেলা -- ২৬



                                           

   
     ( শুরু হল হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন খেলা নিয়ে ধারাবাহিক লেখা  )




                   লুপ্তপ্রায় খেলা 
           
     
          ( ছবি -- সোমনাথ মুস্তাফি )

  
                        ' বরফ জল ' 


' তালা - চাবির ' মতোই একসময় গ্রামগঞ্জের অলিতে গলিতে শোনা যেত  কচিকাঁচাদের ' বরফ - জল ' চিৎকার। সেই চিৎকারটাই এখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে পড়েছে। কারণ চর্চার অভাবে ' বরফ - জল ' খেলাটিই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।ওই খেলার সুবাদেই ' বরফ - জল '  বলে চিৎকার করে উঠত ছেলেমেয়েরা।' তালা-চাবি ' খেলার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে ' বরফ- জল ' খেলার।

  
                                ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিম্বা আলাদা আলাদা ভাবে ওই খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে ছোটাছুটির করার মতো পরিসর যুক্ত জায়গা। তবে ছোটাছুটি করার সীমারেখাও নির্ধারণ করা থাকে।  নির্ধারিত সেই জায়গার মধ্যস্থলে দাগ টেনে গোল কিম্বা বর্গাকার একটি ঘর তৈরি করা হয়।ঘরটিকে বলা হয় ' মোরধারীর ' ঘর। প্রথমে নিজেদের পছন্দ সই কোন গণনা পদ্ধতির মাধ্যমে একজনের ' মোর ' নির্ধারণ করা হয়। তারপর ' মোরধারী ' তার ঘরে গিয়ে বসে।বাকিরা সেই ঘর ঘিরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।  নিরাপদ দুরত্ব থেকে ওইসব খেলোয়াড়রা ' মোরধারীকে ' নানা রকম অঙ্গভঙ্গি সহ টিকাটিপ্পনী কেটে উত্যক্ত করে তোলে।আর তাতেই মেজাজ হারিয়ে নিজের ঘর ছেড়ে ছুটে গিয়ে তাদের তাড়া করতে শুরু করে 'মোরধারী।' আর তখন প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালানোর পথ পায় না ওইসব খেলোয়াড়রা। কিন্তু পালাতে গিয়ে নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে ফেললেই বিপদ। সেক্ষেত্রে শাস্তি হিসাবে তাকে সেই ' দানের ' জন্য ' মরা ' হয়ে খেলা ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে হয়।সেই পর্বের খেলা শেষ না হলে আর ওই খেলোয়াড় জীবন ফিরে পায় না অর্থাৎ খেলায় সামিল হতে পারে না।   


                            নিয়ম হলো ' মোরধারী ' ওইভাবে তাড়া করে যাকে নাগালের মধ্যে পাবে অর্থাৎ যে খেলোয়াড়কে ছোঁওয়ার সম্ভাবনা থাকবে সেই খেলোয়াড়কে তৎক্ষণাৎ সেইখানেই  বসে পড়তে হবে। না হলে ' মোরধারী ' তাকে কোনও ভাবে ছুঁয়ে দিতে পারলেই তাকে ' মরা ' হয়ে খেলা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। অন্যথায় ওই খেলোয়াড়  'মোরধারী ' তার মাথা ছোঁওয়ার আগে মাটিতে বসে পড়তে পারলেই সে কার্যত অর্ধমৃত হয়ে পড়লেও পুরোপুরি ' মারা ' যায় না।পরে তার আরোগ্য লাভের সুযোগ থাকে। কারণ সেক্ষেত্রে ওই খেলোয়াড় বসে পড়ার পরই ' মোরধারী ' ছুটে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বরফ বলে চিৎকার করে ওঠে।আর তারপর ওই খেলোয়াড়ের অর্ধমৃত দশা শুরু হয়। তখন তাকে সেই জায়গাতেই জমাট বাঁধা বরফের মতোই চুপচাপ বসে থাকতে হয়।


                                              তার সুস্থতা ফেরা অর্থাৎ ফের খেলায় সামিল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে অন্যান্য খেলোয়াড় দক্ষতার উপরে। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ ' মোরধারী'র নাগাল বা ছোঁওয়া বাঁচিয়ে তার মাথায় হাত রেখে জল বা পানি বলে চিৎকার করে উঠতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত তার বরফ দশা ঘোচে না। সফল ভাবে কেউ কাজটি করতে পারলে তবেই ওই  খেলোয়াড় ফের খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে।অন্যথায় খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ওইভাবেই অর্ধমৃত অবস্থায় বসে থাকতে হয়। এই সময়কালটা ' মোরধারী ' এবং অন্যান্য খেলোয়াড়দের কাছে চাপের সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ বরফ হয়ে যাওয়া খেলোয়াড়টির জলে পরিণত হওয়া আটকানোর পাশাপাশি 'মোরধারী'কে অন্যান্য খেলোয়াড়দের বরফে পরিণত করার চাপ নিতে হয়। পরোক্ষে অন্যান্য খেলোয়াড়দের নিজেদের বরফ হওয়া এড়িয়ে বরফে পরিণত হওয়া এক বা একাধিক সহ খেলোয়াড়কে জলে ফিরিয়ে আনার ঝুঁকি নিতে হয়। কারণ সহ খেলোয়াড়ের বরফ দশা ঘোচাতে গিয়ে 'মোরধারী'র ছোঁওয়া পড়লেই তাকে ' মোর ' বরণ করতে হয়। অন্যথায় ' মোরধারী ' যতক্ষণ সমস্ত খেলোয়াড়কে ওইভাবে বরফে পরিণত করতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকেই 'মোর ' খেটে যেতে হয়। সবাই বরফে পরিণত হলে ফের একই প্রক্রিয়ায় নতুন ভাবে খেলা শুরু হয়।            

                           

   (  চলবে )


         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                        
                                                                      

No comments:

Post a Comment