লুপ্তপ্রায় খেলা
' ইচিং বিচিং '
' ইচিং বিচিং চিচিং চা।
প্রজাপতি উড়ে যা।
এলে তে লঠন
বাবুর মাঝে বণ্টন।
বাবু তুই খাবি খা ,
আমার বাড়ি যাবি যা।
তোর বাড়ি যাব না ,
আমি কিছু খাব না।
তোর সাথে আড়ি ,
যাচ্ছি আমার বাড়ি।
একসময় ' ইচিং বিচিং ' খেলার সৌজন্যে বহুল প্রচলিত ছিল এই ছড়াটি। আজ চর্চার অভাবে খেলাটির পাশাপাশি ছড়াটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। ছড়াটি মূলত ওই খেলায় ' মোর ' নির্ধারণের গণনা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়।'মোর' ছাড়াতে ব্যবহৃত হয় ছড়াটি। কোথাও কোথাও ওই গণনা পদ্ধতিকেই একটি পুর্ণাঙ্গ খেলা হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় খেলাটি আসলে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।' গণনা ', ' উচ্চতা লঙ্ঘন ' এবং ' মোর ' ছাড়ানো হলো ওই খেলার তিনটি পর্যায়।তবে 'মোর ' নির্ধারণের মতোই বাকি দুটি পর্যায়ও কিছু কিছু জায়গায় স্বতন্ত্র পুর্ণাঙ্গ খেলা হিসাবেও বিবেচিত হয়। ১০/১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে বা আলাদা-আলাদা ভাবে খেলা চলে। খেলার জন্য প্রয়োজন ' হাই জাম্প ' বা ' লং জাম্পে 'র মতো দুর থেকে ছুটে এসে লাফ দেওয়ার মতো উপযুক্ত জায়গা। প্রয়োজনে ফাঁকা রাস্তাও বেছে নেওয়া হয়। খেলার জন্য দুজনের ' মোর ' নির্ধারণ করে নিতে হয়।
( গণনা পর্যায় । ছবি সৌজন্যে -- লোকপাড়া সবুজকলি বিদ্যাপীঠ )
' মোর ' নির্ধারণের পদ্ধতিটিও বেশ আকর্ষণীয়। প্রথমেই পাতা ফুটিয়ে কিম্বা অন্য কোন পদ্ধতিতে একজনকে গণক নির্বাচন করে নেওয়া হয়। গণক নির্বাচনের পর সব খেলোয়াড়রা গোলাকারে বসে। তারপর সবাই দুই হাত উপরের দিকে তুলে একসঙ্গে নীচে নামিয়ে দুই হাতের আঙুল উপুড় করে পেতে ধরে।গণনাকারী তার বাঁদিকে বসা খেলোয়াড়ে আঙুল থেকে উপরিউক্ত ছড়া আউড়াতে আউড়াতে গণনা শুরু করে।শেষে যে খেলোয়াড়ের যে আঙুলে গনণা শেষ হয় অর্থাৎ ' বাড়ি শব্দটি উচ্চারিত হয় সেই খেলোয়াড় সেই আঙুলটি মুড়ে বা গুটিয়ে নেয়।
ওইভাবে পর্যায়ক্রমিক গণনার মাধ্যমে প্রথম যে খেলোয়াড়ের সব কটি আঙুল ' মোড়া ' পড়ে সে ' মোর ' আওতার বাইরে চলে যায়। ওইভাবে ' মোর '
আওতার বাইরে যেতে যেতে শেষ যে দুজন খেলোয়াড় পড়ে থাকে তাদের পরবর্তী পর্যায় অর্থাৎ ' উচ্চতা অতিক্রমে ' 'মোর ' খাটতে হয়।তবে কোথাও কোথাও শেষোক্ত দু'জন খেলোয়াড়ের মধ্যেও গণনার চল রয়েছে।ওই দু'জনের মধ্যে যার সব আঙুল আগে ' মোড়া ' পড়ে সে'ই বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়। সেক্ষেত্রে গণনা পর্যায়েই খেলার পরিসমাপ্তি ঘটে অর্থাৎ ওই পর্যায়ই পুর্ণাঙ্গ খেলা হিসাবে বিবেচিত হয়।
( উচ্চতা অতিক্রম পর্যায় )
অন্যথায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ ' উচ্চতা লঙ্ঘন ' বা অতিক্রম পর্যায়। কোথাও কোথাও এই পর্যায়টিও স্বতন্ত্র খেলা হিসাবে পরিচিত।
সেক্ষেত্রে অন্য কোন পদ্ধতির সাহায্যে দু'জনের ' মোর ' নির্ধারণ করে নিতে হয়।এই পর্যায়ের খেলাটির সঙ্গে ' হাই জাম্প ' খেলার অনেকখানি সাযুজ্য রয়েছে। তাই এই পর্যায়ের খেলায় পারদর্শীরা পরবর্তী কালে ' হাই জাম্পে'র খেলায় ভালো ফল করে বলে মনে করা হয়ে থাকে।নিয়মানুযায়ী , ' মোরধারী ' দুজন মুখোমুখি বসে প্রথমে মাটিতে গোঁড়ালি দিয়ে একে অন্যের উপরে একটি পা রেখে উচ্চতা নির্মাণ করে। আর বাকি খেলোয়াড়রা দুর থেকে ছুটে এসে ' হাইজাম্পের ' মতোই লাফ মেরে সেই উচ্চতা অতিক্রম করে।মোরধারীরা তখন পর্যায়ক্রমে একটি করে পা এবং হাত দিয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি করতে থাকে।আর খেলোয়াড়দের একই ভাবে সেই উচ্চতা অতিক্রম করতে হয়।ওইভাবে উচ্চতা অতিক্রম করতে গিয়ে যদি কোন খেলোয়াড়ের পা কিম্বা হাত ' মোরধারীদের ' পা কিম্বা হাত স্পর্শ করে যায় তাহলে সে ' মরা ' হয়ে যায় অর্থাৎ খেলা ছেড়ে বাইরে গিয়ে বসে থাকতে হয়। এইভাবে একে একে সবাই ' মরা ' হয়ে গেলে খেলার পরিসমাপ্তি ঘটে।
( মোর ছাড়ানোর প্রক্রিয়া )
কিন্তু যদি সব খেলোয়াড় পূর্ববর্তী পর্যায়ে ' মরা ' না হয় তাহলে জীবিত খেলোয়াড়দের নিয়ে শুরু হয় শেষ অর্থাৎ ' মোর ' ছাড়ানোর পর্যায়। ওই পর্যায়ে ' মোরধারী'রা উচ্চতা নির্মাণের প্রক্রিয়া ছেড়ে মুখোমুখি বসে একে অন্যের পায়ে পা লাগিয়ে ' রম্বসাকার ' স্থান নির্মাণ করে। আর বাকি খেলোয়াড়দের প্রতিটি 'রম্বসে'র বাহু অর্থাৎ পায়ে একে একে মোট চারবার একবার সামনে একবার পিছনে ঘুরে ঘুরে লাফিয়ে ' ইজির বিজির ঝিঝির ঝাঁই / প্রজাপতির মাথা নাই / ছড়া আউড়াতে হয়। সফল ভাবে ওই পর্ব অতিক্রম করতে পারলেই তার দান শেষ হয়।কেউ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফেললে কিম্বা লাফানোর সময় ' মোরধারী 'দের পায়ে পা দিয়ে ফেললে সে 'মরা ' হয়ে যায়।সে আর ' দান ' নেওয়ার সুযোগ পায় না।কোথাও কোথাও 'মরা' হলে ' মোরে'র দলে সামিল হওয়ারও নিয়ম রয়েছে।সেক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে একজন করে ' মোর ' খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে।অন্যথায় ওইভাবে সমস্ত খেলোয়াড়রা লাফানোর প্রক্রিয়া শেষ করার পর ' মোর ' দশা ঘোচে ' মোরধারী'দের।উপরের দুটি পর্যায়ের মতো এই পর্যায়ের খেলাটিও স্বতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ খেলা হিসাবে প্রচলিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রচলিত কোন পদ্ধতি অনুসারে দুজনের 'মোর ' নির্ধারণ করে নেওয়া হয়।
কিন্তু যদি সব খেলোয়াড় পূর্ববর্তী পর্যায়ে ' মরা ' না হয় তাহলে জীবিত খেলোয়াড়দের নিয়ে শুরু হয় শেষ অর্থাৎ ' মোর ' ছাড়ানোর পর্যায়। ওই পর্যায়ে ' মোরধারী'রা উচ্চতা নির্মাণের প্রক্রিয়া ছেড়ে মুখোমুখি বসে একে অন্যের পায়ে পা লাগিয়ে ' রম্বসাকার ' স্থান নির্মাণ করে। আর বাকি খেলোয়াড়দের প্রতিটি 'রম্বসে'র বাহু অর্থাৎ পায়ে একে একে মোট চারবার একবার সামনে একবার পিছনে ঘুরে ঘুরে লাফিয়ে ' ইজির বিজির ঝিঝির ঝাঁই / প্রজাপতির মাথা নাই / ছড়া আউড়াতে হয়। সফল ভাবে ওই পর্ব অতিক্রম করতে পারলেই তার দান শেষ হয়।কেউ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফেললে কিম্বা লাফানোর সময় ' মোরধারী 'দের পায়ে পা দিয়ে ফেললে সে 'মরা ' হয়ে যায়।সে আর ' দান ' নেওয়ার সুযোগ পায় না।কোথাও কোথাও 'মরা' হলে ' মোরে'র দলে সামিল হওয়ারও নিয়ম রয়েছে।সেক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে একজন করে ' মোর ' খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ লাভ করে।অন্যথায় ওইভাবে সমস্ত খেলোয়াড়রা লাফানোর প্রক্রিয়া শেষ করার পর ' মোর ' দশা ঘোচে ' মোরধারী'দের।উপরের দুটি পর্যায়ের মতো এই পর্যায়ের খেলাটিও স্বতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ খেলা হিসাবে প্রচলিত রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রচলিত কোন পদ্ধতি অনুসারে দুজনের 'মোর ' নির্ধারণ করে নেওয়া হয়।
No comments:
Post a Comment