Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কৃর্তি যস্য -- ১৬ ( সন্তু সেনগুপ্ত)




                                 

       

                    অন্তরালের মানুষ সন্তুদা




                 


                     



                         



                                                      




                                                     অর্ঘ্য ঘোষ


অন্যকে প্রচারের আলো দেখিয়ে অন্তরালেই রয়ে গিয়েছেন সন্তুদা। সংবাদ এবং সাহিত্যক্ষেত্রে এ জেলায় বর্তমানে যারা প্রশংসালাভ করছেন তাদের অনেকেরই হাতেখড়ি হয়েছে প্রচার বিমুখ মানুষটির হাতে। অথচ সেই মানুষটি আজও রয়ে গিয়েছেন অন্তরালে। সন্তুদার পোশাকি নাম সুশীলকৃষ্ণ সেনগুপ্ত। কিন্তু সাহিত্য - সংস্কৃতি জগতেরবেশির মানুষ তাকে সন্তুদা নামেই চেনেন। বর্তমানে কলকাতার কসবা এলাকার বাসিন্দা হলেও একসময় তারা  ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর 'দিদিভাই' আশ্রমে থাকতেন।



             ১৯৪২ সালের ১৬ নভেম্বর তার জন্ম। বাবা গোপিকাবিলাস সেনগুপ্ত ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।মা সরযূদেবী গৃহবধু। ছেলেনেয়েদের কাছে তিনি মা রাজলক্ষ্মী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সাত ভাইবোনের তৃতীয় সন্তুদা কোটাসুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণীর পর ভর্তি হন ময়ূরেশ্বর জুনিয়ার হাইস্কুলে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং সাঁইথিয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতার আশুতোষ কলেজে ইংরাজী অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু জ্যাঠামশাই বিচিত্রবিলাস সেনগুপ্তের অসুস্থতা জনিত কারণে প্রথম বর্ষের পরই পড়া অসম্পূর্ণ রেখে কোটাসুরে ফিরে আসতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষদের তদানীন্তন সভাপতি খগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে ডেকে কোটাসুর নিম্নবুনিয়াদি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দিতে বলেন।সেই কথা অনুযায়ী ১৯৬৩ সালে ওই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন । শিক্ষকতা করাকালীন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুনিয়ার বেসিক ট্রেনিং নিতে যান। বিশ্বভারতীর তৎকালীন অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন চক্রবর্তী তাকে বি,এ পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর চব্বিশ পরগনার বানীপুর থেকে পি,জি,বি,টি ট্রেনিং নেন। সেইসময় ময়ূরেশ্বরের নওয়াপাড়া সিনিয়ার বেসিক স্কুলের প্রাণপুরুষ কালীগতি বন্দ্যোপাধ্যায় তার স্কুলে তাকে যোগ দিতে বলেন। ১৯৬৯ সালে ওই স্কুলে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৮১ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।২০০২ সালে ওই স্কুল থেকেই অবসর নেন।      


                            
                        
                                  সন্তুদার সংবাদ লেখার হাতেখড়ি হয় মিলন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত সাপ্তাহিক 'বীরভূম বার্তা' পত্রিকায়। জেলা থেকে প্রকাশিত রমানাথ সিংহসম্পাদিত দৈনিক 'চন্দ্রভাগা' পত্রিকাতেও লিখেছেন। নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়েছে' সচিত্র ভারত ',  ' ভারতবর্ষ', ' এক্ষণে',  ' সন্দেশ' প্রভৃতি পত্রিকাতেও। তার সম্পাদনায় ১৯৭২ সালে কোটাসুর আশ্রম থেকেই প্রকাশিত হয় মাসিক সাহিত্যপত্রিকা ' দিদিভাই '। একই বছরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্তের পরামর্শে এবং কলেজ শিক্ষক সুনীল দাসের সহযোগিতায় তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সংবাদপত্র 'দিদিভাই। সাপ্তাহিক 'দিদিভাই' সম্পাদনার দায়িত্ব অবশ্য পরবর্তী কালে ভাই সমর্পণ সেনগুপ্তের হাতে তুলে দেন তিনি। কিন্তু সমান্তরালভাবেই কোটাসুর আশ্রম থেকেই পত্রিকা দুটি প্রকাশিত হতে থাকে। নিয়মিত সাহিত্য সভার পাশাপাশি সাংবাদিকতার কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। সন্তুদার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সাহিত্য এবং সাংবাদিক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। জেলা সাহিত্য-সংবাদ এবং সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করে কোটাসুরের ওই আশ্রম। বীরভূম জেলায় সাহিত্য এবং সংবাদ জগতে যারা সুনাম অর্জন করেছেন তাদের অনেকেরই  লেখালিখির আঁতুড়ঘর ছিল 'দিদিভাই' পত্রিকা। ওই পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে অনেকেই সন্তুদার কাছে লেখেলিখির ' অ-আ-ক-খ ' শিখেছেন। শিখেছেন লেখালিখির বাঁক বদলের কৌশল। তার পত্রিকায় লেখালিখির সুবাদে পরিচিতিও পেয়েছেন। সন্তুদা নিজে অন্তরালে থেকে অন্যদের প্রচারের আলোর বৃত্তে পৌঁচ্ছে দিয়েছেন।




                            অসংখ্য গল্প ,কবিতা , প্রবন্ধ লিখেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা  'গাঁয়ের ফসল' নামে একটি কবিতা সংকলন , ' তিতলির ছড়া ' নামে ছড়া সংকলন এবং ' ওম তিতলির গল্প ' নামে একটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য কিংবা সংবাদই নয় , এলাকার সংস্কৃতি চর্চা বিকাশেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন সন্তুদা। তারই উদ্যোগে আশ্রমে চালু হয় বীরভূম লোকমেলা, বাৎসরিক বাউল উৎসব। ওইসব কর্মকাণ্ডকে ঘিরে বিভিন্ন সময় ওই আশ্রমে পা রেখেছেন প্রভু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী , মহানন্দ গিরি , ব্রতচারী প্রবর্তক গুরুসদয় দত্ত ,বিপ্লবী পান্নালাল দাসগুপ্ত , মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় , প্রফুল্ল সেন , রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বাউল সম্রাটপূর্ণ দাস, শান্তিদেব ঘোষ, গোষ্ঠগোপাল দাস, স্বপ্না চক্রবর্তী , কবিয়াল সেখ গুমানী দেওয়ান, লম্বোদর চক্রবর্তী, কবি শঙ্খ ঘোষ, প্রণয় কুন্ডু, মানসী দাসগুপ্তের মতো বিদ্বজনেরা।




                           সংবাদ এবং সাহিত্য ক্ষেত্রে তার  মুন্সীয়ানায় একসময় ' দিদিভাই' পত্রিকা অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। বহু সাংবাদিক -লেখকের হাতেখড়ি হয়েছিল ওই পত্রিকায়। তাদের অনেকেই আজ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সুপরিচিত। নিজে অন্তরালে থেকে সন্তুদা অন্যদের ওই পরিচিতির সুযোগ করে দিয়েছেন।তা নিয়ে অবশ্য সন্তুদার কোন অনুযোগ এবং আক্ষেপ নেই। তিনি মনে করেন 'দিদিভাই' পত্রিকায় হাতেখড়ি দিয়ে যারা পরিচিতি লাভ করেছেন তারা অধিকাংশই তার ভ্রাতৃপ্রতিম কিম্বা সন্তান সম। তাদের প্রচারের আলোতেই তিনি উজ্বল।তাদের মধ্যেই তার প্রকাশ। শুধু ভাই সমপর্ণ সেনগুপ্তের অকাল মৃত্যু এবং নানান কারণে পত্রিকা দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আক্ষেপ কিছুতেই ভুলতে পারেন না তিনি।সেইসব দিনের কথা মনে পড়লেই মনটা খারাপ হয়ে যায় তার।


                                        
                                  -----০-----







     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


শীঘ্রই দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে আমার তৃতীয় উপন্যাস ------
  
                                  


                    


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  







দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে -----







                   ----০---


                         


No comments:

Post a Comment