স্কুলের হাল ফিরিয়ে শিক্ষারত্ন পাচ্ছেন বাজিতপুরের শিক্ষক
অর্ঘ্য ঘোষ
চেষ্টা থাকলে যে উপায় হয় তা আরও একবার প্রমাণ করে ছাড়লেন এক স্কুল শিক্ষক। দেখিয়ে দিলেন নিষ্ঠা এবং আন্তরিক তাগিদের কাছে কোন বাধাই বাধা নয়। নয়েক আগেও উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিল না। এলাকার বাসিন্দাদের শিক্ষানুরাগী মনোভাবও ছিল না। সহকর্মী এবং স্থানীয় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজনকে নিয়ে স্কুলের সেই হতাশাব্যঞ্জক ছবিটাই বদলে দিয়েছেন মল্লারপুরের বাজিতপুর হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক প্রশান্তকুমার দাস।
শিক্ষাদফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন প্রশান্তবাবু। সেইসময় স্কুল ছিল নানা সমস্যায় জর্জরিত। পাঠকক্ষ, স্টাফ রুম, পানীয় জল , শৌচাগার , বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না স্কুলে। ছিল না পর্যাপ্ত সরকারি অর্থের সংস্থানও।
কিন্তু সেসব দেখে হত্যোদম হয়ে পড়েন নি প্রশান্তবাবু।বরং হার না মানা উদ্যোমে সহকর্মী এবং এলাকার শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্কুলের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের সহয়তায় স্কুলে সেই হতশ্রী দশাটা ঘুচিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বৈদ্যুতিক আলো-পাখা যুক্ত পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ সহ বিশাল দোতলা ঝাঁ - চকচকে স্কুল বাড়ি, শৌচাগার পানীয় জলের সুব্যবস্থা , লাইব্রেরী, ল্যাবরেটরি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ,মাল্টি জিম, মিনি ইন্ডোর কমপ্লেক্স, প্রোজেক্টর। পাশাপাশি গান , ছবি আঁকা , নাচ, ব্রতচারী এবং নাটকের কর্মশালারও ব্যবস্থা রয়েছে। গড়ে উঠেছে সবুজ বাহিনী, শিশুসংসদ, কন্যাশ্রী, ভোটার স্বাক্ষরতা ইত্যাদি ক্লাবও। কি আজ নেই স্কুলে ? নেই তালিকাটা বদলে পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। পরিকাঠামো বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে শিক্ষার চালচিত্রটাও।
প্রত্যন্ত ওইস্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই ছিল প্রথম প্রজন্মের। সেইজন্য একসময় পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলে আসার প্রবনতা ছিল তুলনামূলক হারে অনেক কম। ড্রপ আউটের সংখ্যাও ছিল উদ্বেগজনক। স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে , ২০০৯ সালে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪০০। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০। ওইসময় মাধ্যমিক পাশের হার ছিল ৫০/৬০ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশেরও বেশি। ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয় স্কুল। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের হার প্রায় ৯১ শতাংশ। স্কুল ছুট নেই বললেই চলে।
অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন , এসবের পিছনে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিখিল সাহা , মাধব মন্ডলরা জানান , এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের একদিন স্কুল কামাই করার উপায় নেই। প্রধানশিক্ষক ঠিক খোঁজ নিতে হাজির হয়ে যান।একই কথা বলছেন সহকর্মী তপন মাঝি , শংকর বাগচিরাও। তারা জানান , শুধু স্কুলের উন্নয়ণ কিম্বা পঠনপাঠনই নয়, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাওয়া আসার সমস্যার জন্য ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কারেরও ব্যবস্থা করেন প্রধান শিক্ষক।
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সুদীপ্ত মন্ডল জানান , প্রধান শিক্ষকের সদিচ্ছা দেখে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।আর কি বলছে যাদের জন্য এত আয়োজন সেই সব পড়ুয়ারা ? দশম শ্রেণীর ছাত্রী মেঘনা মন্ডল , একাদশ শ্রেণীর অন্তরা সাহারা জানায় , স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদনের এত রকম উপকরণ রয়েছে যে বাড়িতেই আমাদের মন টেকে না।এহেন উত্তোরণের জন্য ওই স্কুল ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা মিশনের 'কলা উৎসবে ' প্রথম স্থান অধিকার করে রাজ্যস্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
ইউনিসেফের ' শিশুমিত্র 'এবং জেলা প্রশাসনের ' নির্মল মিশন ' বিদ্যালয় হিসাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে ওই স্কুল।তারপরই শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেতে চলেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক দিবসের দিন কলকাতার নজরুল মঞ্চে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। স্বভাবতই স্কুলে বইছে এখন খুশীর হাওয়া।প্রশান্তবাবুর বাড়ি একসময় ছিল নলহাটি থানার বানিওর গ্রামে। বর্তমানে বোলপুরের ত্রিশূলা পট্টিতে থাকেন। বাবা-মা, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি জানান , ওই পুরস্কার আমাকে আরও অনুপ্রেরণা যোগাবে। শিক্ষারত্ন বাবদ পুরস্কারে যে টাকা পাব তা ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছা অনুযায়ী স্কুলের কোন উন্নয়নে লাগাতে চাই।
-------০------
Congratulations Prasanta, egie chalo bondhu,sobai jiboner nidorshon rekhe jete pare na, feeling proud.
ReplyDelete