( কিস্তি -- ৪৭ )
এক অনমনীয় জেদের জন্ম হয় ভুবনবাবুর মনে। স্ত্রীর উৎসাহই তাকে প্রেরণা যোগায়। মনে মনে শেষ না দেখে ছাড়ব না বলে প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। সেই মতো প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর এবং ছুটির দিনগুলোতে সংগঠক কমিটির সদস্যদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে চাঁদা সংগ্রহের অভিযান শুরু করেন। তাতে অভুতপূর্ব সাড়া মেলে। নগদ টাকা হয়তো অনেকেই দিতে পারেন না। কিন্তু খেতের ফসল , ঝাড়ের বাঁশ দেন অনেকে। গ্রামেই সেইসব বিক্রি করে অর্থ সংগৃহিত হয়। সেদিন বীরনগরী গ্রামে গিয়ে অভিভূত হয়ে পড়েন সবাই।দিনটা ছিল রবিবার , তাই কুড়ি জন শিক্ষানুরাগী সেদিন সকালের দিকেই ওই গ্রামে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে গিয়েছিলেন ভুবনবাবু। তাঁদের যাওয়ার খবর পেয়েই ওই গ্রামের শিক্ষানুরাগীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে চাঁদা তুলে দেন। বড়ো গ্রাম , অর্ধেক বাড়ি ঘুরতেই দুপুর গড়িয়ে যায়।
গ্রামবাসীরা তাই পুকুরে মাছ ধরে তামাল মন্ডলের বাড়িতে তড়িঘড়ি রান্না করে পরম সমাদরে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। গ্রামবাসীদের আতিথেয়তায় অভিভূত হয়ে পড়েন ভুবনবাবুরা। অভিভূত হওয়ার তখনও কিছু বাকি ছিল। খাওয়া দাওয়ার পর তারা যখন অন্য পাড়ায় চাঁদা সংগ্রহে বেড়িয়েছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে দাঁড়িয়েছিলেন একটা পর্ণ কুটিরের সামনে। সকলেই দেখতে পান তখন উনুনের সামনে বসে হাঁড়িতে ফেলার জন্য চাল ধোওয়ার উপক্রম করছেন এক বৃদ্ধা বৈষ্ণবী।তাদের চাঁদা তোলার বিষয়টি জানতে পেরে সেই চাল থেকেই এক মুঠো তুলে নিয়ে তাদের ঝোলায় ঢেলে দিয়ে বলেন --- বাবা , আমি ভিক্ষা করে খাই। এর বেশি দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমিই সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরি বলেই বোধহয় আমার দ্বারে তোমরা আসো নি , কিন্তু সব শুনে আমি তো হাত গুটিয়ে থাকতে পারি না। এত বড়ো একটা কাজে সবার সাহার্য্য থাকবে , আর আমার থাকবে না তাই কখনও হয় ? রামচন্দ্রের সেতু বন্ধনে কাঠবেড়ালিও তো তার সাধ্য মতো সাহার্য করেছিল।
বৃদ্ধার কথা শুনে চোখে জল চলে আসে সবার। ভুবনবাবু এগিয়ে গিয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে বলেন -- মা, আপনার এই দানের কথা আমরা কোনদিন ভুলব না। আর্শিবাদ করুন আমরা যেন কলেজ করতে পারি। ভুবনবাবুর দেখাদেখি বাকিরাও বৃদ্ধার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। বৃদ্ধা আর্শিবাদ করতে করতে বলেন -- আমি দেখে যেতে পারব কিনা জানি না , কিন্তু দেখো একদিন তোমাদের কলেজ হবেই। এত লোকের প্রচেষ্টা ঠাকুর কিছুতেই বিফলে যেতে দেবেন না। বলেই বৃদ্ধা হাত জোড় করে কপালে ঠেকান।
বৃদ্ধার বাড়ি থেকে আসতে আসতে স্বদেশী আমলের সেই গানটার কথা মনে পড়ে যায় ভুবনবাবুর। স্কুলের অনুষ্ঠানে সমবেত গলায় কতবার গেয়েছে -- 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে না ভাই।' আজ যেন মনের ভিতর আপনা থেকেই গুনগুনিয়ে ওঠে গানের সুরটা। সেদিন এক অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে বাড়ি ফেরেন ভুবনবাবু। সাধনাকে বৃদ্ধার কথা খুলে বলেন তিনি। সব শুনে সাধনাও আপ্লুত হয়ে পড়েন। স্বামীকে বলেন , দেখো ওই বৃদ্ধার আর্শিবাদ বৃথা যাবে না। একদিন না একদিন তোমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবেই।
তার পর দুটো চমকদার বিয়ের কার্ড স্বামীর হাতে তুলে দেন সাধনা। এক সঙ্গে দুটো কার্ড দেখে ভ্রু কুঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকান ভুবনবাবু।সাধনা বলেন , নাপিত দিয়ে গেল। রীনা-সৌমেনের বিয়ের কার্ড। রাম আর কুনাল এক সঙ্গেই কার্ড পাঠিয়েছে। কার্ড দুটোতেই বড়োলোকী দেখানোর প্রয়াস নজর এড়ায় না ভুবনবাবুর। ভেলভেটে মোড়া এমন কার্ড তিনি এর আগে চোখেও দেখেন নি। কার্ড দেখেই মালুম হয় বিয়েতে কি রকম জাঁকজমক হবে। তার শুধু নাপিতের হাত দিয়ে কার্ড পাঠানোর জন্য খারাপ লাগে।ওদের দুজনের বিশেষ করে রামের সঙ্গে তো তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব , তাস্বত্ত্বেও নিজে এসে একবার বলার প্রয়োজন বোধ করল না।ওরা অবশ্য তাকে আর বন্ধু বলে মনেই করে না।যাই হোক না কেন, নিমন্ত্রণ যখন করছে তখন তা রক্ষা করতে তো যেতেই হবে। কিন্তু তার যাওয়াটা ওরা কেমন ভাবে নেমে কে জানে - সেই ভাবনায় পেয়ে বসে ভুবনবাবুকে। সেই চিন্তা অবশ্য বেশিক্ষণ করার অবকাশ পান না তিনি। আপাতত কলেজ আর ছন্দাকে নিয়েই তার মাথায় মাথায় চিন্তা। কলেজের জন্য এখনও অনেক টাকার প্রয়োজন। এক সঙ্গে পঁচিশ হাজার টাকা জমা দেখাতে না পারলে কলেজের দাবিই গ্রাহ্য হবে না।
তাই একটা দিনও তিনি নষ্ট করতে চান না। প্রতিদিনই গ্রামে গ্রামে চাঁদা সংগ্রহে বেরোন। কিন্তু সামনেই ছন্দার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সিট পড়েছে সেই রামপুরহাটে। তাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতে হলে তো ৮/৯ দিন চাঁদা সংগ্রহের কাজ থমকে যাবে আর থমকে যাওয়া কাজে ফের গতি আনতে পেরিয়ে যাবে আরও কয়েকটা দিন। সেটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারেন না ভুবনবাবু। আবার ছন্দার পরীক্ষার ব্যাপারটাও হেলাফেলা করতে পারেন না। তাই চরম দোটানার মধ্যে পড়েন তিনি।সমস্যার কথাটা শেষ পর্যন্ত স্ত্রী'কেই খুলে বলেন ভুবনবাবু।সব শুনে সাধনা বলেন , তুমি অত ভাবছ কেন ? ছন্দা তো আর আমাদের সেই ছোট্টটি নেই। পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই তো পুরোপুরি সাবালিকা হয়ে উঠবে। তারপরই তো ওকে মনোর বৌ করে ঘরে তুলব। এ কথা তো আজ আর কারও জানতে বাকি নেই। ওদের দুজনেরও অজানা নেই। তাই আর অত লুকোছাপা করে লাভটা কি আছে ? ক'দিন বাদেই মনো আসছে। এবার বরং ওর সঙ্গে গিয়েই সুধাদির বাড়ি থেকে পরীক্ষাটা দিয়ে আসুক ছন্দা। রুম্পাও রয়েছে , কোন অসুবিধা হবে না।
--- এটা তুমি মন্দ বলো নি।
--- তবে আর বলছি কি ? এই ক'টা দিন তুমি বরং ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে যা দেওয়ার আছে দাও।
--- ঠিক বলছো।
তারপর থেকে কলেজের চাঁদা তোলার পাশাপাশি ছন্দারশেষ মুহুর্তের পড়া নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভুবনবাবু।পরীক্ষার দুদিন আগেই এসে পৌঁছোয় মনোতোষ। মোটের উপর ছন্দার প্রস্তুতি নিয়ে ভুবনবাবু সাধনার কাছে সন্তোষই প্রকাশ করেন। তবু সেদিন সকালে শেষবারের মতো ছন্দাকে নিয়ে বসেছিলেন তিনি। সেই সময় আচমকা ব্যাণ্ড মাইকের শব্দ গোটা গ্রাম সচকিত হয়ে উঠে। ভুবনবাবুরও কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম দেখা দেয়।মনে পড়ে যায় আজই তো রামের মেয়ের সাথে কুণালের ছেলের বিয়ের দিন।ভুবনবাবু মনে মনে ভাবেন আর্থিক কৌলিন্য জহিরের কোন রকম প্রচেষ্টাই বাদ দেয়নী তারা। তাই ছন্দাকে বলেন , ছেড়ে দে এই পরিস্থিতিতে আর কিছু হবে না। ভিতরে ভিতরে ভীষণ রাগ হয় তার। এরা কবে বুঝবে নিজের আনন্দের বহ্বিপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে অন্যের অসুবিধা সৃষ্টি করাটা শুধু অন্যায়ই নয় , সামাজিক অপরাধও। এই গ্রামে তো ছন্দা একাই পরীক্ষা দিচ্ছে না , আরও অনেক ছেলেমেয়েই পরীক্ষা দিচ্ছে। রয়েছে অনেক স্কুল পড়ুয়াও।
সবারই তো পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। আনন্দ করা যেতেই পারে , হাল্কা সাউন্ডে ভালো গান, বাজনা চলতেই পারে। কিন্তু তার ধার আর কে ধারে ? তাহলে যে টাকা খরচ করে মাইক - বাজনা করার কথা আর পাঁচজনকে জানানো যাবে না। কি অদ্ভুত সব মানসিকতা।পড়ানোর পাট চুকিয়ে মনোতোষকে ডেকে নেন ভুবনবাবু। ছেলে এসে সামনে দাঁড়াতেই যেন যুবক ভুবনকে দেখতে পান তিনি।গোঁফের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে , গালে চিকন দাঁড়ি। সারা মুখ কমনীয়তায় ভরা। দারুণ রোমান্টিক লাগে ছেলেকে। এই বয়েসেই তার জীবনে সাধনা চলে এসেছিল। সেও সেদিন রোমান্টিকতার জোয়ারে ভেসেছিল। নাঃ আর দেরি করা যাবে না। ছন্দার সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা ওর দিয়ে দিতেই হবে।মনের ভাব গোপন করে বলেন , কলেজের ব্যাপার নিয়ে আমি তো মাথা তোলার সময় পাচ্ছি না। তুই ছন্দাকে নিয়ে গিয়ে রুম্পাদের বাড়িতে থেকে পরীক্ষাটা দিয়ে আনতে পারবি ?
বাবার কথা শুনে মনটা আনন্দে দুলে উঠে মনোতোষের। ছন্দাকে সে এই সুযোগে কাছে পাবে ভাবতেই বুকের ভিতরটা যেন কেমন কেমন করে ওঠে। তাই ঘাড় কাত করে সে সম্মতি জানায়। ছেলের সম্মতি পাওয়ার পর ভুবনবাবু বলেন , তাহলে আজই তোরা রওনা হয়ে যা। এখানে যা শুরু হয়েছে তাতে করে আর বইয়ে মন বসানো যাবে না। ওখানে গিয়ে তবু রুম্পাদের বাড়িতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবে।
স্বামীর কথায় সায় দেন সাধনাও। ঠিক হয় দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরই ওরা রওনা দেবে। সাধনা তাই তাড়াতাড়ি চাট্টি মাছের ঝোল ভাত রান্নার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর ছন্দাকে সাইকেলে চাপিয়ে তাদের বাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনার জন্য বের হয় মনোতোষ।যেতে যেতে মনোতোষ বলে , মনে রাখিস আজ থেকে আমি কিন্তু তোর গার্জেন।যা বলব মেনে চলবি কিন্তু।
--- কি আমার গার্জেন এলেন রে।
---- কেন বাবা তো তোকে আমার জিম্মায় পরীক্ষা দিতে পাঠাচ্ছে।
--- জানি তো। কিন্তু গার্জেনি করতে নয়। তোমাকে আমার পাহারাদার করে পাঠানো হচ্ছে মশাই।
---- বয়েই গ্যাছে আমার তোর পাহারাদার হতে।
---- সত্যি বলছো ? আমার পাহারাদার হতে তোমার বয়ে গ্যাছে?
--- সত্যি না তো কি মিথ্যা নাকি ?
---- তাহলে কেউ যদি আমার অসম্মান করে তাহলে তুমি দাঁড়িয়ে দেখতে পারবে তো ?
--- দেব না তাকে --।
--- আর বলতে হবে না মনোদা। তোমাকেই তো আমার সারাজীবনের পাহারার ভার নিতে হবে গো। জানো আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। এই ক'দিন আমরা কাছাকাছি থাকতে পারব ভেবে।
---- আমারও খুব আনন্দ হচ্ছে রে।
কথা বলতে বলতেই তারা ছন্দাদের বাড়ি পৌঁছে যায়।সব শুনে শান্তিলতা হাসতে হাসতে বলেন , সবই তো বুঝলাম ভাই। কিন্তু তুমি যা ভালোমানুষ তাতে করে গেছো মেয়েটাকে সামলাতে পারবে তো ?
ঠাকুরমার কথা শুনে কপট রাগে ছুটে গিয়ে তার পিঠে গোটা কতক আলতো হাতের কিল বসিয়ে দিয়ে বলে -- এ বুড়ি আমি গেছো , আর ও বুঝি খুব ভালো ?
সঙ্গে সঙ্গে নাতনীকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন , না ভাই তোর মতো আর ক'টা মেয়ে আছে এ গ্রামে ? আমি তোর হাতে মিষ্টি কিল খাওয়ার জন্য বললাম।
তারপর সবাইকে একে একে প্রণাম করে বের হওয়ার মুখে একটা ঝোলা এনে মা ছন্দার হাতে দিয়ে বলেন , দুটো জায়গায় আলাদা আলাদা করে চিঁড়ে চাল ভাজা আর নাড়ু আছে। মনোতোষকে হোস্টেলে খাওয়ার জন্য একটা দিস। বাকিটা সুধাদিদের বাড়ি নিয়ে যাস।
তারপর ছন্দারা বেরিয়ে যেতেই শাশুড়ি - বৌমা দুগগা - দুগগা বলে দুই হাত কপালে ঠেকান। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর কাকু - কাকীমাকে প্রনাম করে মনোতোষের সঙ্গে গিয়ে রিক্সায় ওঠে ছন্দা। সাধনা রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে ছন্দাকে বলেন, সাবধানে থাকিস মা। মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিস।
ওরা চলে যেতেই বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে সাধনারও মনে হয় দেখতে দেখতে মনোটাও বড়ো হয়ে গেল। হবু বৌকে দিব্যি পরীক্ষা দিতে নিয়ে চলে গেল।দুটিকে পাশাপাশি বেশ সুন্দর লাগছিল।খুব মানাবে দুটিকে।স্বামীর সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের বিয়ে নিয়ে আলোচনতেই কেটে যায়। সান্ধ্য আসরের বন্ধুরা এসে পৌঁছোতেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেরিয়ে পড়েন ভুবনবাবু। আসার আগে একটা শাড়ির প্যাকেট তার হাতে ধরিয়ে দেন সাধনা। বিয়ে বাড়ি পৌঁচ্ছে সেটা রীনার হাতে তুলে দেন তিনি। কেউ তাকে আসুন বসুনটুকু পর্যন্ত বলে না। নামী দামী সব নিমন্ত্রিতদের চড়া আভিজাত্যের স্পর্ধিত আলোয় নিজেকে কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছিল তার।জল ছাড়া মাছের মতো মনে হচ্ছিল। কারও অবশ্য তার দিকে ভ্রুক্ষেপও ছিল না। কুণাল তার নামী দামী অতিথিদের আপায়নে ব্যস্ত ছিল। চোখে চোখ পড়লেও ফিরিয়ে নিচ্ছিল দৃষ্টি। একই ভাবে রাম আতসবাজি ফাটানোর তদারকির অজুহাতে তাকে দেখেও না দেখার ভান করছিল। তাই তিনিও একটা কান্ড করে বসেন।
( ক্রমশ )
No comments:
Post a Comment