স্বেচ্ছাশ্রমে খেলোয়াড় গড়েন সাঁইথিয়ার শিক্ষাবন্ধু বুদ্ধদেব চৌধুরী
অর্ঘ্য ঘোষ
পেশায় তিনি শিক্ষাবন্ধু। শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে জনসংযোগ বৃদ্ধি এবং অধীনস্থ স্কুলের সাথে শিক্ষাদফতরের সমন্বয় সাধনই তার কাজ। কিন্তু নেশায় তিনি খেলাপাগল মানুষ হিসাবে পরিচিত। তাই নিজের কাজ সামলে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রশিক্ষণ দিয়ে খেলোয়াড় গড়েন বুদ্ধদেব চৌধুরী। ইতিমধ্যে তার হাতে গড়া খেলোয়াড়রা রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করে সাড়া ফেলেছে।সাঁইথিয়ার ডিহিকোপা গ্রামে বাড়ি বছর চুয়ান্নর বুদ্ধদেববাবুর।
প্রান্তিক চাষি পরিবারের ছেলে বুদ্ধদেববাবুর স্কুলবেলা থেকেই খেলার নেশা।১৯৭৮ সালে সাঁইথিয়া টাউন হাইস্কুল সুব্রত কাপে জেলা চ্যাম্পিয়ান হয়। ওই খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেন বুদ্ধদেববাবু। ১৯৮৪ সালে বর্ধমান ইন্টারইউনিভার্সিটি ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাইথিয়া কলেজের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেন।২০১৬ সালে চল্লিশোর্ধ বীরভূম ভেটারেন্স দলের সদস্য হিসাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলে একমাত্র গোলটি তিনিই করেন। শুধু খেলাই নয় , খেলা পরিচালনাতেও তিনি সমান দক্ষ। ওয়েষ্ট বেঙ্গল রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া শংসাপত্রও রয়েছে তার।
নিজে খেলা ছেড়েছেন দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু আজও খেলার মাঠ ছাড়তে পারেন নি। মাঠপলসা হাইস্কুল মাঠ এবং ডিহিকোপা ফুটবল মাঠে পালাক্রমে সকাল বিকাল স্বেচ্ছাশ্রমে ছেলেমেয়েদের ফুটবল, কবাডি, খো-খো এবং অ্যাথলেটিকের প্রশিক্ষণ দেন। শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়াই নয় , বহু জায়গায় নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে ওইসব ছেলেমেয়েদের প্রতিযোগিতার স্থলেও নিয়ে যান। ইতিমধ্যেই তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১২ সালে রাজ্যস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শটপাটে তৃতীয় স্থান দখল করেছে মাঠপলশা হাইস্কুলের ছাত্র সেখ হায়দর আলি।
২০১৭ সালে রাজ্য প্রাথমিক স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তারই কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দৈকোটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী অন্নপূর্ণা টুডু দীর্ঘলম্ফনে রাজ্যে প্রথম এবং ২০০ মিটার দৌড়ে আরতি হাঁসদা রাজ্যে তৃতীয় স্থান দখল করে। সম্প্রতি তারই প্রশিক্ষণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রদের তৈরি জেলা দল রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে স্পেশাল অলিম্পিকে ফুটবল প্রতিযোগিতায় ২৩ টি রাজ্যকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে।ওই দলের সদস্য সেখ জালালউদ্দিন এবং গুণীরাম মুর্মরা জানায় , শুধু প্রশিক্ষণই নয়, স্যারের উৎসাহ আমাদের মনোবল বাড়িয়েছে বলেই আমরা অতদুরে যেতে পেরেছি। আমরা কোনদিন ভাবতেও পারিনি প্রতিবন্ধকতা জয় করে খেলার মাঠে নামতে পারব।
ওইসব ছাত্রদের অভিভাবক মঙ্গল টুডু , আব্দুল সেখরা জানান , ছেলেদের মনোবল বাড়ানোর যে কাজটা বুদ্ধদেববাবু পেরেছেন আমরা বাবা হয়েও তা পারি নি।একই বক্তব্য দৈকোটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস দেবাংশী , মাঠপলশা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্থ সারথি সেনদেরও। তারা জানান , বুদ্ধদেববাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্যই আমাদের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলোয় সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।বুদ্ধদেববাবুর ওই ভূমিকার জন্য ইতিমধ্যেই সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতি, সাঁইথিয়ার বিধায়ক, মাঠপলশা পঞ্চায়েত, দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েত, বিভিন্ন স্কুল এবং প্রতিষ্ঠান তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছে। বুদ্ধদেববাবু আসলে সাঁইথিয়া চক্রে শিক্ষাবন্ধু হিসাবে কর্মরত। নিজের কাজ সামলে বাকি সময়টুকু মাঠে মাঠেই কেটে যায় তার। স্ত্রী শেফালী দেবী জানান , বিয়ে হয়ে এসে থেকেই দেখছি খেলাই ওনার ধ্যানজ্ঞান।
খেলার খবর পেলেই সব ভুলে ছুটে যান মাঠে।আর বুদ্ধদেববাবু জানিয়েছেন , ছাত্রাবস্থাতেই খেলার নেশাটা রক্তে ঢুকে গিয়েছিল। অর্থাভাবে নিজে বেশিদুর এগোতে পারি নি। তাই ছেলেমেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। আর্থিক সহায়তা পেলে ক্রীড়া অ্যাকাডেমি করার খুব ইচ্ছা আছে।সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক সৌগত ভট্টাচার্য জানান , নিজের কাজ সামলেও বুদ্ধদেববাবু যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেন তা এক কথায় নজির বিহীন। তার জন্যই এই ব্লকের ক্রীড়াক্ষেত্র সমৃদ্ধি লাভ করেছে।
---------০--------
No comments:
Post a Comment