Short story, Features story,Novel,Poems,Pictures and social activities in Bengali language presented by Arghya Ghosh

কালের কারিগর -- ৩৬


                       



     নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 



         শুরু  হল  ধারাবাহিক উপন্যাস -- 












                কালের কারিগর
              

                              অর্ঘ্য ঘোষ          

                          ( কিস্তি --- ৩৬ ) 




কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সেই ধারণা ভুল প্রমানিত হয়। সে দেখতে পায় দরজা ঠেলে তাদের বাড়িতে ঢুকছেন রুম্পার ভাই সঞ্জয়ের বাবা জয়ন্তবাবু আর ভোম্বলকাকা। তাদের দেখেই ভ্রু কুঁচকে যায় প্রভাতের। বুঝতে বাকি থাকে না ভোম্বলকাকা তার কথা রাখেন নি , সব ফাস করে দিয়েছেন। এবার মায়ের কানেও উঠবে।দুশ্চিন্তা বাড়ার পাশাপাশি মায়ের কাছে এবার সে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হয়ে যাবে।কিন্তু ভোম্বলকাকার সঙ্গে সঞ্জয়য়ের বাবা কেন তাদের বাড়িতে এসেছেন তা সে ভেবে পায় না। তাহলে রুম্পাকে ঘিরে ওই ঝামেলায় জড়ানোর জন্য তার ঘাড়েই দোষ চাপাতে মায়ের কাছে এসেছেন।চাপাতে চাইলে চাপাবেন , সে তো আর অন্যায় কিছু করেনি।রুম্পার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে থাকলেও সে একই কাজ করত। দরকার হলে সে'ই বরং আগে মাকে সত্যি কথাটা খুলে বলবে।তারপর যা হওয়ার হবে, সে আর ভাবতে পারছে না। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হয় তাই বা কি করে হবে ? ভোম্বলকাকাকে সে যতদুর চেনে তাতে সঞ্জয়ের বাবা তার ঘাড়ে দোষ চাপাতে এলে তার  সঙ্গে আসবেন বলে মনে হয় না।তাই সে ভোম্বলকাকার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। সেটা লক্ষ্য করেই ভোম্বলকাকা বলেন , আমার দিকে ওইভাবে চেয়ে থাকাটা তোর ভুল হচ্ছে।আমি বাপু কাউকে কিছু বলি নি।বাড়ি ফিরে যা বলার সঞ্জয়ই বলেছে।ওর বাবা আমার কাছে ঘটনাটা সত্যি কিনা জানতে চেয়েছিল। আমি যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।ততক্ষণে ওদের কথাবার্তা শুনে সেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন সুধাদেবী।পিছনে পিছনে এসে দাড়িয়েছেন ভুবনবাবুও।সুধাদেবী সঞ্জয়ের বাবাকে জিজ্ঞেস করে বসেন -- কি ব্যাপার 
গো ঠাকুরপো ? \
মায়ের হাতে কিছু ফলমূল তুলে দিয়ে সঞ্জয়ের বাবা সবিস্তারে সব কিছু খুলে বলেন।ফলমূল দেওয়া দেখেই প্রথমে কিছুটা আশ্বস্ত হয় প্রভাত।মনে মনে ভাবে , বাড়ি বয়ে ফলমূল নিয়ে এসে আর যাই হোক কেউ ঘাড়ে দোষ চাপাতে আসে না। কিন্তু মায়ের কথা ভেবেই সে প্রমাদ গোনে। মিথ্যা বলার জন্য মা কি বলবেন সেই ভেবে দুশ্চিন্তা হয় তার।তাই সে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মা কড়া গলায় বলে ওঠেন , বাবু তুই আমাকে মিথ্যা কথা বললি কেন ? কি করে পারলি তুই ? 
---- মা বিশ্বাস করো তোমাকে মিথ্যা কথা বলতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু ঝামেলায় জড়িয়েছি ভেবে তুমি রাগ করবে , দুশ্চিন্তায় ভুগবে বলে তোমাকে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য হয়েছি।
---- সন্তানের কিছু হলে সব মা-বাবারই দুঃশ্চিন্তা হয় সেকথা সত্যি। কিন্তু তুই ভাবলি কি করে একজন মা হয়ে আর একটি মেয়ের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছিস বলে আমি রাগ করব '? 
--- তুমি সত্যি বলছো মা ?
সুধাদেবী দেখে ছেলে উন্মুখ হয়ে তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। তিনি কাছে গিয়ে ছেলের মাথাটা বুকে টেনে নেন। তার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলেন, রাগ কেন করব বাবা ? তোকে নিয়ে তো আমার গর্ব হচ্ছে রে। যাই হোক না কেন , এইভাবেই সব সময় বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবি , তাহলে দেখবি ভগবানও তোর পাশে রয়েছে। কেউ কিচ্ছুটি করতে পারবে না।



               সুধাদেবীর কথার রেশ ধরে জয়ন্তবাবুও বলেন , আমরাও তো সেই কথাই বলতে এলাম।সঞ্জয়ের মুখে সবটা শুনে মনে হল যাই ,  যে এতবড়ো একটা গর্বের কাজ করেছে তাকে অন্তত সাহসটা জুগিয়ে আসি।
ভুবনবাবু বলেন , গর্বে আমারও বুকটা ভরে গেল। বিশেষ করে যার সম্মান সে বাঁচিয়েছে , তাকে দায়িত্ব করে আমিই এনেছিলাম।খারাপ কিছু যদি একটা হয়ে যেত তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।ওর বাবার কাছে মুখও দেখাতে পারতাম না।
মুহুর্তেই পরিবেশটা পাল্টে যায়। সকলের আর্শিবাদ আর প্রশংসায় ঠোঁটের ব্যাথাটাকে আর ব্যাথাই মনে হয় না তার। পড়ার ঘরে গিয়ে সে মনোতোষের সঙ্গে গল্প শুরু করে। ভুবনবাবুর সঙ্গে গল্পে মেতে উঠেন সঞ্জয়ের বাবারাও। সুধাদেবী তাদের জন্য উনুনে চায়ের জল চাপান। ঠিক ছিল এদিনই গ্রামে ফিরে যাবেন ভুবনবাবুরা। কিন্তু চা খেতে খেতে  গল্পের আসর ভাঙতে ভাঙতে সেই সময়টা পেরিয়ে যায়। তার উপরে প্রভাতকে এই অবস্থায় ফেলে যেতেও মন চায় না ভুবনবাবুর।আজকের ঘটনাটায় রুম্পার উপরেও ভায়নক মানসিক চাপ পড়াটা স্বাভাবিক। সেটা কাটিয়ে ওঠার জন্যও কিছুটা সময় দরকার। তাই পরদিন সকালেই গ্রামে রওনা দেবেন বলে স্থির করেন ভুবনবাবু। জয়ন্তবাবুও সেই মতো রুম্পাকে সকালে এবাড়িতে পৌঁছে দেবন বলে বাড়ি ফেরার জন্য উঠে দাঁড়ান। যাওয়ার আগে ভোম্বল আর জয়ন্তবাবু পরের বারে এসে তাদের বাড়ি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। ভুবনবাবুও তাদের পয়লা জানুয়ারি পিকনিকের দিন যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পিকনিকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নেন তারা। ভুবনবাবু ভাবেন পরিস্থিতি মানুষকে কত কাছাকাছি এনে দেয়। কিছুক্ষণ আগেও যাদের সে চিনত না , তারাই এখন যেন কত আপনার জন হয়ে উঠেছে। সেদিন রাতটা গল্প গুজবেই কেটে যায়। সকাল হতেই শুরু হয়ে যায় বাড়ি ফেরার তোড়জোড়। কিন্তু সুধাদিদের ছেড়ে আসতেও তাদের মন কেমন করে ভুবনবাবুর। 
সুধাদি বলেন , দুবার এসেই তোমরা আমার  আপন হয়ে উঠেছো। আর পর করে দিও না যেন ভাই। সম্পর্কটা রেখো।
ভুবনবাবু বলেন, আমার সাধ্য কি এই দিদিটাকে ভুলে থাকব।আমার যে আর দিদি নেই। তুমিও কিন্তু  পয়লা জানুয়ারি প্রভাতকে নিয়ে আসবে আমাদের বাড়ি। নাহলে কিন্তু আর এমুখো হবো না। 
আঁচলে চোখ মুছে সম্মতি জানান সুধাদি। ভারাক্রান্ত মনে বাড়ির বাইরে পা রাখেন তারা। তার মধ্যেই রুম্পাকে পৌঁচ্ছে দিয়ে যান জয়ন্তবাবু। হাত নাড়তেই সুধাদি আর জয়ন্তবাবুকে পিছনে ফেলে রিক্সায় বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে এগিয়ে চলে তারা। 


                                   

                              সেবারের মতো তাদেরকে এগিয়ে দিতে বাসস্টান্ডে আসে প্রভাত। তাদের সঙ্গে রুম্পা থাকায় প্রভাত যেন কেমন অস্বস্তি বোধ করে। অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে রুম্পার চোখে মুখেও। তারই মাঝে দু'জনের মধ্যে একটা উশখুশ ভাবে চোখ এড়ায় না ভুবনবাবু। কারণটা অনুমান করতেও অসুবিধা হয় না তার। যেহেতু সে রয়েছে তাই  চোখাচোখি হলেও লজ্জায় কেউ কারও সংগে কথা বলতে পারে নি। তাই বিদায় মুহুর্তে একবার কথা বলার আকাঙ্ক্ষাটা তীব্র হয়ে ওঠে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই বয়েসটা তো তারাও পেরিয়ে এসেছে। সাধনা যখন বাপের বাড়ি যেত কিম্বা সে যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরত তখন একান্তে একে অন্যকে পাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজত। তাই ওদের একটু একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দিতেই তিনি বলেন , এখন তো বাস ছাড়তে দেরি আছে। আমি একবার মিষ্টির দোকান থেকে আসি।বাড়িতে মেয়েটা রয়েছে , ওর জন্য কিছু কিনে নিয়ে আসি।তার কথা শুনে প্রভাত সঙ্গে সঙ্গে বলে , হ্যা হ্যা আসুন না কোন অসুবিধা নেই। 
প্রভাতের কথা শুনে মনে মনে হাসেন ভুবনবাবু। ভুবনবাবু দোকানের দিকে এগিয়ে যেতেই বাসে উঠে আসে প্রভাত। সে উঠতেই বাস থেকে নেমে দাঁড়ায় মনোতোষ। আর প্রভাত গিয়ে দাঁড়ায় রুম্পার সিটের কাছে। তাকে দেখে আবেশ ভরা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে রুম্পা। মনে মনে প্রভাতদার জন্য গর্ব বোধ করে সে। নিজের জীবন বিপন্ন করে ভালোবাসার মানুষের সম্মান রক্ষা করার মতো ভালোবাসার মানুষ ক'টা মেয়ের ভাগ্যে জোটে। তাকে চেয়ে থাকতে দেখে প্রভাত বলে , কই কিছু বলছো না যে। 
রুম্পা ইশারায় তাকে কাছে ডেকে কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে, ওষুধগুলো খাবে। আর এই টাকা কটা রাখো ফল কিনে খাবে।
রুম্পা তার জমানো কিছু টাকা প্রভাতের জামার পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। তীব্র আপত্তি করে প্রভাত টাকাগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই তার হাতটা ধরে রুম্পা বলে , অনেক রক্ত বেড়িয়ে গিয়েছ সেটা পূরণ করতে হবে না ? নাহলে আবার আমি বা আমার মতো কেউ বিপদে পড়লে তাদের বাঁচাতে লড়বে কি করে ?  
সেইসময় ' বাবা - আসছে ' বলতে বলতে বাসে উঠে আসে মনোতোষ। আর তারপরেই দুহাতে চারটি মিস্টির প্যাকেট ঝুলিয়ে বাসে ওঠেন ভুবনবাবুও। রুম্পার টাকাটা আর ফেরত দেওয়া হয় না প্রভাতের। তিনটি প্যাকেট রুম্পাকে দিয়ে বাকি একটা প্রভাতের হাতে দেন তিনি।  তারপর প্রভাতের  কাঁধে হাত রেখে ভুবনবাবু বলেন , তোমাকে কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তোমাকে নিয়ে তোমার মায়ের অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন তোমাকে সার্থক করতেই হবে। কোন কিছু দরকার হলেই আমাকে বলবে। কোন রকম ইতস্তত করবে না।
প্রভাত তার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বলে , আপনি আর্শিবাদ করুন আমি যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মায়ের স্বপ্ন সার্থক করতে পারি। 
ভুবনবাবু বলেন , নিজের পায়ে তোমাকে দাঁড়াতেই হবে। তোমাকে ঘিরে আমারও যে একটা স্বপ্ন আছে। 
ভুবনবাবুর কথা শুনে তিনজনই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। প্রভাতকে ঘিরে ভুবনবাবুর কি স্বপ্ন থাকতে পারে তা কেউ ভেবে পায় না।সে কথা জানাও হয় না।ততক্ষণে ডাইভার উঠে বাস স্টার্ট দিয়েছে। চাকা গড়াতেই জানলা দিয়ে মনো আর রুম্পা হাত নাড়তে থাকে। নীচে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে প্রভাতও। ওদের দেখাদেখি ভুবনবাবুও হাত নাড়েন। তার মধ্যে স্ট্যান্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসে বাস।



                               ( ক্রমশ )

 নজর রাখুন / সঙ্গে থাকুন 


 দেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার উপন্যাস ------
  

                                 ( ১ ) 
                                  


                             ( ২) 





                                       

                       ( ৩ )

                                       
                            


অর্পিতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালিশির রায়ে সর্বস্ব হারানো এক আদিবাসী তরুণীর কথা ও কাহিনী---  

                       ( ৪ )

            



                         ( ৫ )

                              ( খেলার বই )
         

                                                                                 


                   ----০----


No comments:

Post a Comment