কথায় জীবনের ছবি আঁকেন ফজলুল
অর্ঘ্য ঘোষ
নিছক কল্পনা তার বিচরণ ক্ষেত্র নয়। মানুষের জীবনযন্ত্রণার কথা ছবির মতো ফুটে ওঠে তার লেখায়। তিনি ফজলুল হক। বর্তমানে দুবরাজেপুরের বাসিন্দা হলেও ফজলুল হক ইলামবাজারের নৃপতি গ্রামের সম্পন্ন কৃষিজীবি এবং ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। বাবা হাজি মহম্মদ ইসা মোল্লা বাংলায় কোরান অনুবাদ করেন। পাশাপাশি নিজের হাতে আরবি হরফে কোরান লেখেন। মা তসলিমা বিবি ছিলেন গৃহবধু।
স্কুলবেলা থেকেই লেখালিখি এবং বই পড়ার প্রতি তার অনুরাগ। ১০ বছর বয়সে ছড়া-কবিতা লেখার জন্য মাস্টারমশাইয়ের হাতে মার খেয়েছিলেন। পঞ্জিকায় বিজ্ঞাপন দেখে দেব সাহিত্য কুটিরে স্কুলের ঠিকানায় ডাকযোগে ‘সতী’ , ‘ সাবিত্রী ’ ও ‘বেহুলা’ নামে তিনটি বই আনিয়েছিলেন। সেই বই প্রধানশিক্ষকের হাতে পড়ে যায়। খেতে হয় কঞ্চির বাড়ি।
কিন্তু সাহিত্যের অঙ্গন থেকে সরে আসতে পারেন নি। বরং লেখালিখি আর পত্রিকা
প্রকাশের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে মাঝপথে শিক্ষার অঙ্গন থেকেই ছিটকে যান। ১৩৮০ বঙ্গাব্দে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প ‘বিপ্রলব্ধ ’। তারপর বিভিন্ন সময়ে ‘ নবকল্লোল ’ , ‘ আরম্ভ ’ ‘ মাসিক কৃত্তিবাস ’ , ‘ কলেজস্টিট ’ , ‘ উৎসব ’ , ‘ দৈনিক কলম ’, ‘ দৈনিক দিনদর্পণ ’ , ‘চন্ডীদাস’, ‘ স্বপ্ননীড়’, ‘ নিরিবিলি ’ ‘ পূর্বাশা এখন ’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার লেখা। নাজিম আফরোজ ছদ্মনামেও লিখেছেন বেশ কিছু কবিতা।
ইতিমধ্যে তার ১১ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে ৪ টি যৌথ কাব্যগ্রন্থও। তার মধ্যে ‘ ছায়াবৈরী ’ , ‘ যাদুবাক্স ’, ‘ ছায়ানিলয় ’ ‘ মৃতরাত্রিপুরাণ ’ , ‘ নিসর্গের রূপকথা ’ , ‘ ‘জাদুকথা’ অন্যতম। ‘ নিসর্গের রূপকথা ’ আনন্দবাজার পত্রিকায় পর পর দু’বার বেস্টসেলার হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
১৯৭৮ সাল থেকে রীনা কবিরাজের সঙ্গে যৌথভাবে ‘ তমসুক’ নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন। ২০০২ সাল থেকে ‘ কবিতা এবং কবিতা ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন। ২০১০ সাল থেকে মাসিক ‘ চণ্ডীদাস ’ পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।
ওইসব পত্রিকায় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাশাপাশি নবীনদেরও আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। সাহিত্যক্ষেত্রে এহেন অবদানের জন্য ২০০৫ সালে রাঢ় বাংলা কথা সাহিত্য অ্যাকাডেমি , ২০০৮ সালে বাউল ফকির আখড়া , ২০১৩ সালে ঐক্য সাহিত্য পত্রিকা তাকে যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ গল্পকার , বর্ষসেরা লেখক এবং ব্যতিক্রমী লেখক হিসাবে পুরস্কৃত করেছে। লেখালিখির সুবাদেই সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , চিত্রপরিচালক শেখর দাস , বুদ্ধদেব ঘোষ , বাহারুদ্দিন , মীরাতুন্নাহার প্রমুখ প্রতিথযশা মানুষজনের সান্নিধ্য লাভ করেছেন।
চলার পথেই একসময়ের সাহিত্যসাথী রীনা কবিরাজকে জীবনসাথী হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তা নিয়ে বিস্তর ঝড়ঝাপটা পোহাতে হয়েছে। তবুও সাহিত্য সেবা থেকে বিচ্যুত হন নি। ফজলুল হক মূলত গল্পকার। তবুও তার লেখনিতে ঝলসে ওঠে কবিতার বিদ্যুৎ - ‘ প্রিয়তম স্বপ্নগুলি ঘুমায় নিশ্চিতে / সুশান্ত চাদরে ঢাকা স্তব্ধ পালঙ্ক।’
-----০----
No comments:
Post a Comment