ভেসে আসা শিলামূর্তিই বদলে দিয়েছে গ্রামের নাম
অর্ঘ্য ঘোষ
একসময় কালীপুজোর প্রচলন ছিল বলেই নাকি গ্রামের নাম ছিল কালীনগর। সেচখালে ভেসে আসা এক মা চন্ডীর শিলামূর্তি বদলে দিয়েছে সেই গ্রামের নাম। সেদিনের সেই কালীনগর আজ লোকমুখে ভাসামাঠ হিসাবে পরিচিতি লাভকরেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে , মা চন্ডী ভেসে এসেছিল বলেই নাকি ওইভাবে বদলে গিয়েছে গ্রামের নাম।নানুরের ওই গ্রামটিতে বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাস।
অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবি। স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন , বহু বছর আগে ওই গ্রামে কালীই ছিল একমাত্র আরাধ্যাদেবী।সেই কারণে গ্রামের নাম হয়েছিল কালীনগর।এখনও দলিল দস্তাবেজ এবং সরকারি নথিতে তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই নামটি জানেন। তারা গ্রামটিকে ভাসামাঠ নামেই চেনেন। একটি শিলামূর্তিই ওই নাম বদলের কারণ বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সে প্রায় আড়াশো বছর আগের কথা। আজকের এই দিনটিতে মাঠে গরু চড়াতে গিয়ে এককৃষিজীবি সেচখালে ভেসে আসা একটি শিলামূর্তি কুড়িয়ে পান। তিনি সেই মূর্তিটি কুড়িয়ে এনে গ্রামের বাইরে একটি বাবলাগাছের নীচে চন্ডীরূপে পুজো প্রচলন করেন।পরবর্তীকালে গ্রামের ভিতর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজো প্রচলনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারপরেই সমস্যা দেখা দেয়। স্বাস্থ্যমতে , কালী এবং চন্ডী নাকি দুই সতীন। একই জায়গায় তাদের নাকি পুজো বাঞ্ছনীয় নয়।
তাই দুই দেবীর মধ্যে গ্রামবাসীদের একজনকে বেছে নিতে হয়। গ্রামবাসীরা সেচখালে ভেসে চন্ডীকেই বেছে নেন। সেই থেকেই বদলে যায় গ্রামের নাম। ৯৫ বছরের বিজয় মন্ডল, ৭২ বছরের ধানু হাজরারা জানান , আগে আমাদের গ্রামের নাম ছিল কালীনগর। সরকারি নথিতে আজও তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু সেচ খালে ভেসে আসা চন্ডীপুজো প্রচলনের পর থেকে গ্রামের নাম হয়ে যায় ভাসামাঠ। আর সেচ খালে ভেসে এসেছিল বলে দেবীর নাম হয় ভাসাইচন্ডী।
ওই গ্রামে পরবর্তীকালে দুর্গা, সরস্বতী সহ অন্যান্য পুজোর প্রচলন ঘটলেও কোন কালীপুজো হয় না। পুজোর পুরোহিত দিলীপ পাঠক জানান , দুই সতীনের দ্বন্দ্বের কারণেই তা হয় না।দুর্গাপুজোর পরই ভাসাইচন্ডীর পুজো ওই গ্রামের অন্যতম বড়ো উৎসব।
একদিনের ওইপুজো ঘিরে মেলা বসে। যোগমায়া মন্ডল , সরস্বতী পালরা জানান , দুর্গাপুজোর মতোইএই পুজোতে মেয়ে --- জামাই, আত্মীয় স্বজনেরা আসে। নতুন পোশাক কেনা হয়। হয় ভালো খাওয়া দাওয়াও।শুধু ওই গ্রামের বাসিন্দারাই নন , দুরদুরান্তের মানুষজনও পুজোয় সামিল হন।বোলপুরের রেখা দাস , হাটসেরান্দীর সুস্মিতা ঘোষরা জানান , আমরা দীর্ঘদিন ধরেপুজো দিতে আসি।খুশী কচি-কাঁচারাও। সপ্তম শ্রেণীর শ্রীলেখা পাল , অষ্টম শ্রেণী অংকিতা মন্ডলরা জানায় , স্কুলের বন্ধুরা এসেছে। তাদের নিয়ে সারাদিন মেলা দেখব আর মজা করে বেড়াব।পুজো কমিটির সম্পাদক ভগরথ মন্ডল জানান , বর্তমানে এই পুজো একটা উৎসবে পরিনত হয়েছে। প্রায় ১৪/১৫ টি গ্রামের মানুষ সামিল হন।
------০------
No comments:
Post a Comment