রোগশয্যায় শুয়েও পাঁচালি লেখেন নবকুমার
বছর দু’য়েক ধরে ফুসফুসের সংক্রামণ জনিত কারণে শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছেন । শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে ভালোভাবে কথা বলতে পারেন। তবুও সব কিছুকে তুড়ি মেরে সমাজ সচেতনতা মূলক তরজা-পাঁচালি লিখে চলেছেন ৭৯ বছরের নবকুমার সিংহ।রোগশয্যায় শুয়ে সুরও ভাঁজেন তিনি।
১৯৪১ সালে নানুরের পাকুড়হাঁস গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নবকুমারবাবুর। বাবা সুধাকর সিংহ ছিলেন কেষ্টযাত্রা দলের অভিনেতা এবং দল পরিচালক। মা উষারাণীদেবী গৃহবধু। পাঁচ ভাইবোনের ছোট নবকুমারবাবুকে ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন লোকগান আকৃষ্ট করে। গ্রামেরই এক পাঁচালীকার আদল থান্দারকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি।কিন্তু লেখাপড়া এবং জীবনজীবিকার তাগিদে তখন ওইসব বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারেন নি।
গ্রামের স্কুল থেকে প্রাইমারি , নানুর চন্ডীদাস স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইন্যাল , বোলপুর কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন। তারপর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম,এ পাশ করে ১৯৬৭ সালে স্থানীয় গোন্নাসেরান্দী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইংরাজীতেও এম,এ পাশ করেন। ২০০১ সালে ওইস্কুল থেকেই অবসর নেন। তারপর থেকেই তরজা-পাঁচালি লেখায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন।
শুধু লেখাই নয় , সমাজ সচেতনতামূলক ওইসব তরজা-পাঁচালিতে সুরারোপ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়েও বেড়াতে থাকেন। এ পর্যন্ত ৩০ টি তরজা এবং ২৫ টি পাঁচালি লিখেছেন। পৌরানিক , ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়কেও উপজীব্য করেছেন। পাশাপাশি গল্প , কবিতা , নাটক এবং রম্যরচনাও লিখেছেন। বিভিন্ন সময় সেইসব লেখা নানুরের ‘ মহুয়া ’ , ‘ চণ্ডীদাস সাহিত্য পত্রিকা ’ , কীর্ণাহারের ‘ প্রবীণ বার্তা ’ , ‘ শমী ’ , সিউড়ির ‘ বীরভূমি ’ , ‘ স্মৃতিরসরণি ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ‘ বরপচ্ছন্দ ’ , ‘ নবসমন্ধ ’, ‘ শূর্পনখার বিয়ে ’ তার রচিত নাটকগুলির অন্যতম। ওইসব নাটক বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ হয়েছে। নবকুমারবাবুও তাতে অভিনয় করেছেন।
সংস্কৃতিচর্চা বিকাশে অবদানের জন্য বিভিন্ন সময় তাকে নানুরের মহুয়া পত্রিকাগোষ্ঠী ' চণ্ডীদাস সাহিত্য সম্মাননা ' , নানুর চণ্ডীদাস স্মৃতি সাধারন পাঠাগার ' বিশিষ্ট লোকশিল্পী ও গুনীজন সম্মাননা ' দিয়েছে। শুধু সাহিত্যকর্মই নয় , আর্দশ শিক্ষক হিসাবেও সিউড়ির ‘ নয়াপ্রজন্ম ’ পত্রিকা গোষ্ঠীও তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছে।
নবকুমারবাবুর দুই ছেলেমেয়ে , বিজয়চাঁদ এবং পপি। ছেলেমেয়েরাও শিক্ষক। বছর দুয়েক ধরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে রয়েছেন নবকুমারবাবু। কোথাও গান পরিবেশন করতে যেতে পারেন না। তা নিয়ে মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ রয়েছে। কিন্তু তার কলম থেমে নেই। রোগশয্যায় শুয়েও লিখে চলেছেন তরজা-পাঁচালি গান। সেইসব গানে সুর বসাতে গুনগুনিয়ে ওঠেন - ‘ আজকে গাইব হেথা বরপণের কথা / ওই ঘটনায় বহু জনে মনে পান ব্যাথা / কত শত নারী হেথা হারায় অকাল প্রাণ / এই সমাজে তারা পায় না কোন মান। ’
----০----
No comments:
Post a Comment