Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৯






          নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


                শুরু হল ধারাবাহিক উপন্যাস -- 















               কালের কারিগর

              

                            অর্ঘ্য ঘোষ



                    (  কিস্তি -- ৯  ) 

সেদিনের সেই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুম নেমে আসে তার চোখে।ভোর রাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে সে। স্বপ্নে দেখে সে আর মনোদা একটা যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজীব,  সৌমেন আর রুম্পাদিরা। রাজীব, সৌমেনদের মুখটা তার দুর্যোধন - দুঃশাসনের মতো দেখায়। রুম্পাদিকে দুঃস্বলার মতো দেখতে লাগে। মনোদা আর সে যেন অর্জুন আর সুভদ্রা। রণ হুংকারে কেপে উঠছে যুদ্ধক্ষেত্র। দুপক্ষই একে অন্যের দিকে তীর নিক্ষেপ করেই চলেছে। মনোদার তুণের তির কমে আসছে। তাই সে বিপক্ষের ছোড়া তীরগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে মনোদাকে যোগান দিচ্ছে।ওই ভাবে তীর কুড়াতে গিয়ে আচমকা তার পিঠে বিপক্ষের একটা তীর এসে বেঁধে। সে যন্ত্রনায় আর্তনাদ করে ওঠে। তার আর্তনাদ শুনে মনোদা যুদ্ধ ফেলে ছুটে এসে সেই তীর টেনে বের করার চেষ্টা করে। সে যন্ত্রণায় আরও বেশি ককিয়ে ওঠে। সেই সময় মনোদার নাড়া খেয়ে তার স্বপ্ন ভাঙে যায়। চোখ মেলে দেখে তার 
দিকে অবাক চোখে চেয়ে রয়েছে মনোদা।তখনও তার স্বপ্নের ঘোর কাটে নি। ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনোদা হঠাৎ তার গলা জড়িয়ে ধরে। ছন্দাও জড়িয়ে ধরে  মনোদা। তার চোখেও যেন ফুটে ওঠে ঘোর লাগা আবেশ। ছন্দার আবেশ ভরা সেই মুখের দিকে চেয়েই থাকে মনোতোষ। আচমকা তার ঠোঁট নেমে আসে ছন্দার ঠোঁটে। ঘটনার আকষ্মিকতায় ছন্দা বিহ্বল হয়ে পড়ে। সেও সাড়া দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই চাপা স্বরে বলে ওঠে -- একি করছো ?  ছাড়ো ছাড়ো।
তার কথা শুনেই দ্রুত তাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মনোতোষ। তার চোখে মুখে ভয় আর অপরাধ বোধের ছাপ ফুটে ওঠে।কার্যত চোরের মতো গুটিগুটি পায়ে নিজের পড়ার ঘরের দিকে চলে যায় সে।ওই ভাবে মনোদাকে চলে যেতে দেখে খুব খারাপ লাগে ছন্দার। প্রিয়জনের প্রথম সান্নিধ্য হেলায় হারিয়ে কারই বা কবে ভালো লেগেছে ? কিন্তু বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করতে হয়েছে তাকে। পাশের ঘরেই কাকু-কাকীমা ঘুমিয়ে রয়েছেন। তারা যদি টের পান তাহলে সে তো আর তাদের সামনে মুখ দেখাতেই পারবে না। হয়তো এবাড়িতে আর ঠাইও হবে না। যতই কাকু-কাকীমা তাকে স্নেহ করুন , ভাবী পুত্রবধূ হিসাবে ভেবে রাখুন না কেন এই ধরণের ঘটনা তারা মেনে নেবেন না বলেই মনে হয় তার। তাছাড়া সামনেই মনোদার পরীক্ষা , তারপরও অনেক দূর পড়াশোনা করতে হবে তাকে। এখন থেকে এসবে জড়িয়ে পড়লে যে তার পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সে ক্ষতি যে কিছুতেই সইতে পারবে না ছন্দা। সে চায় তার মনোদা অনেক বড়ো হয়ে সবার সম্মানের যোগ্য হবে।তাই তো ফিরিয়ে দিতে হয়েছে তার প্রিয় মনোদাকে। কিন্তু তার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে শুয়েই সে ওইসব কথা ভাবে আর মন খারাপ করে। কিন্তু বিছানাতেও আর পড়ে থাকা হয় না তার। মনোদার পড়া শুনতে পায় সে। এবার তাকে উঠতে হবে। নাহলে কাকীমাই উঠে হরলিক্স তৈরি করতে শুরু করে দেবেন। সে বড়ো খারাপ ব্যাপার হবে। সারাদিন খাটাখাটনি করে শরীরে আর কুলোয় না বলেই তাকে রেখেছেন। তারপরও যদি সে কাকীমার কোন সাহার্য্যেই না লাগতে পারে তাহলে তার খুব খারাপ লাগবে। তাই সে উঠে পড়ে। মুখ হাত ধুয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রান্নাঘরে ঢোকে।


                                    পড়তে বসেও মনোতোষ আজ কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারে না। কেবলই পড়া থেমে যায় তার। সে কি খুব বড়ো ভুল করল ? ছন্দা কি মাকে সব বলে দেবে ? তাহলে সে কি করে মুখ দেখাবে মায়ের কাছে ? এমনই নানা চিন্তা ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে। কিছুতেই পড়ায় মন সে মন বসাতে পারে না। ছন্দাও বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। তাই দ্রুত হাতে দু-গ্লাস হরলিক্স তৈরি করে নেয়। কাকু-কাকীমা মুখ না ধুয়ে কিছু খান না। ফ্লাক্সে তাদের জন্য গরম জল ভরে রেখে দেয়। তারপর কিছু বিস্কুট আর হরলিক্স দু'গ্লাস নিয়ে সে মনোদার পড়ার ঘরে পৌঁছোয়।একটা গ্লাস মনোদাকে দিয়ে অন্যটা নিজে নিয়ে সে চেয়ার টেনে বসে পড়ার টেবিলের সামনে। তাকে দেখেই মনোদা মুখ নামিয়ে নেয়। সরাসরি তাকাতে পারে না তার মুখের দিকে। মনোদার মুখ দেখে  তার খুব কষ্ট হয়। মুখ দেখেই বুঝতে পারে চিন্তার ঝড় বইছে তার মনে। দুশ্চিন্তা তারও কম হয় না। মনোদার মনে অপরাধ বোধ কাজ করলে তার যে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। তাহলে যে তার নিজেকেই অপরাধী মনে হবে। তাই পরিস্থিতিটাকে স্বাভাবিক করার জন্য সে বলে -- কি ব্যাপার মনোদা মুখ নামিয়ে রয়েছো , কোন কথা বলছ না যে। নিদেনপক্ষে হরলিক্সটা কেমন হয়েছে বলো।
ছন্দার কথা শুনেই তার হাত চেপে ধরে মনোতোষ। অবরুদ্ধ গলায় বলে -- ভোরের ওই ঘটনাটার জন্য তুই খুব রেগে আছিস না ? আসলে তখন তোকে দেখে আমার কি যে হয়ে গেল কে জানে ? নিজেকে কিছুতেই সংযত রাখতে পারলাম না। বল তুই ক্ষমা করছিস। না হলে যে আমি কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না।এই আশংকাটাই তো করেছিল ছন্দা। না , এটার নিষ্পত্তি তাকে এখনই করতে হবে। দ্রুত তাকে মনোদার মন থেকে অপরাধবোধের কাঁটাটাকে দূর করতে হবে। সেও মনোদার হাত দুটি জড়িয়ে ধরে বলে -- এতে ক্ষমা চাওয়ার কি হলো ? ভালোবাসা থাকলে অমনটা হতেই পারে। তাতে কোন অন্যায় হয় বলে আমার মনে হয় না। তবে ভালোবাসা না থাকলে অবশ্য ওইসব করাটা অপরাধ। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না ?
ছন্দার কথা শুনে যেন স্বস্তি ফেরে মনোতোষের। আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ে সে। আল্পুত গলায় ছন্দার চোখে চোখ রেখে সে বলে -- ভালোবাসার কথা কি বলে বোঝাতে হয় ? তুই কিছু টের পাস না ? নিজে ভালোবাসলে তো অন্যের ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়। এই তুই আমাকে ভালোবাসিস ?
এবার মনোদার কথা শুনে কথা হারিয়ে যায় ছন্দার। তার বুকের ভিতরে যেন অবিরাম ধারায় বয়ে যায় ঝর্নাধারা। বেশ কিছুক্ষণ দুজনে হাত ধরাধরি করে মুখোমুখি চেয়ে বসে থাকে। মনোদাই শেষ পর্যন্ত বলে -- কি রে কিছু বল ?
--- সে আভাস মেয়ে মাত্রেই পায়। আমিও পেয়েছিলাম। কিন্তু রুম্পাদির গায়ে পড়া ভাব দেখে কেমন যেন খটকা লাগত আমার। তাই ঠিক নিশ্চিত হতে পারতাম না।
তার কথা শেষ হতেই শব্দ করে হেসে ওঠে মনোতোষ। তারপর ছন্দার মাথায় আলতো হাতের সোহাগের চাটি মেরে বলে , ওরে রুম্পা আমার খুব ভালো বন্ধু। ওসব জানে।
--- সব জানে মানে ?  
--- ওইই তো আমাকে বলেছিল, মনো  ছন্দা বোধহয় তোকে মনে মনে ভালোবাসে। তোর চোখ মুখেও সেই ভালোবাসার ছাপ , আমিও সেদিন অস্বীকার করি নি। তখনই তো রুম্পা আমাকে দবলে, ও যে সব জানে তা যেন তোকে না বলি। তারপর থেকেই তো তোকে রাগানোর জন্য তোর সামনে ও আমার সঙ্গে গায়ে পড়া ভাব দেখে আর তুই ওর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে চটে লাল হয়ে উঠতিস।


                                                      মনোতোষের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে ছন্দার মুখ। দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকে সে। তারপর মনোতোষের পিঠে কিল মারতে মারতে বলে -- তোমরা খুব দুষ্টু।  সবকিছু জেনেও আমাকে রাগানোর জন্য ওইসব করেছো ? তোমার সঙ্গে আর কথাই বলব না যাও।
বলেই সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম করতেই মনোতোষ তার হাতে ধরে বলে , রাগলেও কিন্তু তোকে সুন্দর দেখায়।
--- যাও, যাও আমাকে আর ভোলাতে হবে না। এবার আমি  যাই। কাকু কাকীমা  উঠে পড়বেন , চা করে দিতে হবে। আর হ্যা , আজ যা হোল তা কিন্তু আর হবে না। তাতে পড়াশোনা শিকেয় উঠবে। মনে থাকে যেন। 
মনোদার মাথার  চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হেসে ঘর ছাড়ে ছন্দা। ততক্ষণে কাকু-কাকীমা উঠে পড়েছেন। সে চা তৈরি করে তাদের হাতে তুলে দিতে গিয়ে শুনতে পায় কাকুরা মনোদার পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছেন।পরীক্ষার সেন্টার পড়েছে রামপুরহাটে। টানা কয়েকদিন পরীক্ষা চলবে। ঠিক হয়েছে পরীক্ষা ক'দিন মনোদাকে নিয়ে কাকু রামপুরহাটেই থেকে যাবেন। রামপুরহাটে রামকাকুদের একটা বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়িতেই মনোদারা থাকবে। রুম্পাদিও নাকি নিশ্চিন্তপুরে এক আত্মীয়বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেবে। রাজীব ,  সৌমেনরা অবশ্য গাড়ীতে যাওয়া আসা করেই পরীক্ষা দেবে। তারা মনোদাকেও তাদের সঙ্গে যেতে বলেছিলো কিন্তু কাকুই মত দেন নি। কাকু অন্য ধারার মানুষ। সাধারণত কারও সাহার্য্য নিতে চান না। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্যান্যরা যখন কোন আত্মীয় বাড়িতে থেকে কিম্বা যাওয়া আসা করে পরীক্ষা দেবে তখন তার ছেলে গাড়িতে করে পরীক্ষা দিতে যাবে সেটা তিনি কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারবেন না। তার উপরে যাওয়া আসায় ধকলে শেষ মুহুর্তে বইপত্রে  চোখ বুলিয়ে নেওয়ার সুযোগটাও মিলবে না। চা খেতে খেতে কাকীমাকে ওইসব কথা বলছিলেন কাকু।  কাকুর এই বিবেচনা বোধ খুব ভালো লাগে ছন্দার। এইরকম করে ক'জন ভাবতে পারে ? কাকুর এই ভাবনা কাকীমা,  মনোদার মধ্যে সঞ্চারিত 
হয়েছে। সে নিজেও তো তার বাইরে নয়। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে দিতে কাকু বলেন ,  আমি ভাবছি এই কয়েক দিন একা তুমি সবদিক সামলাবে কি করে ?
কাকীমা বলেন , ওটা নিয়ে তোমাকে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। তাছাড়া আমি একা কোথাই , ছন্দা মা রয়েছে না ? 
তারপর ছন্দার উদ্দেশ্য বলেন , কি রে, মা-মেয়ে পারব না এই ক'টা দিন চালিয়ে নিতে ?
ছন্দার কোন জবাব দেওয়া হয় না। উর্ধশ্বাসে ছুটে আসে রুম্পাদির ভাই শ্যামল।

                                             ( ক্রমশ )


        নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                              ( ১ ) 
                                  


                            ( ২) 





                        ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                      ( ৪ )


         



                                 ( ৫ )

                                                      ( খেলার বই )


                                                                                 


                                   ----০----


          

No comments:

Post a Comment