গ্রাম ছেড়েছেন পুজোকর্তারা , নিরানন্দে পুজো কাটে গ্রামবাসীদের
অর্ঘ্য ঘোষ
পড়ে রয়েছে কাঠামো। ভগ্নপ্রায় পুজো মন্ডপ। গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন পুজো কর্তারা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুজো। তাই লাভপুরের পারআবাদ গ্রামের বাসিন্দাদের পুজো কাটে নিরানন্দে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , কুঁয়ে নদী তীরবর্তী ওই গ্রামে একসময় প্রায় ৬০ টি পরিবারের বাস ছিল। ছিল ঘোষদের একটি পারিবারিক এবং ঘোষ-মন্ডলদের একটি বারোয়ারি দুর্গোপুজো।
১৯৮৫ সালের বন্যায় ওই গ্রাম ধুলিষাৎ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রায় প্রতিবছর বন্যায় গৃহস্থালি হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েন বহু পরিবার। প্র কৃতির সঙ্গে ধারাবাহিক অসমে লড়াইয়ে মনোবল হারিয়ে গ্রামবাসীরা একে একে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন। বছর আটেক আগে গ্রাম ছেড়ে চলে যান ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। তারপর থেকেই তাদের পুজোটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বারোয়াড়ি পুজো কমিটির কর্মকর্তারাও গ্রাম ছেড়ে যান। তারপর থেকে বারোয়ারি পুজোটিও বন্ধ হয়ে যায়।
পুজো বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রামে পড়ে রয়েছে সেই কাঠামো। পড়ে রয়েছে মন্ডপ। সেইসব দেখেই বিষন্ন হয়ে পড়ে গ্রামবাসীদের মন।
বর্তমানে ওই গ্রামে টিকে রয়েছেন মাত্র ১০ টি পরিবার। অধিকাংশই দিনমজুর। যৎসামান্য জমি রয়েছে কয়েকজনের। তাদের পুজো প্রচলনের করার মতো সামর্থ্য নেই। সঞ্জয় মন্ডল , সুখেন মেটেরা জানান , পুজো প্রচলন করা দুরের কথা , অন্যত্র কোথাও চলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই বলে প্রকৃতি মার খেয়ে পড়ে রয়েছি।
৮৫ বছরের সুকুমার মন্ডল , ৭২ বছরের নারায়ণ মন্ডল, ৬০ বছরের নিদ্রা মেটেরা জানান , আগে ঢাকে কাঠি পড়লেও মনে হতো মা আসছেন। আত্মীয়স্বজনে গ্রাম জমজমাট হয়ে উঠত। এখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। পুজো দেখতে অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি চলে যায়। গ্রামটা ঝিমিয়ে পড়ে।
সব থেকে মন খারাপ কঁচিকাচাদের। নবম শ্রেণীর ছাত্র অতীন মন্ডল , সপ্তম শ্রেণীর তিথি মন্ডলরা জানায়, যখন গ্রামে পুজো হতো তখন প্রতিদিন অনেক রাত্রি পর্যন্ত আনন্দ করতে পারতাম। এখন অভিভাবকদের সঙ্গে প্রায় ২ কিমি দূরে পুজো দেখতে যেতে হয়। তাই সবদিন যাওয়া হয় না। যেদিন যাওয়া হয় সেদিন সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হয়।মন খারাপ গৃহবধুদেরও। চন্দনা মন্ডল , রীনা বাগদি , চায়না মন্ডলরা জানান ,পুজো ক'টা দিন দারুন আনন্দে কাটত। মাকে বরণ করা থেকে সিঁদুর খেলা সবতেই অংশ নিতাম। এখন পুজো এলেই সেইসব কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রথম থেকে পুজো না থাকলে মন বুঝত। কিন্তু মাঝপথে পথে পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়াটা মন মানে না।
----০----
No comments:
Post a Comment