অধিগ্রহণ করে হাত গুটিয়ে নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ , ভগ্নদশা প্রাচীন মন্দিরের
(সংক্ষিপ্ত বিবরণ )
( ফলক )
অর্ঘ্য ঘোষ
অধিগ্রহণ করেই হাত গুটিয়ে নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থাই করে নি। এর ফলে বেহাল দশা হয়ে পড়েছে নানুরের ব্রাহ্মণডিহি গ্রামের বহু প্রাচীন মন্দির। অথচ প্রশাসনের কোন হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। অবিলম্বে মন্দির সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে ৮০৫ সালে ওই গ্রামের প্রতাপ নারায়ণ রায় নামে এক অবস্থাপন্ন ব্যক্তি টেরাকোটা সমৃদ্ধ নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণ করান। ওই মন্দিরে রাধামাধবের পুজোর প্রচলনও করেন তিনি। পরবর্তীকালে সেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে নানা মুনির নানা মত প্রচলিত রয়েছে।
একাংশের মতে , অষ্টধাতুর নির্মিত মূর্তিটি লুন্ঠিত হয়ে যায়। তারপর থেকেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। ওই পরিবারের বর্তমান বংশধর স্বপন চট্টোপাধ্যায় জানান , আমাদের কাছে কোন প্রামাণ্য নথি নেই। তবে বংশ পরম্পরায় শুনে আসছি মুর্তি লুঠ হয়ে যাওয়ার কারণেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়।অন্য অংশের মতে , অর্থাভাবের কারণেই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তাদের মতে, বৈষয়িক কারণে প্রতাপ নারায়ণবাবুর বংশধরদের সংগে স্থানীয় জমিদারদের বিবাদ বাঁধে।
সেই বিবাদের জেরে জমিদাররা খাজনা বাকি রাখার অজুহাতে প্রতাপ নারায়ণবাবুর বংশধরেদের জমি সম্পত্তি নিলাম ডেকে কার্যত দখল করে নেন। তখন মনের দু:খে তারা গ্রাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই জমিদার দয়া করে তাদের কিছু জমি ফিরিয়ে দিলেও তাতে পুজো চালানো সম্ভব ছিল না। তাই পরিবারের কেউ একজন কান্দীর রাজার কাছে দরবার করেন। রাজার নির্দেশে সেই বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে কান্দীর বাঘডাঙ্গায় পুজোর ব্যবস্থা করা হয়।
ওইগ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক আনন্দ মন্ডল জানান , আমার প্রপিতামহ ঈশ্বর মন্ডল ওই জমিদারের সেরেস্তায় কাজ করতেন। ওই ব্রাহ্মণদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া আটকাতে তিনি কিছু জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন।
কিন্তু যে পরিমান জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাতে পুজো চালানো সম্ভব ছিল না। সেই থেকে বিগ্রহহীন অবস্থায় অনাদরে পড়ে থাকে মন্দির। পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা সংরক্ষণ বিভাগের আওতাভুক্ত হয় মন্দিরটি। তারা মন্দির চত্বরটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে একটি বিজ্ঞপ্তি ফলক বসিয়েই হাতগুটিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। পরে মন্দিরটি রাজ্যসরকারের সংরক্ষণাধীন হয়। কিন্তু তারপরেও সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা হয় নি বলে অভিযোগ।
মন্দিরের গায়ের একটি ফলকোলওথেকেই জানা গিয়েছে , সর্বশেষ ১৩৭৫ সনে বিড়লা জণকল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকলমন্দিরটি পুনঃসংকার করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিই বলে দেয়, ইতিপূর্বেও মন্দির সংস্কারের কাজ হয়েছিল। তাস্বত্ত্বেও মন্দিরের বেহাল দশা ঘোচে নি। বর্তমানে ভেঙে পড়েছে মন্দিরের চূড়া , মূল্যবান টেরোকোটার কাজ। সারা চত্বর ভরে গিয়েছে আগাছায়। এমন কি মন্দিরের মাথাতেও গাছ গজিয়ে গিয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা লোককবি ৭৬ বছরের গণপতি ঘোষ, হিমাংশু শেখর দে'রা জানান, স্থাপত্য শৈলী অবিকৃত রেখে এখনও সংস্কার করা হলে মন্দিরটিকে আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব। কি
ন্তু এরপরও সংস্কার করা না হলে দীর্ঘদিনের প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যাবে।প্রত্ন গবেষক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, ওইসব মন্দিরগুলি এলাকার ইতিহাস এবং বাংলার প্রাচীন টেরাকোটা শিল্প স্থাপত্যের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে। তাই গুরুত্ব সহকারে মন্দিরগুলি সংরক্ষণ করা উচিত।জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান , বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।
-------০-------
No comments:
Post a Comment