সরকারি সদিচ্ছার অভাবে মার খাচ্ছে মল্লাপুরের পর্যটন সম্ভাবনা
অর্ঘ্য ঘোষ
সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারি সদিচ্ছার অভাবে মার খাচ্ছে মল্লারপুরের উষ্ণ প্রস্রবণ ঘিরে পর্যটন সম্ভাবনা। সরকারি কৃপাদৃষ্টির অভাবে অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে ওই উষ্ণ প্রস্রবণ। অথচ ওই প্রস্রবণকে ঘিরেই এলাকায় একটি পর্যটনক্ষেত্র গড়ে উঠতে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কিন্তু সরকারের সেই উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ।প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে , মল্লারপুর লাগোয়া মেটেলডাঙা গ্রাম যাওয়ার রাস্তার ধারে বছর কয়েক আগে উষ্ণ জলের ওই উৎসের সন্ধান মেলে। ২০০৯ সালে ' সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড ' ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের অনুসন্ধানের কাজ চালায়।
অনুসন্ধান শেষে মেটেলডাঙা গ্রামের কাছে একটি পাইপ পোঁতা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় তারা।
পরবর্তী কালে গ্রামবাসীরা ওই পাইপ থেকে অবিরাম ধারায় গরম জল উপচে পড়তে দেখেন। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে মানুষ ভীড় জমাতে থাকেন সেখানে। গরম জল হাতে পরখ করার জন্য দুর-দুরান্তের মানুষজনও ছুটে আসেন। এমন কি শীতের মরসুমে সেখানে ' পিকনিক পার্টি'রও ভীড় জমতে শুরু করে।
সেই সমাগম দেখেই ২০১১ সালে জায়গাটি বাঁধিয়ে মহিলা-পুরুষদের আলাদা আলাদা স্নানের জায়গার ব্যবস্থা করে দেয় মল্লারপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নঈশুভা। পরবর্তীকালে মহিলা-পুরুষদের জন্য উন্নত মানের আলাদা - আলাদা শৌচাগার এবং স্নানাগার তৈরি করে দেয় সংশ্লিষ্ট মল্লারপুর ১ নং পঞ্চায়েত। বসানো হয় সৌরবাতিও।তারপর থেকেই থমকে যায় যাবতীয় উদ্যোগ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ওইসব শৌচাগার এবং স্থানাগার ভেঙেচুরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এলাকাটি এখন অসামাজিক কাজের একটি জায়গা হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কিন্তু প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ।
অথচ সরকার একটু উদ্যোগী হলে বক্রেশ্বরের মতোই এখানেও একটি আর্কষণীয় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন। প্রসঙ্গত, একাধিক উষ্ণ জলের কুন্ডু, উষ্ণ প্রস্রবণ আর বক্রেশ্বর শিবকে ঘিরেই মূলত বক্রেশ্বরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। মল্লারপুরের ওই ছোট্ট আদিবাসী গ্রাম লাগোয়া এলাকাটিকে ঘিরেও একাধিক পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কারণ ইতিমধ্যেই স্থানীয় খরাসিনপুরেও আবিষ্কৃত হয়েছে একই রকম আরও একটি উষ্ণ জলের ধারা।
অনুসন্ধান চালালে এখানেও বক্রেশ্বরের মতোই আরও গরম জলের কুণ্ড কিম্বা প্রস্রবণের খোঁজ মিলতে পারে। খরাসিনপুরের ওই উষ্ণ জলধারা সেই ইঙ্গিত বহন করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।এখানেও রয়েছে মল্লেশ্বর শিব। সর্বোপরি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। একদিকে হাওড়া -- রামপুরহাট রেলপথ অন্যদিকে পানাগড়-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়ক মল্লারপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে। রয়েছে আরও একাধিক সংযোগ রক্ষাকারী সড়কও। তাই খুব সহজেই পর্যটকরা মল্লারপুর থেকে তারাপীঠ, সাঁইথিয়া, বীরচন্দ্রপুর, ডাবুক, নলহাটি, গণপুর জংগল এমন কি লাগোয়া ঝাড়খন্দের মন্দিরময় গ্রাম মলুটি ঘুরে আসতে পারেন।
নঈশুভার কর্ণধার সাধন সিংহ, কালিদাস টুডু, গনেশ মুর্ম, সুমন শর্মারা জানান, সরকারি কৃপাদৃষ্টির অভাবে মার খাচ্ছে এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা। অথচ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার আর্থ সামাজিক চালচিত্রটাই বদলে যেত।সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ' ভ্যারিয়েবল এনার্জি সাইক্লোজন ডিপার্টমেন্ট ' মেটেলডাঙ্গা এবং খরাসিনপুরের গরম জলের নমুনা পরীক্ষা করে জানিয়েছিল বক্রেশ্বরের তুলনায় তাতে হিলিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। আমরা তাদের এখানেও বক্রেশ্বরের মতো গবেষণাগার করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোন সাড়া মেলে নি। জেলাস্তরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা বলে কীভাবে ওখানে পর্যটনকেন্দ্র করা যায় তা খতিয়ে দেখছি।
--------০--------
No comments:
Post a Comment