কবিতায় নিবেদিত প্রাণ সুপ্রভাত
অর্ঘ্য ঘোষ
সে হাড়হিম করা শীতের জয়দেবের মাঘ মেলাই হোক কিম্বা প্রত্যন্ত এলাকার কোন সাহিত্যগসভাই হোক না কেন , ডাক পেলে সব উপেক্ষা করে কবিতা পড়তে ছোটেন সুপ্রভাতমুখোপাধ্যায়। আসলে আদ্যন্ত কবি মানুষ সুপ্রভাতবাবু কবিতার কথা ভাবতে ভাবতেঘুমোতে যান। ঘুমোতে ঘুমোতে স্বপ্নে কবিতার কথা ভাবেন। তাবলে তার কবিতা নিছক কল্পরাজ্যের বিষয় নয়। বরং তার কবিতায় উচ্চারিত হয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনযন্ত্রনার কথা , ‘ ছোট বড় মিলে থাকব , পেতে দেব খাটিয়া মাদুর / মাটিতে মুড়িরবাটি তুলে খাব দু’-এক খাবল / শাড়িতে ফুলের ছাপ মনে কত রং লাগবে আর / লজ্জায়তোমার মুখে কত রকম মাখামাখি ভাব।’
বর্তমানে আমোদপুর তেঁতুলতলা পাড়ার বাসিন্দা হলেও সুপ্রভাতবাবুর বাড়ি পাহাড়পুর গ্রামে।
জন্ম ১৯৬৯ সালের ২৮ মে।তিন ভাইবোনের বড়ো সুপ্রভাতবাবু পাহাড়পুর নিম্নবুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের পাঠ সাঙ্গ করে আমোদপুর জয়দূর্গা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন।লাভপুর শম্ভুনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সেখানেই অ্যাকাউন্টেসি অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু মাঝপথে ওই কলেজ ছেড়ে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ইংরাজী অনার্স পাশ করে টিউশানির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।পাশাপাশি সমান তালে চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা।
বাবা বগলাপ্রসাদবাবু ছিলেন বিড়ালা সংস্থার কর্মী। মা ছবিদেবী গৃহবধু। বাবাকে দেখে সাহিত্যে অনুরাগ জন্মায় তার। বগলাপ্রসাদবাবু সাতটি ভাষা জানতেন। লিখতেন কবিতাও।সুপ্রভাতবাবু তখন আমোদপুর জয়দুর্গা হাইস্কুলের ছাত্র। স্কুল ম্যাগাজিনের জন্যলেখা চাওয়া হয়েছিল। সুপ্রভাতবাবু বাবাকে গিয়ে ধরেছিলেন। বাবা ছেলের আবদারেলিখে দিয়েছিলেন একটি কবিতা।
সেই কবিতা ছাপা হয়েছিল তার নামে। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে কবিতা লেখার অনুরাগ জন্মায় তার। সেই অনুরাগেরই ফসল হিসাবে সত্যেন্দু মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ঘোড়সওয়ার ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার লেখাপ্রথম কবিতা। সেইসময় আমোদপুর জয়দূর্গা ক্লাবের ‘ অংশু ’ পত্রিকায় প্রকাশিতস্থানীয় সুগার মিলকে উপজীব্য করে লেখা কবিতা ‘ টিনবাড়ি ’ তাকে কাব্য জগতে পরিচিতি এনে দেয়।
এপর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কবিতা লিখেছেন । তার মধ্যে অর্ধেন্দু চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘ আবর্ত ’ , পবিত্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ কবিপত্র ’ , প্রসূন ভৌমিকসম্পাদিত ‘ বিজল্প ’ , উত্তরবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ‘ রসিকবিল ’ , কলকাতার ‘অনুষ্টুপ ’ , ‘ দেশ ’ , ‘ কৃত্তিবাস ’ , সিউড়ির ‘ হাড়মাস ’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার ছয় শতাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ‘ পোষ্টকার্ড ’ এবং ‘ছায়াছবির গান – কৃষিকথার আসর’ নামে দুটি কবিতার বইও। ‘ ছায়াছবির গান – কৃষি কথার আসর ’ বইটি গুজরাটি ভাষায় অনুবাদও হয়েছে।সুপ্রভাতবাবু মূলত কবি। কিন্তু বেশ কিছু প্রবন্ধ এবং ছোটগল্পও লিখেছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেইসব লেখা প্রকাশিতও হয়েছে।সাহিত্যকীর্তির জন্য বিভিন্ন সময় তুফানগঞ্জের ‘ রসিকবিল ’ , কোচবিহারের ‘ নৈষ্ঠক অ্যাকাডেমি ’ , ‘ কোচবিহার ‘ সর্বশিক্ষা মিশন ’ কড়েয়া কুড়ুইচন্ডীহাইস্কুল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাকে সংবর্ধিত করেছে। সাহিত্য চর্চার সুবাদেই শঙ্খ ঘোষ , জয় গোস্বামী , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , তিলোত্তমা মজুমদার , হর্ষ দত্ত , পবিত্র মুখোপাধ্যায় , কবিরুল ইসালাম , আবুল বাশার , শ্রীজাত প্রভৃতি প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের সান্নিধ্য লাভ করেছেন।মা ছবিদেবী , স্ত্রী সুমিত্রাদেবী এবং ভাইকে নিয়েই তার ছোট্ট সংসার।মূলত কবিতাকেই আশ্রয় করেই দিন কাটে তার। তিনি জানান , কবিতাতেই আমি প্রাণেরস্পন্দন খুঁজে পাই। তাই সেই খোঁজেই থাকি নিরন্তর।
No comments:
Post a Comment