হেরিটেজের স্বীকৃতি চায় ময়ূরেশ্বরের গুনুটিয়ার প্রাচীন কুঠি
অর্ঘ্য ঘোষ
আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে
ইতিহাসের স্বারকচিহ্ন । অবজ্ঞা আর অবহেলায় কালের গর্ভে হারিয়ে বসেছে ময়ূরেশ্বরের
গুনুটিয়া কুঠির মুল্যবান সেইসব স্বারকচিহ্ন । অথচ কারও কোন হেলদোল নেই বলে অভিযোগ
। প্রত্নতত্ত্ব গবেষকেরা ওই কুঠি সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ করে স্বারকচিহ্নগুলি
সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন ।
ইতিহাস বলে
, ময়ূরেশ্বরের আমড়া গ্রাম লাগোয়া ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে ১৭৭৫ সালে ব্রিট্রিশ বনিক
এডওয়ার্ড হে রেশম , নীল , লাক্ষা এবং চিনির কারবারের জন্য ওই
কুঠি স্থাপন করেন । সেটিই গুনুটিয়ার কুঠি হিসাবে পরিচিত । ১৭৮৫ সালে ২৩ হাজার
টাকায় কুঠিটি কিনে নেন ফরাসী বনিক তথা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মাশিয়াল এজেন্ট
ফ্রুসার্ড । তিনি ওই কুঠিতে লেনদেনর পাশাপাশি রেশম , নীল , লাক্ষা এবং ইউরোপ থেকে
কল এনে চিনির উৎপাদন শুরু করেন । কিন্তু ৬ মাসের মাথায় ময়ূরাক্ষীর ভয়াবহ বন্যায়
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার কুঠি। সেই ক্ষতিপূরণের জন্য তিনি ১৭৯১ বীরভূমের
রাজনগরের তদানীন্তন রাজা মহম্মদ উলজামান খানের কাছে একর প্রতি বাৎসরিক ৩ টাকা ৪
আনার খাজনার চুক্তিতে ১২ বছরের মেয়াদে ওই এলাকায় ২৫০০ বিঘে জমি বন্দ্যোবস্থ নেন ।
কিন্তু চুক্তি মতো খাজনা দিতে না পারায় রাজরোষে পড়েন ফ্রুসার্ড । রাজা তার
বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের কাছে অভিযোগ করেন । তারপরই গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে
থাকেন ফ্রুসার্ড। ১৮০৭ সালে গুনুটিয়া কুঠিতেই তার মৃত্যু হয় ।
তার
মৃত্যুর পর সরকার ১৫৮০০ টাকায় কুঠিটি কিনে নেয় । পরবর্তীকালে কর্মাশিয়াল রেসিডেন্ট
তথা বোলপুরের সুরুল কুঠির মালিক জন চীপ সরকারের কাছে থেকে ৩৪১৫ টাকায় ওই কুঠি কিনে
নেন । ১৮২৮ সালের ১৬ এপ্রিল কুঠিতেই তার মৃত্যু হয় । তার মৃত্যুর পর ১৮৩৫ সাল
পর্যন্ত ওই কুঠি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কর্মাশিয়াল রেসিডেণ্ট কলিন শেকসপিয়ার ।
তারপর থেকেই হাত বদল হতে হতে কুঠিটি বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে । ব্যক্তি
মালিকানায় পরিণত হলেও কুঠিটি এখনও এলাকার
মানুষজনের কাছে চীপ সাহেবের কুঠি হিসাবেই পরিচিত । তার আমলেই ওই কুঠির ব্যাপক
প্রসার ঘটেছিল । সর্বোপরি জন চীপ আর পাঁচজন অত্যাচারী কুঠিয়ালদের মতো ছিলেন না ।
বরং নানা জনহিতকর কাজে তার অবদান
উল্লেখযোগ্য । তিনিই জেলায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ করান । উচ্চ শিক্ষার
জন্য ভারতীয়দের পড়তে বিলাত পাঠান । এলাকার
বাসিন্দাদের আইনী জটিলতা থেকে রক্ষা করতে নিজে উদ্যোগী হয়ে ঝামেলা- বিবাদ মিটিয়ে
দিতেন । বাঘ এবং ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করতেও কুঠিয়ালদের নিয়ে নিজে বন্দুক নিয়ে
পৌঁচ্ছে যেতেন । এমন কি মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা ভেবে সুরুলের কুঠিতে
দুর্গাপুজোর প্রচলন পর্যন্ত করেন ।
চীপকে
ঘিরে এরকমই নানা কীর্তিকাহিনীর কথা এখনও এলাকার মানুষের মুখে মুখে ফেরে ।
আবাডাঙ্গার ৭০ বছরের মানিক সুত্রধর , দাঁড়কার ৭২ বছরের কাশীনাথ কোনাইরা জানান ,
বংশ পরম্পরায় ধরে শুনে আসছি চীপ সাহেব যখন পালকি করে সুরুলের কুঠি যেতেন তখন তাকে
দেখার জন্য মিছিলের মতো লোক তাকে অনুসরণ করত । তার ছায়া
কোন বাচ্চার গায়ে লাগলে
তাকে ভাগ্যবান মনে করে মায়েরা হাত জোড় করে কপালে ঠেকাতেন জন চীপের সেই
কর্মভূমিই আজ অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। আ
নাচে কানাচে অনাদরে পড়ে রয়েছে তার স্মৃতি
বিজড়িত নানা স্মারকচিহ্ন । সংরক্ষণের অভাবে ধংস হতে বসেছে চিপ এবং তার স্ত্রীর
সমাধি , সুউচ্চ চিমনি , প্রাসাদ ,
গোলাকৃতি ড্রয়িং রুম , গুদামঘর সহ আরও নানা স্বারকচিহ্ন । স্থানীয় চন্দ্রহাটের
বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিক প্রসেঞ্জিত মুখোপাধ্যায় , আবাডাঙ্গার গৌতম
বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান , সরকার কুঠিটি অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ এবং সংস্কারের ব্যবস্থা
করলে ওইসব স্মারকচিহ্নগুলি রক্ষা পায় । পাশাপাশি নদী তীরবর্তী গাছগাছালি ঘেরা
কুঠিবাড়িটি একটি দর্শনীয় স্থান তথা আর্কষনীয় পিকনিক স্পটের জায়গা দখল করতে পারে
।
পুরাতত্ত্ব
গবেষক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , সৌরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় , শ্যামল কুমার গোস্বামীরা
জানান , ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিচারে প্রত্ন আইন অনুসারে শতবর্ষ অতিক্রান্ত কোন
স্থাপত্যকে সরকার অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতেই পারে। সেই হিসাবে ওই কুঠির
ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। অবিলম্বে সংরক্ষণ করা না হলে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম ওই
স্থাপত্য সম্পর্কে অন্ধকারেই থেকে যাবে।
--------০--------
তার
মৃত্যুর পর সরকার ১৫৮০০ টাকায় কুঠিটি কিনে নেয় । পরবর্তীকালে কর্মাশিয়াল রেসিডেন্ট
তথা বোলপুরের সুরুল কুঠির মালিক জন চীপ সরকারের কাছে থেকে ৩৪১৫ টাকায় ওই কুঠি কিনে
নেন । ১৮২৮ সালের ১৬ এপ্রিল কুঠিতেই তার মৃত্যু হয় । তার মৃত্যুর পর ১৮৩৫ সাল
পর্যন্ত ওই কুঠি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কর্মাশিয়াল রেসিডেণ্ট কলিন শেকসপিয়ার ।
তারপর থেকেই হাত বদল হতে হতে কুঠিটি বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে । ব্যক্তি
মালিকানায় পরিণত হলেও কুঠিটি এখনও এলাকার
মানুষজনের কাছে চীপ সাহেবের কুঠি হিসাবেই পরিচিত । তার আমলেই ওই কুঠির ব্যাপক
প্রসার ঘটেছিল । সর্বোপরি জন চীপ আর পাঁচজন অত্যাচারী কুঠিয়ালদের মতো ছিলেন না ।
বরং নানা জনহিতকর কাজে তার অবদান
উল্লেখযোগ্য । তিনিই জেলায় চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নির্মাণ করান । উচ্চ শিক্ষার
জন্য ভারতীয়দের পড়তে বিলাত পাঠান । এলাকার
বাসিন্দাদের আইনী জটিলতা থেকে রক্ষা করতে নিজে উদ্যোগী হয়ে ঝামেলা- বিবাদ মিটিয়ে
দিতেন । বাঘ এবং ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করতেও কুঠিয়ালদের নিয়ে নিজে বন্দুক নিয়ে
পৌঁচ্ছে যেতেন । এমন কি মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা ভেবে সুরুলের কুঠিতে
দুর্গাপুজোর প্রচলন পর্যন্ত করেন ।
No comments:
Post a Comment