Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

খেলার সেকাল একাল -- ৫




 আছে শুধু খেলার নষ্টালজিক সুখ


                          অর্ঘ্য ঘোষ 


ভারত সরকার আয়োজিত প্রতিবন্ধীদের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা ' স্পেশাল অলিম্পিক ' এ শটপার্ট এবং ১০০ মিটার দৌড়ে ২ টি সোনা এবং ১০০ মিটার রিলে রেসে রৌপ্য পদক লাভ করেছে সিউড়ির বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা দেবরাজ সেন। ওই প্রতিযোগিতায় নরম বল ছোঁড়ায় প্রথম হয়ে সোনার পদক জিতেছে রাজনগরের মাধাইপুরের সুজয়া রায়। দেবরাজ বীরভূম জেলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র।সিউড়ি আর,টি গার্লসের ছাত্রী সুজয়া।রাজ্য অ্যাথলেটিক মিটে ৪০০ মিটার দৌড়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে রৌপ্য পদক লাভ করেছে বোলপুরের নীলকুমার দলুই।রামপুরহাটের বিবেকানন্দ টুডু ১০০ মিটার দৌড়ে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্চ এবং ওই এলাকারই সোম মাড্ডি লং জাম্পে ব্রোঞ্চ পদক জয় করেছে।তিনজনই বোলপুরের বাঁধগোড়া কালীকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।বেঙ্গল প্যারা অলিম্পিক সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত প্রতিবন্ধীদের ১১ তম অল বেঙ্গল সুইমিং চ্যাম্পিয়ানশিপ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়েছেন নলহাটি থানা এলাকার সুপর্ণা মাল , অর্চনা হেমব্রম , বোলপুর থানা এলাকার শিবু দাস এবং নানুর থানা এলাকার নাদির সেখ।রৌপ্য পদক পেয়েছেন নলহাটির বিবিয়ানা টুডু।জুনিয়ার গ্রুপে নলহাটির আকাল চৌধুরী স্বর্ণ , ময়ূরেশ্বরের দিল মহম্মদ এবং রামপুরহাটের টিটাস রানা ব্রোঞ্চ পদক জয় করেছে। ওইসব কৃতীদের কেউ বোলপুরের সাইস্যাগ , কেউ নলহাটির মহঃ বদরুদ্দোজা আবার কেউ বা শুধুমাত্র স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। 


                               যোগ ব্যায়াম তথা শরীরচর্চায় বনগোপাল মিত্র , সামসুল আমেদিন , নিতাই সাহা , ধীরেন দাস , জান আলি , স্বাতী সিংহ , ইতি ব্যানার্জি , ব্রজকিশোর পাল , অদিতি ভট্টাচার্য , অনামিকা ব্যানার্জি , সান্ত্বনা দাস , প্রিয়াংকা চৌধুরী , মৌ কোনাই , অভিষেক দাস , পিউ সরকার , পিয়ালি সরকার , সুফিয়া খাতুন , তানবির আহমেদ , সান্ত্বনা মণ্ডল , বুদ্ধদেব দাস , সুরভি রজক , শুভশ্রী দাস , প্রদীপ্ত দত্ত , অর্ণব দত্তরা সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।পঞ্চাশের দশকে সিউড়ির বেণীমাধব ইনস্টিটিউশন , বীরাষ্টমী ব্যায়ামাগার , সবুজ সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান শরীরচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছিল। বেণীমাধব ইনস্টিটিউশনে তারা মাহারা শরীরচর্চায় সুনাম অর্জন করেন।স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপিকাবিলাস সেনগুপ্ত এবং দুর্গাশঙ্কর সাহার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে সিউড়ি ব্যায়াম সমিতি।



                                         পঞ্চাশের দশকে জন মেনন নামে এক মালয়ালি , তাং চু নামে এক চিনা অধ্যাপক এবং বিশ্বভারতীর শিল্প বিদ্যালয়ের তদানীন্তন শরীরচর্চা বিভাগের অধ্যাপক  সুবোধ নারায়ণ  চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বোলপুর তথা শান্তিনিকেতনে বাস্কেটবল জনপ্রিয়তা লাভ করে।পরবর্তীকালে আশির দশকে বোলপুর টাউন ক্লাব ,বোলপুর ইয়াং টাউন ক্লাব , বোলপুর নেতাজি ক্লাব ওই খেলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।অপর্ণা ঘোষ , হামিদা খাতুন , দেবাশিস গুপ্ত , মধুমিতা দাস , গীতা খটিক , জ্যোস্না মণ্ডল , মধুমিতা মালো , ঊর্মি মজুমদার , চায়না দাস , অনুপ ঘোষ , গোপা সিংহ , সুষমা দাম , কল্যাণী রুদ্র , বিপ্লব মালো , উদয় মন্ডল , স্নেহাশিষ দাস , ইতি দে , আশিস দে , প্রিয়তোষ সাহা , রাজীব গাঙ্গুলি , ছবি খাতুন , বিশ্বরূপ ঘোষ , আনন্দ গোপাল দাস , অজয়কান্তি সরকার , মানব মজুমদার , পরিতোষ সাহা , জগন্নাথ তেওয়ারি , বাপ্পাদিত্য সিংহ , পূর্বাশা মণ্ডল , প্রতিভা বিশ্বাস , শোভা পাল , স্বপ্না দাস , সংঘমিত্রা ঘোষ , কৃষ্ণা সরকার , সমাপ্তি সরকার , সুজিত ঘোষাল , অদ্রিজা পাল , রাজেশ ভকত , স্নেহাশিষ পাণ্ডা , পূরবী গোস্বামী , সুলেখা হাজারি , রাজু মাহাতো , ভাস্বতী উপাধ্যায় , গার্গী চট্টোপাধ্যায় , পিয়ালি সরকার , ভাস্কর সরকার , তাপসী দাস , সৌমেন দত্ত , সর্বাণী রায় , পিয়ালি আচার্য প্রমুখেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্তরের বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় সাফ্যল্যের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। 


                                            আমাদের খেলার ইতিহাস যথেষ্ট গৌরবের। কিন্তু বর্তমানে খেলাধুলো চর্চার গতি অনেকটাই শ্লথ হয়ে এসেছে। একদা নিত্যনতুন বৈচিত্রের স্বাদ মিলত যে সব খেলায় , সেই ঝুপ-ঝাল্লুর , নুন তাড়াতাড়ি,  মার্বেল-গুলি , কানামাছির বহু খেলা চর্চার অভাবে হারিয়ে গিয়েছে কিম্বা হারিয়ে যেতে বসেছে।গ্রামগঞ্জের আকাশে আর ঘুড়ি উড়তে দেখা যায় না। দেখা যায় না লাটাই হাতে আদুর গায়ের ছেলেমেয়েদের ঘুড়ির পিছনে পিছনে ছুটতে। কচিকাঁচাদের গলায় আর মুখরিত হয়ে ওঠে না খেলাশ্রয়ী বিভিন্ন ছড়া।আধুনিক সভ্যতা গ্রাস করে নিচ্ছে ওইসব লোকক্রীড়া।অবলুপ্তির গ্রাস থেকে ওইসব খেলাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত প্রদর্শনী খেলার আয়োজন করা প্রয়োজন।তা না করে আমরা খেলাধুলোতেও বড়ো বেশি হিসেবী হয়ে উঠেছি।মোটা টাকা ' এন্ট্রি ফি ' র বিনিময়ে অসংখ্য দল নিয়ে আমরা একদিন কিম্বা দিনরাত্রির বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছি।পুরস্কারের  জায়গা করে নিয়েছে টিভি থেকে হাঁস , মুরগি , ছাগল এমনকি শুয়োর পর্যন্ত।খেলা শেষে বিজয়ী এবং বিজিত দল ওইসব জীবজন্তু নিয়ে হই-হুল্লোড় করতে করতে বাড়ি ফিরছে। আজ হারিয়ে গিয়েছে আলমারি থেকে কাপ , মেডেল কিম্বা মেডেল বের করে ধুলো ঝাড়ার নষ্টালজিক সুখ।শুধু মনের কোঠায় উঁকি মারে খেলার নষ্টালজিক সুখ।    

                     
  -------------ঋণস্বীকার--------------



বরুণ রায় সম্পাদিত ' বীরভূমি বীরভূম ' , তথ্য ও প্রশ্নোত্তরে বীরভূম -- মৃণালকান্তি মণ্ডল ,  আনন্দবাজার  পত্রিকা। প্রশান্ত বসু , কল্যাণ ঘোষাল , সদানন্দ নায়েক , দিলীপ মুখোপাধ্যায় , শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় , কালীচরণ চট্টোপাধ্যায় , পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় প্রমুখও।এছাড়াও অনেকে সাহায্য করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তথ্যের স্বপক্ষে প্রামাণ্য নথি মেলে নি।মূলত পরম্পরাগত ভাবে প্রচলিত কথার উপর নির্ভর করতে হয়েছে।তাই ভুলত্রূটি মার্জনীয়।লেখাটি ২০১৩ সালে দেবাশিস সাহা সম্পাদিত প্রগতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।      

  

                     (  সম্পূর্ণ  )            

                     




         নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



    


                      --------০--------
                                                                                 
                                            

2 comments:

  1. অসাধারণ, অর্ঘ‍্যবাবু! আপনাকে সাধুবাদ জানাই এরকম ভাবে বাংলার নিজস্ব পরম্পরাগত ক্রীড়াসংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন‍্য।

    ReplyDelete
  2. এভাবে পাশে থাকার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

    ReplyDelete