( কিস্তি -- ৫৪ )
সাধনা আর ছন্দা দুই হাত জোর করে কপালে ঠেকিয়ে বলে --- দুগগা -- দুগগা। ওরা স্কুলে বেড়িয়ে যেতেই হাজির হন ছন্দার গঙ্গাজল খুঁকীর বাবা নির্মল। একটা বিয়ের কার্ড সাধনার হাতে তুলে দিয়ে তিনি বলেন , ৫ ই ফাল্গুন রাজীবের সঙ্গে খুঁকীর বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। ওইদিন আপনারা আমার বাড়িতে পায়ের ধুলো দিলে খুব ভালো লাগবে।
ছন্দার মুখেই রাজীবের সঙ্গে খুকীর বিয়ের কথাবার্তা চলছে বলে শুনেছিল সাধনা। কিন্তু বিয়ে যে চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে তা জানা ছিল না। তাই সব কিছু শোনার পর বলেন , নিশ্চয় যাব। খুব ভালো সমন্ধ হয়েছে। তোমার তো একটাই মেয়ে , বিয়ের পরও চোখের সামনে থাকবে।
----- সেই জন্যই তো দেওয়া।
---- সব কিছু জোগাড়যন্ত্র হয়ে গিয়েছে ?
---- কই আর হলো ? এমনিতে ওদের চাহিদা খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু আমার অবস্থা তো জানেন। এখনও ওদের ঘরখরচার পনেরো হাজারের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় করতে পারি নি। কি করে কি হবে ভেবে পাচ্ছি না।
---- ঠাকুরের উপর ভরসা রাখো। দেখ সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
---- সেই ভরসাতেই তো আছি বৌদি। গরীবের তো ভগবানই ভরসা। আসি বৌদি। যাবেন যেন।
নির্মল চলে যেতেই সাধনার মনে হয় না, মনোর বিয়েটা এবার দিতেই হবে। ওর বন্ধু , ছন্দার বান্ধবীদের একে একে সব বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। মনো একটা পাশ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। তাই আর ওদের বিয়েটা দিতে দেরী করতে চান না সাধনা। মনো অবশ্য প্রাইভেটে এম, এস,সি'তে ভর্তি হয়েছে। সেটা বিয়ের পর বাড়িতে থেকেও পড়া যাবে। তাই স্বামীর কাছে কথাটা পাড়েন সাধনা। ভুবনবাবুরও আর অমত হয় না। পরের দিনই ছন্দার বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে ফেলেন তিনি।
তারই মধ্যে শান্তিলতা এসে একদিন আর্শিবাদ করে যান মনোকে। ছন্দা তো এখানেই ছিল। তাই সাধনাও একই সঙ্গে ছন্দাকে আর্শিবাদ করেন। ফাল্গুন মাসের কুড়ি তারিখ বিয়ের দিন ঠিক হয়। হিসেব মতো হাতে রয়েছে আর মাত্র কুড়িটি দিন। তাই যুদ্ধকালীণ তৎপড়তা শুরু হয়ে যায় বিয়ে ঘিরে। ভুবনবাবুর সান্ধ্য আসরের বন্ধুরাই সব দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে তুলে নেন। ভুবনবাবু কেবল নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণটা করে আসেন।
সুধাদি, জয়ন্তবাবু, ভোম্বলবাবুদের একদিন গিয়ে নিমন্ত্রণ করে আসেন। সবাই এক দিন আগে এসে পৌঁছোনোর প্রতিশ্রুতি দেন। স্কুলের সহকর্মী, ডাক্তারকাকা এমন কি ধরণী পাহাড়ের মন্দিরের সেই পুরোহিতকেও নিমন্ত্রণ করে আসা হয়। গ্রামের অন্যান্যদের মতো কুণাল আর রামকেও ভুবনবাবুর নিজে গিয়ে নিমন্ত্রণ করার কথা শুনে সাধনা তো বটেই সান্ধ্য আসরের বন্ধুরাও তীব্র আপত্তি জানান। তারা বলেন , ওরা যখন তোমাকে নাপিত পাঠিয়ে নিমন্ত্রণ করেছে তখন তুমিও নাপিত পাঠিয়েই নিমন্ত্রণ কর। অযথা গাল বাড়িয়ে চড় খেতে গিয়ে কি লাভ ?
ভুবনবাবু বলেন , দেখ ওরা ওদের মানসিকতা অনুযায়ী কাজ করেছে বলেই আমাদেরও তাদের অনুসরণ করতে হবে তার কি মানে আছে ? আর নিমন্ত্রণ করতে গেলেই যে অপমানিত হতে হবে তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে ? মানুষের মন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। হয়তো ওরা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ ভোগ করছে। কিন্তু মুখ লজ্জার খাতিরে কিছু করতে পারছে না। আমি নিমন্ত্রণ করতে গেলেই সেই দুরত্বটা কমে যেতে পারে।
ভুবনবাবুর যুক্তির কাছে হার মানতে হয় ওদের। অগত্যা মত দিতে হয় সাধনাকেও। একদিন স্কুল থেকে ফিরে দুটো নিমন্ত্রণ কার্ড নিয়ে কুণালের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন ভুবনবাবু। রাম তো এখন প্রায়ই মেয়ের বাড়িতেই থাকে। সৌমেনের সঙ্গে এখন যৌথ উদ্যোগে পাথর খাদানের ব্যবসা শুরু করছে রাম। তাই কুণালের বাড়িতেই তাকে পাওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। নাহলে একদিন তার বাড়িতেও যেতে হবে। সেই কথা ভাবতে ভাবতে কুণালের বাড়িতে পা রাখেন ভুবনবাবু। তখন বাড়ির রোয়াকে বসে ওরা দুজনে চা খাচ্ছিল। ভুবনবাবুকে ঢুকতে দেখেও কোন আহ্বান নেই , শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে দু'জনে। ভুবনবাবু এগিয়ে গিয়ে কার্ড দুটো দু'জনের হাতে তুলে দিয়ে বলেন , বিশে ফাল্গুন আমার ছেলের বিয়ে। তোমারা সবাই এলে খুব খুশী হবো।
ভুবনবাবুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে রামবাবু বলেন , তোমার ছেলের তো সেই ডে-লেবারের আনকালচার্ড মেয়েটার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে ?
ভুবনবাবুর বুঝতে বাকি থাকে না তাকে অপমান করার উদ্দেশ্যেই রাম ছন্দার প্রসঙ্গটা টেনে এনেছে। তাই সে বিনীত ভাবেই বলেন , ওর বাবা দুঃস্থ ঠিকই কিন্তু ছন্দা মোটেই আনকালচার্ড নয়। বরং অন্যান্য অনেক মেয়ের তুলনায় শিক্ষিতা এবং যথেষ্ট রুচিশীলা। সর্বোপরি সে আমার ভাবী পুত্রবধূ।
তারপর আর এক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়ান না। গট গট করে বাড়ির পথ ধরেন তিনি। তাঁর চোখ মুখের ভাব দেখে ব্যাপারটা কি হয়েছে বুঝতে আর বাকি থাকে না সাধনার।তারপর স্বামীর মুখে সব কথা শোনার পর বলেন , ঠিক করেছো। উপযুক্ত জবাবটাই তুমি দিয়ে এসেছো। এখন ওইসব কথা মন থেকে মুছে ফেলে অন্য কাজে মন দাও তো।
তারপর ভুবনবাবুও ছেলের বিয়েতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন। একমাত্র ছেলের বিয়ে। তবু কোন বাহুল্য চান না তিনি। সাধনার মনে অবশ্য কিছুটা খুঁতখুঁতানি ছিল। একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। রংবেরঙ আলো জ্বলবে না , নহবত বসবে না তাই কখনও হয় ? মুখটা ভার হয়ে ওঠে সাধনার। স্ত্রীর মনের ভাবটা বুঝতে অসুবিধা হয় না ভুবনবাবুর। স্ত্রীকে একদিন একান্তে ডেকে বলেন , তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। মন খারাপ হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু একবার ভাবো তো, কত কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা মেয়ের বিয়ের টাকা যোগাড় করতে না পেরে মুখ কালো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
---- তার জন্য আমরা কি করতে পারি ?
---- সবার সব সমস্যা সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় সেকথা সত্যি , কিন্তু আমাদের ছেলের বিয়ের খরচ বাঁচিয়ে যদি একটি মেয়ের বাবার মুখে আলো ফোটাতে পারি তাহলে সেই আলোর কাছে কোন আলো লাগতে পারে বলো ? তাছাড়া উপলক্ষ্যকে যখন আড়ম্বর ছাপিয়ে যায় তখন উপলক্ষ্যটা গৌন হয়ে যায়।
এবার স্বামীর যুক্তির কাছে হার মানতে হয় সাধনাকে। সত্যিই তো স্বামী যেটা বলেছেন সেটা অকাট্য। এই তো সেদিন ছন্দার গঙ্গাজল খুকীর বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসে সেই সমস্যার কথাই বলছিলেন তার বাবা নির্মল। হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরেই বিয়ে অথচ হাজার পাঁচেক টাকার অভাবেনাকি এখনও পাত্রপক্ষের দাবি মতো ঘরখরচের পনেরো হাজার টাকা পৌঁছে দিতে পারেন নি।
সেটা দিতে না পারলে বিয়েটাই আটকে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। বিয়ের অন্যান্য যোগাড়পাতি করতে গিয়ে বাড়ির ঘটিবাটিটুকু বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অনাদায়ী হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ টাকা ক'টা ধারও দিতে চাইছে না। তাই স্বামী-স্ত্রী দুঃশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পর্যন্ত পারছে না।ওইসব ছেলের বাবাদের কথা ভেবেই রাগ ধরে যায় সাধনার।
নিজের ছেলের বিয়ের ঘরখরচের জন্য মেয়ের বাবার কাছে ভিখারির মতো হাত পাতা কেন বাপু ? মেয়ের বাবা বলেই কি চোরের দায়ে ধরা পড়েছে ? হাজার বায়নাক্কা মেটানোর পরও তোমার ছেলের বিয়ের ঘরখরচের টাকাও মেয়ের বাবাকে দিতে হবে ? নিজের মেয়ের বিয়ের সবদিক সামল দেওয়ার পরেও কেন ছেলের বাবাকেও টাকা দিতে হবে ? ছেলের বাবাই বা তাহলে কেন মেয়ের বাবাকে ঘরখরচের জন্য টাকা দেবে না ?
একপক্ষ আর্থিক ভাবে দুর্বল হলে শুভকাজ সম্পন্ন করার অন্যপক্ষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনভাবেই জুলুমবাজিটা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু তাদের মেনে নেওয়া না নেওয়াতে যে কিছুই এসে যায় না তা'ও ভালো করেই জানেন সাধনা। তারা নিজেদের সাধ্যমতো অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারেন মাত্র। সেই বিবেচনা বোধ থেকেই স্বামীর উদ্দেশ্য সাধনা বলেন , হ্যা গো তাহলে মনোর বিয়ের খরচ বাঁচিয়ে
সেই টাকাটা খুঁকীর বাবার হাতে তুলে দিলে কেমন হয় ?
---- তার মতো ভালো কাজ আর কিছু হয় না।
---- কত কি দেওয়া যায় ?
---- সেদিন খুঁকীর বাবাই তো বলছিল ওদের নাকি হাজার পাঁচেক টাকার ঘাটতি। আমরা যদি মনোর বিয়েতে লাইট-নহবত না করি তাহলে অনায়াসেই ওই টাকাটা আমরা খুঁকীর বিয়েতে দিতে পারি।
--- তাহলে সেটাই দাও। আমার ছেলের বিয়েতে সানাই বাজবে , আলো জ্বলবে আর আমারই গ্রামের এক মেয়ের বাবা মুখ কালো করে বসে থাকবেন তা হয় না। নাই বা জ্বলল আলো , নাই বা বাজল সানাই ? খুঁকীর বাবার আর্শিবাদ আমার মনোর জীবনে আলো আর সুরে ভরিয়ে দেবে।
স্ত্রীর কথা শুনে আপ্লুত হয়ে পড়েন ভুবনবাবু। এমন স্ত্রী ভাগ্য ক'জনের হয় ? এমনিতে সাধনা তার প্রতিটি কাজেই সমর্থন যুগিয়ে এসেছেন। কিন্তু এভাবে একমাত্র ছেলের বিয়েতেও আড়ম্বর ছেঁটে অন্যকে সাহায্য করার প্রস্তাবটা মেনে নেওয়ার মতো উদারতা খুব কম মা'ই দেখাতে পারেন। ঠিক হয় ওইদিনই সন্ধ্যায় খুঁকীর বাবাকে ডেকে টাকাটা তুলে দেওয়া হবে।
মনোকে দিয়েই খবর পাঠানো হবে। আজ বিকালে মনো ছন্দাকে ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে। এই কয়েকদিন বাবার বাড়িতেই থাকবে ছন্দা।বিয়ের পর একেবারে বৌ হয়ে আসবে। ছন্দা চলে যাবে বলে সবার মন খারাপ। সব থেকে মন খারাপ করে মনোতোষের। ছন্দারও মন খারাপ করে। নিজের বাড়ি যাচ্ছে তাও তার মনে কোন আনন্দ নেই। সেটা লক্ষ্য করেই সাধনা ওকে কাছে টেনে নেন। আদর করে বলেন , আমাদেরও খুব কষ্ট হবে তোকে ছেড়ে থাকতে। কিন্তু বিয়ের আগে যে বাপের বাড়িতে থাকাটাই রীতি মা। দেখতে দেখতেই দিন ক'টা কেটে যাবে দেখ না।
ভাবী শ্বশুর শাশুড়িকে প্রণাম করে ভাবী বরের সাইকেলে উঠে বসে ছন্দা। সাইকেলে যেতে যেতেই দু'জনে প্রেমালাপে বিভোর হয়ে ওঠে। কৌতুক মিশ্রিত গলায় ছন্দা বলে , এ ক'টা দিন একটু সাবধানে থেকো। স্কুলে যাওয়ার আগে তো আঙুল কামড়ে দেওয়া হবে না। কারও নজর লেগে যায় না দেখো।
----- স্কুলে যাওয়ার আগে আমার প্রাপ্য বকেয়াটা তুমিও হিসাব করে রেখ। বিয়ের পর সুদ সমেত কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিতে হবে কিন্তু।মনোদার কথা শেষ হতেই তার মুখের দিকে তাকায় ছন্দা। তার কথাতে যতটা লজ্জা পায় তার চেয়ে বেশি বিষ্মিত হয় মনোদার সম্বোধনে।মনোদা আজ নিজে থেকেই তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে।খুব ভালো লাগে তার। সোহাগের সুরেই সে বলে , কি গো আজ দেখি মেঘ না চাইতেই জল ? তুই থেকে একেবারে তুমি ?
---- নিজের বৌকে সবাই তুমি বলে।তাহলে আমিই বা আমার ট্যারা চোখে তাকানো বৌ'টাকে তুই তোকারি করি কেন?
----- আবার ? বলে মনোতোষের চুলটা এলোমেলো করে দেয় ছন্দা।
--- দিলে তো চুলটা খারাপ করে ? ভালোই হবে তোমার বরকেই সবাই খ্যাপা বলবে।
---- তুমি তো খ্যাপাই।
---- এবার তো তোমার বিরহে আরও খেপে যাব।
---- দেখো আবার ?
---- না গো, সত্যি বলছি। সবসময় তোমার অভাব অনুভব করব।
---- আমারও খুব মন খারাপ জানো। তবে মাঝে গঙ্গাজলের বিয়ে। তুমি ওইদিন এখানেই চলে এসো। দুজনে খুব মজা হবে। দেখো আবার বন্ধুর বাড়ি চলে যেও না। বৌভাতে বরং ওদের বাড়ি যাবে।
--- বেশ তাই হবে।
খুঁকীর বিয়ের দিন দুজনে কি করে কাটাবে সেই পরিকল্পনা করতে করতে ছন্দাদের বাড়ির দরজায় পৌঁছে যায় মনোতোষের সাইকেল। তাদের দেখে সবাই এগিয়ে আসে। মনোতোষ গিয়ে সবাইকে প্রণাম করে।তারপরই সবাই মনোতোষকে কোথাই বসাবে , কি খাওয়াবে তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে ভাবে কি হলো রে বাবা! বেশ তো দিন কয়েক আগেই বাড়ির ছেলের মতো আসছিল - যাচ্ছিল আজ আবার হঠাৎ এত জামাই আদর কেন ? তারপরই তার মনে পড়ে যায় আরে সে তো আর ক'দিন পর এবাড়ির জামাই হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে সেটা ঠিক হয়ে থাকলেও আর্শিবাদের পরই যে চূড়ান্ত শীলমোহর পড়েছে। আর্শিবাদের পর এই প্রথম এ বাড়িতে এলো সে। সেই সময় টিপন্নী কেটে বসে ছন্দা। ঠাকুমাকে উপলক্ষ্য করে সে বলে , ভালো গো সব। কতদিন পরে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরল , তাকে একটু আদর করবে তা নয় , পরের ছেলেকে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করল সব।
শান্তিলতাও কম যান না। নাতনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন , তুমিও যে ভাই ওই পরের ছেলেটির বাড়িতেই এতদিন আদর সোহাগের ভাগ বসিয়ে এলে তার বেলা ?
এই উতোরচাপানে খুব অস্বস্তিতে পড়ে মনোতোষ। সে একটি পিড়ি টেনে নিয়ে সটান রান্নাঘরে দাওয়ায় বসে বলে , কই ঠাকুমা ভালোমন্দ কি আছে দাও দেখি।
শান্তিলতাও মনোতোষের কথাটা লুফে বলেন --- দেখেছিস মনো আমাদের সেই ঘরের ছেলেটিই রয়ে গিয়েছে।
ঠাকুমায়ের কথা শুনে ছন্দাও অভিমানে ঠোট ফুলিয়ে বলে --- আর আমি বুঝি পরের মেয়ে হয়ে গিয়েছি?
---- মেয়েরা তো চিরকাল পরেরই হয়ে যায় ভাই।
চিরন্তন সত্যটা বলে ফেলে ঠোঁট কামড়ান শান্তিলতা। কথাটা বলেই উদাস হয়ে যান। তারপর নাতনিকে সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বলেন , তবে মেয়েরাই পারে পরকে আপন করে নিতে।
আরও কিছুক্ষণ গল্প গুজবের পর খুকীর বাবাকে দেখা করতে বলে সন্ধ্যার মুখে বাড়ি ফেরে মনোতোষ। সেদিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে এক আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়।
( ক্রমশ )
No comments:
Post a Comment