Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

পুঁটির সাত


        


                                                 


      সাত দেখাতে আজও পুঁটি মাছই ভরসা জেলেমাসিদের



                                                 

                                                         


                          অর্ঘ্য ঘোষ 

    

  
                                                                        



মাত্রাতিরিক্ত রাসাওনিক  এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খালবিলের চ্যাঙ,ছিঙুরী, কই, মাগুর, সহ অন্যান্য মাছের মতোই হারিয়ে যাচ্ছেপুঁটিমাছও। তাই চরম সংকটে পড়েছেন জেলেমাসিরা। হন্যে হয়ে পুঁটিমাছ খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। কারণ পুজো শেষে মাছমুখের সাত করাতে আজও পু্ঁটিমাছই অন্যতম ভরসা।কথায় আছে , মাছে ভাতে বাঙালি। আমিষভোজীদের হেঁসেলে মাছের পদ অপরিহার্য মেনু হিসাবে বিবেচিত হয়। দুর্গাপুজো শেষে ভালো খাওয়া - পড়া , লেন-দেন, পড়াশোনা করার চল রয়েছে। সেদিন ভালো কিছু করলে সারা বছর ভালো যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসে দশমীর পরদিন সবাই সব কিছু ভালো করার চেষ্টা করেন। জেলেরা সেদিন প্রতি বাড়িতে আঁশযুক্ত আস্ত মাছ বিক্রি করতে চান। গৃহস্থরাও আঁশযুক্ত আস্ত মাছ কিনতে চান। প্রক্রিয়াটি গ্রাম্য কথায় 'সাত' দেখানো বলা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও 'যাত্রা'ও বলা হয়ে থাকে। 


                 প্রচলিত রয়েছে , একসময় গ্রামে গোয়াল ভরা গরু, গোলাভরা ধানের পাশাপাশি পুকুর ভরা মাছও ছিল। কিন্তু সেই স্বাচ্ছল্য মুষ্টিমেয় কিছু পরিবারে মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অথচ সাত করার জন্য প্রতিটি পরিবারেই আস্ত মাছ কেনার  ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেই উপায় ছিল না। কারণ সে সময় গ্রামগঞ্জে মাছের বাজার ছিল না। ছিল না সব শ্রেণীর মানুষের আস্ত মাছ কেনার ক্রয় ক্ষমতাও। প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে , জেলেরাই সেই সময় সাতের নিয়ম রক্ষার উপায় বের করেন। তখন মাঠে ঘাটে অন্যান্য আঁশ বিহীন মাছের মতো মিলত প্রচুর পুঁটি মাছ। ভোর থেকে সেই মাছ ধরে আনতেন তারা। আর জেলেবধুরা যজমান অর্থাৎ সারাবছর যেসব পরিবারে মাছ বিক্রি করতেন সেইসব বাড়িতে সাত দেখাতে  সেইসব মাছ নিয়ে যেতেন। তারপর সিঁদুর মাখিয়ে তুলে দিতেন গৃহকর্ত্রীর হাতে। পরিবর্তে গৃহকর্ত্রী তাদের একটি সিঁদুর মাখা টাকা , মুড়ি, নাড়ু, সরষের তেল সহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী দিতেন।



              দিন বদলেছে। গ্রামের  হাটবাজারে এখন মাছ মিলছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। কিন্তু আজও বহু জায়গায় পুঁটিমাছ দিয়ে সাত দেখানোর রীতি প্রচলিত আছে। লাভপুরের ফিংতোড় গ্রামের ৫০ বছরের মনু হাজরা , ময়ূরেশ্বরের ভূধরপুরের ৫৫ বছরের প্রভাতী ধীবররা জানান , মা-শাশুড়িদের মুখে শুনেছি আস্ত মাছ বিক্রি করে সাত দেখাতে হতো। সেইসময় অত মাছ ছিল না। আস্ত মাছ কেনার সামর্থ্যও সবার ছিল না। তাই খালবিল থেকে পুঁটি মাছ ধরে যজমানদের বাড়িতে দিয়ে সাত করে আসা হতো। সেই রীতিটি আজও প্রচলিত আছে।নানুরের আলিগ্রামের রেনুকা মেটে, ব্রাহ্মণডিহির ফেণী বাগদিরা জানান , এখন অন্য মাছের অভাব নেই। পুঁটি মাছই দুস্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। তবু সাত দেখানোর জন্য ভোর থেকে খালবিলে পুঁটিমাছ ধরে আনতে হয়। আলিগ্রামের ৬৫ বছরের প্রভাতী আচার্য , কালিকাপুরের ৫৫ বছরের শ্যামলী সাহারা জানান , এখন আস্ত অন্য মাছ কেনা হলেও সাত দেখানোর মাছ হিসাবে পুঁটিমাছই নেওয়া হয়।কোথাও সেই মাছ মাটির গর্ত করে পুঁতে দেওয়া হয়। কেউ বা জলে ভাসিয়ে দেন।


                          
                                                             ----০----



     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


শীঘ্রই দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে আমার তৃতীয় উপন্যাস ------
  
                                  


                    


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  







দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে -----







                   ----০---







No comments:

Post a Comment