Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কবিতা গুচ্ছ দ্বিতীয় পর্যায় -- ১





  
লজ্জা

অর্ঘ্য ঘোষ

হঠাৎ ভাঙলে আশ্রয়ী ডাল।

পাখিরাও খোঁজে নিভৃত আড়াল। 

কেউ ঠিকানা খুঁজে পায়।

কেউ পড়ে থাকে আঘাটায়।

তবু আজও জীবনের খোঁজে

কেউ দীপ জ্বালে মন মাঝে। 

রাত জাগে শুধু ক্লান্ত সাকী।

আলোর পথ আছে মুখ ঢাকি।

      ----০---


     রাজার গ্রাম

       অর্ঘ্য ঘোষ 

বিধবার সিঁথির মতো দুদিকে ফসলের সম্ভার রেখে চলে গ্যাছে সাদা আলপথ।

সে পথের বাঁকে একদা ছিল রাজাদের গ্রাম , সাতমহলা ইমারত।

এখনও প্রবীণেরা রাজকাহিনী শোনায় বিড়িতে দিয়ে সুখটান।

ওইখানে হাতিশালা- ঘোড়াশালা ছিল, দীঘিরপাড়ে রাজার দালান।

কামারেরা নেই আজ , তবু আছে কামারের গড়ে।

ছুতোর - মুচি - বাউড়িরাও আছে সব গল্পের গভীরে।

রাজপুরুষ কেউ নেই , তবু আজও রাজকাহিনীতে বিভোর ঢেকা গ্রাম।

ঢেউয়ের মতো রানীভবানী-রামসায়র বয়ে চলে রামজীবনের নাম।

   ----- ০ -----


      নকল শিব 

      অর্ঘ্য ঘোষ  

তোদের যজ্ঞ সম্পূর্ণ হোক বা নাই হোক, 

আমি হতে পারব না শিব সাজার লোক।  

শিব হওয়া চাট্টি খানি কথা নয় একেবারে।

বিষপান করে পরের ব্যাথা কে জুড়াতে পারে ? 

বাঘছাল,জটাজুটো , সাপের লকলকে জিভ।
   
নন্দীভৃঙ্গী ,পত্নী  কাঁধে 'দে সতী' নটরাজ শিব। 

এ তো আর রঙ মেখে গাজনের সঙ সাজা নয়।

যজ্ঞের মধ্যমনি হওয়া কি সবার সয় ? 

তোরা ববং দু'চারটে কেষ্টবিষ্টু ধরে আন।

তারাই দিব্যি ধান ভাঙতে গেয়ে দেবে শিবগান ।

শিবরাত্রির সলতে হয়ে আমি বরং জ্বলব একা।

যজ্ঞ শেষ হলে আসিস , সেই আলোয় হবে দেখা। 

বাঁক কাঁধে শিবের মাথায় ঢালা যায় জল।

আহম্মক ছাড়া শিব সাজতে কে চায় বল ?

        -----০----

               বিশ্বাস

               অর্ঘ্য ঘোষ

নিভৃত আশ্রয় পেলে পরিযায়ী পাখিরাও ফিরে ফিরে আসে।

ভালোবাসা পেলে তারাও ভালোবাসে।

ভালোবাসার টানে দুর দেশ থেকে নিয়ে আসে উপহার।

বর্ষার জলভরা মেঘ , মাঠভরা সবুজ ফসলের সম্ভার।

মানুষের গল্পকথায় সেই ভালোবাসা লেখা আছে।

এক প্রজন্ম সেই গল্প রেখে যায় আর এক প্রজন্মের কাছে।

শুধু মানুষ আজ ভুলে গ্যাছে ভালোবাসাবাসি।

তবু বিশ্বাসে বুক বাঁধি , যে বিশ্বাসে বেঁচে থাকে চাষি।

নৈশব্দেরও ভাষা আছে , বুকের ভিতরে তার অনুভব।

ভাষাহীন মানুষের মুখে আজ বড় বেশি কলরব।

তবু শুনব বলে একটি প্রিয় সংলাপ। 

আজও কান পেতে আছি চুপচাপ।

           -----০----


         একালের কর্ণ 

            অর্ঘ্য ঘোষ   

স্বয়ংবর সভা খালি করে দ্রৌপদী-সীতারা চলে যায় একে একে।

একালের কর্ণরা শুধু পরাজিত সৈনিকের মতো চেয়ে থাকে।

মেকী রাম আর অর্জুনের হাত ধরে স্বয়ংবরা কন্যারা চলে যায়।

বেচারা কর্ণদের দেখে আজ বড়ো মায়া হয়। 

মহাভারত সেই কবে মেরে রেখেছিল তাকে।

সেই পরম্পরা আজ লজ্জায় মুখ ঢাকে। 

ওরা জানে নাকো দ্রৌপদী -- সীতা জয় মুখের কথা নয়।

লক্ষ্যভেদ কিম্বা হরধনু ভাঙতে হয়।

পোড়াতে হয় বিস্তর কাঠখড়, ভালো লেখাপড়া দিয়েই কি সব হয় ? 

চাকরি-বাকরি নিদেনপক্ষে একটা ব্যবসা -পাতি চায়।

তার জন্য চায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

তবেই লড়াইয়ের ময়দান হয় ফাঁকা।

আজ মনে মনে শুধু কর্ণের কথা ভাবি। 

বীরশ্রেষ্ঠ সে , তবুও পায়নি সব অধিকার।

ওদেরও বেজন্মা করে ছেড়েছে যত দুরাচার।


             -----০-----

               ছবির বন্যা 

বানের ছবি, ত্রাণের ছবি, ছবি রকমারি।

হরেক রকম ছবি দেখে গোলকধাঁধায় পড়ি।

বানের ছবির না হয় আছে মানে।

ত্রাণের ছবির অর্থ কি কে জানে ?

কোনটা আসল কোনটা নকল ভেবে ভেবে মরি।  

বান ছাপিয়ে দিচ্ছে উঁকি ত্রাণ সংগ্রহের ছবি রকমারি।

কৌটো হাতে বাসের ধারে সুপার পোজের নারী।

ফেস্টুন আর পোস্টার হাতে সেলফি ছড়াছড়ি।

দানের ব্যাপার, মনের ব্যাপার,  ঢাক পেটানো নয়।

কে'ইবা মানে সেসব কথা, এখন জয়ঢাকেরই জয়। 

একহাতের দান জানবে নাকো অন্যহাতে বলেছিলেন কবি।

এখন দেখি ত্রাণের আগেই পৌঁচ্ছে যাচ্ছে ছবি।

         -----০---

           বিধবা মা

           অর্ঘ্য ঘোষ 

সবেধন নীলমনি বাপ মরা একটাই মেয়ে।

ঘটি বাটি বিকিয়ে মা তার দিয়েছিল বিয়ে।

সুখেই কাটছিল দিন স্বামীর আদরে।

হঠাৎ কোথা থেকে কুবাতাস এল যেন উড়ে। 

সে বাতাসে করে ভর , উধাও মেয়ের বর।

সেই থেকে মেয়ে ফিরেছে মায়ের ঘর।

আদরের চাদর গিয়েছে ছিঁড়ে, মা কি করে এখন ?

ভরা ভাদরের মাস , বাড়িতে পোয়াতি মেয়ে এখন তখন।

ভাদরে খাদ্যাভাব , মেয়ের প্রসব তারও পরে।

কি করে কি হবে মা শুধু সেই ভেবে মরে।

কাপড়ে ফুল তুলে কোনক্রমে চলে সংসার।

আর কোন দিক নেই , দিশা নেই , শুধুই আঁধার। 

বিধবা তবু আশায় আশায় বেঁধে রাখে বুক। 

চোখে তার ভাসে একটি নবজাতকের হাসিভরা মুখ।


                   -----০-----

No comments:

Post a Comment