কালের কারিগর
অর্ঘ্য ঘোষ
( কিস্তি --- ২ )
অজান্তেই মধুছন্দার হাতটা গালে চলে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মনোদাই চড়টা মেরে তার দিকে রাগী রাগী মুখ করে চেয়ে আছে। যন্ত্রনার চেয়েও তীব্র এক অভিমান বোধে কেঁদে ফেলে সে। তারপর ছুটে একেবারে বাড়ি। বইপত্র ছুড়ে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিছানায়। উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলে। উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে
আসেন মা। তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে -- কি রে কি হলো ? স্কুলে না গিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদছিস যে বড়ো ?
মায়ের কথা শুনে আরো জোরে কেঁদে ওঠে সে।
মা আরও সোহাগের সুরে বলে, এই দেখ--------- না বললে কি হয়েছে আমি বুঝব কেমন করে ?
অনেক সাধ্যসাধনার পর সেদিন মুখ খুলেছিল সে। মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে সেদিন সে বলেছিল , জানো মা মনোদা আমাকে সবার সামনে চড় মেরেছে। আমি আর ওদের বাড়ি কোনদিন যাব না।
--- তুই নিশ্চয়ই কোন দুষ্টুমি করেছিস। নাহলে মনো তো শুধু শুধু কারও গায়ে হাত তোলার ছেলেই নয়।
নিজের দুষ্টুমির কথাটা তো আর মাকে বলতে পারে না সে। তাই সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলে --- হ্যা তোমরা তো বলবেই এমন কথা। তোমাদের সবার কাছে তো মনোদাই খুব ভালো ছেলে। আর আমি খুব দুষ্টু। নিজের মেয়ের চেয়ে পরের ছেলেই তোমার কাছে বড়ো হলো ?
---- বটেই তো , মনো আমাদের হীরের টুকরো ছেলে। আর তুই একটা গেছো মেয়ে।
--- হীরের টুকরো না ছাই। তাই রোজ নিজের বাবার কাছে বকা খায়। আর কাকু আমার কত প্রশংসা করে তা জানো ?
--- সে আর জানি না। উনি ভালোমানুষ তাই ওইরকম বলেন।
--- মোটেই না। চলো, কাকীমাকে জিজ্ঞেস করে দেখবে চলো আমার সঙ্গে।
---- এই যে বললি তুই আর ওদের বাড়িতে যাবি না। সেই প্রতিজ্ঞার তাহলে কি হবে ?
---- যাব না'ই তো। যাব না, যাব না, যাব না। এই তিন সত্যি করলাম।
কিন্তু তার ওই প্রতিজ্ঞা বেশিক্ষণ থাকে না। স্কুল থেকে ফিরে বিকালের দিকেই তাদের বাড়িতে এসে হাজির হয় মনোদা। সে তখন পাশের বাড়ির খুঁকীর সঙ্গে রান্নাবাটি খেলছিল। খুকীর সঙ্গে সে গঙ্গাজল পাতিয়েছে। এমনিতেই তার এখন বেশিরভাগ সময় মনোদাদের বাড়িতেই কেটে যায়। তাই নিয়ে অভিমানের অন্ত নেই খুঁকীর। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে , গঙ্গাজল তুই তো এখন মনোদার সঙ্গে খেলিস। আমার সঙ্গে তো খেলার সময়ই নেই তোর।
গঙ্গাজলের অভিমান করাটাই স্বাভাবিক।
সত্যিই সে এখন মনোদার সঙ্গেই নানা খেলায় মেতে থাকে ওই বাড়িতে। কখনও লুডো তো কখনও কুমির-ডাঙ্গা খেলে। আবার খেলাঘরও বাঁধে তারা। সেখানে মনোদা হয় বাড়ির কর্তা। কাকীমার গলা নকল করে সে মনোদানউদ্দ্যেশ্য বলে -- কই গো তোমার হলো ? আজ স্কুলে নেই নাকি ? কখন থেকে ভাত বেড়ে বসে আছি , বলি খাবে কখন ?
সে কথা কানে যেতেই , কাকীমা বলেন , ওমা আমার কি হবে গো ? দেখ কেমন আমাকে নকল করেছে ? তা মা , তোমার কর্তাও বুঝি স্কুলে মাস্টারিই করেন ? ভালোই হলো, ওই সঙ্গে এই বুড়োবুড়ির দুটোর জন্যও আর চাট্টি চাল বেশি করে নিয়ে নিও। তাহলে আর আমাকে কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হয় না।
কাকীমার কথা শুনে লজ্জায় মনোদা ছুটে পড়ার ঘরে চলে যায়। আর লজ্জা ঢাকতে ছন্দা বলে , তুমি না কাকীমা ---
---- কি আমি না ?
---- জানি না যাও। খুব দুষ্টু। চুপি চুপি কেন আমাদের কথা শুনছো ?
--- ঘাট হয়েছে মা। আর আসব না শুনতে। তোমরা সুখে ঘরকন্না করো মা।
দরজার মুখে মনোদাকে আসতে দেখেই সেই কথাটা মনে পড়ে যায় তার। আর কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভাব পেয়ে বসে তাকে। বুকের ভিতরটা যেন দুলে ওঠে। ভীষণ ভালো লাগায় ভরে যায় তার মন। কিন্তু তীব্র এক অভিমান বোধে সে মনোদার দিকে ফিরেও তাকায় না। বরং মনোদাকে উপেক্ষার ভাব দেখাতে আরও বেশি করে খেলায় মন দেওয়ার চেষ্টা করে। খুঁকীকে তাড়া লাগায়, কি রে গঙ্গাজল উনুনে ভাত ফুটে ফুটে শেষ হতে চলল তবু নামানোর নাম নেই। বলি কোন দিকে মন পড়ে আছে তোর ? এরপর সব পুড়ে গেলে ছেলেপুলের পাতে দিবি কি ?
তার তাড়া খেয়ে শশব্যস্ত হয়ে পড়ে খুঁকী। ভীত গলায় সে বলে , এই নামায় গঙ্গাজল। মনোদা এলো তো , তাই দেখতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম।
--- কে এলো গেল , অত দেখার কি আছে ? আর উনি কি এমন তালেবর দাদাঠাকুর যে আমাদের নিজের কাজ ফেলে তাকিয়ে থাকতে হবে ? নে এবার নিজের কাজে মন দে তো।
তার কথা শুনে কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় খুকী। ভেবে পায় না তার ছন্দাদিদির আজ হলো কি ? এমনি তে তো মনোদাদার সম্পর্কে কেউ কিছু বললে সব একধার করে ছেড়ে দেয় ছন্দা। সেই ছন্দাদিদির মুখে আজ এ কি ধরণের কথা শুনছে সে ? কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করারও সাহস হয় না তার। খুঁকী কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও তার মনের ভাব আঁচ করতে অসুবিধা হয় না ছন্দার। কিন্তু সে আমল দেয় না। খেলার মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে সে। কিন্তু চেষ্টাই সার হয় , মন দিত পারে না। বরং মনোদা কি করতে এসেছে তা জানার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মাকে কি সাঁকো নাড়ানোর কথাটা বলতে এসেছে নাকি মনোদা ? তাহলে মা তো তাকে ছেড়ে কথা কইবে না। তাই মনোদা মাকে
কি বলে তা শোনার জন্য কান খাড়া করে থাকে। সে খেলাঘর থেকে লক্ষ্য করে মনোদাও তাকে দেখেও না দেখার ভান করে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
---- কই , কাকীমা কই ? বলে মনোদা একেবারে রান্নাঘরের দোরগোড়ায় চলে যায়। তারপর ঠাকুমাকে সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরে -- ওঃ ঠাকুমা, ঠাকুমা বলে অস্থির করে তোলে।
দেখে যেন গা জ্বলে যায় তার। মনে মনে বলে , বেশি বেশি। পরের ঠাকুমাকে নিয়ে আদিখ্যেতা। আর ঠাকুমাটাও তেমনি। পরের বাড়ির ছেলেকে পেয়ে সোহাগ আর ধরে না। কেমন চিবুক ছুঁয়ে গদগদ করে বলছে দেখ না -- ভাই , আজ সূর্য্যি কোন দিকে উঠেছে গো ? অনেকদিন পর ঠাকুমায়ের কথা মনে পড়ল যে ?
ছন্দার যেন গা জ্বলে যায়। সবেতেই ঠাকুমায়ের বেশি বেশি। তোমার নিজের নাতনি থাকতে পরের ছেলেকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে ? মাও কম যায় নাকি ? মনোদা এলেই এমন ভাব করে যেন আকাশ থেকে চাঁদ নেমে এসেছে।
মা তখন নলেন গুড়ের পায়েস রান্না করছিলেন। খেলাঘর থেকেই তার সুঘ্রাণ পাচ্ছিল সে। মনোদাও সম্ভবত সেই গন্ধ পেয়েছিল। তাই মায়ের উদ্দেশ্যে বলে , কাকীমা পায়েস তৈরি হচ্ছে মনে হচ্ছে ? তাহলে তো বলতে হবে ঠিক সময়েই এসে পড়েছি। মনোদাকে দেখে মা'ও আহ্লাদে আটখানা হয়ে ওঠেন। বলেন , আয় আয় বাবা বোস। তুই এলি ভালোই হল। এতক্ষণ তোর কথাই ভাবছিলাম। ছন্দাকে তোদের বাড়ি পাঠাব ঠিক করেছিলাম। পায়েস করেছি , একটু খেয়ে যা।
মায়ের কথা শুনে নাক কুঁচকায় মধুছন্দা। মনে মনে বলে -- ওদের বাড়ি পাঠাব বললেই হোল। আমি যেন একেবারে যাওয়ার জন্য বসে আছি।তারপর খেলায় মন দেয় সে। খুঁকীকে বলে , আয় গঙ্গাজল, আমরা বরং পায়েস করি।
শীতকালে তো সবাই পায়েস খায়।
খুঁকী বলে, সেই ভালো। বলে সে পায়েসের উপকরণ যোগাড় করতে শুরু করে তারা। খুঁজে পেতে নিয়ে আসে খেজুরের গুড়ের মতো ইট কুচি, কাঁকড় দানার চাল। কাল্পনিক কল টিপে জলও।মধুছন্দা নিজে কিন্তু আর মন বসাতে পারে না খেলাঘরে। তার মন পড়ে থাকে মায়ের রান্নাঘরে। পায়েসের নাম শুনে আর দু'বার বলতে হয় না। মোড়া টেনে রান্নাঘরের সামনে বসে পড়ে মনোদা। আসলে খুব পেটুকরাম তো। লজ্জা--শরমের বালাই নেই। নাহলে কোন মুখে যাকে চড় মেরেছিস, পায়েসের গন্ধ শুঁকে শুঁকে তাদের বাড়িতেই হাজির হলি ? আমি হলে বাবা মরে গেলেও পারতাম না।আর মাকেও বলিহারি, তোর মেয়েকে যে চড় মেরেছে তাকেই পাশে বসিয়ে জামাই আদর করে পায়েস
খাওয়াতে হবে ? জামাই আদরের কথাটা মনে আসতেই লজ্জায় মুখটা যেন লাল হয়ে ওঠে তার। খেলাঘর থেকেই সে শুনতে পায় পায়েস খেতে খেতে মনোদা মাকে বলছে , মা আজ পিঠে তৈরি করবে তাই ছন্দাকে ডেকে নিয়ে যেতে বলল। কই , কোথাই সে ?
ছন্দা ভাবে উঃ কি অভিনয়ই না জানে মনোদা ? তারা ধানের গোলার আড়ালে খেলাঘর পাতলেও তো বাড়ি ঢোকার মুখেই তা চোখে পড়েছে তার। তবুও মায়ের কাছে কেমন ভালোমানুষের মতো অভিনয় করে বলছে দেখ -- ছন্দা কই ? আর হবে নাই বা কেন ? লেখাপড়ার মতো স্কুলে নাটক, গান, আবৃত্তিতেও যে হাততালি কুড়োয় সে। ছন্দা শুনতে পায় মা মনোদাকে বলছেন , ওই তো ওদিকে পাশের বাড়ির খুঁকীর সঙ্গে রান্নাবাড়ি খেলছে। তোদের মধ্যে কি না কি হয়েছে , তাই তোদের বাড়ি আর যাবে না বলে তিন সত্যি করে বসে আছে।
--- করাচ্ছি তিন সত্যি ! যাব না বললেই হবে ? ঝুঁটি ধরে নিয়ে যাব না।
ছন্দা মনে মনে বলে -- ইঃ খুব আর কি ? ঝুঁটি ধরে নিয়ে গেলেই হলো। পরের মেয়ের গায়ে বার বার অমনি হাত তুললেই হোল ? কাকুকে বলে দেব না তাহলে ? যাও না যাও, তোমার রুম্পার কাছে যাও না। তাকেই নিয়ে যাও , দেখি কেমন সে পারে। গল্প করার সময় রুম্পাদি , আর মায়ের পিঠে করার বেলায় সেই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো এই ছন্দা।
আমি মরে গেলেও যাব না। পড়াশোনায় তোমার মতো ভালো না হতে পারি , কিন্তু আমারও তো একটা মানসম্মান আছে। কাল স্কুলের বন্ধুরা সব শুনলে বলবে কি ?
মনে মনে সে এত কথা ভাবে বটে কিন্তু যেই মনোদা তার খেলাঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় অমনি তার কি যেন হয়ে যায়। বুকের ভিতর ধুকপুকুনিটা যেন আরও বেড়ে যায়। গলা যেন শুকিয়ে কাঠ। খুব জল তেষ্টা পায় তার। তারপর মনোদা যখন বলে -- কি রে তুই এখনও রাগ করে আছিস ? যাবি না আমার সঙ্গে ? মায়ের কাছে আমাকে বকা খাওয়াবি ?
অমনি তার রাগ অভিমান গলে সব জল হয়ে যায়। কিন্তু ঠোট ফুলিয়ে সে বলে -- তোমার বকা খাওয়াই ভালো। আমার বুঝি তখন লাগে নি ?
--- বেশ তুই যদি না যাস তাহলে আমি একাই ফিরে যাচ্ছি। মাকে বলব , সব ফেলে দাও, করতে হবে না পিঠে।
--- আমি যাব না বলেছি নাকি ? নিজে নিজেই তো সব কিছু ধরে নিচ্ছ। আসলে কাকীমা পাঠিয়েছে বলেই ডাকতে এসেছো , নাহলে তোমার তো কোন টান নেই। আমিও কাকিমা ডেকে পাঠিয়েছেন বলেই যাচ্ছি। না হলে তোমার কথায় কখনই যেতাম না।
---- বেশ আমার না হয় টান নেই , কিন্তু তোর তো আছে। সেই টানেই না চল।
--- আছেই তো।
বলেই সে ছুটে গিয়ে হাত-পা ধুয়ে জামা পাল্টে নেয়। ততক্ষণে মা একটা টিফিন কেরিয়ার তার হাতে দিয়ে বলে , দিদিকে দিস , তোরটাও ওই সঙ্গে দিয়ে দিয়েছি।
ওই বাড়িতেই খেয়ে নিস। সে টিফিন কেরিয়ারটা হাতে তুলে নিতেই মা ফের বলেন , কি রে তিন সত্যি করেছিলি যে , আর নাকি ওদের বাড়ি যাবি না। আমি ঠিক জানতাম ওই প্রতিজ্ঞা তোর থাকবে না।
বলেই কাকীমার মতো মা'ও মুখ টিপে হাসেন। সে লজ্জায় কিছু বলতে পারে না।মনোদার সঙ্গে পা বাড়াতেই খেলাঘর থেকে খুঁকী বলে, চলে যাচ্ছো যে গঙ্গাজল , খেলবে না আর ? পায়েস যে হয়ে এলো, নামাতে হবে না ?
---- তুই পায়েসটা নামিয়ে রেখে মায়ের কাছে পায়েস খেয়ে আজকের মতো বাড়ি চলে যা। কাল আবার খেলব।
তার তো তখন কাঁধে ঝোলা , চলল ভোলার মতো অবস্থা। যাওয়ার সময় মনোদা হঠাৎ তার গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে , হ্যা রে চড়টা তখন তোর গালে খুব লেগেছিল না রে ? আমারও খুব খারাপ লাগছিল জানিস। স্কুলের পড়ায় মন বসাতে পারি নি সারাদিন। মনে হচ্ছিল কখন তোর কাছে ছুটে যাব।
নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না ছন্দা। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। মনোদা বলে, আমাকে ক্ষমা করে দে লক্ষীটি , এই প্রতিজ্ঞা করছি আর কখনও তোর গায়ে হাত তুলব না।
ফোঁপাতে ফোঁপাতেই ছন্দা টের পায় তার মনোদার গলাও বুজে এসেছে। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তারও দু'চোখ জলে ভরে উঠেছে। সে পরম মমতায় মুছিয়ে দেয় মনোদার চোখের জল। ভালো লাগার আবেশ ঘিরে ধরে দুজনেকে। সেদিন বিকেল থেকেই মেঘ করেছিল। আচমকা ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। আর তারা সুর করে বলে ' লেবুরপাতা করমজা, যা বৃষ্টি ছেড়ে যা ' বলতে বলতে বাড়ির দিকে ছুট লাগায় দুজনে।
( ক্রমশ )
No comments:
Post a Comment